শ্রীমদ্ভাগবতম-প্রথম স্কন্ধ-প্রথম অধ্যায়, Bhagavatam-First Canto-First Chapter , Bhagavatam,Srimad Bhagavatam, Bhagavata Purana, Srimad Bhagavatam in Bengali,
Bhagavata Purana in Bengali, Bhagavata Mahapurana, Sanatana Dharma,
Bhagavata Mahapurana, Srimad Bhagavatam Bangla, Gita, শ্রীমদ্ ভাগবতম,
শ্রীমদ্ ভাগবত মহাপুরান, শ্রীমদ্ ভাগবত পুরান, Srimad Bhagavatam online, শ্রীমদ ভাগবত,ভাগবত মহাপুরা, সূতের কাছে শৌনকাদি মুনিগণের প্রশ্ন
<--পূর্ববর্তী লেখনী পরবর্তী লেখনী-->
প্রিয় ভক্তবৃন্দ এবং সুধীগণ,
পূর্ববর্তী লেখনীতে আমরা শ্রীমদ্ভাগবতমাহাত্ম্যের ষষ্ট অধ্যায়, সপ্তাহযজ্ঞের নিয়ম সম্পর্কে জেনেছিলাম । আজ আমরা শ্রীমদ্ভাগবতমের প্রথম স্কন্ধের প্রথম অধ্যায় , সূতের কাছে শৌনকাদি মুনিগণের প্রশ্ন সম্পর্কে জানব । এটি শুরু হয় মঙ্গলাচরণ এবং মহামতি সূতের কাছে শৌনকাদি মুনিগণের প্রশ্নের মাধ্যমে ।
১) যিনি সমস্ত ব্রহ্মান্ডের কর্তা , যিনি সৃষ্টি , স্থিতি ও প্রলয়ের কারণ , যিনি সমস্ত পদার্থে সদ্রূপে বিদ্যমান এবং অসৎ থেকে পৃথক ; যিনি সর্বতোভাবে স্বাধীন , পরতন্ত্র নহেন এবং সর্বাতীত - আমি সেই পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণচন্দ্রের ধ্যান করি । যিনি সৃষ্টির আদিকালে প্রজাপতি ব্রহ্মার নিকট সেই পরম গুহ্য বেদজ্ঞানের প্রকাশ করেছিলেন ; যাঁর তত্ত্বনিরুপন করতে গিয়ে জ্ঞানীগুণী পন্ডিতগণ , মহান ঋষিগণ এমন কি স্বর্গের দেবতারাও পর্যন্ত মোহাচ্ছন্ন হয়ে পড়েন । যেমন সূর্যের তেজোময় রশ্মিতে স্থলের মধ্যে জলভ্রম হয় ( মরীচিকা ) , আবার জলেতেও স্থলভ্রম হয় তেমনি তাঁর মধ্যে সতঃ , রজ ও তম এই ত্রিগুণাত্মক জাগ্রত - নিদ্রাময় ও সুষুপ্তিরূপ এই জড় জগৎ সম্পূর্ণরূপে অলীক হলেও তাঁরই প্রভাবে সত্যবৎ প্রতিভাত হয় । সেই স্বয়ংপ্রকাশময় ত্রিগুণাতীত মায়া-মোহ থেকে সম্পর্ণরূপে মুক্ত পরমসত্যরূপ পরমাত্মার ধ্যান করি ।
২) মহর্ষি ব্যাসদেব তাঁর বিরচিত এই শ্রীমদ্ভাগবত মহাপুরাণে পরমা মুক্তির ধর্ম নিরুপন করেছেন যা সর্বপ্রকার জড়জাগতিক মায়া-মোহ , মোক্ষফল কামনামুক্ত । এই শ্রীমদ্ভাগবত শাস্ত্র যথার্থরূপেই সেই পরম আত্মতত্বের নিরুপন করে যা নির্মৎসর ( শুদ্ধ অন্তঃকরণযুক্ত সৎপুরুষ ) ভক্তগণের জ্ঞাতব্য বিষয় । ইহা সর্বতোভাবেই তাপত্রয় উন্মূলক এবং পরম মঙ্গলময় । যখন ভগবততত্বজ্ঞান পান করার জন্য শ্রীমদ্ভাগবত শাস্ত্রই পর্যাপ্ত তখন অন্যান্য শাস্ত্রের আর সেইরূপ কি প্রয়োজন ? যখন কোনো সুকৃতীসম্পন্ন পুরুষ শ্রদ্ধাবনত হয়ে স্থিরচিত্তে এই শ্রীমদ্ভাগবত কথা শ্রবণ করেন , তৎক্ষণাৎ শ্রীভগবান তার হৃদয়ে অধিষ্ঠান করেন ।
৩) হে সকল ভক্তগণ ! বেদ শাস্ত্র হল কল্পবৃক্ষ আর এর সুপক্ক ফল হল এই শ্রীমদ্ভাগবত শাস্ত্র । মহর্ষি শুকদেবের মুখনিঃসৃত হওয়ার কারণে এই বাণী পরম আনন্দপ্রদানকারী অমৃতে পরিপূর্ণ । শ্রীমদ্ভাগবতের সবকিছুই গ্রাহ্য , অগ্রাহ্য বলে কিছুই নেই । তাই হে রসিক ভক্তবৃন্দ - এই রসামৃত আপনারা নিরন্তর পান করুন । এটি হল রসভান্ড যা কেবল মর্ত্যলোকেই পাওয়া সম্ভব ।
৪) পুরাকালে ভগবান এবং দেবতাদের প্রিয় ও পুণ্যময় নৈমিষারণ্য ক্ষেত্রে শৌনকাদি মুনি-ঋষিগণ, পরমেশ্বর ভগবানপ্রাপ্তি ও ভক্তগণের প্রীতিসাধনের নিমিত্ত একদা এক সহস্র বৎসর ব্যাপী যজ্ঞের অনুষ্ঠান করেছিলেন।
৫) একদিন প্রাতঃকালে , ওই ঋষি-মুনিগন নিত্য-নৈমিত্তিক হুতাগ্নিতে আহুতি করবার পর মহামতি সূতকে সাদরে আপ্যায়ন করে এক উচ্চাসনে বসালেন । তারপর তাঁরা বিনীত চিত্তে অত্যন্ত আদরপূর্বক, সূতের সামনে এই প্রশ্নগুলির উপস্থাপন করেছিলেন ।
৬) ওই ঋষিগণ বললেন - হে সূত ! আপনি পূর্ণরূপেই নিষ্পাপ । আর আপনি এই ইতিহাস ( মহাভারত ) , অষ্টাদশ মহাপুরাণ ও সকল ধর্মশাস্ত্র অধ্যয়ণ করেছেন এবং এদের উপর সুচারুরূপে ব্যাখ্যা করেছেন ।
৭) হে বেদ-বেদান্তবিদ মহামতি সূত ! আপনি শ্রীভগবানের অবতার মহর্ষি বেদব্যাসের থেকে জ্ঞানপ্রাপ্ত হয়েছেন , যিনি বেদবেত্তাগণের মধ্যে শ্রেষ্ঠ , এবং ভগবানের সগুন -নির্গুণ ব্রহ্মতত্ত্বের জ্ঞানসম্পন্ন ঋষিদের মতন আপনিও সেইজ্ঞান প্রাপ্ত হয়েছেন ।
৮) আপনি অতীব সরল , নির্মল , শ্রদ্ধাশীল এবং বিনীত , তাই আপনি আপনার গুরবর্গের বিশেষ অনুগ্রহ লাভ করেছেন । কারণ গুরুদেব তাঁর স্নিগ্ধ স্বভাবসম্পন্ন স্নেহের পাত্র শিষ্যকেই নিগুঢ় থেকে নিগুঢ়তর তত্ত্বপোদেশ দান করে থাকেন ।
৯) হে আয়ুষ্মান ! এই ঘোর কলিযুগে জীবের পরম কল্যাণময় সাধনপথের ব্যাপারে আপনি আমাদের সহজবোধ্য উপায়ে উপদেশ করুন ।
১০) হে বিদ্যাভূষণ ! এই কলিযুগে মানুষ প্রায়শই স্বল্পায়ু প্রাপ্ত হয়েছে । তারা কলহপ্রিয় ও সাধন ভজনে তাদের রুচি নেই । তারা অতিমাত্রায় অলস , মন্দবুদ্ধিসম্পন্ন , ভাগ্যহীন , নানাপ্রকার রোগে জীর্ণ এবং বিভিন্ন বাধাবিঘ্নে উপদ্রুত ।
১১) বহুবিধ শাস্ত্রের বিদ্যমানতা এবং তার প্রতিটিতে বহুবিধ কর্তব্য-কর্মের নির্দেশ রয়েছে । তাছাড়া এইসব শাস্ত্রাদি অতি বিস্তারিত । যার অংশমাত্রের অধ্যয়ন , আত্মস্থকরনও দুরূহ । হে মহর্ষি ! আপনি দয়ানিধি এবং পরোপকারী , তাই জীবসমূহের উদ্দেশে , কৃপা করে আপনি এই সকল শাস্ত্রের সারমর্ম আমাদের বলুন যাতে আমাদের অন্তঃকরণ সুনির্মল এবং সুপ্রসন্ন হয়ে ওঠে ।
১২) হে মহামতি সূত ! আপনার সর্বতোরূপে মঙ্গল হোক । ভক্তবৎসল পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কেনই বা বৃশ্নিবংশী যাদবকুলাধিপতি বসুদেবের ধর্মপত্নী দেবকী মাতার গর্ভে অবতারিত হয়েছিলেন সেই সম্পর্কে তো আপনি অবগত আছেন ।
১৩) আমরা সেই বৃত্তান্ত শ্রবণে আগ্রহী । শ্রীভগবান জীবগণের মঙ্গলসাধন এবং ভাগবৎপ্রেম বৃদ্ধি করার উদ্দেশ্যে এই ধরাতলে আবির্ভূত হন । আপনি গুরু-পরম্পরায় প্রাপ্ত সেই জ্ঞান আমাদের অনুগ্রহ করে দান করুন কারণ ইহার শ্রবণ ও কীর্তন উভয়ই কল্যাণকারী ।
১৪) প্রকৃতির গুণত্রয়ে ( সতঃ , রজ , তম ) বশীভূত হয়ে জীবকুল ভয়ঙ্কর এই জন্মমৃত্যুর চক্রে কেবলই আবর্তিত হয়ে চলেছে । এই অবস্থায় যদি কেউ শ্রীভগবানের পরম কল্যাণকারী নাম উচ্চারণও করে তাহলে সে অচিরেই এই দুর্বিসহ সংসারচক্র থেকে মুক্তি লাভ করে । কারণ স্বয়ং মহাকালও শ্রীভগবানের নামে ভীত হন ।
১৫) হে সূত গোস্বামী ! সর্বদা ভগবৎ ভক্তিতে মগ্ন , নিরাসক্ত মহর্ষি মুনিগন শ্রীভগবানের পাদপদ্ম আশ্রয় করে অবস্থান করেন , তাই কেবলমাত্র তাঁদের সৎসঙ্গে বা দর্শনেই জীবকুল পবিত্র হয় । পক্ষান্তরে মাতা গঙ্গার সেবা অর্থাৎ জলস্পর্শ স্নানাদি করার পরই তা মানুষকে পবিত্র করে ।
১৬) কালরূপী সর্পের ন্যায় এই কলিযুগে , ভক্তগণ এই পঙ্কিল ভবসাগর উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য যাঁর অসীম ও অপ্রাকৃত লীলাসমূহের চিন্তন ও কীর্তন করেন , সেই পরমেশ্বর ভগবানের মহিমা কেই বা শ্রবণ করতে অনিচ্ছুক ?
১৭) তাঁর পরম অপ্রাকৃত কর্মসমূহ অতি মহৎ এবং উদারতায় পরিপূর্ণ এবং তা দেবর্ষি নারদাদি মহান ঋষিগণের দ্বারা সর্বদাই সংকীর্তিত হয় । আমরা এই পরম কল্যাণকারী মহৎ লীলাশ্রবণে উৎসুক । আপনি দয়া করে আমাদের সেই লীলাকাহিনী বর্ণনা করুন ।
১৮) হে ধীমান ! পরমেশ্বর শ্রীভগবান নিজ মায়াশক্তির প্রভাবে স্বইচ্ছায় জীবগণের উদ্ধারের জন্য বিভিন্ন লীলাবিহার করেন । আপনি সেই পরম মঙ্গলকারী ভগবান শ্রীহরির বিভিন্ন অবতার এবং লীলাবিলাসের কথা আমাদের শ্রবণ করান ।
১৯) উত্তম শ্লোকে ব্যক্ত লীলাপুরুষোত্তম শ্রীভগবানের লীলা বর্ণনা আমরা যতই শ্রবণ করে তৃপ্ত হতে থাকি না কেন - এই তৃপ্তি কখনই সমাপ্ত হওয়ার নয় । কারণ যারা নিরন্তর তাঁর অপ্রাকৃত লীলালহরীর সেবন করেন তারাও শ্রীভগবানের লীলার মধ্যে নব নব রসের স্বাদ আস্বাদন করেন ।
২০) ভগবান শ্রীকৃষ্ণ মনুষ্যরূপে মর্ত্যধামে আগমন করে ভ্রাতা বলদেবের সাথে অনেক অলৌকিক লীলা করেছেন যা সাধারণ মানুষের পক্ষে কল্পনাতিত , আবার স্বইচ্ছায় নিজের স্বরূপকে লোকচক্ষুর আড়াল করে এমন লীলাবিহারও করেছেন যাতে ব্রজবাসী ও গোপীরা তাঁকে নিজেদের মতোই একজন গণ্য করে স্নেহ, বন্ধুত্ব ও প্রেমে আবদ্ধ করেছেন ।
২১) কলিযুগের আগমন সংবাদ সম্পর্কে অবগত হয়ে আমরা এই বৈষ্ণবক্ষেত্র নৈমিষারণ্যে এক দীর্ঘকাল ব্যাপী মহাযজ্ঞের সংকল্পে উপস্থিত হয়েছি । আপনার সাক্ষাতে আমরা এখন ভগবান শ্রীহরির কথা শ্রবণের অবসরপ্রাপ্ত হয়েছি ।
২২) এই কালরূপী কলি মানুষের পবিত্রতা ও সদগুণের বিনাশক । সমুদ্র পার করার জন্য যেমন কর্ণধার প্রয়োজন , তেমনিই এই কলিরূপ দুর্লঙ্ঘ ভবসমুদ্র অতিক্রম করবার জন্য কর্ণধার সদৃশ বিধাতাই আমাদের আপনার দর্শনলাভ করিয়েছেন ।
২৩) ধর্মরক্ষক , পরমব্রহ্ম , ব্রাহ্মন হিতকারী যোগেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ সম্প্রতি নিজ নিত্যধামে অন্তর্হিত হয়ে তাঁর লীলাসমাপ্তি করার পর ধৰ্ম এখন কাকে আশ্রয় করে রয়েছেন - তা দয়া করে আমাদের বর্ণনা করুন ।
আসুন আমরা সবাই একসাথে শ্রীমদ্ভাগবতম / শ্রীমদ্ ভাগবত মহাপুরাণের স্বাধ্যায় করে আমাদের জীবন পুন্য করি | আজকের মতো এইটুকুই,আমরা শেষ করব মহামন্ত্র দিয়ে |
যদি আপনার এই পোস্টটি পছন্দ হয়ে থাকে / ভালো লেগে থাকে নতুবা এখান থেকে কিছু নুতন জানতে পারেন তাহলে আমাদের সাবস্ক্রাইব অবশ্যই করবেন এবং আপন আত্মীয়পরিজন, বন্ধু-বান্ধবদের সাথে শেয়ার করবেন | আমার লেখা কেমন লাগলো তা অবশ্যই নিচে কমেন্ট বক্স এর মাধ্যমে কমেন্ট করে জানাবেন |
শ্রীমদ্ ভগবত গীতার উপর আমাদের টিউটোরিয়াল / শিক্ষামূলক সিরিজ পড়ার জন্য এই লিংকটি ক্লিক করে শ্রীমদ ভগবত গীতার অমৃতজ্ঞান পান করে জীবন পবিত্র ও পুন্য করুন |
শ্রীমদ্ ভগবত গীতা : https://bhagavadgitatutorial.blogspot.com
আপনারা আমার প্রণাম নেবেন |
ইতি
দীন ভক্ত দাসানুদাস
<--পূর্ববর্তী লেখনী পরবর্তী লেখনী-->
<--পূর্ববর্তী লেখনী পরবর্তী লেখনী-->
ভগবান শ্রীহরি |
|| ওম নমঃ ভগবতে বাসুদেবায় ||
শ্রীমদ্ভাগবতম - প্রথম স্কন্ধ - প্রথম অধ্যায়
সূতের কাছে শৌনকাদি মুনিগণের প্রশ্ন
প্রিয় ভক্তবৃন্দ এবং সুধীগণ,
পূর্ববর্তী লেখনীতে আমরা শ্রীমদ্ভাগবতমাহাত্ম্যের ষষ্ট অধ্যায়, সপ্তাহযজ্ঞের নিয়ম সম্পর্কে জেনেছিলাম । আজ আমরা শ্রীমদ্ভাগবতমের প্রথম স্কন্ধের প্রথম অধ্যায় , সূতের কাছে শৌনকাদি মুনিগণের প্রশ্ন সম্পর্কে জানব । এটি শুরু হয় মঙ্গলাচরণ এবং মহামতি সূতের কাছে শৌনকাদি মুনিগণের প্রশ্নের মাধ্যমে ।
শ্রীমদ্ভাগবতম - প্রথম স্কন্ধ - প্রথম অধ্যায় |
২) মহর্ষি ব্যাসদেব তাঁর বিরচিত এই শ্রীমদ্ভাগবত মহাপুরাণে পরমা মুক্তির ধর্ম নিরুপন করেছেন যা সর্বপ্রকার জড়জাগতিক মায়া-মোহ , মোক্ষফল কামনামুক্ত । এই শ্রীমদ্ভাগবত শাস্ত্র যথার্থরূপেই সেই পরম আত্মতত্বের নিরুপন করে যা নির্মৎসর ( শুদ্ধ অন্তঃকরণযুক্ত সৎপুরুষ ) ভক্তগণের জ্ঞাতব্য বিষয় । ইহা সর্বতোভাবেই তাপত্রয় উন্মূলক এবং পরম মঙ্গলময় । যখন ভগবততত্বজ্ঞান পান করার জন্য শ্রীমদ্ভাগবত শাস্ত্রই পর্যাপ্ত তখন অন্যান্য শাস্ত্রের আর সেইরূপ কি প্রয়োজন ? যখন কোনো সুকৃতীসম্পন্ন পুরুষ শ্রদ্ধাবনত হয়ে স্থিরচিত্তে এই শ্রীমদ্ভাগবত কথা শ্রবণ করেন , তৎক্ষণাৎ শ্রীভগবান তার হৃদয়ে অধিষ্ঠান করেন ।
৩) হে সকল ভক্তগণ ! বেদ শাস্ত্র হল কল্পবৃক্ষ আর এর সুপক্ক ফল হল এই শ্রীমদ্ভাগবত শাস্ত্র । মহর্ষি শুকদেবের মুখনিঃসৃত হওয়ার কারণে এই বাণী পরম আনন্দপ্রদানকারী অমৃতে পরিপূর্ণ । শ্রীমদ্ভাগবতের সবকিছুই গ্রাহ্য , অগ্রাহ্য বলে কিছুই নেই । তাই হে রসিক ভক্তবৃন্দ - এই রসামৃত আপনারা নিরন্তর পান করুন । এটি হল রসভান্ড যা কেবল মর্ত্যলোকেই পাওয়া সম্ভব ।
৪) পুরাকালে ভগবান এবং দেবতাদের প্রিয় ও পুণ্যময় নৈমিষারণ্য ক্ষেত্রে শৌনকাদি মুনি-ঋষিগণ, পরমেশ্বর ভগবানপ্রাপ্তি ও ভক্তগণের প্রীতিসাধনের নিমিত্ত একদা এক সহস্র বৎসর ব্যাপী যজ্ঞের অনুষ্ঠান করেছিলেন।
৫) একদিন প্রাতঃকালে , ওই ঋষি-মুনিগন নিত্য-নৈমিত্তিক হুতাগ্নিতে আহুতি করবার পর মহামতি সূতকে সাদরে আপ্যায়ন করে এক উচ্চাসনে বসালেন । তারপর তাঁরা বিনীত চিত্তে অত্যন্ত আদরপূর্বক, সূতের সামনে এই প্রশ্নগুলির উপস্থাপন করেছিলেন ।
শ্রীমদ্ভাগবতম - প্রথম স্কন্ধ - প্রথম অধ্যায় |
৭) হে বেদ-বেদান্তবিদ মহামতি সূত ! আপনি শ্রীভগবানের অবতার মহর্ষি বেদব্যাসের থেকে জ্ঞানপ্রাপ্ত হয়েছেন , যিনি বেদবেত্তাগণের মধ্যে শ্রেষ্ঠ , এবং ভগবানের সগুন -নির্গুণ ব্রহ্মতত্ত্বের জ্ঞানসম্পন্ন ঋষিদের মতন আপনিও সেইজ্ঞান প্রাপ্ত হয়েছেন ।
৮) আপনি অতীব সরল , নির্মল , শ্রদ্ধাশীল এবং বিনীত , তাই আপনি আপনার গুরবর্গের বিশেষ অনুগ্রহ লাভ করেছেন । কারণ গুরুদেব তাঁর স্নিগ্ধ স্বভাবসম্পন্ন স্নেহের পাত্র শিষ্যকেই নিগুঢ় থেকে নিগুঢ়তর তত্ত্বপোদেশ দান করে থাকেন ।
৯) হে আয়ুষ্মান ! এই ঘোর কলিযুগে জীবের পরম কল্যাণময় সাধনপথের ব্যাপারে আপনি আমাদের সহজবোধ্য উপায়ে উপদেশ করুন ।
১০) হে বিদ্যাভূষণ ! এই কলিযুগে মানুষ প্রায়শই স্বল্পায়ু প্রাপ্ত হয়েছে । তারা কলহপ্রিয় ও সাধন ভজনে তাদের রুচি নেই । তারা অতিমাত্রায় অলস , মন্দবুদ্ধিসম্পন্ন , ভাগ্যহীন , নানাপ্রকার রোগে জীর্ণ এবং বিভিন্ন বাধাবিঘ্নে উপদ্রুত ।
১২) হে মহামতি সূত ! আপনার সর্বতোরূপে মঙ্গল হোক । ভক্তবৎসল পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কেনই বা বৃশ্নিবংশী যাদবকুলাধিপতি বসুদেবের ধর্মপত্নী দেবকী মাতার গর্ভে অবতারিত হয়েছিলেন সেই সম্পর্কে তো আপনি অবগত আছেন ।
১৩) আমরা সেই বৃত্তান্ত শ্রবণে আগ্রহী । শ্রীভগবান জীবগণের মঙ্গলসাধন এবং ভাগবৎপ্রেম বৃদ্ধি করার উদ্দেশ্যে এই ধরাতলে আবির্ভূত হন । আপনি গুরু-পরম্পরায় প্রাপ্ত সেই জ্ঞান আমাদের অনুগ্রহ করে দান করুন কারণ ইহার শ্রবণ ও কীর্তন উভয়ই কল্যাণকারী ।
১৪) প্রকৃতির গুণত্রয়ে ( সতঃ , রজ , তম ) বশীভূত হয়ে জীবকুল ভয়ঙ্কর এই জন্মমৃত্যুর চক্রে কেবলই আবর্তিত হয়ে চলেছে । এই অবস্থায় যদি কেউ শ্রীভগবানের পরম কল্যাণকারী নাম উচ্চারণও করে তাহলে সে অচিরেই এই দুর্বিসহ সংসারচক্র থেকে মুক্তি লাভ করে । কারণ স্বয়ং মহাকালও শ্রীভগবানের নামে ভীত হন ।
১৫) হে সূত গোস্বামী ! সর্বদা ভগবৎ ভক্তিতে মগ্ন , নিরাসক্ত মহর্ষি মুনিগন শ্রীভগবানের পাদপদ্ম আশ্রয় করে অবস্থান করেন , তাই কেবলমাত্র তাঁদের সৎসঙ্গে বা দর্শনেই জীবকুল পবিত্র হয় । পক্ষান্তরে মাতা গঙ্গার সেবা অর্থাৎ জলস্পর্শ স্নানাদি করার পরই তা মানুষকে পবিত্র করে ।
শ্রীমদ্ভাগবতম - প্রথম স্কন্ধ - প্রথম অধ্যায় |
১৭) তাঁর পরম অপ্রাকৃত কর্মসমূহ অতি মহৎ এবং উদারতায় পরিপূর্ণ এবং তা দেবর্ষি নারদাদি মহান ঋষিগণের দ্বারা সর্বদাই সংকীর্তিত হয় । আমরা এই পরম কল্যাণকারী মহৎ লীলাশ্রবণে উৎসুক । আপনি দয়া করে আমাদের সেই লীলাকাহিনী বর্ণনা করুন ।
১৮) হে ধীমান ! পরমেশ্বর শ্রীভগবান নিজ মায়াশক্তির প্রভাবে স্বইচ্ছায় জীবগণের উদ্ধারের জন্য বিভিন্ন লীলাবিহার করেন । আপনি সেই পরম মঙ্গলকারী ভগবান শ্রীহরির বিভিন্ন অবতার এবং লীলাবিলাসের কথা আমাদের শ্রবণ করান ।
১৯) উত্তম শ্লোকে ব্যক্ত লীলাপুরুষোত্তম শ্রীভগবানের লীলা বর্ণনা আমরা যতই শ্রবণ করে তৃপ্ত হতে থাকি না কেন - এই তৃপ্তি কখনই সমাপ্ত হওয়ার নয় । কারণ যারা নিরন্তর তাঁর অপ্রাকৃত লীলালহরীর সেবন করেন তারাও শ্রীভগবানের লীলার মধ্যে নব নব রসের স্বাদ আস্বাদন করেন ।
২০) ভগবান শ্রীকৃষ্ণ মনুষ্যরূপে মর্ত্যধামে আগমন করে ভ্রাতা বলদেবের সাথে অনেক অলৌকিক লীলা করেছেন যা সাধারণ মানুষের পক্ষে কল্পনাতিত , আবার স্বইচ্ছায় নিজের স্বরূপকে লোকচক্ষুর আড়াল করে এমন লীলাবিহারও করেছেন যাতে ব্রজবাসী ও গোপীরা তাঁকে নিজেদের মতোই একজন গণ্য করে স্নেহ, বন্ধুত্ব ও প্রেমে আবদ্ধ করেছেন ।
২২) এই কালরূপী কলি মানুষের পবিত্রতা ও সদগুণের বিনাশক । সমুদ্র পার করার জন্য যেমন কর্ণধার প্রয়োজন , তেমনিই এই কলিরূপ দুর্লঙ্ঘ ভবসমুদ্র অতিক্রম করবার জন্য কর্ণধার সদৃশ বিধাতাই আমাদের আপনার দর্শনলাভ করিয়েছেন ।
২৩) ধর্মরক্ষক , পরমব্রহ্ম , ব্রাহ্মন হিতকারী যোগেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ সম্প্রতি নিজ নিত্যধামে অন্তর্হিত হয়ে তাঁর লীলাসমাপ্তি করার পর ধৰ্ম এখন কাকে আশ্রয় করে রয়েছেন - তা দয়া করে আমাদের বর্ণনা করুন ।
। ইতি শ্রীমদ্ভাগবতে শ্রীমহাপুরাণে পারমহংস্যাং সংহিতায়াং প্রথমস্কন্ধে নৈমিষীয়োপাখ্যানে প্রথমোহধ্যায়ঃ।
আসুন আমরা সবাই একসাথে শ্রীমদ্ভাগবতম / শ্রীমদ্ ভাগবত মহাপুরাণের স্বাধ্যায় করে আমাদের জীবন পুন্য করি | আজকের মতো এইটুকুই,আমরা শেষ করব মহামন্ত্র দিয়ে |
হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে |
হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে ||
যদি আপনার এই পোস্টটি পছন্দ হয়ে থাকে / ভালো লেগে থাকে নতুবা এখান থেকে কিছু নুতন জানতে পারেন তাহলে আমাদের সাবস্ক্রাইব অবশ্যই করবেন এবং আপন আত্মীয়পরিজন, বন্ধু-বান্ধবদের সাথে শেয়ার করবেন | আমার লেখা কেমন লাগলো তা অবশ্যই নিচে কমেন্ট বক্স এর মাধ্যমে কমেন্ট করে জানাবেন |
শ্রীমদ্ ভগবত গীতার উপর আমাদের টিউটোরিয়াল / শিক্ষামূলক সিরিজ পড়ার জন্য এই লিংকটি ক্লিক করে শ্রীমদ ভগবত গীতার অমৃতজ্ঞান পান করে জীবন পবিত্র ও পুন্য করুন |
শ্রীমদ্ ভগবত গীতা : https://bhagavadgitatutorial.blogspot.com
আপনারা আমার প্রণাম নেবেন |
ইতি
দীন ভক্ত দাসানুদাস
<--পূর্ববর্তী লেখনী পরবর্তী লেখনী-->
No comments:
Post a Comment