শ্রীমদ্ভাগবতম - প্রথম স্কন্ধ - তৃতীয় অধ্যায় , Srimad Bhagavatam - First Canto - Third Chapter ,
Bhagavatam,Srimad Bhagavatam, Bhagavata Purana, Srimad Bhagavatam in
Bengali,
Bhagavata Purana in Bengali, Bhagavata Mahapurana, Sanatana Dharma,
Bhagavata Mahapurana, Srimad Bhagavatam Bangla, Gita, শ্রীমদ্ ভাগবতম,
শ্রীমদ্ ভাগবত মহাপুরাণ , শ্রীমদ্ ভাগবত পুরাণ, Srimad Bhagavatam online,
শ্রীমদ ভাগবত,ভাগবত মহাপুরাণ, ভগবানের অবতারগণের বর্ণনা
<--পূর্ববর্তী লেখনী পরবর্তী লেখনী-->
প্রিয় ভক্তবৃন্দ এবং সুধীগণ,
পূর্ববর্তী লেখনীতে আমরা শ্রীমদ্ভাগবতমের প্রথম স্কন্ধের দ্বিতীয় অধ্যায় , ভগবৎকথা ও ভগবদ্ভক্তির মাহাত্ম্য সম্পর্কে জেনেছিলাম । আজ আমরা শ্রীমদ্ভাগবতমের প্রথম স্কন্ধের তৃতীয় অধ্যায় , ভগবানের অবতারগণের বর্ণনা সম্পর্কে জানব । এটি শুরু হয় সূত গোস্বামী দ্বারা শৌনকাদি মুনিদের প্রশ্নের উত্তর প্রদানের মাধ্যমে ।
১) শৌনকাদি ঋষিগণ বললেন - সকল সৃষ্টির আদিতে শ্রীভগবান লোকসমূহ ( ব্রহ্মান্ড ) সৃষ্টি করার ইচ্ছা করলেন । এর জন্য পরমেশ্বর ভগবান নিজেকে বিরাট পুরুষ অবতার রূপে প্রকাশ করে জড়জগৎ সৃষ্টির উপাদানগুলির সৃজন করেন । এর মধ্যে দশটি ইন্দ্রিয় ( পাঁচটি কর্মেন্দ্রিয় এবং পাঁচটি জ্ঞানেন্দ্রিয় ) , পঞ্চভূত আর মন - এই ষোলোটি কলা ছিল ।
২) ভগবান পুরুষোত্তম জলে শায়িত অবস্থায় যোগনিদ্রা বিস্তার করে তাঁর নাভি সরোবরে একটি কমলের ( পদ্ম ) উৎপত্তির মাধ্যমে , তার মধ্যে সমস্ত জীবের পিতামহ ব্রহ্মার সৃষ্টি করেন ।
৩) পরমেশ্বর ভগবানের সেই বিশুদ্ধ , বিরাট পুরুষাবতার রূপের মধ্যে সমস্ত লোকসকল / ব্রহ্মান্ডসমূহ বিদ্যমান । তাঁর সেই পরম উত্তম রূপ সত্ব রূপের সাথে প্রকৃতির জড় উপাদানগুলির কোনোপ্রকার সম্বন্ধ নেই । তাঁর সেই পরম সত্বরূপ পরা-প্রকৃতিতে স্থিত ।
৪) ভক্তগণ , যোগীগণ এবং পরম জ্ঞানীগণ দিব্যচক্ষুর দ্বারা ভগবানের সেই আশ্চর্যময় বিশ্বরূপ দর্শন করেন । সহস্র পদ ,জঙ্ঘা , হস্ত , মুখসমন্বিত শ্রীভগবানের সেই রূপ পরম দিব্য । সেই রূপে অসংখ্য মস্তক , কর্ণ , চক্ষু ও নাসিকা বিদ্যমান যা অসংখ্য মুকুট ,বস্ত্র ও কুণ্ডলাদি অলংকারে সুশোভিত ছিল ।
৫) পরমেশ্বর ভগবানের এই দিব্য রূপ যা ক্ষীরোদসাগরে শায়িত শ্রীনারায়ণ নামে পরিচিত , তা ব্রহ্মান্ডে প্রকাশিত বিবিধ অবতারদের উৎস এবং অক্ষয় বীজস্বরূপ । এই রূপের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অংশ বা কলা দ্বারা দেবতা ,পশুপক্ষী ও মনুষ্যাদি জীবের সৃষ্টি হয় ।
৬) জগৎ সৃষ্টি করার আদিতে শ্রীভগবান , সনকাদি বাল ঋষিগন ( সনক , সনন্দন , সনাতন , সনৎকুমার ) রূপে অবতার গ্রহণ করেন এবং পরম সত্যের উপলব্ধি করার জন্য তাঁরা অত্যন্ত দুঃসাধ্য অখন্ড ব্রহ্মচর্য ব্রত পালন করেন ।
৭) তারপর এই পৃথিবী যখন রসাতলে ( ব্রহ্মান্ডের নিম্নতম প্রদেশ ) পতিত হয়েছিল তখন এই বিশ্বের মঙ্গলসাধনায় ইচ্ছুক যোগেশ্বর পরমেশ্বর ভগবান পৃথিবী উদ্ধারের জন্য বরাহ অবতার ধারণ করেন । বরাহ অবতার হলেন শ্রীভগবানের দ্বিতীয় অবতার ।
৮) ঋষিকল্পে শ্রীভগবান তাঁর তৃতীয় অবতার দেবর্ষি নারদরূপে আবির্ভূত হন । তিনি বেদের সাত্বত তন্ত্র ( বিশেষরূপে ভগবানের প্রেমময়ী সেবার ক্রম ) প্রচার করেছিলেন ; সেই তন্ত্রে , ফলবাসনারহিত / নিষ্কাম কর্মের দ্বারা কী করে সংসার চক্র থেকে মুক্ত হওয়া যায় তার উল্লেখ আছে ।
৯) চতুর্থ বার ধর্মরাজের পত্নী মূর্তির গর্ভে তিনি নর-নারায়ণ রূপে আবির্ভূত হন । এই অবতারে মন ও ইন্দ্রিয় সংযমের আদর্শ স্থাপন করার জন্য তাঁরা অত্যন্ত দুঃসাধ্য ও কঠোর তপস্যা করেছিলেন ।
১০) পঞ্চম অবতারে তিনি সিদ্ধেশ কপিল মুনি রূপে অবতারিত হন । তিনি আসুরি নামক এক ব্রাহ্মনকে এই ব্রহ্মান্ডের জড়সৃষ্টির মৌলিক উপাদানগুলির সম্পর্কে তত্বজ্ঞান প্রদান করেন । কালক্রমে এই জ্ঞান সেইসময় বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল । এই তত্ত্বকেই আমরা কপিল-সাংখ্য নামে জানি ।
১১) শ্রীভগবান ষষ্ঠ অবতার রূপে সপ্তঋষিগণের প্রমুখ অত্রির পত্নী সতী অনুসূয়ার গর্ভে আবির্ভূত হন । তাঁর এই অবতার কে আমরা শ্রীদত্তাত্রেয় ভগবান বলে জানি । শ্রীদত্তাত্রেয় অবতারে তিনি অলর্ক , প্রহ্লাদ প্রমুখকে পারমার্থিক ব্রহ্মতত্ত্ব জ্ঞান প্রদান করেছিলেন ।
১২) সপ্তম অবতারে যিনি প্রজাপতি রুচির ধর্মপত্নী আকৃতির গর্ভে যজ্ঞরূপে আবির্ভূত হন । তিনি তার পুত্র যাম প্রমুখ দেবগনের সাথে স্বায়ম্ভূব মনুতে ব্রহ্মান্ডের প্রতিপালন করেছিলেন ।
১৩) মহারাজ নাভি এবং তার পত্নী মেরুদেবীর গর্ভে শ্রীভগবান তাঁর অষ্টম অবতার মহারাজ ঋষভদেবরূপে আবির্ভূত হয়েছিলেন । এই অবতার তিনি পূর্ণ সিদ্ধিলাভের পথ প্রদর্শন করেছিলেন যা সর্বতোভাবে জিতেন্দ্রিয় এবং সব আশ্রমের শ্রেষ্ঠ পরমহংসেরা তার অবলম্বন করেন ।
১৪) হে শৌনকাদি মুনিগন ! ঋষিগণের প্রার্থনায় সাড়া দিয়ে শ্রীভগবান তাঁর নবম অবতারে রাজা পৃথুরুপে অবতারিত হয়েছিলেন । এই অবতারে তিনি পৃথিবীর ঔষধিসমূহের দোহন করেছিলেন । এর ফলে বসুন্ধরাও পরম কামনীয় রূপ ধারণ করেছিল ।
১৫) চাক্ষুষ মন্বন্তরে যখন সমগ্র বিশ্ব সমুদ্রপ্লাবিত হয়েছিল তখন শ্রীভগবান মৎসাবতাররূপে আবির্ভূত হন । মৎসবতার শ্রীভগবানের দশম অবতার । এই অবতারে তিনি মৎসরূপ ধারণ করে পরবর্তী মন্বন্তরের অধিপতি বৈবস্বত মনুকে একটি বৈতরণীর ( নৌকার ) উপর রেখে তার রক্ষা করেছিলেন ।
১৬) তাঁর একাদশ অবতারে শ্রীভগবান কুর্মাবতার রূপে আবির্ভূত হয়েছিলেন । এই সময় তিনি তাঁর পিঠে মন্দরাচলপর্বত কে ধারণ করেছিলেন, যা সমুদ্রমন্থনের সময় দেবতা ও দৈত্যরা মন্থন-দণ্ডরূপে ব্যবহার করেছিলেন ।
১৭) তাঁর দ্বাদশ অবতারে শ্রীভগবান ধন্বন্তরিরূপে আবির্ভূত হয়ে নিজ হাতে অমৃতকুন্ড নিয়ে সমুদ্র থেকে উঠে এসেছিলেন এবং ত্রয়োদশ অবতারে তিনি মোহিনীরূপ ধারণ করে দানবদের সম্মোহিত করে দেবতাদের অমৃতপান করিয়েছিলেন ।
১৮) চতুর্দশ অবতারে শ্রীভগবান ভক্তরাজ প্রহ্লাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে নৃসিংহরূপে আবির্ভূত হয়ে দৈত্যরাজ হিরণ্যকশিপুর বক্ষ বিদীর্ণ করেছিলেন , ঠিক যেমন একজন সূত্রধর বা কটকার ( মাদুর বননকারী ) তার নখ দিয়ে এরকা তৃণ বিদীর্ণ করে ।
১৯) পঞ্চদশ অবতারে শ্রীভগবান বামন অবতার ধারণপূর্বক দৈত্যরাজ বলির ( প্রহ্লাদ পৌত্র ) যজ্ঞস্থলে গমন করেছিলেন । দেবতাদের স্বর্গ ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য তিনি দৈত্যরাজ বলির কাছে কেবলমাত্র ত্রিপাদ ভূমি ভিক্ষা করেছিলেন ও দৈত্যরাজ বলিকে উদ্ধার করেছিলেন ।
২০) ষোড়শ অবতারে তিনি জমদগ্নি পুত্র পরশুরাম রূপে আবির্ভূত হয়েছিলেন । তৎকালীন দুরাচারী , ধৰ্মপরান্মুখ, ব্রহ্মবিদ্বেষী ও ব্রাহ্মণহন্তা নৃপতিদের দেখে তিনি ক্রোধান্বিত হয়ে বসুন্ধরাকে একুশবার ক্ষত্রিয়শুন্য করেছিলেন ।
২১) এরপর সপ্তদশ অবতারে তিনি মহর্ষি পরাশরের ঔরসে মাতা সত্যবতীর গর্ভে শ্রী কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস রূপে আবির্ভূত হয়েছিলেন । ওই সময় অজ্ঞান অন্ধকারে নিমজ্জিত স্বল্পবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের দুর্দশা দেখে তিনি তাদের মঙ্গলার্থে বৈদিক কল্পবৃক্ষের শাখাবিভাজন করেছিলেন ।
২২) অষ্টাদশ অবতারে শ্রীভগবান রাজা দশরথের পুত্র শ্রীরামচন্দ্র রূপে ধরাতলে অবতীর্ণ হন । দেবকার্য সম্পাদনের জন্য তিনি সেতুবন্ধ , রাবণ বধ আদি নানাবিধ অলৌকিক কার্য সম্পাদন করে তাঁর অসাধারণ বীরত্বের প্রদর্শন করেছিলেন ।
২৩) ঊনবিংশ এবং বিংশ অবতারে তিনি বৃশ্নি / যদুবংশে শ্রীবলরাম এবং শ্রীকৃষ্ণরূপে ( বসুদেবের পুত্র ) আবির্ভূত হয়ে এই বসুন্ধরার ভার হরণ করেছিলেন ।
২৪) তারপর কলিযুগের প্রারম্ভে ভগবতবিদ্বেষী নাস্তিকদের সম্মোহিত করার উদ্দেশে শ্রীভগবান মগধদেশে ( গয়াপ্রদেশে ) অঞ্জনার পুত্ররূপে বুদ্ধাবতার হবেন ।
২৫) এরপরে কলির যুগসন্ধিক্ষণে যখন এই ধরিত্রীর সকল নৃপতিগণ দস্যুস্বভাবসম্পন্ন হয়ে উঠবে তখন জগৎপতি শ্রীভগবান বিষ্ণুযশা নামক এক ব্রাহ্মণের গৃহে কল্কি অবতার রূপে আবির্ভূত হবেন ।
২৬) হে শৌনকাদি বিপ্রগণ ! বিশাল সরোবর থেকে যেমন অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নদী / জলপ্রবাহ প্রবাহিত হয় , ঠিক তেমনি সত্ত্বনিধি ভগবান শ্রীহরির থেকেই বিভিন্ন অবতার প্রকাশিত হন ।
২৭) মহাওজস্বী সমস্ত ঋষিগণ , মনুগণ , দেবতাগণ এবং মনুর সমগ্র বংশধরেরাও শ্রীভগবানের অংশ ও কলাবতার । প্রজাপতিগণও ভগবানের অংশ ও কলারই অন্তর্গত ।
২৮) পূর্বে উল্লিখিত সমস্ত অবতারগণ হচ্ছেন শ্রীভগবানের অংশাবতার বা কলাবতার । কিন্তু ভগবান শ্রীকৃষ্ণ হচ্ছেন এই সমস্ত অবতারগণের অবতারি । তিনিই প্রকৃত পরমেশ্বর। দুরাচারী পাপাত্মাদের অত্যাচারে পীড়িত পুণ্যাত্মা , বসুন্ধরার উদ্ধারের জন্য শ্রীভগবান যুগে যুগে এই ধরাধামে আবির্ভূত হন ।
২৯) শ্রীভগবানের দিব্য এই অবতারসমূহের আবির্ভাব অত্যন্ত গুহ্য এবং রহস্যময় । যে মানুষ এই গুহ্য এবং রহস্যময় কথা একাগ্রচিত্তে সকালে ও সন্ধ্যায় নিয়মিত ভক্তিপূর্বক পাঠ করেন তিনি জড়জাগতিক সমস্ত দুঃখ , দুর্দশার থেকে পরিত্রান পান ।
৩০) অপ্রাকৃত, চিন্ময়মূর্তি শ্রীভগবানের এই জড়জগতে যে বিশালাকার স্থুলরূপের আঙ্কলন করা হয় তা ভগবানের মায়াকর্তৃক সৃষ্ট প্রকৃতির গুনের দ্বারা করা হয় । তা কেবলই স্বল্পবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের এবং ভক্তিপথে নবাগতদের ভগবানের রূপ সম্পর্কে ধারণা প্রদানের জন্য ।
৩১) যেমনি মেঘ ও ধূলিকণা বায়ুর আশ্রয়ে থেকে বায়ুর দ্বারাই বাহিত হয় কিন্তু স্বল্পবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষসকল বলেন মেঘ আকাশে থাকে এবং ধূলিকণা বায়ুতে থাকে । তেমনভাবেই অজ্ঞব্যক্তিগণ সমস্তকিছুর সাক্ষী আত্মার উপর জড় জগতের স্থুলদৃষ্টি আরোপ করে ।
৩২) এই স্থুলদেহ থেকে উৎকৃষ্ট আর এক সূক্ষ্ম রূপ / দেহ রয়েছে যা অব্যক্ত , অব্যূঢ় , জড়গুনরহিত , অপ্রকাশিত , অদর্শনীয় এবং অশ্রুত । এই সূক্ষ্মশরীরে আত্মা আরোপিত বা অনুপ্রবিষ্ট হলেই তাকে জীব বলা হয় এবং এভাবেই জীবের পুনর্জন্ম হয় ।
৩৩) আত্মার স্বরূপ উপলব্ধির দ্বারা যখন কেউ এটা বুঝতে পারে যে অবিদ্যা ও অজ্ঞানের দ্বারাই আত্মা এইসকল শরীরে আরোপিত হয় এবং আত্মার সাথে এই স্থুল এবং সূক্ষ্ম শরীরের কোনো সম্পর্কই নেই , তখন তার ব্রহ্ম দর্শন হয় ।
৩৪) ভগবত কৃপাতে যখন শ্রীভগবানের এই মায়াশক্তির প্রভাব প্রশমিত হয় সেই সময় জীব পরমানন্দে পরিপূর্ণ হয়ে যান । তিনি পূর্ণ জ্ঞানপ্রাপ্ত হন , তার আর কোনো অজ্ঞান থাকে না । তিনি তখন আত্মজ্ঞানী হয়ে স্বমহিমাতে প্রতিষ্ঠিত হন ।
৩৫) তত্ত্বজ্ঞানী পন্ডিতগণ এভাবেই সেই জন্মরহিত শ্রীভগবানের অপ্রাকৃত কর্মের বর্ণনা করে থাকেন ; কারণ হৃদয়েশ্বর শ্রীভগবানের জন্ম এবং কর্ম - উভয়ই বেদের এক অতি গুহ্য রহস্য ।
৩৬) সেই পরমেশ্বর ভগবানের লীলা ও চরিত্র সর্বদাই নির্মল ও নিস্কলুষ । তিনি এই লীলাবিহারের দ্বারাই এই জগতের সৃষ্টি , পালন ও বিনাশ করে থাকেন । তিনি ষড়ইন্দ্রিয় ও ষড়ঐশ্বর্যের অধীশ্বর । তিনি প্রতিটি জীবের হৃদয়ে গুপ্তরূপে জ্ঞানেন্দ্রিয় ও মনের নিয়ন্তারূপে বিরাজ করেন । তিনি স্বতন্ত্র ও স্বাধীন , জড়জাগতিক কোনো কিছুতেই তিনি সংলিপ্ত হন না ।
৩৭) যেমন কোনো মূর্খ ব্যক্তি অভিনয়রত নটের অভিনয় সংকেত বুঝতে না পেরে ওই নটের চরিত্রের কিছুই অনুধাবন করতে পারে না ; তেমনি স্বল্পবুদ্ধিসম্পন্ন অবিবেকী মানুষেরা নটবৎ অভিনয়পরায়ণ শ্রীভগবানের পরম নাম , রূপ, লীলাবিহার কিছুই বুঝতে পারে না । তারা তাদের জল্পনা কল্পনার দ্বারা এর ধারণাও করতে পারে না ।
৩৮) সেই পরম শক্তিমান ও অসীম পরাক্রমী শ্রীভগবানের অনুধাবন করা কারোর পক্ষেই সম্ভবপর নয় । যাঁরা শ্রীকৃষ্ণচন্দ্রের পাদপদ্মের নিত্যনিরন্তর ভক্তিভরে একাগ্রচিত্ত হয়ে চিন্তন সেবন করেন, কেবলমাত্র তাঁরাই কৃষ্ণতত্ত্ব , কৃষ্ণলীলা ও কৃষ্ণস্বরূপ সম্পর্কে অবগত হতে পারেন ।
৩৯) হে শৌনকাদি মুনিগন ! আপনারা ধন্য । কারণ আপনারা এই বাধাবিঘ্নসংকুল সংসারে ,সমগ্র বিশ্বব্রহ্মান্ডের অধীশ্বর পরমেশ্বর ভগবান বাসুদেবের প্রতি আপনারা পূর্ণমাত্রায় অনির্বচনীয় নিরবিচ্ছিন্ন অনুরাগ পোষণ করেন । এর ফলে আপনাদের আর এই জন্ম মৃত্যুর ভয়ানক চক্রে আবর্তিত হতে হবে না ।
৪০) পরমেশ্বর শ্রীভগবানের অবতার বেদব্যাস এই ধরাতলে সমগ্র মানবের পরম মঙ্গল সাধনের উদ্দেশ্যে এই শ্রীমদ্ভাগবত মহাপুরাণের সংকলন করেছেন । শ্রীভগবানের অবতারগণ , তাঁদের লীলা , ও ভক্তচরিত্র বর্ণনা করার ফলে ইহা শ্রীভগবানের বাঙ্ময় বিগ্রহ । এটি সর্বতোভাবে সার্থক , আনন্দময় ও পরিপূর্ণ ।
৪১-৪২-৪৩) মহর্ষি ব্যাসদেব সমগ্র বৈদিক শাস্ত্রের ও ইতিহাসের সারতত্ত্ব আরোহন করার পর তার সংকলন এই শ্রীমদ্ভাগবত মহাপুরাণে করেছেন এবং আত্মতত্ত্বজ্ঞানীগণের শিরোমণি আপন পুত্র মহর্ষি শ্রীশুকদেবকে এই শাস্ত্রের অধ্যয়ন করান । শ্রীশুকদেব গোস্বামী গঙ্গার তটে প্রায়োপবেশনে ( আমরণ অনশনে ) উপবিষ্ট ও মহান মুনিঋষিগণে পরিবেষ্টিত মহারাজ পরীক্ষিৎকে এই শ্রীমদ্ভাগবত কথা শ্রবণ করিয়েছিলেন ।
৪৪) পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যখন তাঁর লীলাবিহার সমাপ্ত করে ধৰ্ম ও জ্ঞানসহ নিজের পরমধামে যাত্রা করলেন , তখন এই ঘোর কলিযুগের জ্ঞানচক্ষুরহিত অজ্ঞানীদের অজ্ঞানান্ধকার দূরীকরণের জন্য সূর্যের মতন এই উজ্বল ভাগবতপুরাণের উদয় হয়েছে ।
৪৫) হে শৌনকাদি মুনিগন ! মহর্ষি শুকদেব যখন মহারাজ পরীক্ষিতের সম্মুখে এই পরম পবিত্র ভাগবত শাস্ত্রের কীর্তন করছিলেন সেইসময় আমিও সেই সভায় উপস্থিত ছিলাম এবং একাগ্রচিত্তে ওই পাঠ শ্রবণ করছিলাম । সেই মহান তেজস্বী শ্রীশুকদেবের অনুগ্রহে আমি শ্রীমদ্ভাগবত হৃদয়ঙ্গম করেছিলাম । এখন আমি তাঁর থেকে যা শ্রবণ করেছিলাম , আমার উপলব্ধি অনুযায়ী তা আপনাদের শোনাব ।
আসুন আমরা সবাই একসাথে শ্রীমদ্ভাগবতম / শ্রীমদ্ ভাগবত মহাপুরাণের স্বাধ্যায় করে আমাদের জীবন পুন্য করি | আজকের মতো এইটুকুই,আমরা শেষ করব মহামন্ত্র দিয়ে |
যদি আপনার এই পোস্টটি পছন্দ হয়ে থাকে / ভালো লেগে থাকে নতুবা এখান থেকে কিছু নুতন জানতে পারেন তাহলে আমাদের সাবস্ক্রাইব অবশ্যই করবেন এবং আপন আত্মীয়পরিজন, বন্ধু-বান্ধবদের সাথে শেয়ার করবেন | আমার লেখা কেমন লাগলো তা অবশ্যই নিচে কমেন্ট বক্স এর মাধ্যমে কমেন্ট করে জানাবেন |
শ্রীমদ্ ভগবত গীতার উপর আমাদের টিউটোরিয়াল / শিক্ষামূলক সিরিজ পড়ার জন্য এই লিংকটি ক্লিক করে শ্রীমদ ভগবত গীতার অমৃতজ্ঞান পান করে জীবন পবিত্র ও পুন্য করুন |
শ্রীমদ্ ভগবত গীতা : https://bhagavadgitatutorial.blogspot.com
আপনারা আমার প্রণাম নেবেন |
ইতি
দীন ভক্ত দাসানুদাস
<--পূর্ববর্তী লেখনী পরবর্তী লেখনী-->
<--পূর্ববর্তী লেখনী পরবর্তী লেখনী-->
ভগবান শ্রীহরি
ভগবান শ্রীহরি
|| ওম নমঃ ভগবতে বাসুদেবায় ||
শ্রীমদ্ভাগবতম - প্রথম স্কন্ধ - তৃতীয় অধ্যায়
ভগবানের অবতারগণের বর্ণনা
প্রিয় ভক্তবৃন্দ এবং সুধীগণ,
পূর্ববর্তী লেখনীতে আমরা শ্রীমদ্ভাগবতমের প্রথম স্কন্ধের দ্বিতীয় অধ্যায় , ভগবৎকথা ও ভগবদ্ভক্তির মাহাত্ম্য সম্পর্কে জেনেছিলাম । আজ আমরা শ্রীমদ্ভাগবতমের প্রথম স্কন্ধের তৃতীয় অধ্যায় , ভগবানের অবতারগণের বর্ণনা সম্পর্কে জানব । এটি শুরু হয় সূত গোস্বামী দ্বারা শৌনকাদি মুনিদের প্রশ্নের উত্তর প্রদানের মাধ্যমে ।
শ্রীমদ্ভাগবতম - প্রথম স্কন্ধ - তৃতীয় অধ্যায় |
২) ভগবান পুরুষোত্তম জলে শায়িত অবস্থায় যোগনিদ্রা বিস্তার করে তাঁর নাভি সরোবরে একটি কমলের ( পদ্ম ) উৎপত্তির মাধ্যমে , তার মধ্যে সমস্ত জীবের পিতামহ ব্রহ্মার সৃষ্টি করেন ।
৩) পরমেশ্বর ভগবানের সেই বিশুদ্ধ , বিরাট পুরুষাবতার রূপের মধ্যে সমস্ত লোকসকল / ব্রহ্মান্ডসমূহ বিদ্যমান । তাঁর সেই পরম উত্তম রূপ সত্ব রূপের সাথে প্রকৃতির জড় উপাদানগুলির কোনোপ্রকার সম্বন্ধ নেই । তাঁর সেই পরম সত্বরূপ পরা-প্রকৃতিতে স্থিত ।
৪) ভক্তগণ , যোগীগণ এবং পরম জ্ঞানীগণ দিব্যচক্ষুর দ্বারা ভগবানের সেই আশ্চর্যময় বিশ্বরূপ দর্শন করেন । সহস্র পদ ,জঙ্ঘা , হস্ত , মুখসমন্বিত শ্রীভগবানের সেই রূপ পরম দিব্য । সেই রূপে অসংখ্য মস্তক , কর্ণ , চক্ষু ও নাসিকা বিদ্যমান যা অসংখ্য মুকুট ,বস্ত্র ও কুণ্ডলাদি অলংকারে সুশোভিত ছিল ।
৫) পরমেশ্বর ভগবানের এই দিব্য রূপ যা ক্ষীরোদসাগরে শায়িত শ্রীনারায়ণ নামে পরিচিত , তা ব্রহ্মান্ডে প্রকাশিত বিবিধ অবতারদের উৎস এবং অক্ষয় বীজস্বরূপ । এই রূপের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অংশ বা কলা দ্বারা দেবতা ,পশুপক্ষী ও মনুষ্যাদি জীবের সৃষ্টি হয় ।
৬) জগৎ সৃষ্টি করার আদিতে শ্রীভগবান , সনকাদি বাল ঋষিগন ( সনক , সনন্দন , সনাতন , সনৎকুমার ) রূপে অবতার গ্রহণ করেন এবং পরম সত্যের উপলব্ধি করার জন্য তাঁরা অত্যন্ত দুঃসাধ্য অখন্ড ব্রহ্মচর্য ব্রত পালন করেন ।
৭) তারপর এই পৃথিবী যখন রসাতলে ( ব্রহ্মান্ডের নিম্নতম প্রদেশ ) পতিত হয়েছিল তখন এই বিশ্বের মঙ্গলসাধনায় ইচ্ছুক যোগেশ্বর পরমেশ্বর ভগবান পৃথিবী উদ্ধারের জন্য বরাহ অবতার ধারণ করেন । বরাহ অবতার হলেন শ্রীভগবানের দ্বিতীয় অবতার ।
৮) ঋষিকল্পে শ্রীভগবান তাঁর তৃতীয় অবতার দেবর্ষি নারদরূপে আবির্ভূত হন । তিনি বেদের সাত্বত তন্ত্র ( বিশেষরূপে ভগবানের প্রেমময়ী সেবার ক্রম ) প্রচার করেছিলেন ; সেই তন্ত্রে , ফলবাসনারহিত / নিষ্কাম কর্মের দ্বারা কী করে সংসার চক্র থেকে মুক্ত হওয়া যায় তার উল্লেখ আছে ।
৯) চতুর্থ বার ধর্মরাজের পত্নী মূর্তির গর্ভে তিনি নর-নারায়ণ রূপে আবির্ভূত হন । এই অবতারে মন ও ইন্দ্রিয় সংযমের আদর্শ স্থাপন করার জন্য তাঁরা অত্যন্ত দুঃসাধ্য ও কঠোর তপস্যা করেছিলেন ।
শ্রীমদ্ভাগবতম - প্রথম স্কন্ধ - তৃতীয় অধ্যায় |
১১) শ্রীভগবান ষষ্ঠ অবতার রূপে সপ্তঋষিগণের প্রমুখ অত্রির পত্নী সতী অনুসূয়ার গর্ভে আবির্ভূত হন । তাঁর এই অবতার কে আমরা শ্রীদত্তাত্রেয় ভগবান বলে জানি । শ্রীদত্তাত্রেয় অবতারে তিনি অলর্ক , প্রহ্লাদ প্রমুখকে পারমার্থিক ব্রহ্মতত্ত্ব জ্ঞান প্রদান করেছিলেন ।
১২) সপ্তম অবতারে যিনি প্রজাপতি রুচির ধর্মপত্নী আকৃতির গর্ভে যজ্ঞরূপে আবির্ভূত হন । তিনি তার পুত্র যাম প্রমুখ দেবগনের সাথে স্বায়ম্ভূব মনুতে ব্রহ্মান্ডের প্রতিপালন করেছিলেন ।
১৩) মহারাজ নাভি এবং তার পত্নী মেরুদেবীর গর্ভে শ্রীভগবান তাঁর অষ্টম অবতার মহারাজ ঋষভদেবরূপে আবির্ভূত হয়েছিলেন । এই অবতার তিনি পূর্ণ সিদ্ধিলাভের পথ প্রদর্শন করেছিলেন যা সর্বতোভাবে জিতেন্দ্রিয় এবং সব আশ্রমের শ্রেষ্ঠ পরমহংসেরা তার অবলম্বন করেন ।
১৪) হে শৌনকাদি মুনিগন ! ঋষিগণের প্রার্থনায় সাড়া দিয়ে শ্রীভগবান তাঁর নবম অবতারে রাজা পৃথুরুপে অবতারিত হয়েছিলেন । এই অবতারে তিনি পৃথিবীর ঔষধিসমূহের দোহন করেছিলেন । এর ফলে বসুন্ধরাও পরম কামনীয় রূপ ধারণ করেছিল ।
১৫) চাক্ষুষ মন্বন্তরে যখন সমগ্র বিশ্ব সমুদ্রপ্লাবিত হয়েছিল তখন শ্রীভগবান মৎসাবতাররূপে আবির্ভূত হন । মৎসবতার শ্রীভগবানের দশম অবতার । এই অবতারে তিনি মৎসরূপ ধারণ করে পরবর্তী মন্বন্তরের অধিপতি বৈবস্বত মনুকে একটি বৈতরণীর ( নৌকার ) উপর রেখে তার রক্ষা করেছিলেন ।
১৬) তাঁর একাদশ অবতারে শ্রীভগবান কুর্মাবতার রূপে আবির্ভূত হয়েছিলেন । এই সময় তিনি তাঁর পিঠে মন্দরাচলপর্বত কে ধারণ করেছিলেন, যা সমুদ্রমন্থনের সময় দেবতা ও দৈত্যরা মন্থন-দণ্ডরূপে ব্যবহার করেছিলেন ।
১৭) তাঁর দ্বাদশ অবতারে শ্রীভগবান ধন্বন্তরিরূপে আবির্ভূত হয়ে নিজ হাতে অমৃতকুন্ড নিয়ে সমুদ্র থেকে উঠে এসেছিলেন এবং ত্রয়োদশ অবতারে তিনি মোহিনীরূপ ধারণ করে দানবদের সম্মোহিত করে দেবতাদের অমৃতপান করিয়েছিলেন ।
১৮) চতুর্দশ অবতারে শ্রীভগবান ভক্তরাজ প্রহ্লাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে নৃসিংহরূপে আবির্ভূত হয়ে দৈত্যরাজ হিরণ্যকশিপুর বক্ষ বিদীর্ণ করেছিলেন , ঠিক যেমন একজন সূত্রধর বা কটকার ( মাদুর বননকারী ) তার নখ দিয়ে এরকা তৃণ বিদীর্ণ করে ।
১৯) পঞ্চদশ অবতারে শ্রীভগবান বামন অবতার ধারণপূর্বক দৈত্যরাজ বলির ( প্রহ্লাদ পৌত্র ) যজ্ঞস্থলে গমন করেছিলেন । দেবতাদের স্বর্গ ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য তিনি দৈত্যরাজ বলির কাছে কেবলমাত্র ত্রিপাদ ভূমি ভিক্ষা করেছিলেন ও দৈত্যরাজ বলিকে উদ্ধার করেছিলেন ।
শ্রীমদ্ভাগবতম - প্রথম স্কন্ধ - তৃতীয় অধ্যায় |
২১) এরপর সপ্তদশ অবতারে তিনি মহর্ষি পরাশরের ঔরসে মাতা সত্যবতীর গর্ভে শ্রী কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস রূপে আবির্ভূত হয়েছিলেন । ওই সময় অজ্ঞান অন্ধকারে নিমজ্জিত স্বল্পবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের দুর্দশা দেখে তিনি তাদের মঙ্গলার্থে বৈদিক কল্পবৃক্ষের শাখাবিভাজন করেছিলেন ।
২২) অষ্টাদশ অবতারে শ্রীভগবান রাজা দশরথের পুত্র শ্রীরামচন্দ্র রূপে ধরাতলে অবতীর্ণ হন । দেবকার্য সম্পাদনের জন্য তিনি সেতুবন্ধ , রাবণ বধ আদি নানাবিধ অলৌকিক কার্য সম্পাদন করে তাঁর অসাধারণ বীরত্বের প্রদর্শন করেছিলেন ।
২৩) ঊনবিংশ এবং বিংশ অবতারে তিনি বৃশ্নি / যদুবংশে শ্রীবলরাম এবং শ্রীকৃষ্ণরূপে ( বসুদেবের পুত্র ) আবির্ভূত হয়ে এই বসুন্ধরার ভার হরণ করেছিলেন ।
২৪) তারপর কলিযুগের প্রারম্ভে ভগবতবিদ্বেষী নাস্তিকদের সম্মোহিত করার উদ্দেশে শ্রীভগবান মগধদেশে ( গয়াপ্রদেশে ) অঞ্জনার পুত্ররূপে বুদ্ধাবতার হবেন ।
২৫) এরপরে কলির যুগসন্ধিক্ষণে যখন এই ধরিত্রীর সকল নৃপতিগণ দস্যুস্বভাবসম্পন্ন হয়ে উঠবে তখন জগৎপতি শ্রীভগবান বিষ্ণুযশা নামক এক ব্রাহ্মণের গৃহে কল্কি অবতার রূপে আবির্ভূত হবেন ।
২৭) মহাওজস্বী সমস্ত ঋষিগণ , মনুগণ , দেবতাগণ এবং মনুর সমগ্র বংশধরেরাও শ্রীভগবানের অংশ ও কলাবতার । প্রজাপতিগণও ভগবানের অংশ ও কলারই অন্তর্গত ।
২৮) পূর্বে উল্লিখিত সমস্ত অবতারগণ হচ্ছেন শ্রীভগবানের অংশাবতার বা কলাবতার । কিন্তু ভগবান শ্রীকৃষ্ণ হচ্ছেন এই সমস্ত অবতারগণের অবতারি । তিনিই প্রকৃত পরমেশ্বর। দুরাচারী পাপাত্মাদের অত্যাচারে পীড়িত পুণ্যাত্মা , বসুন্ধরার উদ্ধারের জন্য শ্রীভগবান যুগে যুগে এই ধরাধামে আবির্ভূত হন ।
২৯) শ্রীভগবানের দিব্য এই অবতারসমূহের আবির্ভাব অত্যন্ত গুহ্য এবং রহস্যময় । যে মানুষ এই গুহ্য এবং রহস্যময় কথা একাগ্রচিত্তে সকালে ও সন্ধ্যায় নিয়মিত ভক্তিপূর্বক পাঠ করেন তিনি জড়জাগতিক সমস্ত দুঃখ , দুর্দশার থেকে পরিত্রান পান ।
শ্রীমদ্ভাগবতম - প্রথম স্কন্ধ - তৃতীয় অধ্যায় |
৩১) যেমনি মেঘ ও ধূলিকণা বায়ুর আশ্রয়ে থেকে বায়ুর দ্বারাই বাহিত হয় কিন্তু স্বল্পবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষসকল বলেন মেঘ আকাশে থাকে এবং ধূলিকণা বায়ুতে থাকে । তেমনভাবেই অজ্ঞব্যক্তিগণ সমস্তকিছুর সাক্ষী আত্মার উপর জড় জগতের স্থুলদৃষ্টি আরোপ করে ।
৩২) এই স্থুলদেহ থেকে উৎকৃষ্ট আর এক সূক্ষ্ম রূপ / দেহ রয়েছে যা অব্যক্ত , অব্যূঢ় , জড়গুনরহিত , অপ্রকাশিত , অদর্শনীয় এবং অশ্রুত । এই সূক্ষ্মশরীরে আত্মা আরোপিত বা অনুপ্রবিষ্ট হলেই তাকে জীব বলা হয় এবং এভাবেই জীবের পুনর্জন্ম হয় ।
৩৩) আত্মার স্বরূপ উপলব্ধির দ্বারা যখন কেউ এটা বুঝতে পারে যে অবিদ্যা ও অজ্ঞানের দ্বারাই আত্মা এইসকল শরীরে আরোপিত হয় এবং আত্মার সাথে এই স্থুল এবং সূক্ষ্ম শরীরের কোনো সম্পর্কই নেই , তখন তার ব্রহ্ম দর্শন হয় ।
৩৪) ভগবত কৃপাতে যখন শ্রীভগবানের এই মায়াশক্তির প্রভাব প্রশমিত হয় সেই সময় জীব পরমানন্দে পরিপূর্ণ হয়ে যান । তিনি পূর্ণ জ্ঞানপ্রাপ্ত হন , তার আর কোনো অজ্ঞান থাকে না । তিনি তখন আত্মজ্ঞানী হয়ে স্বমহিমাতে প্রতিষ্ঠিত হন ।
৩৫) তত্ত্বজ্ঞানী পন্ডিতগণ এভাবেই সেই জন্মরহিত শ্রীভগবানের অপ্রাকৃত কর্মের বর্ণনা করে থাকেন ; কারণ হৃদয়েশ্বর শ্রীভগবানের জন্ম এবং কর্ম - উভয়ই বেদের এক অতি গুহ্য রহস্য ।
৩৬) সেই পরমেশ্বর ভগবানের লীলা ও চরিত্র সর্বদাই নির্মল ও নিস্কলুষ । তিনি এই লীলাবিহারের দ্বারাই এই জগতের সৃষ্টি , পালন ও বিনাশ করে থাকেন । তিনি ষড়ইন্দ্রিয় ও ষড়ঐশ্বর্যের অধীশ্বর । তিনি প্রতিটি জীবের হৃদয়ে গুপ্তরূপে জ্ঞানেন্দ্রিয় ও মনের নিয়ন্তারূপে বিরাজ করেন । তিনি স্বতন্ত্র ও স্বাধীন , জড়জাগতিক কোনো কিছুতেই তিনি সংলিপ্ত হন না ।
৩৭) যেমন কোনো মূর্খ ব্যক্তি অভিনয়রত নটের অভিনয় সংকেত বুঝতে না পেরে ওই নটের চরিত্রের কিছুই অনুধাবন করতে পারে না ; তেমনি স্বল্পবুদ্ধিসম্পন্ন অবিবেকী মানুষেরা নটবৎ অভিনয়পরায়ণ শ্রীভগবানের পরম নাম , রূপ, লীলাবিহার কিছুই বুঝতে পারে না । তারা তাদের জল্পনা কল্পনার দ্বারা এর ধারণাও করতে পারে না ।
শ্রীমদ্ভাগবতম - প্রথম স্কন্ধ - তৃতীয় অধ্যায় |
৩৯) হে শৌনকাদি মুনিগন ! আপনারা ধন্য । কারণ আপনারা এই বাধাবিঘ্নসংকুল সংসারে ,সমগ্র বিশ্বব্রহ্মান্ডের অধীশ্বর পরমেশ্বর ভগবান বাসুদেবের প্রতি আপনারা পূর্ণমাত্রায় অনির্বচনীয় নিরবিচ্ছিন্ন অনুরাগ পোষণ করেন । এর ফলে আপনাদের আর এই জন্ম মৃত্যুর ভয়ানক চক্রে আবর্তিত হতে হবে না ।
৪০) পরমেশ্বর শ্রীভগবানের অবতার বেদব্যাস এই ধরাতলে সমগ্র মানবের পরম মঙ্গল সাধনের উদ্দেশ্যে এই শ্রীমদ্ভাগবত মহাপুরাণের সংকলন করেছেন । শ্রীভগবানের অবতারগণ , তাঁদের লীলা , ও ভক্তচরিত্র বর্ণনা করার ফলে ইহা শ্রীভগবানের বাঙ্ময় বিগ্রহ । এটি সর্বতোভাবে সার্থক , আনন্দময় ও পরিপূর্ণ ।
৪১-৪২-৪৩) মহর্ষি ব্যাসদেব সমগ্র বৈদিক শাস্ত্রের ও ইতিহাসের সারতত্ত্ব আরোহন করার পর তার সংকলন এই শ্রীমদ্ভাগবত মহাপুরাণে করেছেন এবং আত্মতত্ত্বজ্ঞানীগণের শিরোমণি আপন পুত্র মহর্ষি শ্রীশুকদেবকে এই শাস্ত্রের অধ্যয়ন করান । শ্রীশুকদেব গোস্বামী গঙ্গার তটে প্রায়োপবেশনে ( আমরণ অনশনে ) উপবিষ্ট ও মহান মুনিঋষিগণে পরিবেষ্টিত মহারাজ পরীক্ষিৎকে এই শ্রীমদ্ভাগবত কথা শ্রবণ করিয়েছিলেন ।
৪৪) পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যখন তাঁর লীলাবিহার সমাপ্ত করে ধৰ্ম ও জ্ঞানসহ নিজের পরমধামে যাত্রা করলেন , তখন এই ঘোর কলিযুগের জ্ঞানচক্ষুরহিত অজ্ঞানীদের অজ্ঞানান্ধকার দূরীকরণের জন্য সূর্যের মতন এই উজ্বল ভাগবতপুরাণের উদয় হয়েছে ।
৪৫) হে শৌনকাদি মুনিগন ! মহর্ষি শুকদেব যখন মহারাজ পরীক্ষিতের সম্মুখে এই পরম পবিত্র ভাগবত শাস্ত্রের কীর্তন করছিলেন সেইসময় আমিও সেই সভায় উপস্থিত ছিলাম এবং একাগ্রচিত্তে ওই পাঠ শ্রবণ করছিলাম । সেই মহান তেজস্বী শ্রীশুকদেবের অনুগ্রহে আমি শ্রীমদ্ভাগবত হৃদয়ঙ্গম করেছিলাম । এখন আমি তাঁর থেকে যা শ্রবণ করেছিলাম , আমার উপলব্ধি অনুযায়ী তা আপনাদের শোনাব ।
। ইতি শ্রীমদ্ভাগবতে শ্রীমহাপুরাণে পারমহংস্যাং সংহিতায়াং প্রথমস্কন্ধে নৈমিষীয়োপাখ্যানে তৃতীয়োহধ্যায়ঃ।
আসুন আমরা সবাই একসাথে শ্রীমদ্ভাগবতম / শ্রীমদ্ ভাগবত মহাপুরাণের স্বাধ্যায় করে আমাদের জীবন পুন্য করি | আজকের মতো এইটুকুই,আমরা শেষ করব মহামন্ত্র দিয়ে |
হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে |
হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে ||
যদি আপনার এই পোস্টটি পছন্দ হয়ে থাকে / ভালো লেগে থাকে নতুবা এখান থেকে কিছু নুতন জানতে পারেন তাহলে আমাদের সাবস্ক্রাইব অবশ্যই করবেন এবং আপন আত্মীয়পরিজন, বন্ধু-বান্ধবদের সাথে শেয়ার করবেন | আমার লেখা কেমন লাগলো তা অবশ্যই নিচে কমেন্ট বক্স এর মাধ্যমে কমেন্ট করে জানাবেন |
শ্রীমদ্ ভগবত গীতার উপর আমাদের টিউটোরিয়াল / শিক্ষামূলক সিরিজ পড়ার জন্য এই লিংকটি ক্লিক করে শ্রীমদ ভগবত গীতার অমৃতজ্ঞান পান করে জীবন পবিত্র ও পুন্য করুন |
শ্রীমদ্ ভগবত গীতা : https://bhagavadgitatutorial.blogspot.com
আপনারা আমার প্রণাম নেবেন |
ইতি
দীন ভক্ত দাসানুদাস
<--পূর্ববর্তী লেখনী পরবর্তী লেখনী-->
No comments:
Post a Comment