শ্রীমদ্ভাগবতম
- প্রথম স্কন্ধ - পঞ্চম অধ্যায় , Srimad Bhagavatam - First Canto - Fifth
Chapter , Bhagavatam,Srimad Bhagavatam, Bhagavata Purana, Srimad
Bhagavatam in Bengali, Bhagavata Purana in Bengali, Bhagavata
Mahapurana, Sanatana Dharma, Bhagavata Mahapurana, Srimad Bhagavatam
Bangla, Gita, শ্রীমদ্ ভাগবতম, শ্রীমদ্ ভাগবত মহাপুরাণ , শ্রীমদ্ ভাগবত
পুরাণ, Srimad Bhagavatam online, শ্রীমদ ভাগবত,ভাগবত মহাপুরাণ, দেবর্ষি নারদের পূর্বজন্ম বৃত্তান্ত ও শ্রীমদ্ভাগবত সম্পর্কে নির্দেশ
<--পূর্ববর্তী লেখনী পরবর্তী লেখনী-->
প্রিয় ভক্তবৃন্দ এবং সুধীগণ,
পূর্ববর্তী লেখনীতে আমরা শ্রীমদ্ভাগবতমের প্রথম স্কন্ধের চতুর্থ অধ্যায় , মহর্ষি ব্যাসের অপ্রসন্নতা এবং দেবর্ষি নারদের আবির্ভাব সম্পর্কে জেনেছিলাম । আজ আমরা শ্রীমদ্ভাগবতমের প্রথম স্কন্ধের পঞ্চম অধ্যায় , দেবর্ষি নারদের পূর্বজন্ম বৃত্তান্ত ও শ্রীমদ্ভাগবত সম্পর্কে উপদেশ -এই বিষয়ে জানব । এটি শুরু হয় নারদমুনি ও মহর্ষি ব্যাসের কথোপকথনের মাধ্যমে । মহামতি সূত গোস্বামী এই কথোপকথনের বর্ণনা করছেন নৈমিষারণ্যে শৌনকাদি মুনিগণে সমীপে ।
<--পূর্ববর্তী লেখনী পরবর্তী লেখনী-->
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ |
|| ওম নমঃ ভগবতে বাসুদেবায় ||
শ্রীমদ্ভাগবতম - প্রথম স্কন্ধ - পঞ্চম অধ্যায়
দেবর্ষি নারদের পূর্বজন্ম বৃত্তান্ত ও শ্রীমদ্ভাগবত সম্পর্কে নির্দেশ
প্রিয় ভক্তবৃন্দ এবং সুধীগণ,
পূর্ববর্তী লেখনীতে আমরা শ্রীমদ্ভাগবতমের প্রথম স্কন্ধের চতুর্থ অধ্যায় , মহর্ষি ব্যাসের অপ্রসন্নতা এবং দেবর্ষি নারদের আবির্ভাব সম্পর্কে জেনেছিলাম । আজ আমরা শ্রীমদ্ভাগবতমের প্রথম স্কন্ধের পঞ্চম অধ্যায় , দেবর্ষি নারদের পূর্বজন্ম বৃত্তান্ত ও শ্রীমদ্ভাগবত সম্পর্কে উপদেশ -এই বিষয়ে জানব । এটি শুরু হয় নারদমুনি ও মহর্ষি ব্যাসের কথোপকথনের মাধ্যমে । মহামতি সূত গোস্বামী এই কথোপকথনের বর্ণনা করছেন নৈমিষারণ্যে শৌনকাদি মুনিগণে সমীপে ।
শ্রীমদ্ভাগবতম - প্রথম স্কন্ধ - পঞ্চম অধ্যায় |
১) সূত গোস্বামী বললেন - তখন বীণাপানী দেবর্ষি নারদ সুখাবিষ্ট হয়ে উপবেশন করে, ঈষৎ হেসে মহামুনি মহর্ষি ব্যাসদেবকে বললেন ।
২) নারদ ঋষি বললেন - হে পরাশর নন্দন মহাভাগ্যবান ব্যাসদেব, আপনার দেহ ও মন আত্মজ্ঞানে সন্তুষ্ট হয়েছে কি ?
৩) হে মহর্ষি ব্যাসদেব - এখন তো আপনার মনের সংশয় সম্পূর্ণ ভাবে দূরীভূত হয়েছে ; কারণ সুচারুরূপে অনুসন্ধানের মাধ্যমে মহৎ ও অদ্ভুত মহাভারতের অর্থযুক্ত সবিস্তার বিশ্লেষণ আপনার দ্বারা সুসম্পন্ন হয়েছে । আর এতে ধর্ম , পারমার্থিক মুক্তি ও বৈদিক নির্দেশাবলী পূর্ণ রূপে আলোচিত হয়েছে ।
৪) আপনি সম্পূর্ণ রূপে বিচার বিবেচনা করে যা নিত্য , সেই পরমতত্ত্ব / ব্রহ্মতত্ত্বের সম্পূর্ণ উপলব্ধি করেছেন । তা সত্বেও নিজেকে অকৃতকার্য ব্যক্তির মতো বিবেচনা করে বৃথা অনুশোচনা করছেন কেন ?
৫) মহর্ষি ব্যাসদেব বললেন - দেবর্ষি নারদ ! আপনি আমার সম্পর্কে যা যা বললেন তা সবই সত্য কিন্তু তবুও আমি সন্তোষ লাভ করতে পারছিনা । আপনি ব্রহ্মার মানসপুত্র এবং অসীম জ্ঞানসম্পন্ন । তাই আমার এই অসন্তোষের কারণ আমি আপনার কাছ থেকেই জানতে চাইছি ।
৬) হে দেবর্ষি নারদ ! আপনি গুহ্যতম ও প্রাচীনতম বেদ , সমস্ত শাস্ত্র সম্পর্কে উত্তমপ্রকার অবগত আছেন । কারণ আপনি পুরাণ পুরুষ পরমেশ্বর শ্রীভগবানের আরাধনা করেন । সেই ত্রিগুণাতীত যিনি নিজের সংকল্পমাত্রই ত্রিগুণের দ্বারা এই জগতের সৃষ্টি , স্থিতি ও প্রলয় করে থাকেন ।
৭) হে দেবর্ষি নারদ ! আপনি সূর্যদেবের মতো সমস্ত ত্রিলোক পরিভ্রমণ করতে পারেন এবং আপনি প্রাণবায়ুর মতো প্রত্যেকের অন্তরে প্রবিষ্ট হয়ে সকলের অন্তরের ভাবটি জানতে সমর্থ । আপনি যথার্থই অন্তর্যামী । তাই যোগানুষ্ঠান , নিয়মপূর্বক ধর্মাচরণ , ব্রতপালন ও যজ্ঞানুষ্ঠানের দ্বারা ব্রহ্মজ্ঞান লাভের পরও আমার অন্তরের মধ্যে থাকা অসম্পূর্ণতার কারণ কি - তার অনুসন্ধান করে আপনি তা দয়া করে আমাকে বলুন ।
২) নারদ ঋষি বললেন - হে পরাশর নন্দন মহাভাগ্যবান ব্যাসদেব, আপনার দেহ ও মন আত্মজ্ঞানে সন্তুষ্ট হয়েছে কি ?
৩) হে মহর্ষি ব্যাসদেব - এখন তো আপনার মনের সংশয় সম্পূর্ণ ভাবে দূরীভূত হয়েছে ; কারণ সুচারুরূপে অনুসন্ধানের মাধ্যমে মহৎ ও অদ্ভুত মহাভারতের অর্থযুক্ত সবিস্তার বিশ্লেষণ আপনার দ্বারা সুসম্পন্ন হয়েছে । আর এতে ধর্ম , পারমার্থিক মুক্তি ও বৈদিক নির্দেশাবলী পূর্ণ রূপে আলোচিত হয়েছে ।
৪) আপনি সম্পূর্ণ রূপে বিচার বিবেচনা করে যা নিত্য , সেই পরমতত্ত্ব / ব্রহ্মতত্ত্বের সম্পূর্ণ উপলব্ধি করেছেন । তা সত্বেও নিজেকে অকৃতকার্য ব্যক্তির মতো বিবেচনা করে বৃথা অনুশোচনা করছেন কেন ?
৫) মহর্ষি ব্যাসদেব বললেন - দেবর্ষি নারদ ! আপনি আমার সম্পর্কে যা যা বললেন তা সবই সত্য কিন্তু তবুও আমি সন্তোষ লাভ করতে পারছিনা । আপনি ব্রহ্মার মানসপুত্র এবং অসীম জ্ঞানসম্পন্ন । তাই আমার এই অসন্তোষের কারণ আমি আপনার কাছ থেকেই জানতে চাইছি ।
৬) হে দেবর্ষি নারদ ! আপনি গুহ্যতম ও প্রাচীনতম বেদ , সমস্ত শাস্ত্র সম্পর্কে উত্তমপ্রকার অবগত আছেন । কারণ আপনি পুরাণ পুরুষ পরমেশ্বর শ্রীভগবানের আরাধনা করেন । সেই ত্রিগুণাতীত যিনি নিজের সংকল্পমাত্রই ত্রিগুণের দ্বারা এই জগতের সৃষ্টি , স্থিতি ও প্রলয় করে থাকেন ।
৭) হে দেবর্ষি নারদ ! আপনি সূর্যদেবের মতো সমস্ত ত্রিলোক পরিভ্রমণ করতে পারেন এবং আপনি প্রাণবায়ুর মতো প্রত্যেকের অন্তরে প্রবিষ্ট হয়ে সকলের অন্তরের ভাবটি জানতে সমর্থ । আপনি যথার্থই অন্তর্যামী । তাই যোগানুষ্ঠান , নিয়মপূর্বক ধর্মাচরণ , ব্রতপালন ও যজ্ঞানুষ্ঠানের দ্বারা ব্রহ্মজ্ঞান লাভের পরও আমার অন্তরের মধ্যে থাকা অসম্পূর্ণতার কারণ কি - তার অনুসন্ধান করে আপনি তা দয়া করে আমাকে বলুন ।
৮)
দেবর্ষি নারদ বললেন - হে মহর্ষি ব্যাসদেব ! অবশ্যই আপনার দ্বারা পরমেশ্বর
শ্রীভগবানের যশ , কীর্তি ও মহিমা সঠিক ভাবে বর্ণিত বা কীর্তিত হয়নি । আমার মতে যে দর্শন ( শাস্ত্র ) পরমেশ্বর
শ্রীভগবানের সন্তুষ্টিবিধান না করে তা অনর্থক ।
৯) হে মহর্ষি ব্যাসদেব , আপনি ধর্মাচরণের চারটি তত্ত্ব পুরুষার্থচতুষ্টয় যেমন ভাবে বর্ণনা করেছেন , সেই ভাবে কিন্তু বাসুদেব ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মহিমা কীর্তন করেননি ।
১০) যে কথা - তা সে যতই ভাবরসে পরিপূর্ণ এবং অলংকারযুক্ত হোক না কেন - সেই বাক্য যদি জগৎপতি শ্রীকৃষ্ণের পবিত্র মহিমার বর্ণন না করে , তাকে উত্তম পুরুষরা কাকতীর্থের সমান বলে তুলনা করেছেন । সুসজ্জিত ভগবদ্ধামে আনন্দ আস্বাদনকারী পরমহংসগণ সেখানে কোনপ্রকার আনন্দের উপলব্ধি করেন না ।
১১) অপরপক্ষে যে বাণীর প্রতিটি শ্লোকে পরমেশ্বর শ্রীভগবানের নামের মহিমা বর্ণন করা থাকে , যা শ্রীভগবানের রূপ , রস , যশ , লীলাকীর্তনে পূর্ণ - সেই সৃষ্টি পরম দিব্য এবং তা এই জড়জগতে কালরূপ কলির প্রভাবে পাপগ্রসিত জীবের জীবনে এক ধর্মবিপ্লবের সূচনা করে । তাই সেই সাহিত্য যদি সর্বতোভাবে সম্পূর্ণ নাও হয় , মহাপুরুষেরা কিন্তু সদাই তার শ্রবণ , মনন ও কীর্তন করেন ।
১২) নিষ্কাম কর্মযোগ ও নির্মল জ্ঞানযজ্ঞের মাধ্যমে প্রাপ্ত মোক্ষ বা আত্মোপলব্ধি যদি ভগবৎভক্তিশুন্য হয় এবং সেই অচ্যুত ( যিনি তাঁর স্বরূপাবস্থা থেকে কখনো চ্যুত হন না ) পরমেশ্বর শ্রীভগবানের মহিমা কীর্তন রহিত হয় তাহলে তা কোনোপ্রকারেই শোভনীয় নয় । তেমনি সর্বদাই ক্লেশদায়ক যে কাম্য কর্ম বা সকাম কর্ম শ্রীভগবানের সেবার উদ্দেশে সাধিত না হয় তা নিতান্তই অপ্রয়োজনীয় ।
১৩) হে ব্যাসদেব মহাভাগ ! আপনি পূর্ণদ্রষ্টা , পবিত্রকীর্তি , নিস্কলঙ্ক , সত্যব্রতপরায়ণ এবং দিব্যগুণাবলী যুক্ত । সুতরাং সমগ্র বিশ্বের মানুষকে মোহবন্ধন থেকে মুক্ত করার জন্য সমাধিস্থ হয়ে পরমেশ্বর ভগবানের অলৌকিক লীলাসকল দর্শনপূর্বক তার বর্ণনা করুন ।
১৪) কেউ যদি সেই পরমেশ্বর ভগবানের লীলাবিহার , যশ, মহিমা ইত্যাদি ব্যতীত অন্য কিছু বর্ণনা করতে ইচ্ছুক হয় তাহলে এর প্রতিক্রিয়ারূপে তারা চিত্তচাঞ্চল্যে পীড়িত ও উত্তেজিত হয়ে পড়ে । তাদের বুদ্ধি সমত্ববোধে না থেকে ভেদাভেদ জ্ঞানে আচ্ছন্ন হয় । ঠিক যেমন কোনো নৌকা ঝড়ের মুখে পড়ে গেলে কখনো স্থির থাকতে পারেনা ও বিক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে - তেমনি মন ও বুদ্ধির অবস্থাও সেই রকম হয় ।
৯) হে মহর্ষি ব্যাসদেব , আপনি ধর্মাচরণের চারটি তত্ত্ব পুরুষার্থচতুষ্টয় যেমন ভাবে বর্ণনা করেছেন , সেই ভাবে কিন্তু বাসুদেব ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মহিমা কীর্তন করেননি ।
১০) যে কথা - তা সে যতই ভাবরসে পরিপূর্ণ এবং অলংকারযুক্ত হোক না কেন - সেই বাক্য যদি জগৎপতি শ্রীকৃষ্ণের পবিত্র মহিমার বর্ণন না করে , তাকে উত্তম পুরুষরা কাকতীর্থের সমান বলে তুলনা করেছেন । সুসজ্জিত ভগবদ্ধামে আনন্দ আস্বাদনকারী পরমহংসগণ সেখানে কোনপ্রকার আনন্দের উপলব্ধি করেন না ।
১১) অপরপক্ষে যে বাণীর প্রতিটি শ্লোকে পরমেশ্বর শ্রীভগবানের নামের মহিমা বর্ণন করা থাকে , যা শ্রীভগবানের রূপ , রস , যশ , লীলাকীর্তনে পূর্ণ - সেই সৃষ্টি পরম দিব্য এবং তা এই জড়জগতে কালরূপ কলির প্রভাবে পাপগ্রসিত জীবের জীবনে এক ধর্মবিপ্লবের সূচনা করে । তাই সেই সাহিত্য যদি সর্বতোভাবে সম্পূর্ণ নাও হয় , মহাপুরুষেরা কিন্তু সদাই তার শ্রবণ , মনন ও কীর্তন করেন ।
১২) নিষ্কাম কর্মযোগ ও নির্মল জ্ঞানযজ্ঞের মাধ্যমে প্রাপ্ত মোক্ষ বা আত্মোপলব্ধি যদি ভগবৎভক্তিশুন্য হয় এবং সেই অচ্যুত ( যিনি তাঁর স্বরূপাবস্থা থেকে কখনো চ্যুত হন না ) পরমেশ্বর শ্রীভগবানের মহিমা কীর্তন রহিত হয় তাহলে তা কোনোপ্রকারেই শোভনীয় নয় । তেমনি সর্বদাই ক্লেশদায়ক যে কাম্য কর্ম বা সকাম কর্ম শ্রীভগবানের সেবার উদ্দেশে সাধিত না হয় তা নিতান্তই অপ্রয়োজনীয় ।
১৩) হে ব্যাসদেব মহাভাগ ! আপনি পূর্ণদ্রষ্টা , পবিত্রকীর্তি , নিস্কলঙ্ক , সত্যব্রতপরায়ণ এবং দিব্যগুণাবলী যুক্ত । সুতরাং সমগ্র বিশ্বের মানুষকে মোহবন্ধন থেকে মুক্ত করার জন্য সমাধিস্থ হয়ে পরমেশ্বর ভগবানের অলৌকিক লীলাসকল দর্শনপূর্বক তার বর্ণনা করুন ।
১৪) কেউ যদি সেই পরমেশ্বর ভগবানের লীলাবিহার , যশ, মহিমা ইত্যাদি ব্যতীত অন্য কিছু বর্ণনা করতে ইচ্ছুক হয় তাহলে এর প্রতিক্রিয়ারূপে তারা চিত্তচাঞ্চল্যে পীড়িত ও উত্তেজিত হয়ে পড়ে । তাদের বুদ্ধি সমত্ববোধে না থেকে ভেদাভেদ জ্ঞানে আচ্ছন্ন হয় । ঠিক যেমন কোনো নৌকা ঝড়ের মুখে পড়ে গেলে কখনো স্থির থাকতে পারেনা ও বিক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে - তেমনি মন ও বুদ্ধির অবস্থাও সেই রকম হয় ।
শ্রীমদ্ভাগবতম - প্রথম স্কন্ধ - পঞ্চম অধ্যায় |
১৫) কলির জীবসকল অজ্ঞানঅন্ধকার সংসারসাগরে নিমজ্জিত থেকে সদাই বিষয়ভোগে অনুরক্ত । তাদের উদ্দেশে কাম্য বা সকাম কর্মের পথ বিবেচনা করে আপনি নিন্দনীয় কর্ম করে ফেলেছেন কারণ অজ্ঞ মানুষেরা আপনার অনুশাসন গ্রহণ করে কাম্য বা সকাম কর্মকেই পুন্যকর্ম বলে বিবেচনা করবে এবং তার অনুষ্ঠানই ধর্মানুষ্ঠান বলে পালন করবে । স্বাভাবিকভাবেই কলির মানুষের প্রতি আপনার নির্দেশিত পথ কাম্যকর্মের নিষেধকে অগ্রাহ্য করে ।
১৬) পরমেশ্বর ভগবান অনন্ত । যারা জড়-জাগতিক সুখভোগ , বাসনা , কামনা ইত্যাদি আসক্তি থেকে বিরক্ত , সেইপ্রকার বিবেকী ও বিচক্ষণ পুরুষই নিবৃত্তিমার্গ অবলম্বনের মাধ্যমে পারমার্থিক এই তত্ত্বজ্ঞান লাভ করার অধিকারী হন । আর যারা গুণত্রয় দ্বারা প্রভাবিত হয়ে বিষয়ভোগে আসক্ত , সেই সকল জীবের মঙ্গলার্থে আপনি তাদের সহজভাবে পরমেশ্বর শ্রীভগবানের অপ্রাকৃত লীলাসকল শ্রবণ করিয়ে পথপ্রদর্শন করান ।
১৭) জাগতিক সকাম কর্ম ও নিজ আচার পরিত্যাগপূর্বক যদি কোনো অধার্মিক ব্যক্তি ( যেমন কোনো ম্লেচ্ছ যবন তার আচার পরিত্যাগ করে ) পরমেশ্বর শ্রীভগবানের প্রেমময়ী চরণ কমল সেবার দ্বারা সিদ্ধিলাভ করে তাহলে স্বয়ং ভগবানকেই প্রাপ্ত হন । আর যদিও বা কোনো কারণে তিনি চ্যুতও হন তাহলেও তার বিফল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না । আর যদি কোন অভক্ত ব্যক্তি কেবলই স্বধর্মে যুক্ত হয়ে কর্ম করে কিন্তু শ্রীহরির ভজনা না করে তাহলে তা সর্বদাই বৃথা হয় ।
১৮) এই জগতে প্রত্যেক জীব নিজকর্মফলের কারণে কীটপতঙ্গ থেকে মানুষ , দেবতা প্রভৃতি বহু নীচ ও উচ্চ যোনি ভ্রমণ করে । আর বহু পুণ্যফলের উদয় হলেই এই দুর্লভ মনুষ্য যোনি প্রাপ্ত হয় । তাই বুদ্ধিমান মানুষের উচিত পারমার্থিক বিষয়ে উৎসাহী হয়ে সেই পরম ভাগবতপ্রাপ্তির প্রতি যত্নশীল হওয়া । ইন্দ্রিয় দ্বারা এই জড়জাগতিক বিষয়ভোগ কালের প্রভাবে আপনা থেকেই উদয় হয় , ঠিক যেমন দুঃখভোগও কালের আপন গতিতে পূর্বজন্মের কর্মফলের প্রভাবে আমরা ভোগ করি ।
১৯) হে মহর্ষি ব্যাসদেব ! পরমেশ্বর ভগবানের ভক্ত হয়ে কোন ব্যক্তি যদি দৈবাৎক্রমে পথভ্রষ্ট হন বা পতিতও হন তবুও তাকে জন্ম-মৃত্যুময় এই ঘোর সংসারচক্রে আবর্তীত হতে হয় না । কারণ যারা পরমেশ্বর শ্রীভগবানের শ্রীপাদপদ্ম স্মরণ ও আলিঙ্গন দ্বারা তাঁর রস-আস্বাদন করেছেন তারা সর্বদাই সেই অমৃতরসের রসিক হয়ে যান । তারা আর অন্য কিছুতে আকৃষ্ট হন না ।
২০) যাঁর থেকে এই বিশ্ব জগৎ সৃষ্ট , যিনি এই জগতের পালনকারী , প্রলয়কালে এই বিশ্ব যাঁর মধ্যে লীন হয়ে যায় তিনি হলেন পরমেশ্বর শ্রীভগবান । তিনি এই জগতের সর্বত্র বর্তমান তথাপি তিনি এই জগতের কোনো কিছুতেই সম্পর্কিত নন । আপনি এই সব কিছুই জানেন তাই আপনাকে আমি তা সংক্ষেপে স্মরণ করালাম মাত্র ।
শ্রীমদ্ভাগবতম - প্রথম স্কন্ধ - পঞ্চম অধ্যায় |
২১) হে মহর্ষি ! আপনি অমোঘ দৃষ্টিসম্পন্ন ( পূর্ণদ্রষ্টা ) । আপনি আত্মায় স্থিত হয়ে পরমাত্মার দর্শন করেন । আপনি শ্রীভগবানের কলা-অবতার । যদিও আপনি জন্মরহিত তথাপি কেবল জীবের কল্যাণ সাধনের উদ্দেশে আপনি অবতীর্ণ হয়েছেন । তাই আপনি দয়া করে জীবের মঙ্গলসাধনের জন্য ভগবান শ্রীহরির অপ্রাকৃত লীলাসমূহ বিস্তারিত ভাবে কীর্তন করুন ।
২২) যথার্থ তত্ত্বজ্ঞানী মহাপুরুষগণ সবকিছুর বিচার করে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে তপস্যা , বেদ অধ্যয়ন , যজ্ঞ , দান ইত্যাদি এই সব কিছুরই উদ্দেশ্য হল পরমেশ্বর শ্রীভগবানের মহিমা ও লীলাসকল কীর্তন করা ।
২৩) হে মুনিবর ! আমি পূর্বজন্মে বেদজ্ঞ ব্রাহ্মনের কোনো এক দাসীর গৃহে জন্মগ্রহণ করেছিলাম । যখন বেদজ্ঞ মুনি ঋষিগণ বর্ষাকালে চাতুর্মাস্য ব্রত পালনের জন্য চার মাস একত্রে বসবাস করছিলেন , তখন আমার বাল্যকালেই আমি তাঁদের সেবায় নিযুক্ত থাকতাম ।
২৪) যদিও আমি তখন বালক ছিলাম কিন্তু আমার মধ্যে বালকসুলভ চপলতার কোন আচরণ ছিল না । আর আমি কথাও খুবই কম বলতাম ও অন্যান্য শিশুদের বিপরীত আমি খেলাধুলার প্রতিও উদাসীন ছিলাম । আমি আজ্ঞাবহ হয়ে ওই সকল বিদ্বান মুনিগণের সেবা করতাম । আমার এই আচরণ দেখে তারা করুনাপূর্বক আমার উপর অনুগ্রহ করেছিলেন ।
২৫)
কোন এক সময়ে ওই বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণদের অনুমতি লাভ করে তাঁদের উচ্ছিষ্ট / প্রসাদ গ্রহণ করেছিলাম । তার ফলে আমার সব রকমের পাপের মোচন হয়ে গিয়েছিল । সেই সকল বিদ্বান ব্রাহ্মনদের সেবার দ্বারা আমার চিত্ত ক্রমশ শুদ্ধ হয়ে গেল এবং তাঁদের পারমার্থিক কর্মে আমার রুচি জন্মাল ।
২৬) হে মহর্ষি ব্যাসদেব ! ওই ঋষিগণ সেখানে প্রতিদিন ভগবান শ্রীকৃষ্ণের অপ্রাকৃত লীলাবিলাসের কীর্তন করতেন এবং তাদের পরম অনুগ্রহে আমি তা মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করতাম । এইভাবে স্থিরচিত্তে ও শ্রদ্ধাসহকারে ঐসকল লীলাকীর্তন শ্রবণের ফলস্বরূপ আমার মনে পরমেশ্বর ভগবানের প্রতি প্রীতি জন্মাল ।
শ্রীমদ্ভাগবতম - প্রথম স্কন্ধ - পঞ্চম অধ্যায় |
২৭) হে মহর্ষি ব্যাসদেব ! সেই সময়ে ভগবানের প্রতি প্রীতিলাভ হওয়াতে ক্রমে ক্রমে আমি স্থিরচিত্ত ও ভগবত-মতিসম্পন্ন হয়ে গিয়েছিলাম । এই নিশ্চলা বুদ্ধির প্রভাবে আমার অজ্ঞান দূরীভূত হতে থাকল এবং এই জগৎ যে পরব্রহ্মর মায়াশক্তি দ্বারা নির্মিত - তার অনুভব হল ।
২৮) এভাবে শরৎ ও বর্ষা - এই দুই ঋতুতে , আমি প্রতিদিন মনোযোগ সহকারে , নিরন্তর ওই মহান ঋষিগণের দ্বারা কীর্তিত পরমেশ্বর শ্রীভগবানের নির্মল মহিমা ,যশ , লীলাকীর্তন শ্রবণ করতে থাকলাম । একাগ্র চিত্তে শ্রবণ করার ফলে ক্রমশ আমার হৃদয়ে ভাগবৎভক্তির আবির্ভাব হতে থাকল ও এর ফলে রজ ও তমোগুনের প্রভাব হ্রাস পেতে থাকল ।
২৯) আমি নিতান্তই বিনম্র , ইন্দ্রিয়সংযমী ছিলাম । আমি ওই ঋষিগণদের অতীব অনুরাগী ছিলাম এবং ভক্তি শ্রদ্ধা সহকারে তাদের আজ্ঞাবহ হয়ে সেবা করার ফলে আমার সব পাপসমূহ বিনষ্ট হয়ে গিয়েছিল ।
৩০) সেই দীনবৎসল মহাত্মা ঋষিগণ সেই স্থান পরিত্যাগ করার পূর্বে অত্যন্ত করুনাবশত আমাকে সর্বোৎকৃষ্ট , গোপনীয় ও গুহ্যতম জ্ঞান উপদেশ করে যান ।
৩১) যার দ্বারা আমি পরমেশ্বর ভগবান বাসুদেবের শক্তির প্রভাব সম্পর্কে অবগত হয়েছিলাম এবং যাতে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পাদপদ্ম লাভ করা যায় সেই বিষয়ে যত্নশীল হয়েছিলাম ।
৩২) হে মহর্ষি ব্যাসদেব ! তুমি যাহা কিছু বিহিত কর্ম কর না কেন , তা কেবলমাত্র পরমেশ্বর ভগবানের শ্রীচরণে সমর্পন কর , তাহলেই ত্রিতাপ জ্বালা থেকে মুক্ত হবে ।
৩৩) যে বস্তু জীবসমূহের রোগ সৃষ্টি করে , সেই বস্তুই চিকিৎসকের পরামর্শ মতো প্রয়োগ করলে সেই রোগের কি নিরাময় হয় না ?
৩৪)
এই ভাবে , যে কৃতকর্মের ফলস্বরূপ জন্মমৃত্যু চক্রে আবর্তিত হতে হয় - সেই কর্মই যদি পরমেশ্বর শ্রীভগবানে সমর্পিত করা হয় , তাহলে তা কর্মরুপী বৃক্ষকে সমূলে বিনাশ করতে সক্ষম হয় ।
৩৫) এই জীবনে পরমেশ্বর ভগবানের সন্তুষ্টির জন্য ,শাস্ত্রবিহিত যা কিছু অনুষ্ঠানের সম্পাদন করা হয় তা ভক্তিযোগ ও জ্ঞানযোগ লাভের জন্য ।
শ্রীমদ্ভাগবতম - প্রথম স্কন্ধ - পঞ্চম অধ্যায় |
৩৬) ভাগবতী কর্মমার্গে প্রবৃত্ত মানব যখন পরমেশ্বর ভগবানের উদ্দেশ্যে কর্ম সম্পাদন করেন তখন বারংবার ভগবান শ্রীকৃষ্ণের নামসমূহ , মহিমা কীর্তন এবং গুণাবলী নিরন্তর স্মরণ করেন ।
৩৭) হে বসুদেবনন্দন পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ, আপনি বাসুদেব , সঙ্কর্ষণ , অনিরুদ্ধ ও প্রদ্যুম্ন দ্বারা চতুর্ব্যূহে শোভিত । আমি আপনাকে সশ্রদ্ধ প্রণাম করে আপনার ধ্যান করি ।
৩৮) এই ভাবে যিনি চতুর্ব্যূহরূপী পরমেশ্বর ভগবানের নামাত্মক মন্ত্রের দ্বারা তাঁর চিন্ময় , অপ্রাকৃত রূপের আরাধনা করেন , তিনিই সম্পূর্ণ রূপে জ্ঞানবান পুরুষ ।
৩৯) হে মহর্ষি ব্যাসদেব ! এইভাবে শ্রীভগবান স্বয়ং আমাকে বেদের ভগবৎ সম্বন্ধীয় গুহ্যজ্ঞান , আত্মজ্ঞান , দিব্যজ্ঞান , এবং প্রেমভক্তির ঐশর্য প্রদান করেন ।
৪০) হে মহর্ষি ব্যাসদেব ! তুমি বিশাল বৈদিক শাস্ত্র থেকে প্রাপ্ত শ্রীভগবানের লীলাকীর্তন বর্ণনা করতে সক্ষম । যার দ্বারা বিদ্বান ব্যক্তিরও সকল অজ্ঞান ও জিজ্ঞাসা দূরীভূত হয়ে যায় । কালরূপী কলির প্রভাবে দুঃখ-দুর্দশাগ্রস্ত মানুষদের দুঃখ দূর করা - এর দ্বারাই সম্ভব । এ ছাড়া আর অন্য্ কোন উপায় নেই ।
। ইতি শ্রীমদ্ভাগবতে শ্রীমহাপুরাণে পারমহংস্যাং সংহিতায়াং প্রথমস্কন্ধে ব্যাসনারদসংবাদে পঞ্চমোহধ্যায়ঃ।
আসুন আমরা সবাই একসাথে শ্রীমদ্ভাগবতম / শ্রীমদ্ ভাগবত মহাপুরাণের স্বাধ্যায় করে আমাদের জীবন পুন্য করি | আজকের মতো এইটুকুই,আমরা শেষ করব মহামন্ত্র দিয়ে |
হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে |
হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে ||
যদি আপনার এই পোস্টটি পছন্দ হয়ে থাকে / ভালো লেগে থাকে নতুবা এখান থেকে কিছু নুতন জানতে পারেন তাহলে আমাদের সাবস্ক্রাইব অবশ্যই করবেন এবং আপন আত্মীয়পরিজন, বন্ধু-বান্ধবদের সাথে শেয়ার করবেন | আমার লেখা কেমন লাগলো তা অবশ্যই নিচে কমেন্ট বক্স এর মাধ্যমে কমেন্ট করে জানাবেন |
শ্রীমদ্ ভগবত গীতার উপর আমাদের টিউটোরিয়াল / শিক্ষামূলক সিরিজ পড়ার জন্য এই লিংকটি ক্লিক করে শ্রীমদ ভগবত গীতার অমৃতজ্ঞান পান করে জীবন পবিত্র ও পুন্য করুন |
শ্রীমদ্ ভগবত গীতা : https://bhagavadgitatutorial.blogspot.com
আপনারা আমার প্রণাম নেবেন |
ইতি
দীন ভক্ত দাসানুদাস
<--পূর্ববর্তী লেখনী পরবর্তী লেখনী-->
No comments:
Post a Comment