Bhagavatam,Srimad Bhagavatam, Bhagavata Purana, Srimad Bhagavatam in Bengali,
Bhagavata Purana in Bengali, Bhagavata Mahapurana, Sanatana Dharma,
Bhagavata Mahapurana, Srimad Bhagavatam Bangla, Gita, শ্রীমদ্ ভাগবতম,
শ্রীমদ্ ভাগবত মহাপুরান, শ্রীমদ্ ভাগবত পুরান, Srimad Bhagavatam online, শ্রীমদ ভাগবত,ভাগবত মহাপুরান , শ্রীমদ্ভাগবতমাহাত্ম্যম্ - ষষ্ঠ অধ্যায় , Srimad Bhagavatam Mahatmyam Chapter 6 , সপ্তাহযজ্ঞের নিয়ম
<--পূর্ববর্তী লেখনী পরবর্তী লেখনী-->
প্রিয় ভক্তবৃন্দ এবং সুধীগণ,
পূর্ববর্তী লেখনীতে আমরা শ্রীমদ্ভাগবতমাহাত্ম্যের পঞ্চম অধ্যায়, ধুন্ধুকারীর প্রেতযোনি প্রাপ্তি এবং তা থেকে মুক্তি সম্পর্কে জেনেছিলাম । আজ আমরা শ্রীমদ্ভাগবতমাহাত্ম্যের ষষ্ঠ অধ্যায়, সপ্তাহযজ্ঞের নিয়ম সম্পর্কে জানব । এটি শুরু হয় সূত দ্বারা বর্ণিত দেবর্ষি নারদের সাথে সনকাদি মুনিগণের কথোপকথনের মাধ্যমে ।
১) সনকাদি বালমুনিগন বললেন - হে দেবর্ষি নারদ ! আমরা এখন আপনাকে এই সপ্তাহযজ্ঞের নিয়মাবলী সম্পর্কে বলছি । এই বিধিসমূহ সাধারণ মানুষের সহযোগ এবং অর্থের দ্বারা সাধ্য ।
২) এর জন্য সর্বপ্রথম দৈবজ্ঞ পণ্ডিতগণের সাথে পরামর্শ করে এই সপ্তাহযজ্ঞের মুহূর্ত নির্ধারণ বা দিনস্থির করা উচিত । বিবাহের্ অনুষ্ঠান সম্পাদনের জন্য যেমন অর্থের সংকুলানের ব্যাপারটি ভেবে দেখা হয় তেমনই এখানেও অর্থ সংস্থানের ব্যাপারটিতে ধ্যান দেওয়া প্রয়োজন ।
৩) সপ্তাহব্যাপী ভাগবতকথা প্রারম্ভের জন্য আষাঢ় , শ্রাবণ , ভাদ্র , আশ্বিন , কার্তিক ও অগ্রহায়ণ এই ছয় মাসই শ্রোতাদের পক্ষে মোক্ষপ্রদ । "
৪) হে দেবর্ষি ! এই ছয় মাসের মধ্যে আবার কিছু বিচার করতে হয় । যেমন ভদ্রা - ব্যাতিপাত ইত্যাদি দোষযুক্ত যোগগুলি সর্বদাই বর্জন করা উচিত । এরপর এই কাজে সহায়তার জন্য যারা আগ্রহী ও উৎসাহী তাদের এই কার্যের বিভিন্ন বিষয়ের দায়িত্ব দেওয়া উচিত ।
৫) এরপর দেশে দেশে অতি সযত্নে এই বার্তা প্রচার করা দরকার যে ভাগবত সপ্তাহযজ্ঞের্ অনুষ্ঠান হবে । এই অনুষ্ঠানে সকলের সপরিবারে অংশগ্রহণ প্রার্থনীয় হওয়া উচিত ।
৬) নারী এবং শূদ্রাদিগণ শ্রীহরিসংকীর্তন এবং ভাগবতকথা থেকে দূরে সরে রয়েছে । তাদের সবার্ কাছেও যাতে এই সংবাদ পৌঁছায় এমন ব্যবস্থা করতে হবে ।
৭) দেশে দেশে যেসকল বিরক্ত বৈষ্ণবগণ ও হরিসংকীর্তন উৎসুক ভক্তগণ রয়েছেন তাদের অবশ্যই নিমন্ত্রণপত্র পাঠানো আবশ্যক । এই নিমন্ত্রণপত্র লেখারও বিধি উল্লেখ করা হয়েছে ।
৮) ' হে মহানুভবগণ ! এখানে সুদুর্লভ অপূর্ব রসরূপী শ্রীমদ্ভাগবতের সপ্তাহপারায়ণ যজ্ঞের অনুষ্ঠান এবং তদোপলক্ষে সৎপুরুষের সম্মেলন হবে ।
৯) আপনারা ভাগবতরসিক , সুতরাং শ্রীমদ্ভাগবতকথা পীযুষ ( অমৃত ) পান করার উদ্দেশ্যে আপনারা সত্বর প্রেমপূর্বক আগমন করুন ।
১০) যদি আপনি বিশেষ কোনো কারণবশত সপ্তাহব্যাপী যজ্ঞে উপস্থিত থাকার অবকাশ না পান , তাহলে অন্তত একদিনের জন্য হলেও অবশ্যই কৃপা করে আসবেন । কারণ এই অনুষ্ঠানের ক্ষণমুহূর্তও অতিদুর্লভ ।
১১) এইরকম অত্যন্ত বিনীতভাবে তাঁদের নিমন্ত্রন করতে হবে এবং এই অনুষ্ঠানে আগতদের জন্য উপযুক্ত বাসস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে ।
১২) এই কথাশ্রবণের আয়োজন কোনো তীর্থস্থানে কিংবা অরণ্যে অথবা নিজগৃহেও করার বিধান রয়েছে । এসবের মধ্যে যেখানে বড় উন্মুক্ত স্থান রয়েছে এবং একসাথে অনেকজন বসতে পারেন সেইখানেই কথাস্থল হওয়া উচিত ।
১৩) কথাস্থলে ভূমির শোধন , মার্জন , লেপন করে বিভিন্ন রঙের ধাতু দিয়ে মণ্ডপ তৈরী করবেন । গৃহের সমস্ত আসবাবপত্র ও দ্রব্যাদি গৃহের এক কোণে জড়ো করে রাখবেন ।
১৪) কথাপ্রারম্ভের পঞ্চদিবস পূর্ব থেকেই সযত্নে পাতবার কাপড় প্রভৃতি দ্রব্যাদি জোগাড় করে রাখবেন এবং কলাগাছে ( কলা গাছের খন্ডে ) সুশোভিত এক উঁচু মঞ্চ বানাবেন ।
১৫) তার চারিদিক ফল, পুষ্প , চাঁদোয়া প্রভৃতি সব জিনিস দিয়ে সুসজ্জিত করবেন । চারিদিকে ধ্বজা এবং নানারকম সামগ্রী দিয়ে সাজাবেন ।
১৬) সেই মণ্ডপের খানিকটা জায়গা উঁচু করে সেখানে সাতটি লোকের কল্পনা করে সংসার বিরক্ত / নিরাসক্ত ব্রাহ্মণদের ডেকে সেখানে উপবেশন করাবেন ।
১৭) সম্মুখে তাদের জন্য যথাযুক্ত আসনের ব্যাবস্থা করবেন । তার পশ্চাতে পাঠক বা বক্তার জন্য এক দিব্য আসনের ( সিংহাসনের ) ব্যবস্থা করবেন ।
১৮) পাঠক যদি উত্তর দিকে মুখ করে পাঠ করেন তাহলে শ্রোতারা পূর্বদিকে মুখ করে বসবেন । আর পাঠক যদি পূর্বদিকে মুখ করে পাঠে বসেন তাহলে শ্রোতাদের উত্তর দিকে মুখ করে পাঠ শ্রবণ করা প্রয়োজন ।
১৯) অথবা পাঠক এবং শ্রোতাগণ উভয়েই পূর্বদিকে মুখ করে পাঠে বসবেন । দেশকালাদি বিষয়ে অভিজ্ঞ বিদ্বজন শ্রোতাদের জন্য এইরকম পাঠশ্রবণেরই বিধান দিয়েছেন ।
২০) বেদশাস্ত্রের বিশুদ্ধ ও সরল ব্যাখ্যাতে সমর্থ , বিভিন্ন আনুষঙ্গিক দৃষ্টান্তের মাধ্যমে বিষয়বস্তু বোঝাতে কুশল , অতীব নিস্পৃহ , ধীর বক্তা , এইরূপ সংসার বিরক্ত বিষ্ণুভক্ত বিপ্রকে পাঠকর্তা করা উচিত ।
২১) শুকশাস্ত্র শ্রীমদ্ভাগবতকথামৃত প্রবচনের দায়িত্বভার সেই সকল মানুষকে দেওয়া উচিত নয় যারা পন্ডিত হওয়া সত্বেও ধর্মের নানারকম মতবাদে বিভ্রান্ত , স্ত্রৈণ , কামুক এবং পাখন্ড ।
২২) পাঠে সহায়তা করবার জন্য পাঠকের সাথে তার মতই আরো একজন বিদ্বান থাকবেন । ওই পন্ডিতও যেন শাস্ত্রের বিভিন্ন রকম সংশয় নিরসনে সমর্থ হন এবং শ্রোতাদের বোঝানোর ব্যাপারে তৎপর হন ।
২৩) পাঠে ব্রতগ্রহণ করবার জন্য পাঠপ্রারম্ভের পূর্বদিবসেই পাঠক ক্ষৌরকর্ম করে রাখবেন এবং অরুণোদয়কালে শৌচাদি সমাপন করে স্নান করবেন ।
২৪) এরপর সন্ধ্যাদি নিত্যকর্ম সংক্ষেপে সমাপন করে শ্রীমদ্ভাগবতকথার বিঘ্ননাশের উদ্দেশ্যে শ্রীগণেশের পূজা করবেন ।
২৫) এরপর পিতৃগণের উদ্দেশ্যে তর্পন করে নিজ পূর্বকৃত পাপের শুদ্ধির জন্য প্রায়শ্চিত্ত করবেন । এরপর একটি মন্ডল তৈরী করে তাতে শ্রীহরিকে স্থাপন করবেন ।
২৬) তারপর পরম ভগবান শ্রীকৃষ্ণের উদ্দেশ্যে মন্ত্র উচ্চারণ করে তাঁর ষোড়শ উপচারে পুজো করবেন এবং পূজান্তে তাঁকে প্রদক্ষিণ ও নমস্কারাদির পরে এই বলে স্তুতি করবেন ।
২৭) ' হে করুণানিধি ! আমি এই সংসারসাগরে নিমজ্জিত এক অতি দীন । কর্মমোহে আমি গ্রস্ত । এর থেকে আপনি আমাকে উদ্ধার করুন । '
২৮) এরপর শ্রীমদ্ভাগবতকেও পরমপ্রীতি ও যত্নসহকারে , ধুপ , দ্বীপাদি দ্বারা যথাযত বিধিপূর্বক পূজা করবেন ।
২৯) তারপর শ্রীমদ্ভাগবতের সামনে শ্রীফল নারিকেল রেখে নমস্কারপূর্বক প্রসন্নচিত্তে স্তুতি করা কর্তব্য ।
৩০) ' শ্রীমদ্ভাগবতরূপে আপনি স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণচন্দ্রই এখানে বিরাজমান । হে নাথ ! এই ভবসাগর পার হওয়ার জন্য আমি আপনার শরণাগত হলাম ।
৩১) আমার এই মনোরথ আপনি নির্বিঘ্নে সফল করুন । হে কেশব ! আমি আপনার দাস । '
৩২) এইপ্রকার দীনভাবে প্রার্থনা করে মূল পাঠকের পূজা করা কর্তব্য । তাঁকে সুন্দর বস্ত্র আভূষণাদিতে শোভিত করে পূজান্তে এইরূপে স্তূতি করবেন - ।
৩৩) ' হে শুকরুপী ভগবান ! আপনি প্রবোধজ্ঞ এবং সর্বশাস্ত্রবিশারদ । আপনি কৃপাপূর্বক এই ভাগবতকথা প্রকাশের মাধ্যমে আমার অজ্ঞান দূরীভূত করুন । '
৩৪) এরপর নিজ মঙ্গলের জন্য তাঁর সামনে নিয়ম ধারণ করবেন এবং যথাশক্তি সেই সব নিয়ম সাতদিন পালন করবেন ।
৩৫) কথাভঙ্গ নিবৃত্তির নিমিত্ত পাঁচজন ব্রাহ্মণকে বরণ করবেন । তাঁরা দ্বাদশাক্ষর মন্ত্র ( ॐ নমো ভগবতে বাসুদেবায় ) দ্বারা শ্রীভগবানের নাম জপ করবেন ।
৩৬) পরে ব্রাহ্মণ , সকল বৈষ্ণব ও কীর্তনীয়াদের প্রণাম এবং পূজা করে তাঁদের অনুমতি নিয়ে নিজ আসনে উপবেশন করবেন ।
৩৭) যে ব্যক্তি বিত্ত, ধনসম্পত্তি, গৃহ, পুত্র , সন্তানাদির চিন্তা পরিত্যাগ করে শুদ্ধচিত্তে , স্থিরমতি হয়ে কেবলমাত্র পাঠেই মনস্থাপন করেন , এই পাঠ শ্রবনে তিনি উত্তম ফলপ্রাপ্ত হন ।
৩৮) সুধী পাঠক সকালে সূর্যোদয় থেকে শুরু করে সাড়ে তিন প্রহর পর্যন্ত ধীরকণ্ঠে উত্তমরূপে ভাগবতকথা পাঠ করবেন ।
৩৯) মধ্যাহ্নে দুই ঘটিকার ( ঘন্টা ) জন্য ভাগবতকথার বিরাম দেওয়া কর্তব্য । সেই সময় কথাপ্রসঙ্গ অনুযায়ী বৈষ্ণবগণ শ্রীভগবানের গুনগান করবেন।
৪০) কথাপাঠের সময় মলমূত্র ত্যাগের বেগ সংবরণের জন্য লঘু আহার বা স্বল্পাহার সুখাবহ হয় । এইজন্য শ্রোতাদের দিনে কেবলমাত্র একবার হৰিষ্যান্ন গ্রহণ করা কর্তব্য ।
৪১) সামর্থ্য থাকলে সাতদিন উপবাস করে অথবা কেবলমাত্র ঘি বা দুগ্ধ পান করে কথাশ্রবণ করবেন ।
৪২) অথবা ফলাহার বা একাহারই করবেন । যার যেরকম নিয়ম পালনের মাধ্যমে কথাশ্রবণ সুখকর হয় , সেই প্রকার নিয়মই পালন করবেন ।
৪৩) আমি তো উপবাস অপেক্ষা ভোজন করাই শ্রেয়কর বলে মনে করি , যদি তা কথা শ্রবণের অনুকূল হয় । উপবাসের ফলে যদি কথা শ্রবণে কষ্ট উপলব্ধি হয় তাহলে সেই নিয়ম কোনো কাজের নয় ।
৪৪) হে নারদ ! নিয়মপালনের মাধ্যমে যারা সপ্তাহব্যাপী পাঠ শ্রবণ করেন তাঁদের সেই নিয়মাবলী শ্রবণ করুন । যারা বিষ্ণুমন্ত্রে দীক্ষিত নন তারা এই কথা শ্রবনের অনধিকারী ।
৪৫) নিয়মপালনের মাধ্যমে যিনি কথা শ্রবণ করবেন , তিনি ব্রহ্মচর্য পালন করবেন , ভূমিতে শয্যাগ্রহণ করবেন , এবং প্রত্যহ কথাশ্রবণের পর পাতায় ভোজন পরিবেশন করে আহার করবেন ।
৪৬) দ্বিদল ( যথা ডাল, বাদাম, মটর, ছোলা প্রভৃতি ) , মধু , তেল , গরিষ্ট অন্ন , ভাব দূষিত পদার্থ , এবং বাসী অন্ন এইসব কথাশ্রবণকারীর নিত্য ত্যাজ্য ।
৪৭) কাম , ক্রোধ , মদ , অভিমান , মাৎসর্য , লোভ , দম্ভ , মোহ , এবং দ্বেষ থেকে সর্বদা দূরে থাকবেন ।
৪৮) বেদ , বৈষ্ণব , ব্রাহ্মণ , গুরু , গো-সেবক , স্ত্রী , রাজা ও মহাপুরুষদের নিন্দা করবেন না ।
৪৯) নিয়মপূর্বক কথা শ্রবণকারী রজঃস্বলা নারী , অন্ত্যজ , ম্লেচ্ছ ( যবন , অধর্মী প্রভৃতি ), পতিত , গায়ত্রীহীন বিপ্র , ব্রাহ্মণদ্বেষী এবং বেদ - নিন্দুকের সাথে কথা বলিবেন না ।
৫০) সর্বদা সত্য , শৌচ , দয়া , মৌনতা , বিনয়তা , উদারতা - এই সব গুনাবলীকে আশ্রয় করে থাকবেন ।
৫১) নির্ধন , দরিদ্র , ক্ষয়রোগী , রোগগ্রস্ত , নির্ভাগ্য , পাপী, সন্তানহীন ও মুমুক্ষ ব্যক্তিরাও এই কথা শ্রবণ করবেন ।
৫২) অপুস্পা ( যে নারীর ঋতু হয় না ) নারীগণ , কাকবন্ধ্যা ( একটিমাত্র সন্তানের পর যার সন্তান সম্ভাবনা নষ্ট হয়ে যায় ) নারীগণ , বন্ধ্যা , মৃতার্ভকা ( যার সন্তান হয়ে বাঁচে না ) অথবা যার গর্ভপাত হয়ে যায় , তারা অত্যন্ত শ্রদ্ধাপূর্বক এই শ্রীমদ্ভাগবতকথা শ্রবণ করবেন ।
৫৩) বিধিপূর্বক এই কথাশ্রবণের ফলে এরা অক্ষয় ফল লাভ করবেন ।এই অতি উত্তম দিব্য কথা কোটি জন্মের সমান ফলপ্রদান করে ।
৫৪) এইপ্রকারে এই ব্রতপালন করবেন । যে ব্যক্তির এই ব্রত থেকে বিশেষ ফললাভের বাসনা থাকে তারা জন্মাষ্টমী ব্রতের মতোই এই কথাব্রত পালন করবেন ।
৫৫) কিন্তু যিনি শ্রীভগবানের অকিঞ্চন ভক্ত , তার এই ব্রত উদযাপনের কোনো প্রয়োজন নেই । তিনি কেবলমাত্র এই কথাশ্রবণেই পবিত্র হয়ে যান । কারণ তিনি তো নিষ্কাম ভগবৎভক্ত ।
৫৬) এরপর সপ্তাহব্যাপী ভাগবতকথার পরিসমাপ্তি হলে , শ্রোতাদের অত্যন্ত ভক্তিভরে এই শ্রীমদ্ভাগবত গ্রন্থের এবং পাঠকের পূজা করা আবশ্যক ।
৫৭) এরপর পাঠক শ্রোতাদের প্রসাদ , তুলসী ও প্রসাদী মালা প্রদান করবেন । তারপর সকলে মিলে মৃদঙ্গ করতাল নিয়ে কীর্তন করা উচিত ।
৫৮) এরপর সকলের জয়ধ্বনি , শঙ্খধ্বনি , নমস্কার করা উচিত । ব্রাহ্মন ও প্রার্থীদের ধন এবং অন্নদান করা উচিত ।
৫৯) শ্রোতা যদি সংসারবিরক্ত / নিরাসক্ত হন তাহলে কর্মশান্তির উদ্দেশ্যে সপ্তাহযজ্ঞের দ্বিতীয় দিনে গীতাপাঠ করবেন আর শ্রোতা গৃহস্থ হলে হোম করবেন ।
৬০) সেই হোমে ভাগবতের দশম স্কন্ধের প্রতিটি শ্লোক পাঠের মাধ্যমে বিধিপূর্বক পায়স , মধু , ঘৃত , তিল ও অন্নাদি সামগ্রীসমূহ আহুতি দেবেন ।
৬১) অথবা সুসমাহিত হয়ে / একাগ্রচিত্তে গায়ত্রী মন্ত্র দ্বারা হবন / হোম করবেন ; কারণ তত্বদৃষ্টিতে এই মহাপুরান গায়ত্রীরই স্বরূপ ।
৬২-৬৩) হবন করবার সামর্থ না থাকলে হবনের ফলপ্রাপ্তির জন্য ব্রাহ্মনদের হবনসামগ্রী দান করবেন এবং বিধিপালনের মধ্যে বিভিন্ন ত্রুটি বিচ্যুতির অপরাধস্খলনের জন্য স্থির চিত্তে ভগবান বিষ্ণুর সহস্রনাম পাঠ করা উচিত । বিষ্ণুসহস্রনামের পাঠে সকল কর্মই সফল হয় কারণ এর চেয়ে বড় কর্ম আর নাই ।
৬৪) তারপর বারো জন বিপ্রবরকে পায়স , মধু ইত্যাদি সুস্বাদু ভোজন করাবেন এবং ব্রতপূর্তির জন্য সুবর্ণ ও ধেনু দান করবেন ।
৬৫-৬৮) সামর্থবান ব্যক্তিরা তিন ভরি সুবর্ণ দিয়ে স্বর্ণসিংহাসন তৈরী করিয়ে তার উপর ললিত অক্ষরে লেখা শ্রীমদ্ভাগবত স্থাপন করে আবাহনাদি বিভিন্ন পূজা করবেন । পরে ওই সুধী আচার্যকে বস্ত্র , আভূষণ , গন্ধাদি দ্বারা সযত্নে পূজা করে তাঁকে ওই স্বর্ণসিংহাসন সমেত শ্রীমদ্ভাগবতগ্রন্থ দক্ষিণাপূর্বক সমর্পন করবেন । এর ফলে ওই বুদ্ধিমান দাতা জন্ম মৃত্যুর চক্র থেকে মুক্ত হবেন । এই সপ্তাহ শ্রবণবিধি সর্বপাপনিবারণকারী । এই সপ্তাহপারায়ণ ঠিক করে পালন করলে শ্রীমঙ্গলময় এই ভাগবত পুরাণ অভীষ্ট ফল প্রদান করে । নিঃসন্দেহে ইহা অর্থ , ধর্ম , কাম ও মোক্ষ - এই চতুর্বর্গের ফল লাভের সাধন নিস্পন্ন করে ।
৬৯) সনকাদি বালমুনিগন বললেন - হে দেবর্ষি নারদ ! এইভাবে আমরা তোমাকে সম্পূর্ণরূপে শ্রীমদ্ভাগবত সপ্তাহশ্রবণের বিধি বললাম , এখন আর কি শুনতে ইচ্ছা প্রকাশ কর ? এই শ্রীমদ্ভাগবত থেকে ভুক্তি এবং মুক্তি দুই হস্তগত হয় ।
৭০-৭১) সুত বললেন - হে শৌনক ! এই বলে মহাত্ম্যা সনৎকুমারগণ সপ্তাহব্যাপী এই সর্বপাপ হরণকারী , পুণ্যময় এবং ভুক্তি ও মুক্তি প্রদানকারী ভাগবতকথার প্রবচন করেছিলেন । সমস্ত প্রাণী নিয়মমত সেই প্রবচন শ্রবণ করে । তারপর তারা বিধিপূর্বক ভগবান পুরুষোত্তমের স্তুতি করেছিলেন ।
৭২) এই ভাগবত কথা সমাপ্ত হলে জ্ঞান , বৈরাগ্য ও ভক্তিদেবীর সাতিশয় পুষ্টি হয়েছিল । তারা তিনজনই তারুণ্য অবস্থাপ্রাপ্ত হয়ে সবার মনমোহন করতে লাগলেন ।
৭৩) নিজের মনোরথ পূর্ণ হওয়াতে দেবর্ষি নারদও আনন্দিত হয়েছিলেন । তার সর্বাঙ্গ শরীর পুলকিত হচ্ছিল এবং তিনি পরমানন্দে পূর্ণ হয়ে গিয়েছিলেন ।
৭৪) এইভাবে কথাশ্রবণের পর ভগবতপ্রিয় নারদ মুনি কৃতাঞ্জলি পূর্বক প্রেমগদগদ চিত্তে সনকাদি মুনিদের বললেন ।
৭৫) দেবর্ষি নারদ বললেন - ' আমি ধন্য হলাম , আপনারা করুনাপূর্বক আমাকে অনুগৃহীত করেছেন । আজ আমি সর্বপাপহারী ভগবান শ্রীহরিকে লাভ করলাম ।
৭৬) হে তপোধনগন ! সকল ধর্মের মধ্যে আমি এই শ্রীমদ্ভাগবত শ্রবণই শ্রেষ্ঠ বলে মনে করি ; কারণ এর শ্রবণের দ্বারা বৈকুন্ঠপতি শ্রীকৃষ্ণকে লাভ করা যায় । '
৭৭) সুত বললেন - হে শৌনক ! বৈষ্ণবোত্তম দেবর্ষি নারদ এইকথা বলছেন এমন সময় ভ্রমণ করতে করতে যোগেশ্বর শুকদেব সেখানে এসে উপস্থিত হলেন ।
৭৮) কথা সমাপ্ত হওয়া মাত্রই ব্যাসনন্দন শুকদেব ঐস্থানে এলেন । ষোড়শ বর্ষীয় শুকদেব ছিলেন আত্মানন্দে পূর্ণ , জ্ঞানরূপী মহাসাগরকে সংবর্ধন করার জন্য তিনি চন্দ্রের মতন ছিলেন । তিনি নিম্নস্বরে প্রেমভরে শ্রীমদ্ভগবতের পাঠ করছিলেন ।
৭৯) পরম তেজস্বী শুকদেব মুনিকে দেখে সভায় উপস্থিত সকলে বিদ্যুৎগতিতে উঠে দাঁড়ালেন এবং তাঁকে একটি উচ্চাসনে বসালেন । তারপর দেবর্ষি নারদ তাঁকে শ্রদ্ধাপূর্বক পূজা করলেন । তিনি সুখাসনে বসে বললেন - 'আপনারা আমার নির্মল বাণী শ্রবণ করুন ।'
৮০) শুকদেব বললেন হে রসিক এবং ভাবুক সভাসদগণ ! এই শ্রীমদ্ভাগবত বেদরূপ কল্পবৃক্ষের পরিপক্ক ফল । শ্রীশুকদেবের শুক-মুখের সংযোগ হওয়ার দরুন ইহা অমৃতরসে পরিপূর্ণ । এ কেবলই রস , এতে না আছে কোনো খোসা আর না আছে কোনো বীজ । দেহে যতক্ষণ অবধি প্রাণ থাকে , ততক্ষন আপনারা বারংবার এই রস পান করুন ।
৮১) মহর্ষি ব্যাসদেব এই শ্রীমদ্ভাগবত শাস্ত্রের রচনা করেছেন । এর মধ্যে নিষ্কাম ধর্মের নিষ্কপট নিরুপন করা রয়েছে । এতে শুদ্ধ অন্তঃকরণযুক্ত সৎপুরুষের জানার উপযুক্ত কল্যাণকারী প্রকৃত তত্বের বর্ণনা রয়েছে , যার ফলে ত্রিতাপ জ্বালা শান্ত হয়ে যায় । শ্রীমদ্ভাগবতের শরণাপন্ন হলে অন্য কোনো শাস্ত্র বা সাধনের আবশ্যকতা থাকে না । যখন কোনো পুণ্যবান ব্যক্তি শ্রীমদ্ভাগবত শ্রবণের ইচ্ছা করেন , তখনই পরমেশ্বর ভগবান তাঁর হৃদয়ে অবরুদ্ধ হয়ে যান ।
৮২) এই শ্রীমদ্ভাগবত সকল পুরাণসমূহের তিলক এবং বৈষ্ণবদের পরম ধন । এতে পরমহংসদিগের প্রাপ্ত বিশুদ্ধ জ্ঞানেরই বর্ণনা আছে এবং জ্ঞান , ভক্তি আর বৈরাগ্যের সাথে নিবৃত্তিমার্গকে প্রকাশিত করা হয়েছে । যে ব্যক্তি এই শ্রীমদ্ভাগবতের শ্রবণ করে পঠনে ও মননে তৎপর থাকেন তিনি মুক্তি লাভ করেন ।
৮৩) এই রস স্বর্গলোক, সত্যলোক, কৈলাশ, এমনকি বৈকুন্ঠেও নেই । তাই হে ভাগ্যবান শ্রোতাবৃন্দ ! আপনারা এই রস খুব করে পান করুন , একে কখনো ছাড়বেন না ।
৮৪) সুত বললেন - শুকদেব যখন এইসব কথা বলছিলেন তখন ওই সভার মধ্যে প্রহ্লাদ , বলি , উদ্ধব এবং অর্জুনাদি পার্ষদগণদের নিয়ে স্বয়ং ভগবান শ্রীহরি এসে আবির্ভূত হলেন । দেবর্ষি নারদ তখন শ্রীভগবান এবং তাঁর ভক্তদের যথোচিত পূজা করলেন ।
৮৫) শ্রীভগবানকে প্রসন্ন দেখে দেবর্ষি নারদ তাঁকে এক মহদাসনে বসালেন এবং সকলে মিলে তার সামনে সংকীর্তন করতে লাগলেন । সেই কীর্তন দেখবার জন্য মাতা পার্বতীকে নিয়ে দেবাদিদেব মহাদেব শঙ্কর এবং প্রজাপতি ব্রহ্মাও সেখানে উপস্থিত হলেন ।
৮৬) সকলে সমবেত ভাবে কীর্তন করছিলেন । তার মধ্যে প্রল্হাদ তরলগতি ( চঞ্চলগতি ) সম্পন্ন হওয়াতে করতাল বাজাতে লাগলেন , উদ্ধব কাঁসী বাজাতে লাগলেন, দেবর্ষি নারদ বীনা বাজাতে লাগলেন ,স্বরকুশল ( সংগীতবিদ্যায় কুশল ) অর্জুন রাগ আলাপ করতে লাগলেন , দেবরাজ ইন্দ্র মৃদঙ্গ বাজাতে লাগলেন , সনকাদি কুমারগণ ভগবানের জয়ধ্বনি করতে লাগলেন এবং এঁদের সকলের অগ্রভাগে ব্যাসপুত্র শুকদেব মাঝে মাঝে সরস অঙ্গ ভঙ্গি করে ভাবপ্রকাশ করতে থাকলেন ।
৮৭) এঁদের সকলের মধ্যে ভক্তি , জ্ঞান ও বৈরাগ্য নর্তকের মত নৃত্য করতে লাগলেন । এইরকম অলৌকিক কীর্তন দেখে ভগবান অত্যন্ত প্রসন্ন হলেন এবং বললেন - ।
৮৮) ' তোমাদের এই কথাপাঠ ও কীর্তন আমাকে অতীব প্রসন্ন করেছে , তোমাদের এই ভক্তিভাব আমাকে বশীভূত করে ফেলেছে । অতএব তোমরা আমার কাছে বর প্রার্থনা কর ।' ভগবানের এই কথা শুনে সকলেই অতি আনন্দিত হলেন এবং প্রেমার্দ্রচিত্তে শ্রীভগবানকে বললেন ।
৮৯) ' হে ভগবান ! আমাদের সকলেরই এই অভিলাষ যে , ভবিষ্যতেও যেখানে যেখানে এই শ্রীমদ্ভাগবতের সপ্তাহপারায়ণের অনুষ্ঠান হবে , সেখানে আপনি আপনার পার্ষদগণদের নিয়ে অবশ্যই উপস্থিত থাকবেন । আপনি আমাদের এই মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করুন ।' তখন শ্রীভগবান তাদের 'তথাস্তু ' বলে বরপ্রদান করে সেখান থেকে অদৃশ্য হয়ে গেলেন ।
৯০) তারপর দেবর্ষি নারদ শ্রীভগবান এবং তাঁর পর্ষদগণের চরণে প্রণাম করলেন এবং পুনরায় শুকদেব প্রমুখ তপস্বীদেরও প্রণাম করলেন । ভাগবতকথামৃত পান করে সকলেই অতি আনন্দিত হলেন , তাদের সকলেরই মোহ সম্পূর্ণরূপে নষ্ট হল এবং সকলে নিজ নিজ স্থানে প্রস্থান করলেন ।
৯১) সেই সময় মহর্ষি শুকদেব ভক্তিদেবীকে তাঁর পুত্রদ্বয়ের সাথে শ্রীমদ্ভাগবতের মধ্যে স্থাপিত করে দিলেন । সেই জন্যে ভাগবত সেবন করলে ভগবান শ্রীহরি বৈষ্ণবদের হৃদয়ে স্থান গ্রহণ করেন ।
৯২) যেসব মানুষ দারিদ্র্য দুঃখের জ্বালায় দগ্ধ হচ্ছে , যারা মায়ারূপিণী পিশাচী দ্বারা নিষ্পেষিত হচ্ছে এবং যারা ভব সমুদ্রে হাবুডুবু খাচ্ছে তাদের মঙ্গলার্থে শ্রীমদ্ভাগবত শ্রবণ অতীব ফলপ্রসূ ।
৯৩) শৌনক প্রশ্ন করলেন - হে মহামতি সুত ! মহর্ষি শুকদেব রাজা পরীক্ষিতকে , গোকর্ণ ধুন্ধুকারীকে এবং সনকাদি বালমুনিগন দেবর্ষি নারদকে কোন কোন সময়ে শ্রীমদ্ভাগবতকথা শ্রবণ করিয়েছিলেন - আমার এই সংশয় আপনি দূর করুন ।
৯৪) সুত বললেন - ভগবান শ্রীকৃষ্ণের স্বধাম গমনের পর কলিযুগের ত্রিশ বৎসরের একটু বেশি সময় অতিক্রন্ত হলে ভাদ্র মাসের শুক্লা নবমী তিথিতে মহর্ষি শুকদেব এই শ্রীমদ্ভাগবত কথা প্রারম্ভ করেছিলেন ।
৯৫) মহারাজ পরীক্ষিতের কথা শোনার পর কলিযুগের দুইশত বৎসর অতিক্রান্ত হয়ে গেলে আষাঢ় মাসের শুক্লা নবমীতে গোকর্ন এই কথা শুনিয়েছিলেন ।
৯৫) এরপর কলিযুগের ত্রিশ বৎসর অতিক্রান্ত হলে কার্তিক শুক্লা নবমী তিথি থেকে সনকাদি মুনিগন এই কথা শুরু করেন ।
৯৭) হে নিষ্পাপ শৌনক ! আপনি যা কিছু প্রশ্ন করেছিলেন তার সব উত্তর আমি দিয়ে দিয়েছি । এই কলিযুগে শ্রীমদ্ভাগবতকথা ভবরোগ নাশের মোক্ষম ঔষধি ।
৯৮) হে সাধুগণ ! আপনারা অত্যন্ত আনন্দের সাথে এই শ্রীমদ্ভাগবতকথামৃত পান করুন । এই কথা ভগবান শ্রীকৃষ্ণের অত্যন্ত প্রিয় , সর্বপাপহরণকারী , মোক্ষের একমাত্র কারণ আর ভক্তিবৃদ্ধির পথ । সুতরাং এই পৃথিবীতে অন্যান্য কল্যাণকারী সাধনপথের চিন্তা করে এবং তীর্থভ্রমণে কি হবে ?
৯৯) ধর্মরাজ যম পাশ অস্ত্রধারী যমদূতকে ডেকে বললেন - ' দেখো , ভাগবতকথায় যারা মত্ত হয়ে রয়েছে , তাদের নিকটে যেও না , সর্বদা তাদের থেকে দূরে থাকবে । আমি অন্যান্য সকলকে দণ্ডদানে সমর্থ কিন্তু বৈষ্ণবদের নয় ।'
১০০) এই অসার সংসারে বিষয়রুপী বিষের আসক্তিতে ব্যাকুল মানুষেরা ! নিজের মঙ্গলের জন্য কেবল ক্ষণমাত্রের জন্য হলেও এই শুকশাস্ত্রের অনুপম সুধা পান করো । এসো সকলে ! নিন্দিত কথাসম্বলিত কুপথে কেনই বা বৃথা ঘুরে চলেছো ? এই শ্রীমদ্ভাগবত কথা কানে প্রবেশ করা মাত্র মানুষের মুক্তি হয়ে যায় । মহারাজ পরীক্ষিত এর প্রত্যক্ষ প্রমান ।
১০১) মহর্ষি শুকদেব প্রেমরস প্রবাহে স্থিত থেকে এই কথা বলেছিলেন । যার এই কথা কণ্ঠলগ্ন হয়ে গিয়েছে তিনি বৈকুন্ঠপতি হয়ে যান ।
১০২) হে শৌনক ! আমি অনেক শাস্ত্র দেখার পর আপনাকে এই পরম গোপনীয় রহস্য শোনালাম । এই কথা সকল শাস্ত্রেরই সারতত্ব । এই পৃথিবীতে শুকশাস্ত্রের থেকে পবিত্র আর কোনো অন্য গ্রন্থ নেই । সুতরাং পরমানন্দ প্রাপ্তির জন্য এই দ্বাদশ স্কন্ধের শ্রীমদ্ভাগবতের অমৃতসার পান করুন ।
১০৩) যিনি ভক্তিভরে নিয়মপালনপূর্বক এই কথা শ্রবণ করেন আর যে ব্যক্তি শুদ্ধচিত্তে বৈষ্ণবদের সামনে এই কথার কীর্তন করেন , তারা উভয়েই সঠিক নিয়ম পালন করার মাধ্যমে এর যথার্থ ফলভোগী হন - তাঁদের জন্য এই ত্রিলোকে আর কোনো কিছুই অসাধ্য থাকে না ।
আসুন আমরা সবাই একসাথে শ্রীমদ্ভাগবতম / শ্রীমদ্ ভাগবত মহাপপুরাণের স্বাধ্যায় করে আমাদের জীবন পুন্য করি | আজকের মতো এইটুকুই,আমরা শেষ করব মহামন্ত্র দিয়ে |
যদি আপনার এই পোস্টটি পছন্দ হয়ে থাকে / ভালো লেগে থাকে নতুবা এখান থেকে কিছু নুতন জানতে পারেন তাহলে আমাদের সাবস্ক্রাইব অবশ্যই করবেন এবং আপন আত্মীয়পরিজন, বন্ধু-বান্ধবদের সাথে শেয়ার করবেন | আমার লেখা কেমন লাগলো তা অবশ্যই নিচে কমেন্ট বক্স এর মাধ্যমে কমেন্ট করে জানাবেন |
শ্রীমদ্ ভগবত গীতার উপর আমাদের টিউটোরিয়াল / শিক্ষামূলক সিরিজ পড়ার জন্য এই লিংকটি ক্লিক করে শ্রীমদ ভগবত গীতার অমৃতজ্ঞান পান করে জীবন পবিত্র ও পুন্য করুন |
শ্রীমদ্ ভগবত গীতা : https://bhagavadgitatutorial.blogspot.com
আপনারা আমার প্রণাম নেবেন |
ইতি
দীন ভক্ত দাসানুদাস
<--পূর্ববর্তী লেখনী পরবর্তী লেখনী-->
<--পূর্ববর্তী লেখনী পরবর্তী লেখনী-->
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ |
|| ওম নমঃ ভগবতে বাসুদেবায় ||
শ্রীমদ্ভাগবতমাহাত্ম্যম্- ষষ্ঠ অধ্যায়
সপ্তাহযজ্ঞের নিয়ম
প্রিয় ভক্তবৃন্দ এবং সুধীগণ,
পূর্ববর্তী লেখনীতে আমরা শ্রীমদ্ভাগবতমাহাত্ম্যের পঞ্চম অধ্যায়, ধুন্ধুকারীর প্রেতযোনি প্রাপ্তি এবং তা থেকে মুক্তি সম্পর্কে জেনেছিলাম । আজ আমরা শ্রীমদ্ভাগবতমাহাত্ম্যের ষষ্ঠ অধ্যায়, সপ্তাহযজ্ঞের নিয়ম সম্পর্কে জানব । এটি শুরু হয় সূত দ্বারা বর্ণিত দেবর্ষি নারদের সাথে সনকাদি মুনিগণের কথোপকথনের মাধ্যমে ।
শ্রীমদ্ভাগবতমাহাত্ম্যম্- ষষ্ঠ অধ্যায় |
২) এর জন্য সর্বপ্রথম দৈবজ্ঞ পণ্ডিতগণের সাথে পরামর্শ করে এই সপ্তাহযজ্ঞের মুহূর্ত নির্ধারণ বা দিনস্থির করা উচিত । বিবাহের্ অনুষ্ঠান সম্পাদনের জন্য যেমন অর্থের সংকুলানের ব্যাপারটি ভেবে দেখা হয় তেমনই এখানেও অর্থ সংস্থানের ব্যাপারটিতে ধ্যান দেওয়া প্রয়োজন ।
৩) সপ্তাহব্যাপী ভাগবতকথা প্রারম্ভের জন্য আষাঢ় , শ্রাবণ , ভাদ্র , আশ্বিন , কার্তিক ও অগ্রহায়ণ এই ছয় মাসই শ্রোতাদের পক্ষে মোক্ষপ্রদ । "
৪) হে দেবর্ষি ! এই ছয় মাসের মধ্যে আবার কিছু বিচার করতে হয় । যেমন ভদ্রা - ব্যাতিপাত ইত্যাদি দোষযুক্ত যোগগুলি সর্বদাই বর্জন করা উচিত । এরপর এই কাজে সহায়তার জন্য যারা আগ্রহী ও উৎসাহী তাদের এই কার্যের বিভিন্ন বিষয়ের দায়িত্ব দেওয়া উচিত ।
৫) এরপর দেশে দেশে অতি সযত্নে এই বার্তা প্রচার করা দরকার যে ভাগবত সপ্তাহযজ্ঞের্ অনুষ্ঠান হবে । এই অনুষ্ঠানে সকলের সপরিবারে অংশগ্রহণ প্রার্থনীয় হওয়া উচিত ।
৬) নারী এবং শূদ্রাদিগণ শ্রীহরিসংকীর্তন এবং ভাগবতকথা থেকে দূরে সরে রয়েছে । তাদের সবার্ কাছেও যাতে এই সংবাদ পৌঁছায় এমন ব্যবস্থা করতে হবে ।
৭) দেশে দেশে যেসকল বিরক্ত বৈষ্ণবগণ ও হরিসংকীর্তন উৎসুক ভক্তগণ রয়েছেন তাদের অবশ্যই নিমন্ত্রণপত্র পাঠানো আবশ্যক । এই নিমন্ত্রণপত্র লেখারও বিধি উল্লেখ করা হয়েছে ।
৮) ' হে মহানুভবগণ ! এখানে সুদুর্লভ অপূর্ব রসরূপী শ্রীমদ্ভাগবতের সপ্তাহপারায়ণ যজ্ঞের অনুষ্ঠান এবং তদোপলক্ষে সৎপুরুষের সম্মেলন হবে ।
৯) আপনারা ভাগবতরসিক , সুতরাং শ্রীমদ্ভাগবতকথা পীযুষ ( অমৃত ) পান করার উদ্দেশ্যে আপনারা সত্বর প্রেমপূর্বক আগমন করুন ।
১০) যদি আপনি বিশেষ কোনো কারণবশত সপ্তাহব্যাপী যজ্ঞে উপস্থিত থাকার অবকাশ না পান , তাহলে অন্তত একদিনের জন্য হলেও অবশ্যই কৃপা করে আসবেন । কারণ এই অনুষ্ঠানের ক্ষণমুহূর্তও অতিদুর্লভ ।
শ্রীমদ্ভাগবতমাহাত্ম্যম্- ষষ্ঠ অধ্যায় |
১২) এই কথাশ্রবণের আয়োজন কোনো তীর্থস্থানে কিংবা অরণ্যে অথবা নিজগৃহেও করার বিধান রয়েছে । এসবের মধ্যে যেখানে বড় উন্মুক্ত স্থান রয়েছে এবং একসাথে অনেকজন বসতে পারেন সেইখানেই কথাস্থল হওয়া উচিত ।
১৩) কথাস্থলে ভূমির শোধন , মার্জন , লেপন করে বিভিন্ন রঙের ধাতু দিয়ে মণ্ডপ তৈরী করবেন । গৃহের সমস্ত আসবাবপত্র ও দ্রব্যাদি গৃহের এক কোণে জড়ো করে রাখবেন ।
১৪) কথাপ্রারম্ভের পঞ্চদিবস পূর্ব থেকেই সযত্নে পাতবার কাপড় প্রভৃতি দ্রব্যাদি জোগাড় করে রাখবেন এবং কলাগাছে ( কলা গাছের খন্ডে ) সুশোভিত এক উঁচু মঞ্চ বানাবেন ।
১৫) তার চারিদিক ফল, পুষ্প , চাঁদোয়া প্রভৃতি সব জিনিস দিয়ে সুসজ্জিত করবেন । চারিদিকে ধ্বজা এবং নানারকম সামগ্রী দিয়ে সাজাবেন ।
১৬) সেই মণ্ডপের খানিকটা জায়গা উঁচু করে সেখানে সাতটি লোকের কল্পনা করে সংসার বিরক্ত / নিরাসক্ত ব্রাহ্মণদের ডেকে সেখানে উপবেশন করাবেন ।
১৭) সম্মুখে তাদের জন্য যথাযুক্ত আসনের ব্যাবস্থা করবেন । তার পশ্চাতে পাঠক বা বক্তার জন্য এক দিব্য আসনের ( সিংহাসনের ) ব্যবস্থা করবেন ।
১৮) পাঠক যদি উত্তর দিকে মুখ করে পাঠ করেন তাহলে শ্রোতারা পূর্বদিকে মুখ করে বসবেন । আর পাঠক যদি পূর্বদিকে মুখ করে পাঠে বসেন তাহলে শ্রোতাদের উত্তর দিকে মুখ করে পাঠ শ্রবণ করা প্রয়োজন ।
১৯) অথবা পাঠক এবং শ্রোতাগণ উভয়েই পূর্বদিকে মুখ করে পাঠে বসবেন । দেশকালাদি বিষয়ে অভিজ্ঞ বিদ্বজন শ্রোতাদের জন্য এইরকম পাঠশ্রবণেরই বিধান দিয়েছেন ।
২০) বেদশাস্ত্রের বিশুদ্ধ ও সরল ব্যাখ্যাতে সমর্থ , বিভিন্ন আনুষঙ্গিক দৃষ্টান্তের মাধ্যমে বিষয়বস্তু বোঝাতে কুশল , অতীব নিস্পৃহ , ধীর বক্তা , এইরূপ সংসার বিরক্ত বিষ্ণুভক্ত বিপ্রকে পাঠকর্তা করা উচিত ।
শ্রীমদ্ভাগবতমাহাত্ম্যম্- ষষ্ঠ অধ্যায় |
২২) পাঠে সহায়তা করবার জন্য পাঠকের সাথে তার মতই আরো একজন বিদ্বান থাকবেন । ওই পন্ডিতও যেন শাস্ত্রের বিভিন্ন রকম সংশয় নিরসনে সমর্থ হন এবং শ্রোতাদের বোঝানোর ব্যাপারে তৎপর হন ।
২৩) পাঠে ব্রতগ্রহণ করবার জন্য পাঠপ্রারম্ভের পূর্বদিবসেই পাঠক ক্ষৌরকর্ম করে রাখবেন এবং অরুণোদয়কালে শৌচাদি সমাপন করে স্নান করবেন ।
২৪) এরপর সন্ধ্যাদি নিত্যকর্ম সংক্ষেপে সমাপন করে শ্রীমদ্ভাগবতকথার বিঘ্ননাশের উদ্দেশ্যে শ্রীগণেশের পূজা করবেন ।
২৫) এরপর পিতৃগণের উদ্দেশ্যে তর্পন করে নিজ পূর্বকৃত পাপের শুদ্ধির জন্য প্রায়শ্চিত্ত করবেন । এরপর একটি মন্ডল তৈরী করে তাতে শ্রীহরিকে স্থাপন করবেন ।
২৬) তারপর পরম ভগবান শ্রীকৃষ্ণের উদ্দেশ্যে মন্ত্র উচ্চারণ করে তাঁর ষোড়শ উপচারে পুজো করবেন এবং পূজান্তে তাঁকে প্রদক্ষিণ ও নমস্কারাদির পরে এই বলে স্তুতি করবেন ।
২৭) ' হে করুণানিধি ! আমি এই সংসারসাগরে নিমজ্জিত এক অতি দীন । কর্মমোহে আমি গ্রস্ত । এর থেকে আপনি আমাকে উদ্ধার করুন । '
২৮) এরপর শ্রীমদ্ভাগবতকেও পরমপ্রীতি ও যত্নসহকারে , ধুপ , দ্বীপাদি দ্বারা যথাযত বিধিপূর্বক পূজা করবেন ।
২৯) তারপর শ্রীমদ্ভাগবতের সামনে শ্রীফল নারিকেল রেখে নমস্কারপূর্বক প্রসন্নচিত্তে স্তুতি করা কর্তব্য ।
৩০) ' শ্রীমদ্ভাগবতরূপে আপনি স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণচন্দ্রই এখানে বিরাজমান । হে নাথ ! এই ভবসাগর পার হওয়ার জন্য আমি আপনার শরণাগত হলাম ।
শ্রীমদ্ভাগবতমাহাত্ম্যম্- ষষ্ঠ অধ্যায় |
৩২) এইপ্রকার দীনভাবে প্রার্থনা করে মূল পাঠকের পূজা করা কর্তব্য । তাঁকে সুন্দর বস্ত্র আভূষণাদিতে শোভিত করে পূজান্তে এইরূপে স্তূতি করবেন - ।
৩৩) ' হে শুকরুপী ভগবান ! আপনি প্রবোধজ্ঞ এবং সর্বশাস্ত্রবিশারদ । আপনি কৃপাপূর্বক এই ভাগবতকথা প্রকাশের মাধ্যমে আমার অজ্ঞান দূরীভূত করুন । '
৩৪) এরপর নিজ মঙ্গলের জন্য তাঁর সামনে নিয়ম ধারণ করবেন এবং যথাশক্তি সেই সব নিয়ম সাতদিন পালন করবেন ।
৩৫) কথাভঙ্গ নিবৃত্তির নিমিত্ত পাঁচজন ব্রাহ্মণকে বরণ করবেন । তাঁরা দ্বাদশাক্ষর মন্ত্র ( ॐ নমো ভগবতে বাসুদেবায় ) দ্বারা শ্রীভগবানের নাম জপ করবেন ।
৩৬) পরে ব্রাহ্মণ , সকল বৈষ্ণব ও কীর্তনীয়াদের প্রণাম এবং পূজা করে তাঁদের অনুমতি নিয়ে নিজ আসনে উপবেশন করবেন ।
৩৭) যে ব্যক্তি বিত্ত, ধনসম্পত্তি, গৃহ, পুত্র , সন্তানাদির চিন্তা পরিত্যাগ করে শুদ্ধচিত্তে , স্থিরমতি হয়ে কেবলমাত্র পাঠেই মনস্থাপন করেন , এই পাঠ শ্রবনে তিনি উত্তম ফলপ্রাপ্ত হন ।
৩৮) সুধী পাঠক সকালে সূর্যোদয় থেকে শুরু করে সাড়ে তিন প্রহর পর্যন্ত ধীরকণ্ঠে উত্তমরূপে ভাগবতকথা পাঠ করবেন ।
৩৯) মধ্যাহ্নে দুই ঘটিকার ( ঘন্টা ) জন্য ভাগবতকথার বিরাম দেওয়া কর্তব্য । সেই সময় কথাপ্রসঙ্গ অনুযায়ী বৈষ্ণবগণ শ্রীভগবানের গুনগান করবেন।
৪০) কথাপাঠের সময় মলমূত্র ত্যাগের বেগ সংবরণের জন্য লঘু আহার বা স্বল্পাহার সুখাবহ হয় । এইজন্য শ্রোতাদের দিনে কেবলমাত্র একবার হৰিষ্যান্ন গ্রহণ করা কর্তব্য ।
শ্রীমদ্ভাগবতমাহাত্ম্যম্- ষষ্ঠ অধ্যায় |
৪২) অথবা ফলাহার বা একাহারই করবেন । যার যেরকম নিয়ম পালনের মাধ্যমে কথাশ্রবণ সুখকর হয় , সেই প্রকার নিয়মই পালন করবেন ।
৪৩) আমি তো উপবাস অপেক্ষা ভোজন করাই শ্রেয়কর বলে মনে করি , যদি তা কথা শ্রবণের অনুকূল হয় । উপবাসের ফলে যদি কথা শ্রবণে কষ্ট উপলব্ধি হয় তাহলে সেই নিয়ম কোনো কাজের নয় ।
৪৪) হে নারদ ! নিয়মপালনের মাধ্যমে যারা সপ্তাহব্যাপী পাঠ শ্রবণ করেন তাঁদের সেই নিয়মাবলী শ্রবণ করুন । যারা বিষ্ণুমন্ত্রে দীক্ষিত নন তারা এই কথা শ্রবনের অনধিকারী ।
৪৫) নিয়মপালনের মাধ্যমে যিনি কথা শ্রবণ করবেন , তিনি ব্রহ্মচর্য পালন করবেন , ভূমিতে শয্যাগ্রহণ করবেন , এবং প্রত্যহ কথাশ্রবণের পর পাতায় ভোজন পরিবেশন করে আহার করবেন ।
৪৬) দ্বিদল ( যথা ডাল, বাদাম, মটর, ছোলা প্রভৃতি ) , মধু , তেল , গরিষ্ট অন্ন , ভাব দূষিত পদার্থ , এবং বাসী অন্ন এইসব কথাশ্রবণকারীর নিত্য ত্যাজ্য ।
৪৭) কাম , ক্রোধ , মদ , অভিমান , মাৎসর্য , লোভ , দম্ভ , মোহ , এবং দ্বেষ থেকে সর্বদা দূরে থাকবেন ।
৪৮) বেদ , বৈষ্ণব , ব্রাহ্মণ , গুরু , গো-সেবক , স্ত্রী , রাজা ও মহাপুরুষদের নিন্দা করবেন না ।
৪৯) নিয়মপূর্বক কথা শ্রবণকারী রজঃস্বলা নারী , অন্ত্যজ , ম্লেচ্ছ ( যবন , অধর্মী প্রভৃতি ), পতিত , গায়ত্রীহীন বিপ্র , ব্রাহ্মণদ্বেষী এবং বেদ - নিন্দুকের সাথে কথা বলিবেন না ।
৫০) সর্বদা সত্য , শৌচ , দয়া , মৌনতা , বিনয়তা , উদারতা - এই সব গুনাবলীকে আশ্রয় করে থাকবেন ।
শ্রীমদ্ভাগবতমাহাত্ম্যম্- ষষ্ঠ অধ্যায় |
৫২) অপুস্পা ( যে নারীর ঋতু হয় না ) নারীগণ , কাকবন্ধ্যা ( একটিমাত্র সন্তানের পর যার সন্তান সম্ভাবনা নষ্ট হয়ে যায় ) নারীগণ , বন্ধ্যা , মৃতার্ভকা ( যার সন্তান হয়ে বাঁচে না ) অথবা যার গর্ভপাত হয়ে যায় , তারা অত্যন্ত শ্রদ্ধাপূর্বক এই শ্রীমদ্ভাগবতকথা শ্রবণ করবেন ।
৫৩) বিধিপূর্বক এই কথাশ্রবণের ফলে এরা অক্ষয় ফল লাভ করবেন ।এই অতি উত্তম দিব্য কথা কোটি জন্মের সমান ফলপ্রদান করে ।
৫৪) এইপ্রকারে এই ব্রতপালন করবেন । যে ব্যক্তির এই ব্রত থেকে বিশেষ ফললাভের বাসনা থাকে তারা জন্মাষ্টমী ব্রতের মতোই এই কথাব্রত পালন করবেন ।
৫৫) কিন্তু যিনি শ্রীভগবানের অকিঞ্চন ভক্ত , তার এই ব্রত উদযাপনের কোনো প্রয়োজন নেই । তিনি কেবলমাত্র এই কথাশ্রবণেই পবিত্র হয়ে যান । কারণ তিনি তো নিষ্কাম ভগবৎভক্ত ।
৫৬) এরপর সপ্তাহব্যাপী ভাগবতকথার পরিসমাপ্তি হলে , শ্রোতাদের অত্যন্ত ভক্তিভরে এই শ্রীমদ্ভাগবত গ্রন্থের এবং পাঠকের পূজা করা আবশ্যক ।
৫৭) এরপর পাঠক শ্রোতাদের প্রসাদ , তুলসী ও প্রসাদী মালা প্রদান করবেন । তারপর সকলে মিলে মৃদঙ্গ করতাল নিয়ে কীর্তন করা উচিত ।
৫৮) এরপর সকলের জয়ধ্বনি , শঙ্খধ্বনি , নমস্কার করা উচিত । ব্রাহ্মন ও প্রার্থীদের ধন এবং অন্নদান করা উচিত ।
৫৯) শ্রোতা যদি সংসারবিরক্ত / নিরাসক্ত হন তাহলে কর্মশান্তির উদ্দেশ্যে সপ্তাহযজ্ঞের দ্বিতীয় দিনে গীতাপাঠ করবেন আর শ্রোতা গৃহস্থ হলে হোম করবেন ।
৬০) সেই হোমে ভাগবতের দশম স্কন্ধের প্রতিটি শ্লোক পাঠের মাধ্যমে বিধিপূর্বক পায়স , মধু , ঘৃত , তিল ও অন্নাদি সামগ্রীসমূহ আহুতি দেবেন ।
শ্রীমদ্ভাগবতমাহাত্ম্যম্- ষষ্ঠ অধ্যায় |
৬২-৬৩) হবন করবার সামর্থ না থাকলে হবনের ফলপ্রাপ্তির জন্য ব্রাহ্মনদের হবনসামগ্রী দান করবেন এবং বিধিপালনের মধ্যে বিভিন্ন ত্রুটি বিচ্যুতির অপরাধস্খলনের জন্য স্থির চিত্তে ভগবান বিষ্ণুর সহস্রনাম পাঠ করা উচিত । বিষ্ণুসহস্রনামের পাঠে সকল কর্মই সফল হয় কারণ এর চেয়ে বড় কর্ম আর নাই ।
৬৪) তারপর বারো জন বিপ্রবরকে পায়স , মধু ইত্যাদি সুস্বাদু ভোজন করাবেন এবং ব্রতপূর্তির জন্য সুবর্ণ ও ধেনু দান করবেন ।
৬৫-৬৮) সামর্থবান ব্যক্তিরা তিন ভরি সুবর্ণ দিয়ে স্বর্ণসিংহাসন তৈরী করিয়ে তার উপর ললিত অক্ষরে লেখা শ্রীমদ্ভাগবত স্থাপন করে আবাহনাদি বিভিন্ন পূজা করবেন । পরে ওই সুধী আচার্যকে বস্ত্র , আভূষণ , গন্ধাদি দ্বারা সযত্নে পূজা করে তাঁকে ওই স্বর্ণসিংহাসন সমেত শ্রীমদ্ভাগবতগ্রন্থ দক্ষিণাপূর্বক সমর্পন করবেন । এর ফলে ওই বুদ্ধিমান দাতা জন্ম মৃত্যুর চক্র থেকে মুক্ত হবেন । এই সপ্তাহ শ্রবণবিধি সর্বপাপনিবারণকারী । এই সপ্তাহপারায়ণ ঠিক করে পালন করলে শ্রীমঙ্গলময় এই ভাগবত পুরাণ অভীষ্ট ফল প্রদান করে । নিঃসন্দেহে ইহা অর্থ , ধর্ম , কাম ও মোক্ষ - এই চতুর্বর্গের ফল লাভের সাধন নিস্পন্ন করে ।
৬৯) সনকাদি বালমুনিগন বললেন - হে দেবর্ষি নারদ ! এইভাবে আমরা তোমাকে সম্পূর্ণরূপে শ্রীমদ্ভাগবত সপ্তাহশ্রবণের বিধি বললাম , এখন আর কি শুনতে ইচ্ছা প্রকাশ কর ? এই শ্রীমদ্ভাগবত থেকে ভুক্তি এবং মুক্তি দুই হস্তগত হয় ।
শ্রীমদ্ভাগবতমাহাত্ম্যম্- ষষ্ঠ অধ্যায় |
৭২) এই ভাগবত কথা সমাপ্ত হলে জ্ঞান , বৈরাগ্য ও ভক্তিদেবীর সাতিশয় পুষ্টি হয়েছিল । তারা তিনজনই তারুণ্য অবস্থাপ্রাপ্ত হয়ে সবার মনমোহন করতে লাগলেন ।
৭৩) নিজের মনোরথ পূর্ণ হওয়াতে দেবর্ষি নারদও আনন্দিত হয়েছিলেন । তার সর্বাঙ্গ শরীর পুলকিত হচ্ছিল এবং তিনি পরমানন্দে পূর্ণ হয়ে গিয়েছিলেন ।
৭৪) এইভাবে কথাশ্রবণের পর ভগবতপ্রিয় নারদ মুনি কৃতাঞ্জলি পূর্বক প্রেমগদগদ চিত্তে সনকাদি মুনিদের বললেন ।
৭৫) দেবর্ষি নারদ বললেন - ' আমি ধন্য হলাম , আপনারা করুনাপূর্বক আমাকে অনুগৃহীত করেছেন । আজ আমি সর্বপাপহারী ভগবান শ্রীহরিকে লাভ করলাম ।
৭৬) হে তপোধনগন ! সকল ধর্মের মধ্যে আমি এই শ্রীমদ্ভাগবত শ্রবণই শ্রেষ্ঠ বলে মনে করি ; কারণ এর শ্রবণের দ্বারা বৈকুন্ঠপতি শ্রীকৃষ্ণকে লাভ করা যায় । '
৭৭) সুত বললেন - হে শৌনক ! বৈষ্ণবোত্তম দেবর্ষি নারদ এইকথা বলছেন এমন সময় ভ্রমণ করতে করতে যোগেশ্বর শুকদেব সেখানে এসে উপস্থিত হলেন ।
৭৮) কথা সমাপ্ত হওয়া মাত্রই ব্যাসনন্দন শুকদেব ঐস্থানে এলেন । ষোড়শ বর্ষীয় শুকদেব ছিলেন আত্মানন্দে পূর্ণ , জ্ঞানরূপী মহাসাগরকে সংবর্ধন করার জন্য তিনি চন্দ্রের মতন ছিলেন । তিনি নিম্নস্বরে প্রেমভরে শ্রীমদ্ভগবতের পাঠ করছিলেন ।
৭৯) পরম তেজস্বী শুকদেব মুনিকে দেখে সভায় উপস্থিত সকলে বিদ্যুৎগতিতে উঠে দাঁড়ালেন এবং তাঁকে একটি উচ্চাসনে বসালেন । তারপর দেবর্ষি নারদ তাঁকে শ্রদ্ধাপূর্বক পূজা করলেন । তিনি সুখাসনে বসে বললেন - 'আপনারা আমার নির্মল বাণী শ্রবণ করুন ।'
শ্রীমদ্ভাগবতমাহাত্ম্যম্- ষষ্ঠ অধ্যায় |
৮১) মহর্ষি ব্যাসদেব এই শ্রীমদ্ভাগবত শাস্ত্রের রচনা করেছেন । এর মধ্যে নিষ্কাম ধর্মের নিষ্কপট নিরুপন করা রয়েছে । এতে শুদ্ধ অন্তঃকরণযুক্ত সৎপুরুষের জানার উপযুক্ত কল্যাণকারী প্রকৃত তত্বের বর্ণনা রয়েছে , যার ফলে ত্রিতাপ জ্বালা শান্ত হয়ে যায় । শ্রীমদ্ভাগবতের শরণাপন্ন হলে অন্য কোনো শাস্ত্র বা সাধনের আবশ্যকতা থাকে না । যখন কোনো পুণ্যবান ব্যক্তি শ্রীমদ্ভাগবত শ্রবণের ইচ্ছা করেন , তখনই পরমেশ্বর ভগবান তাঁর হৃদয়ে অবরুদ্ধ হয়ে যান ।
৮২) এই শ্রীমদ্ভাগবত সকল পুরাণসমূহের তিলক এবং বৈষ্ণবদের পরম ধন । এতে পরমহংসদিগের প্রাপ্ত বিশুদ্ধ জ্ঞানেরই বর্ণনা আছে এবং জ্ঞান , ভক্তি আর বৈরাগ্যের সাথে নিবৃত্তিমার্গকে প্রকাশিত করা হয়েছে । যে ব্যক্তি এই শ্রীমদ্ভাগবতের শ্রবণ করে পঠনে ও মননে তৎপর থাকেন তিনি মুক্তি লাভ করেন ।
৮৩) এই রস স্বর্গলোক, সত্যলোক, কৈলাশ, এমনকি বৈকুন্ঠেও নেই । তাই হে ভাগ্যবান শ্রোতাবৃন্দ ! আপনারা এই রস খুব করে পান করুন , একে কখনো ছাড়বেন না ।
৮৪) সুত বললেন - শুকদেব যখন এইসব কথা বলছিলেন তখন ওই সভার মধ্যে প্রহ্লাদ , বলি , উদ্ধব এবং অর্জুনাদি পার্ষদগণদের নিয়ে স্বয়ং ভগবান শ্রীহরি এসে আবির্ভূত হলেন । দেবর্ষি নারদ তখন শ্রীভগবান এবং তাঁর ভক্তদের যথোচিত পূজা করলেন ।
৮৫) শ্রীভগবানকে প্রসন্ন দেখে দেবর্ষি নারদ তাঁকে এক মহদাসনে বসালেন এবং সকলে মিলে তার সামনে সংকীর্তন করতে লাগলেন । সেই কীর্তন দেখবার জন্য মাতা পার্বতীকে নিয়ে দেবাদিদেব মহাদেব শঙ্কর এবং প্রজাপতি ব্রহ্মাও সেখানে উপস্থিত হলেন ।
শ্রীমদ্ভাগবতমাহাত্ম্যম্- ষষ্ঠ অধ্যায় |
৮৭) এঁদের সকলের মধ্যে ভক্তি , জ্ঞান ও বৈরাগ্য নর্তকের মত নৃত্য করতে লাগলেন । এইরকম অলৌকিক কীর্তন দেখে ভগবান অত্যন্ত প্রসন্ন হলেন এবং বললেন - ।
৮৮) ' তোমাদের এই কথাপাঠ ও কীর্তন আমাকে অতীব প্রসন্ন করেছে , তোমাদের এই ভক্তিভাব আমাকে বশীভূত করে ফেলেছে । অতএব তোমরা আমার কাছে বর প্রার্থনা কর ।' ভগবানের এই কথা শুনে সকলেই অতি আনন্দিত হলেন এবং প্রেমার্দ্রচিত্তে শ্রীভগবানকে বললেন ।
৮৯) ' হে ভগবান ! আমাদের সকলেরই এই অভিলাষ যে , ভবিষ্যতেও যেখানে যেখানে এই শ্রীমদ্ভাগবতের সপ্তাহপারায়ণের অনুষ্ঠান হবে , সেখানে আপনি আপনার পার্ষদগণদের নিয়ে অবশ্যই উপস্থিত থাকবেন । আপনি আমাদের এই মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করুন ।' তখন শ্রীভগবান তাদের 'তথাস্তু ' বলে বরপ্রদান করে সেখান থেকে অদৃশ্য হয়ে গেলেন ।
৯০) তারপর দেবর্ষি নারদ শ্রীভগবান এবং তাঁর পর্ষদগণের চরণে প্রণাম করলেন এবং পুনরায় শুকদেব প্রমুখ তপস্বীদেরও প্রণাম করলেন । ভাগবতকথামৃত পান করে সকলেই অতি আনন্দিত হলেন , তাদের সকলেরই মোহ সম্পূর্ণরূপে নষ্ট হল এবং সকলে নিজ নিজ স্থানে প্রস্থান করলেন ।
৯১) সেই সময় মহর্ষি শুকদেব ভক্তিদেবীকে তাঁর পুত্রদ্বয়ের সাথে শ্রীমদ্ভাগবতের মধ্যে স্থাপিত করে দিলেন । সেই জন্যে ভাগবত সেবন করলে ভগবান শ্রীহরি বৈষ্ণবদের হৃদয়ে স্থান গ্রহণ করেন ।
শ্রীমদ্ভাগবতমাহাত্ম্যম্- ষষ্ঠ অধ্যায় |
৯৩) শৌনক প্রশ্ন করলেন - হে মহামতি সুত ! মহর্ষি শুকদেব রাজা পরীক্ষিতকে , গোকর্ণ ধুন্ধুকারীকে এবং সনকাদি বালমুনিগন দেবর্ষি নারদকে কোন কোন সময়ে শ্রীমদ্ভাগবতকথা শ্রবণ করিয়েছিলেন - আমার এই সংশয় আপনি দূর করুন ।
৯৪) সুত বললেন - ভগবান শ্রীকৃষ্ণের স্বধাম গমনের পর কলিযুগের ত্রিশ বৎসরের একটু বেশি সময় অতিক্রন্ত হলে ভাদ্র মাসের শুক্লা নবমী তিথিতে মহর্ষি শুকদেব এই শ্রীমদ্ভাগবত কথা প্রারম্ভ করেছিলেন ।
৯৫) মহারাজ পরীক্ষিতের কথা শোনার পর কলিযুগের দুইশত বৎসর অতিক্রান্ত হয়ে গেলে আষাঢ় মাসের শুক্লা নবমীতে গোকর্ন এই কথা শুনিয়েছিলেন ।
৯৫) এরপর কলিযুগের ত্রিশ বৎসর অতিক্রান্ত হলে কার্তিক শুক্লা নবমী তিথি থেকে সনকাদি মুনিগন এই কথা শুরু করেন ।
৯৭) হে নিষ্পাপ শৌনক ! আপনি যা কিছু প্রশ্ন করেছিলেন তার সব উত্তর আমি দিয়ে দিয়েছি । এই কলিযুগে শ্রীমদ্ভাগবতকথা ভবরোগ নাশের মোক্ষম ঔষধি ।
৯৮) হে সাধুগণ ! আপনারা অত্যন্ত আনন্দের সাথে এই শ্রীমদ্ভাগবতকথামৃত পান করুন । এই কথা ভগবান শ্রীকৃষ্ণের অত্যন্ত প্রিয় , সর্বপাপহরণকারী , মোক্ষের একমাত্র কারণ আর ভক্তিবৃদ্ধির পথ । সুতরাং এই পৃথিবীতে অন্যান্য কল্যাণকারী সাধনপথের চিন্তা করে এবং তীর্থভ্রমণে কি হবে ?
শ্রীমদ্ভাগবতমাহাত্ম্যম্- ষষ্ঠ অধ্যায় |
১০০) এই অসার সংসারে বিষয়রুপী বিষের আসক্তিতে ব্যাকুল মানুষেরা ! নিজের মঙ্গলের জন্য কেবল ক্ষণমাত্রের জন্য হলেও এই শুকশাস্ত্রের অনুপম সুধা পান করো । এসো সকলে ! নিন্দিত কথাসম্বলিত কুপথে কেনই বা বৃথা ঘুরে চলেছো ? এই শ্রীমদ্ভাগবত কথা কানে প্রবেশ করা মাত্র মানুষের মুক্তি হয়ে যায় । মহারাজ পরীক্ষিত এর প্রত্যক্ষ প্রমান ।
১০১) মহর্ষি শুকদেব প্রেমরস প্রবাহে স্থিত থেকে এই কথা বলেছিলেন । যার এই কথা কণ্ঠলগ্ন হয়ে গিয়েছে তিনি বৈকুন্ঠপতি হয়ে যান ।
১০২) হে শৌনক ! আমি অনেক শাস্ত্র দেখার পর আপনাকে এই পরম গোপনীয় রহস্য শোনালাম । এই কথা সকল শাস্ত্রেরই সারতত্ব । এই পৃথিবীতে শুকশাস্ত্রের থেকে পবিত্র আর কোনো অন্য গ্রন্থ নেই । সুতরাং পরমানন্দ প্রাপ্তির জন্য এই দ্বাদশ স্কন্ধের শ্রীমদ্ভাগবতের অমৃতসার পান করুন ।
১০৩) যিনি ভক্তিভরে নিয়মপালনপূর্বক এই কথা শ্রবণ করেন আর যে ব্যক্তি শুদ্ধচিত্তে বৈষ্ণবদের সামনে এই কথার কীর্তন করেন , তারা উভয়েই সঠিক নিয়ম পালন করার মাধ্যমে এর যথার্থ ফলভোগী হন - তাঁদের জন্য এই ত্রিলোকে আর কোনো কিছুই অসাধ্য থাকে না ।
। ইতি শ্রীপদ্মপুরাণে উত্তরখণ্ডে শ্রীমদ্ভগবতমাহাত্ম্যে শ্রবণবিধিকথনং নাম ষষ্ঠোহধ্যায়ঃ।
আসুন আমরা সবাই একসাথে শ্রীমদ্ভাগবতম / শ্রীমদ্ ভাগবত মহাপপুরাণের স্বাধ্যায় করে আমাদের জীবন পুন্য করি | আজকের মতো এইটুকুই,আমরা শেষ করব মহামন্ত্র দিয়ে |
হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে |
হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে ||
যদি আপনার এই পোস্টটি পছন্দ হয়ে থাকে / ভালো লেগে থাকে নতুবা এখান থেকে কিছু নুতন জানতে পারেন তাহলে আমাদের সাবস্ক্রাইব অবশ্যই করবেন এবং আপন আত্মীয়পরিজন, বন্ধু-বান্ধবদের সাথে শেয়ার করবেন | আমার লেখা কেমন লাগলো তা অবশ্যই নিচে কমেন্ট বক্স এর মাধ্যমে কমেন্ট করে জানাবেন |
শ্রীমদ্ ভগবত গীতার উপর আমাদের টিউটোরিয়াল / শিক্ষামূলক সিরিজ পড়ার জন্য এই লিংকটি ক্লিক করে শ্রীমদ ভগবত গীতার অমৃতজ্ঞান পান করে জীবন পবিত্র ও পুন্য করুন |
শ্রীমদ্ ভগবত গীতা : https://bhagavadgitatutorial.blogspot.com
আপনারা আমার প্রণাম নেবেন |
ইতি
দীন ভক্ত দাসানুদাস
<--পূর্ববর্তী লেখনী পরবর্তী লেখনী-->
No comments:
Post a Comment