<--পূর্ববর্তী লেখনী পরবর্তী লেখনী-->
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ
|| ওম নমঃ ভগবতে বাসুদেবায় ||
শ্রীমদ্ভাগবতমাহাত্ম্যম্-তৃতীয় অধ্যায়
ভক্তির কষ্টের উপশম
পূর্ববর্তী লেখনীতে আমরা শ্রীমদ্ভাগবতমাহাত্ম্যের ভক্তির দুঃখ দূর করার জন্য দেবর্ষি নারদের উদ্যোগ সম্পর্কে জেনেছিলাম । আজ আমরা শ্রীমদ্ভাগবতমাহাত্ম্যের তৃতীয় অধ্যায়, ভক্তির কষ্টের উপশম সম্পর্কে জানবো । এটি শুরু হয় নিচে বর্ণিত দেবর্ষি নারদের সাথে সনকাদি মুনিগণের কথোপকথনের মাধ্যমে ।
শ্রীমদ্ভাগবতমাহাত্ম্যম্-তৃতীয় অধ্যায় |
২) দয়া করে আপনারা আমাকে এই যজ্ঞ করার উপযুক্ত স্থানের দিশানির্দেশ করুন । আপনারা বেদজ্ঞ এবং বেদের পারঙ্গত , সুতরাং এই শুকশাস্ত্রের মহিমা সম্পর্কে আমাকে অবগত করান ।
৩) শ্রীমদ্ভাগবতকথা কত দিনের মধ্যে শ্রবণ করতে ও করাতে হয় , এবং তার বিধিনিয়মাদিই বা কি, দয়া করে সেই সম্পর্কেও আমাকে অবগত করান ।
৪) সনকাদি মুনিগন বললেন - হে দেবর্ষি নারদ ! আপনি অতি বিনম্র এবং বিবেকী, সেই জন্য এই সবকিছুই আপনাকে বলছি, মন দিয়ে শুনুন । গঙ্গাদ্বার বা হরিদ্বারের নিকটে আনন্দঘাট নামে একটি ঘাট আছে ।
৫) অনেক মুনি ঋষিরা সেখানে বসবাস করেন , দেবতা এবং সিদ্ধগণও সেখানে যাতায়াত করেন । নানারকম বৃক্ষ ও তরুলতায় স্থানটি বিশেষ নিবিড় এবং সেখানকার স্থলভূমি নুতন , কোমল ও মসৃন বালুর দ্বারা আচ্ছাদিত ।
৬) সেই ঘাটটি নিৰ্জন স্থানে অবস্থিত, সর্বদাই তা সুবর্ণকমলের আঘ্রাণে সুবাসিত এবং অতীব রমণীয় । সেখানে বসবাসকারী সিংহ হস্তি প্রভৃতি পরস্পরবিরোধী প্রাণীদের মধ্যেও কোনোপ্রকার বৈরীভাব পরিলক্ষিত হয় না ।
৭) বিশেষ কোনোরূপ প্রযত্ন ভিন্নই সেখানে গিয়ে আপনি এই শুকশাস্ত্রের জ্ঞানযজ্ঞ করুন ,সেই জায়গার স্থানমাহাত্মের ফলে ভাগবতকথায় অপূর্ব রসের সঞ্চার ঘটবে ।
৮) পরমা ভক্তিদেবীও তার চোখের সামনে জরাজীর্ণ ও নির্বল অবস্থায় শায়িত পুত্রদ্বয় জ্ঞান আর বৈরাগ্যকে নিয়ে সেখানে উপস্থিত হবেন ।
৯) কারণ শ্রীমদ্ভাগবতকথা যেখানেই হোক না কেন , ভক্তিদেবী আপনা আপনিই সেখানে উপস্থিত হন। আর এই শ্রীমদ্ভাগবতের অমৃতকথা শ্রবণমাত্রেই জ্ঞান , বৈরাগ্য সমেত তিনজন তারুণ্যবস্থা প্রাপ্ত হবেন ।
শ্রীমদ্ভাগবতমাহাত্ম্যম্-তৃতীয় অধ্যায় |
১১) যতক্ষণ তারা গঙ্গাতটে সেই ঘাটে এসে পৌঁছালেন , তারমধ্যেই ভূলোক , দেবলোক , ব্রম্ভলোক সর্বত্র এই সংবাদ সম্প্রচারিত হয়ে গিয়েছে ।
১২) শ্রীমদ্ভাগবতকথামৃত পান করবার জন্যে ভাগবৎবৎসল ও ভাগবতকথারসিক বিষ্ণুভক্তেরা যে যেখানে ছিলেন সত্ত্বর সেখানে জমায়েত হতে লাগলেন ।
১৩-১৪) ভৃগু, বশিষ্ঠ, চ্যবন, গৌতম, মেধাতিথি, দেবল, দেবরাত, পরশুরাম, বিশ্বামিত্র, শাকল , মার্কন্ডেয়, দত্তাত্রেয়, পিপ্পলাদ, যোগেশ্বর ব্যাস এবং পরাশর, ছায়াশুক, জাজলি এবং জহ্নু প্রভৃতি সকল প্রধান প্রধান মুনিগণ আপন আপন পুত্র, শিষ্য এবং সহধর্মিনীদের সাথে করে প্রসন্ন চিত্তে সেখানে এসে উপস্থিত হলেন ।
১৫-১৬-১৭) এছাড়া বেদ, বেদান্ত, মন্ত্র, তন্ত্র, সপ্তদশ পুরাণ, ছয় শাস্ত্র মূর্তিধারণ করে সেখানে উপস্থিত হলেন । গঙ্গা আদি নদী, বিভিন্ন পুস্করাদি সরোবর,কুরুক্ষেত্র আদি বিভিন্ন ক্ষেত্রসমূহ, দিক সমূহ, দন্ডকাদি অরণ্য, হিমালয়াদি পর্বত, দেবতাগণ , গন্ধর্বগণ ও দানবাদি সকলেই সেই ভাগবত কথা শ্রবণের জন্যে এলেন । যারা যারা দর্পবশত নিজেদের শ্রেষ্ঠ মনে করে আসতে অনীহা প্রকাশ করলেন , মহর্ষি ভৃগু তাদের বুঝিয়ে সেখানে নিয়ে এলেন ।
১৮) শ্রীমদ ভাগবতকথা শোনাবার জন্যে দীক্ষিত হয়ে শ্রীকৃষ্ণপরায়ণ সনকাদি মুনিগন দেবর্ষি নারদ প্রদত্ত শ্রেষ্ঠ আসনে উপবিষ্ট হলেন । সেখানে উপস্থিত সমস্ত শ্রোতাগণ তাদের বন্দনা করলেন ।
শ্রীমদ্ভাগবতমাহাত্ম্যম্-তৃতীয় অধ্যায় |
২০) শ্রীমদভাগবতকথা শ্রবনে একদিকে মুনিঋষিগণ , আর একদিকে দেবতাগণ , অপরদিকে বেদ , উপনিষদ আদি সমস্ত শাস্ত্র , অন্যদিকে তীর্থ,সরোবর,পুষ্করাদি আর একদিকে সমস্ত স্ত্রীলোকগণ উপবেশন করলেন ।
২১) চতুর্দিক থেকে কেবলি জয়জয়কার , নমস্কার আর শঙ্খধ্বনি হতে লাগল এবং আবীর, খৈ ও পুষ্পবৃষ্টি হতে লাগল ।
২২) কোনো কোনো দেবনায়কগণ বিমানে উপবিষ্ট হয়ে শ্রীমদভাগবতকথা শ্রবনে উপস্থিত সকলের উপর কল্পবৃক্ষের পুষ্পবর্ষণ করতে লাগলেন ।
২৩) সুত বললেন - এইভাবে পূজন তথা উচিৎ সম্মান প্রদর্শনের পরিসমাপ্তি হলে সেখানে উপস্থিত সকলে যখন কথা শ্রবনে একাগ্রচিত্ত হলেন তখন সনকাদি মুনিগন মহাত্মা দেবর্ষি নারদকে শ্রীমদ্ভাগবতের মাহাত্ম্য বিশদভাবে বর্ণনা আরম্ভ করলেন ।
২৪) সনকাদি বালঋষিগণ বললেন - আমরা আপনাদের এখন শ্রীমদ্ভাগবত শাস্ত্রের মাহাত্ম্য শোনাবো । এই শ্রীমদ্ভাগবতমাহাত্ম্য শ্রবণমাত্রেই যেন মুক্তিদেবী আপনাদের কুক্ষিগতা হন ।
২৫) শ্রীমদ্ভাগবত কথার শ্রবণ, চিন্তন, মনন, সেবন, আস্বাদন সর্বদাই করা উচিত । এই অমৃতকথা শ্রবনমাত্রই পরমেশ্বর ভগবান শ্রীহরি স্বয়ং হৃদয়ে এসে উপবিষ্ট হন ।
২৬) এই গ্রন্থে আঠারো সহস্র (১৮০০০) শ্লোক বর্তমান , যা বারোটি স্কন্দে বর্ণিত । ইহা মহারাজ পরীক্ষিৎ এবং শ্রীশুকদেবের সংবাদে (কথোপকথনে) সমৃদ্ধ । আপনারা এই ভাগবতশাস্ত্র মনোযোগের সহিত শ্রবণ করুন ।
২৭) কেবল এক মুহূর্তের জন্যও এই শুকশাস্ত্রের কথা যতদিন না পর্যন্ত শ্রবণ হয় , মানুষ ততদিন অজ্ঞানবশত এই সংসারচক্রে কেবল পরিভ্রমণ করতেই থাকে ।
২৮) অনেক শাস্ত্র বা পুরাণ শ্রবনের পর তা ঠিক ভাবে আত্মস্থ না হলে ভ্রম উৎপাদনের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পেয়ে থেকে । তাই শ্রীমদ্ভাগবতশাস্ত্র জ্ঞানী,অজ্ঞানী,ধনী,দরিদ্র সকলের মুক্তিহেতু সকলকেই উচ্চস্বরে আহ্বান করে ।
শ্রীমদ্ভাগবতমাহাত্ম্যম্-তৃতীয় অধ্যায় |
৩০) সহস্র অশ্বমেধ যজ্ঞ কিংবা শত বাজপেয় যজ্ঞও এই শুকশাস্ত্রকথার ষোলোভাগের একভাগেরও সমকক্ষ নয় ।
৩১) হে তপোধনগণ ! যতক্ষন না এই শ্রীমদ্ভাগবতকথা সম্যকরূপে শ্রবণ করা হয় ততক্ষন মানবশরীরে পাপের অবস্থিতি বিদ্যমান ।
৩২) ফললাভের দৃষ্টি থেকেও এই শুকশাস্ত্র শ্রবণের ফলের সমান গঙ্গা,গয়া ,কাশী,পুষ্কর বা প্রয়াগাদি কোনো তীর্থপরিভ্রমণও হতে পারে না ।
৩৩) যদি আপনাদের পরম গতিপ্রাপ্তির অভিলাষ থাকে তাহলে আপনারা স্বমুখে উচ্চারণের মাধ্যমে নিত্য শ্রীমদ্ভাগবতের অর্ধ বা এক চতুর্থাংশ নিয়মিত পাঠ করুন ।
৩৪-৩৬) ওঁকার, বেদ, গায়ত্রী, পুরুষসূক্ত, শ্রীমদ্ভাগবত, দ্বাদশাক্ষর মন্ত্র ( ওঁ নমো ভগবতে বাসুদেবায় ), দ্বাদশাত্মা সূর্যদেব, প্রয়াগ তীর্থ , সংবৎসরস্বরূপ কাল, ব্রাহ্মণ, অগ্নিহোত্র, সুরভি, তিথি, তুলসী, বসন্ত ঋতু এবং ভগবান পুরুষোত্তম - পন্ডিতগণ এদের মধ্যে কোনপ্রকার পৃথকভাব করেন না ।
৩৭) যে মানব অর্থসহিত এই শ্রীমদ্ভাগবতশাস্ত্র অহর্নিশ পাঠ করে - নিঃসন্দেহে তার কোটি জন্মের পাপ নিমেষে ভস্মীভূত হয়ে যায় ।
৩৮) যে ব্যক্তি শ্রীমদ্ভাগবতের শ্লোকের অর্ধাংশ বা এক চতুর্থাংও নিত্য পাঠ করেন, তিনি রাজসূয় এবং অশ্বমেধ যজ্ঞের ফলপ্রাপ্ত হন ।
শ্রীমদ্ভাগবতমাহাত্ম্যম্-তৃতীয় অধ্যায় |
৪০) জীবনের অন্তিম মুহূর্তে যে এই শুকশাস্ত্র শ্রীমদ্ভাগবতের শ্লোক শ্রবণ করে , তার উপর গোবিন্দ প্রসন্ন হয়ে প্রীতিপূর্বক বৈকুন্ঠ প্রদান করেন ।
৪১) যিনি স্বর্ণসংযুক্ত সিংহাসনে রেখে এই শ্রীমদ্ভাগবতগ্রন্থ কোনো বৈষ্ণবকে দান করেন তিনি নিঃসন্দেহে ভগবানের ধ্রুবসাযুজ্য লাভ করেন ।
৪২) যে শঠ ( দুষ্ট ব্যক্তি ) নিজের সারাজীবনে একাগ্রচিত্ত না হয়ে এই শ্রীমদ্ভাগবতরুপী অমৃতের সামান্যতম রসাস্বাদনও না করেছে , সে তার জন্ম কেবল চণ্ডাল আর গাধার মতোই ব্যর্থ ভাবে নষ্ট করেছে । সেই অধমের জন্ম কেবল তার মাতা কে প্রসবপীড়া প্রদান করবার জন্যই হয়েছে ।
৪৩) যে পাপাত্মা এই শুকশাস্ত্রের সামান্যকিছু অংশও শ্রবণ করেনি সে জীবিত থেকে মৃতের সমান । "বসুন্ধরা বা পৃথিবীর ভারস্বরূপ সে পশুতুল্য মানুষ কে ধিক্"- স্বর্গলোকে দেবরাজ ইন্দ্রাদি দেবতাগণ এই কথা আলোচনা করে থাকেন ।
৪৪) এই সংসারে শ্রীমদ্ভাগবতকথা শ্রবণের সুযোগপ্রাপ্তি অবশ্যই কঠিন । কোটি কোটি জন্মের পুণ্যের সঞ্চয়ের ফলে এই সুযোগ উপস্থিত হয় ।
৪৫) হে দেবর্ষি নারদ ! আপনি বুদ্ধিমান, যোগীরাজ এবং বিদ্যানিধি , আপনি মন দিয়ে এই ভাগবত কথা শ্রবণ করুন । এই কথা শ্রবণের জন্য বিশেষ কোনো দিনক্ষণের প্রয়োজন নেই , এই কথাশ্রবণ সর্বদাই মঙ্গলকারী ।
৪৬) সর্বদা সত্যভাষণ এবং ব্রহ্মচর্য ধারণপূর্বক এই কথাশ্রবণ শ্রেষ্ট বলে মনে করা হয় । কিন্তু এই ঘোর কলিযুগে এটা খুবই কষ্টসাধ্য । তাই শ্রীশুকদেব এর যে বিশেষ বিধি বর্ণনা করে গিয়েছেন, সেটি আমাদের সকলের জানা দরকার ।
৪৭) এই কালরূপী ভীষণ কলিযুগে নিজেকে কঠোর নিয়মে বেঁধে রেখে, অনেকদিন চিত্তসংযম করে কোনো শুভকর্মের জন্য দীক্ষিত হয়ে থাকা খুবই কঠিন । সেই জন্য শ্রীমদ্ভাগবতের সপ্তাহ শ্রবণের বিধি রয়েছে ।
৪৮) শ্রদ্ধাভরে নিত্য শ্রীমদ্ভভাগবত শ্রবণ অথবা মাঘ মাসে শ্রীমদ্ভভাগবত শ্রবনে যে ফল লাভ হয় , সপ্তাহ শ্রবণের ফলে সেই ফলেরই প্রাপ্তি হয় , মহর্ষি শ্রীশুকদেব এই সিদ্ধান্ত দিয়েছেন ।
শ্রীমদ্ভাগবতমাহাত্ম্যম্-তৃতীয় অধ্যায় |
৫০) যজ্ঞ-তপস্যা, যোগসাধন এবং সমাধির দ্বারাও যে ফল লাভ করা সম্ভবপর হয় না , সপ্তাহব্যাপী শ্রীমদ্ভাগবত শ্রবণের ফলে তা সহজেই প্রাপ্ত করা যায় ।
৫১-৫২) এই সপ্তাহব্যাপী শ্রীমদ্ভাগবতকথা শ্রবণ যজ্ঞ, তপস্যা , ব্রতের থেকেও অধিক ফলদায়ী । তীর্থাদি পরিভ্রমনের থেকে ইহা সর্বদাই অধিক , যোগসাধনের থেকেও অধিক , এমনকি ধ্যান ও জ্ঞানের থেকেও অধিক ফলদায়ী । এর মাহাত্ম্যের গর্জনা তো আরো আরো বিশালরূপে করা যায় , ইহা সমস্তসাধনার থেকেও অধিক ফলদায়ক ।
৫৩) শৌনক প্রশ্ন করলেন - হে সুত ! এতো আপনি এক বড় বিচিত্র আর আশ্চর্য কথা বললেন । অবশ্যই এই শ্রীমদ্ভাগবতমহাপুরাণ অনাদি ও পরমপুরুষ শ্রীনারায়ণকে নিরুপন করে ; কিন্তু মোক্ষলাভের জন্য সম্পাদিত জ্ঞান তথা বিভিন্ন সাধনকে নগন্য প্রমান করে কিভাবে এই শ্রীমদ্ভাগবতকথা সব থেকে বড় হল ?
৫৪) সুত বললেন - হে শৌনক ! পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যখন এই মর্ত্যধাম ছেড়ে নিজের নিত্যধামে যাওয়ার সমীপে উপস্থিত হয়েছেন তখন তার শ্রীমুখ থেকে একাদশ স্কন্দের জ্ঞানোপদেশ শোনার পর উদ্ধবও এই প্রশ্নই তাঁকে করেছিলেন ।
৫৫) উদ্ধব বললেন - হে প্রাণগোবিন্দ ! আপনি আপনার ভক্তগণের কার্য সমাপন করে স্বয়ং নিজ পরমধামের উদ্দেশ্যে যাত্রা করছেন , কিন্তু আমার মনে এক ভীষণ এবং মহতী চিন্তা উদিত হচ্ছে , আপনি দয়া করে সেই সংশয়ের নিবৃত্তির মাধ্যমে আমাকে শান্ত করুন ।
৫৬-৫৭) অতি শীঘ্রই ঘোর কলিকালের প্রাদুর্ভাব ঘটবে , যার ফলে এই সংসারে অনেক খল এবং দুষ্ট লোকের সমাগম হবে । এইসব দুষ্ট ব্যক্তিদের সংস্পর্শে এসে অনেক সৎব্যক্তিও উগ্র স্বভাবের হয়ে উঠবে । এই বিষম পরিস্থিতে এইসবের ভারে নিপীড়িতা গো-রূপিণী কারই কে শরণাগতা হবে ! হে কমলনয়ন ! এই অবস্থায় আমি তো আপনি ভিন্ন আর দ্বিতীয় কাউকে এর রক্ষাকর্তা হিসেবে দেখতে পাচ্ছি না ।
৫৮) অতঃপর হে ভক্তবৎসল ! আপনি সৎ ও সাধুগণের প্রতি কৃপা করে এই লোক থেকে যাবেন না । হে
ভগবান ! আপনি প্রকৃতরূপে চিন্ময় এবং নিরাকার হয়েও শুধুমাত্র ভক্তদের জন্যেই তো আপনার এই সগুন সাকার রূপ প্রকট করেছেন ।
শ্রীমদ্ভাগবতমাহাত্ম্যম্-তৃতীয় অধ্যায় |
৬০) প্রভাসক্ষেত্রে উদ্ধবের অনুরোধ শুনে পরমেশ্বর ভগবান এই বিচার করতে লাগলেন যে ভক্তদের অবলম্বন তথা আশ্রয়ের জন্য আমার কি করণীয় ।
৬১) তখন ভগবান শ্রীহরি তার সমস্তকিছু এই শ্রীমদ্ভাগবতে মিলিয়ে দিলেন ও তিনি এই ভাগবতসমুদ্রে অন্তৰ্নিহিত হলেন ।
৬২) সেই হেতু এই শ্রীমদ্ভাগবতশাস্ত্র সাক্ষাৎ শ্রীভগবানের বাঙ্ময়ী মূর্তি । এর পূজা, পাঠ , শ্রবণ , চিন্তন , মনন অথবা শুধুমাত্র দর্শনমাত্রই মানুষের সমস্ত পাপের নাশ হয় ।
৬৩) এইজন্য এই শ্রীমদ্ভাগবতশাস্ত্রের সপ্তাহশ্রবণ সর্বশ্রেষ্ট রূপে গণ্য হয় । এবং এই ভীষণ কলিযুগে অন্যান্য সমস্ত সাধনের থেকে এই সনাতন ভাগবত ধর্ম ও ধর্মাচারকেই শ্রেষ্ট বলা হয়েছে ।
৬৪) ঘোর কলিকালে এই শ্রীমদ্ভাগবতশাস্ত্রই দুঃখ , দুর্দশা , দারিদ্র আর পাপমোচন করে এবং কাম, ক্রোধ, লোভ , মোহ , মদ , এবং মাৎসর্য এই ষড়রিপুর উপর আধিপত্য প্রতিষ্ঠা স্থাপন করে ।
৬৫) অন্যথা শ্রীভগবানের এই মায়া থেকে পরিত্রান পাওয়া তো স্বয়ং দেবতাদেরও পক্ষে দুরুহ , সেখানে মানুষের পক্ষে তো এ অকল্পনীয় বলে অনুমান হয় ! সুতরাং সপ্তাহশ্রবণের এই বিধান মায়ামোহ থেকে মুক্তির জন্যও করা হয়েছে ।
৬৬) সুত বললেন - হে শৌনক ! সনকাদি বালমুনিগন যখন শ্রীমদ্ভাগবত সপ্তাহশ্রবণের মাহাত্ম্য বর্ণনা করছিলেন , তখন সভায় এক বড় আশ্চর্য ব্যাপার ঘটেছিল । সেই প্রসঙ্গ আমি তোমাকে বর্ণনা করছি , তা শ্রবণ কর ।
শ্রীমদ্ভাগবতমাহাত্ম্যম্-তৃতীয় অধ্যায় |
৬৮) সেখানে উপস্থিত সকল সভাসদেরা দেখলেন যে পরমাসুন্দরী শ্রীমতি ভক্তিদেবী শ্রীমদ্ভাগবতের অর্থরূপ ভূষণ ধারণ করে সেখানে উপস্থিত হয়েছেন । তখন সবাই এই বিস্ময় প্রকাশ করে আলোচনা করতে লাগলেন যে প্রেমরূপিণী ভক্তিদেবী কিভাবে এখানে উপস্থিত হলেন ।
৬৯) তখন সনকাদি বালঋষিগণ বললেন - ' পরমাসুন্দরী ভক্তিদেবী এইমাত্র শ্রীমদ্ভাগবতকথামৃতের অর্থ থেকে প্রকাশিত হয়েছেন ' । তাদের এই কথা শুনে ভক্তিদেবী তার পুত্রদ্বয়ের সাথে অত্যন্ত বিনম্রভাবে সনৎকুমারদের এই কথা বললেন ।
৭০) ভক্তিদেবী বললেন - এই ঘোর কলিযুগে আমি প্রায় নিঃশেষ হয়ে গিয়েছিলাম , এখন আপনাদের শ্রীমদ্ভাগবতকথামৃতের মধুর সিঞ্চন আমাকে আবার পুষ্ট করেছে । এখন আপনারা দয়া করে বলুন আমি কোথায় থাকব ?
৭১) এই কথা শুনে সনকাদি বালমুনিগন বললেন - ' হে ভক্তিদেবী ! তুমি ভক্তদের কাছে স্বয়ং শ্রীভগবানের স্বরূপ প্রদানকারিনী , অনন্য প্রেম-প্রদায়িনী ও ভবরোগ নির্মুলকারিনী ; সুতরাং ধৈর্য ধারণপূর্বক আপনি নিত্যনিরন্তর বিষ্ণুভক্তদের হৃদয়ে বাস করুন ।
৭২) এই কলিযুগের দোষসকল সর্বত্র নিজপ্রভাব বিস্তার করলেও আপনার ওপর দৃষ্টি নিক্ষেপ পর্যন্ত করতে সক্ষম হবে না । ' এই ভাবে তাঁদের অনুমতি মাত্রই প্রেমরূপিণী ভক্তিদেবী অবিলম্বেই ভগবৎ ভক্তগণের হৃদয়ে স্থানগ্রহন করলেন ।
৭৩) যাঁর হৃদয়ে কেবলমাত্র ভগবান শ্রীহরির প্রতি অনন্য ভক্তি বিদ্যমান , এই ব্যক্তি এই ত্রিলোকের মধ্যে অত্যন্ত নির্ধন হলেও অশেষ ধন্য , কারণ পরমা ভক্তিসূত্রে গাঁথা পরে সাক্ষাৎ শ্রীভগবানও নিজের পরমধাম ত্যাগ করে তার হৃদয়ে অবস্থান করেন ।
৭৪) এই মর্ত্যধামে শ্রীমদ্ভাগবতশাস্ত্র সাক্ষাৎ পরব্রহ্মের প্রতিমূর্তি , এর মাহাত্ম্য কতটুকুই বা বর্ণনা করতে সক্ষম ! এই শ্রীমদ্ভাগবতশাস্ত্রের পাঠ শ্রবণে পাঠক এবং শ্রোতাগণ উভয়ই শ্রীকৃষ্ণ সাযুজ্যপ্রাপ্ত হন ।
। ইতি শ্রীপদ্মপুরাণে উত্তরখণ্ডে শ্রীমদ্ভাগবতমাহাত্ম্যে ভক্তিকষ্টনিবর্তনং নাম তৃতীয়োহধ্যায়ঃ।
আসুন আমরা সবাই একসাথে শ্রীমদ্ভাগবতম / শ্রীমদ্ ভাগবত মহাপুরাণের স্বাধ্যায় করে আমাদের জীবন পুন্য করি | আজকের মতো এইটুকুই,আমরা শেষ করব মহামন্ত্র দিয়ে |
হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে |
হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে ||
যদি আপনার এই পোস্টটি পছন্দ হয়ে থাকে / ভালো লেগে থাকে নতুবা এখান থেকে কিছু নুতন জানতে পারেন তাহলে আমাদের সাবস্ক্রাইব অবশ্যই করবেন এবং আপন আত্মীয়পরিজন, বন্ধু-বান্ধবদের সাথে শেয়ার করবেন | আমার লেখা কেমন লাগলো তা অবশ্যই নিচে কমেন্ট বক্স এর মাধ্যমে কমেন্ট করে জানাবেন |
শ্রীমদ্ ভগবত গীতার উপর আমাদের টিউটোরিয়াল / শিক্ষামূলক সিরিজ পড়ার জন্য এই লিংকটি ক্লিক করে শ্রীমদ ভগবত গীতার অমৃতজ্ঞান পান করে জীবন পবিত্র ও পুন্য করুন |
শ্রীমদ্ ভগবত গীতা : https://bhagavadgitatutorial.blogspot.com
আপনারা আমার প্রণাম নেবেন |
ইতি
দীন ভক্ত দাসানুদাস
<--পূর্ববর্তী লেখনী পরবর্তী লেখনী-->
No comments:
Post a Comment