চতুঃশ্লোকী ভাগবত এবং ভাগবত মাহাত্ম্য - Chatushloki Bhagavata and Grace of Srimad Bhagavatam - The Srimad Bhagavatam

পড়ুন


The Srimad Bhagavatam

Saturday 2 November 2019

চতুঃশ্লোকী ভাগবত এবং ভাগবত মাহাত্ম্য - Chatushloki Bhagavata and Grace of Srimad Bhagavatam

Srimad Bhagavatam in Bengali, srimad bhagavatam online, Srimad Bhagavatam PDF, Srimad Bhagavatam Vedabase, ভাগবত মহাপুরাণ, শ্রীমদ্ভাগবতম, Bhagavata Purana, Bhagavatam, Srimad Bhagavatam, Bhagavata Purana, Srimad Bhagavatam in Bengali, Bhagavata Purana in Bengali, Bhagavata Mahapurana, Sanatana Dharma, Bhagavata Mahapurana, Srimad Bhagavatam Bangla, Gita, শ্রীমদ্ ভাগবতম, শ্রীমদ্ ভাগবত মহাপুরান, শ্রীমদ্ ভাগবত পুরান, Srimad Bhagavatam online , চতুঃশ্লোকী ভাগবত এবং ভাগবত মাহাত্ম্য, Chatushloki Bhagavata and Grace of Srimad Bhagavatam

<--পূর্ববর্তী লেখনী                                                 পরবর্তী লেখনী-->


|| ওম নমঃ ভগবতে বাসুদেবায় ||


চতুঃশ্লোকী ভাগবত এবং ভাগবত মাহাত্ম্য 


প্রিয় ভক্তবৃন্দ এবং সুধীগণ,

আজ আমরা চতুঃশ্লোকী ভাগবত এবং শ্রীমদ্ভাগবত মাহাত্ম্য সম্পর্কে জানবো । তাহলে চলুন,শুরু করা যাক ।

আমরা জানি মহর্ষি বেদব্যাস ১৭ টি পুরাণ এবং মহাভারত লেখা সমাপ্ত করে ফেলেছেন, কিন্তু তখনও মনের মধ্যে শান্তি পাননি, শান্তির জন্য ব্যাকুল হয়ে রয়েছেন, তখন গুরুদেব দেবর্ষি নারদের পরামর্শে মহর্ষি বেদব্যাস এই পবিত্র ভাগবত শাস্ত্রটি রচনা করেন এবং আপন পুত্র মহর্ষি শুকদেবকে এই গ্রন্থের অধ্যয়ন করান |

চতুঃশ্লোকী ভাগবত :

দেবর্ষি নারদ শ্রীভগবানের এই তত্ত্ব , প্রথমে চারটি শ্লোকের মাধ্যমে মহর্ষি বেদব্যাসকে শ্রবণ করান । এটিই চতুঃশ্লোকী ভাগবত নামে পরিচিত । এই ৪ টি শ্লোক থেকেই পরবর্তী কালে মহর্ষি বেদব্যাস এই সুবিশাল শ্রীমদ্ভাগবত শাস্ত্রটি রচনা করেন । তাহলে চলুন আমরা সর্বপ্রথম এই দুর্লভ চতুঃশ্লোকী ভাগবত সম্পর্কে জেনে নেই ।

Chatushloki Bhagavata in bengali

                                   চতুঃশ্লোকী ভাগবত

এবার আমরা এই ৪ টি শ্লোকের অর্থ এক এক করে জেনে নেব ।

১) এই সমগ্র সৃষ্টির পূর্বে কেবল আমিই ছিলাম । সেই সময় আমি ভিন্ন স্থুল , সূক্ষ, এবং স্থুল-সূক্ষ্মের কারণ যে অজ্ঞান, তা কিছুই ছিল না । এই সৃষ্টি যেখানে নেই, সেখানে শুধু আমিই আছি এবং এই সৃষ্টিরূপে যা কিছু প্রতীত হচ্ছে তাও আমিই , আবার তার অতিরিক্ত অবশিষ্ট যা কিছু আছে তাও আমিই ।

২) বাস্তবে যেখানে যা নেই কিন্তু কিছু একটা পদার্থের জ্ঞান হচ্ছে , যেমন দুটি সূর্য,চন্দ্র না থাকা স্বত্তেও গগনে এবং জলে প্রতিবিম্ব রূপে দুটি সূর্য,চন্দ্র দেখা যায় ( যদিও সেটি মিথ্যা ); অথবা যা বিদ্যমান কিন্তু বোঝা যাচ্ছে না , যেমন আকাশে রাহু,কেতু নামে দুটি গ্রহ আছে (কিন্তু রাহু,কেতুর দর্শন হচ্ছে না ) - এই দুই অবস্থাই অভাবনীয় ব্যাপার, একে আমার মায়া বলে জানবে ।

৩) ক্ষিতি, অপ, তেজ ইত্যাদি মহাভুত যেমন ভৌতিক ঘটপটাদিতে থাকে বা মনুষ্যাদি জীবদেহে অনুপ্রবিষ্ট থাকে, আবার জীবদেহ ছাড়া অন্যত্রও আকাশাদি বর্তমান, সুতরাং তাতে অপ্রবিষ্টও বটে , সেইরকম  সেইসকল জীবদেহের দিক থেকে দেখলে আমি তাদের মধ্যে আত্মারূপে (চৈতন্য শক্তিরূপে ) প্রবেশ করে রয়েছি, আবার আত্মদৃষ্টিতে (তত্বদৃষ্টিতে) আমি ছাড়া অন্য কোথাও আর কিছু নেই বলে আমি এদের মধ্যে প্রবিষ্ট না হয়েও রয়েছি ।

৪) 'এটি ব্রহ্ম নয় , এটি ব্রহ্ম নয়' - এইরকম ব্যতিরেক পদ্ধতি এবং 'এটি ব্রহ্ম, এটি ব্রহ্ম' - এইরকম অন্বয় পদ্ধতির দ্বারা এই সিদ্ধান্তই উপনীত হয় যে সর্বতীত, সর্বব্যাপক,সর্বস্বরূপ ভগবানই সর্বএই সর্বদা অবস্থিত আছেন- তিনিই প্রকৃত তত্ত্ব । আত্মা বা পরমাত্মার সম্পর্কে উৎসাহীদের এই বিষয়টাই জানা প্রয়োজন ।


আসুন আমরা এখন স্বয়ং শ্রীভগবান কর্তৃক ব্রহ্মাকে বর্ণিত শ্রীমদ্ভাগবত মাহাত্ম্য সম্পর্কে  জেনে নেই। 

 ভাগবত মাহাত্ম্য : 

The Grace of Srimad Bhagavatam
শ্রীমদ্ভাগবত মাহাত্ম্য
১) লোকবিখ্যাত শ্রীমদ্ভাগবত পুরাণ প্রত্যহ শ্রদ্ধাযুক্ত চিত্তে শ্রবন করা উচিত । ইহা আমার পরম সন্তোষের কারণ হয় ।


২) যে ব্যক্তি প্রতিদিন ভাগবত মহাপুরাণ পাঠ করে, সে প্রতিটি অক্ষর উচ্চারণের সাথে সাথে কপিলা গোমাতা দানের পুন্য অর্জন করে ।


৩) যে ব্যক্তি প্রতিদিন অর্ধেক বা এক-চতুর্থাংশ ভাগবত পাঠ বা শ্লোক শ্রবন করে, তার এক সহস্র গোমাতা দানের ফল লাভ হয় ।


৪) হে পুত্র ! পবিত্রচিত্ত হয়ে যে প্রতিদিন ভাগবতের একটি শ্লোক পাঠ করে তার অষ্টাদশ পুরাণ পাঠের ফলপ্রাপ্তি হয় ।


৫) নিত্য যেখানে আমার কথা হয় সেখানে বিষ্ণুপার্ষদ প্রহ্লাদ প্রমুখ উপস্থিত থাকেন । আমার এই ভাগবত শাস্ত্রের যে প্রতিদিন পূজা করে সে কলির প্রভাব থেকে মুক্ত থাকে, তার উপর কলির কোনো অধিকার থাকে না ।


৬) যে মানুষ নিজ ঘরে বৈষ্ণবশাস্ত্রের পূজা করে সে সর্বপ্রকার পাপ থেকে মুক্ত হয়ে দেবতাদের দ্বারাও বন্দনীয় হয় ।


৭) কলিযুগে যারা প্রতিদিন নিজ ঘরে ভাগবত শাস্ত্রের পূজা করেন তারা আনন্দচিত্তে এই ভূমণ্ডলে বিচরণ করেন এবং কলির থেকে নির্ভয়ী হয়ে আস্ফালন করেন । তাদের উপর আমি সতত প্রসন্ন থাকি ।
৮)  হে পুত্র ! মানুষ যতদিন পর্যন্ত তার ঘরে ভাগবত শাস্ত্র রক্ষা করে, তার পিতৃপুরুষগন ততদিন পর্যন্ত দুধ, ঘি, মধু, ও সুস্বাদু পানীয় পান করেন ।


The Grace of Srimad Bhagavatam
শ্রীমদ্ভাগবত মাহাত্ম্য
 ৯)  বিষ্ণুভক্ত মানুষকে যে ভক্তিযুক্ত চিত্তে ভাগবত শাস্ত্র দান করে সে সহস্রকোটি কল্প পর্যন্ত আমার বৈকুণ্ঠধামে নিবাস করে ।
১০) নিজ গৃহে ভাগবত পুজনকারী ব্যক্তি এক কল্প পর্যন্ত সমস্ত দেবতাদের পরিতৃপ্ত করে ।
১১) নিজ গৃহে ভাগবতের অর্ধ বা একচতুর্থ শ্লোকও যদি থাকে তবে তার কাছে অন্যান্য শত সহস্র গ্রন্থের সংগ্রহও তুচ্ছ ।
১২) কলিযুগে যার গৃহে ভাগবত শাস্ত্র থাকে না, তার যমপাশ থেকে কখনো মুক্তি নেই ।
১৩) এই কলিযুগে যার গৃহে ভাগবত শাস্ত্র নেই, তাকে কি বৈষ্ণব বলা যায় ? সে তো চণ্ডালেরও অধম ।
১৪) হে লোকেশ ব্রহ্মা ! আমার নিত্য সন্তুষ্টির জন্য সর্বস্বের বিনিময়েও মানুষের এই বৈষ্ণবশাস্ত্র সংগ্রহ করা উচিৎ ।
১৫) এই কলিযুগে যেখানে যেখানে ভাগবতশাস্ত্র রক্ষিত থাকে, দেবতাদের সাথে নিয়ে আমি সর্বদাই সেখানে উপস্থিত থাকি ।
১৬) শুধু তাই নয়, সেখানে গঙ্গাদি নদী, ব্রহ্মপুত্রাদি নদ ও মানস সরোবরাদি সকল তীর্থ বাস করে । সম্পূর্ণ যজ্ঞ, মুক্তিদাত্রী অযোধ্যাদি সপ্তপুরী এবং পাবন পর্বতসমূহও সেখানে সতত নিবাস করে ।


The Grace of Srimad Bhagavatam
শ্রীমদ্ভাগবত মাহাত্ম্য
১৭) হে লোকেশ ! যশ, ধৰ্ম, বিজয়প্রাপ্তির জন্য এবং পাপক্ষয় ও মোক্ষপ্রাপ্তির জন্য ধার্মিক মানুষের সর্বদাই আমার ভাগবতশাস্ত্র শ্রবন করা উচিৎ ।
১৮) এই পাবন শ্রীমদ্ভাগবতপুরাণ আয়ু, আরোগ্য, ও পুষ্টিদাতা ; এই শাস্ত্র পাঠ অথবা শ্রবনে মানুষ সকলপ্রকার পাপ থেকে মুক্ত হয়ে যায় ।
১৯) হে লোকেশ !এই পরম উত্তম ভাগবত যে শ্রবন  না করে, আর শুনলেও যে আনন্দিত হয় না, যমরাজই তাদের প্রভু - তারা সর্বদাই যমরাজের বশে থাকে  - আমি এইকথা সত্য করে বলছি ।
২০) হে পুত্র ! যে মানুষ সর্বদাই - বিশেষতঃ একাদশী তিথিতে ভাগবত শুনতে না যায়, তার মতো পাপী আর কেউ নেই ।
২১) যার ঘরে ভাগবতের একটি শ্লোক অথবা শ্লোকের একটি পদ লেখা থাকে, তার ঘরে আমি নিবাস করি ।
২২) মনুষ্যলোকে সমস্ত পুন্য-আশ্রমে বা সম্পূর্ণ তীর্থসমূহে স্নানও তত পুন্যাকারক নয়, শুধুমাত্র এই শ্রীমদ্ভাগবত যতটা পুন্যাকারক ।
২৩) হে চতুর্মুখ ! যেখানে যেখানে ভাগবত কথা পাঠ হয়, বৎসপ্রিয়া গাভীর মতো আমি সেখানে সেখানে গমন করি ।
২৪) যে আমার এই ভাগবত কথা পাঠ করে, যে সদাই ভাগবত কথা শ্রবন করে আর আমার এই কথা শুনে যে হার্দিক প্রীতি লাভ করে তাকে আমি কখনো ত্যাগ করি না ।

The Grace of Srimad Bhagavatam
শ্রীমদ্ভাগবত মাহাত্ম্য
২৫) হে পুত্র ! যে ব্যক্তি এই পরম পুণ্যময় শ্রীমদ্ভাগবতশাস্ত্র দেখে সম্মান প্রদর্শনপূর্বক নিজের আসন থেকে উঠে না দাঁড়ায়, তার এক বছরের অর্জিত ধর্মকর্মের সমস্ত পুণ্যই নষ্ট হয়ে যায় ।
২৬) শ্রীমদ্ভাগবত গ্রন্থ দর্শনে যে প্রত্যূথান, প্রণাম ইত্যাদির দ্বারা তাকে সম্মান প্রদর্শন করে, তাকে দেখে আমি অনুপম আনন্দ লাভ করি ।
২৭) যে দূর থেকে শ্রীমদ্ভাগবত দর্শন করে তার সামনে যায়, সে প্রতি পদক্ষেপেই অশ্বমেধ যজ্ঞের পুন্য লাভ করে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই ।
২৮)  যে ব্যক্তি শ্রীমদ্ভাগবতকে দর্শন করে দাঁড়িয়ে তাকে প্রণাম করে, তাকে আমি ধন, স্ত্রী, পুত্র,আর আমার ভক্তি প্রদান করি ।
২৯) হে পুত্র ! মাহারাজোচিত সামগ্রীসমূহে যুক্ত হয়ে ভক্তিভরে যে শ্রীমদ্ভাগবতের কথা শ্রবণ করে, আমি তার বশীভূত হয়ে যাই ।
৩০-৩১) হে সুব্রত ! যে ব্যক্তি পার্বন সম্বন্ধীয় সমস্ত উৎসবাদিতে আমার প্রসন্নতার জন্য বস্ত্র, অলংকার, পুষ্প, ধুপ, ইত্যাদি অর্পণ করে পরম উত্তম শ্রীমদ্ভাগবতপুরাণ ভক্তিভরে শ্রবণ করে, পতিব্রতা রমণী যেমন সচ্চরিত্র স্বামীকে বশীভূত করে, ওই ব্যক্তি আমাকে সেইরকমই নিজের বশীভূত করে রাখে ।



------------------ শ্রীভগবান কর্তৃক ব্রহ্মাকে বর্ণিত শ্রীমদ্ভাগবত মাহাত্ম্য সমাপ্ত -----------------

 

বিঃ দ্রঃ  : স্কন্দপুরাণস্থিত বিষ্ণুখন্ডে মার্গশীর্ষমাহাত্ম্য অধ্যায় ১৬ এ বর্ণিত শ্রীমদ্ভাগবত মাহাত্ম্য
 
আজকের মতো এইটুকুই,আমরা শেষ করব মহামন্ত্র দিয়ে |

হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে  |

হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে  ||


যদি আপনার এই পোস্টটি পছন্দ হয়ে থাকে / ভালো লেগে থাকে নতুবা এখান থেকে কিছু নুতন জানতে পারেন তাহলে আমাদের সাবস্ক্রাইব অবশ্যই করবেন এবং আপন আত্মীয়পরিজন, বন্ধু-বান্ধবদের সাথে শেয়ার করবেন | আমার লেখা কেমন লাগলো তা অবশ্যই নিচে কমেন্ট বক্স এর মাধ্যমে কমেন্ট করে জানাবেন |

শ্রীমদ্ ভাগবত গীতার উপর আমাদের টিউটোরিয়াল / শিক্ষামূলক সিরিজ পড়ার জন্য এই লিংকটি ক্লিক করে শ্রীমদ ভাগবত গীতার অমৃতজ্ঞান পান করে জীবন পবিত্র ও পুন্য করুন |

শ্রীমদ্ ভাগবত গীতা : https://bhagavadgitatutorial.blogspot.com

আপনারা আমার প্রণাম নেবেন | 

ইতি
দীন ভক্ত দাসানুদাস


<--পূর্ববর্তী লেখনী                                                 পরবর্তী লেখনী-->

No comments:

Post a Comment