Saturday, 30 May 2020

শ্রীমদ্ভাগবতম - প্রথম স্কন্ধ - পঞ্চম অধ্যায় - Srimad Bhagavatam - First Canto - Chapter 5

শ্রীমদ্ভাগবতম - প্রথম স্কন্ধ - পঞ্চম অধ্যায় , Srimad Bhagavatam - First Canto - Fifth Chapter , Bhagavatam,Srimad Bhagavatam, Bhagavata Purana, Srimad Bhagavatam in Bengali, Bhagavata Purana in Bengali, Bhagavata Mahapurana, Sanatana Dharma, Bhagavata Mahapurana, Srimad Bhagavatam Bangla, Gita, শ্রীমদ্ ভাগবতম, শ্রীমদ্ ভাগবত মহাপুরাণ , শ্রীমদ্ ভাগবত পুরা, Srimad Bhagavatam online, শ্রীমদ ভাগবত,ভাগবত মহাপুরাণ, দেবর্ষি নারদের পূর্বজন্ম বৃত্তান্ত ও শ্রীমদ্ভাগবত সম্পর্কে নির্দেশ

<--পূর্ববর্তী লেখনী                                                        পরবর্তী লেখনী-->

Srimad Bhagavatam Lord  Krishna
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ

  || ওম নমঃ ভগবতে বাসুদেবায় ||


শ্রীমদ্ভাগবতম - প্রথম স্কন্ধ - পঞ্চম অধ্যায়

 দেবর্ষি নারদের পূর্বজন্ম বৃত্তান্ত ও শ্রীমদ্ভাগবত সম্পর্কে নির্দেশ


প্রিয় ভক্তবৃন্দ এবং সুধীগণ,

পূর্ববর্তী লেখনীতে আমরা শ্রীমদ্ভাগবতমের প্রথম স্কন্ধের চতুর্থ অধ্যায় , মহর্ষি ব্যাসের অপ্রসন্নতা এবং দেবর্ষি নারদের আবির্ভাব সম্পর্কে জেনেছিলাম । আজ আমরা শ্রীমদ্ভাগবতমের প্রথম স্কন্ধের পঞ্চম অধ্যায় , দেবর্ষি নারদের পূর্বজন্ম বৃত্তান্ত ও শ্রীমদ্ভাগবত সম্পর্কে উপদেশ -এই বিষয়ে জানব । এটি শুরু হয় নারদমুনি ও মহর্ষি ব্যাসের কথোপকথনের মাধ্যমে । মহামতি সূত গোস্বামী এই কথোপকথনের বর্ণনা করছেন নৈমিষারণ্যে শৌনকাদি মুনিগণে সমীপে ।

শ্রীমদ্ভাগবতম-প্রথম স্কন্ধ-পঞ্চম অধ্যায়-Srimad Bhagavatam-First Canto-Chapter 5
শ্রীমদ্ভাগবতম - প্রথম স্কন্ধ - পঞ্চম অধ্যায়

১) সূত গোস্বামী বললেন - তখন বীণাপানী দেবর্ষি নারদ সুখাবিষ্ট হয়ে উপবেশন করে, ঈষৎ হেসে মহামুনি মহর্ষি ব্যাসদেবকে বললেন ।

২) নারদ ঋষি বললেন - হে পরাশর নন্দন মহাভাগ্যবান ব্যাসদেব, আপনার দেহ ও মন আত্মজ্ঞানে সন্তুষ্ট হয়েছে কি ?

৩) হে মহর্ষি ব্যাসদেব - এখন তো আপনার মনের সংশয় সম্পূর্ণ ভাবে দূরীভূত হয়েছে ; কারণ সুচারুরূপে অনুসন্ধানের মাধ্যমে মহৎ ও অদ্ভুত মহাভারতের অর্থযুক্ত সবিস্তার বিশ্লেষণ আপনার দ্বারা সুসম্পন্ন হয়েছে । আর এতে ধর্ম , পারমার্থিক মুক্তি ও বৈদিক নির্দেশাবলী পূর্ণ রূপে আলোচিত হয়েছে ।          

৪) আপনি সম্পূর্ণ রূপে বিচার বিবেচনা করে যা নিত্য , সেই পরমতত্ত্ব / ব্রহ্মতত্ত্বের সম্পূর্ণ উপলব্ধি করেছেন । তা সত্বেও নিজেকে অকৃতকার্য ব্যক্তির মতো বিবেচনা করে বৃথা অনুশোচনা করছেন কেন ?

৫) মহর্ষি ব্যাসদেব বললেন - দেবর্ষি নারদ ! আপনি আমার সম্পর্কে যা যা বললেন তা সবই সত্য কিন্তু তবুও আমি সন্তোষ লাভ করতে পারছিনা । আপনি ব্রহ্মার মানসপুত্র এবং অসীম জ্ঞানসম্পন্ন । তাই আমার এই অসন্তোষের কারণ আমি আপনার কাছ থেকেই জানতে চাইছি ।

৬) হে দেবর্ষি নারদ ! আপনি গুহ্যতম ও প্রাচীনতম বেদ , সমস্ত শাস্ত্র সম্পর্কে উত্তমপ্রকার অবগত আছেন । কারণ আপনি পুরাণ পুরুষ পরমেশ্বর শ্রীভগবানের আরাধনা করেন । সেই ত্রিগুণাতীত যিনি নিজের সংকল্পমাত্রই ত্রিগুণের দ্বারা এই জগতের সৃষ্টি , স্থিতি ও প্রলয় করে থাকেন ।

৭) হে দেবর্ষি নারদ ! আপনি সূর্যদেবের মতো সমস্ত ত্রিলোক পরিভ্রমণ করতে পারেন এবং আপনি প্রাণবায়ুর মতো প্রত্যেকের অন্তরে প্রবিষ্ট হয়ে সকলের অন্তরের ভাবটি জানতে সমর্থ । আপনি যথার্থই অন্তর্যামী । তাই যোগানুষ্ঠান , নিয়মপূর্বক ধর্মাচরণ , ব্রতপালন ও যজ্ঞানুষ্ঠানের দ্বারা ব্রহ্মজ্ঞান লাভের পরও আমার অন্তরের মধ্যে থাকা অসম্পূর্ণতার কারণ কি - তার অনুসন্ধান করে আপনি তা দয়া করে আমাকে বলুন ।

শ্রীমদ্ভাগবতম-প্রথম স্কন্ধ-পঞ্চম অধ্যায়-Srimad Bhagavatam-First Canto-Chapter 5
শ্রীমদ্ভাগবতম - প্রথম স্কন্ধ - পঞ্চম অধ্যায়
 
৮) দেবর্ষি নারদ বললেন  - হে মহর্ষি ব্যাসদেব ! অবশ্যই আপনার দ্বারা পরমেশ্বর শ্রীভগবানের যশ , কীর্তি ও মহিমা সঠিক ভাবে বর্ণিত বা কীর্তিত হয়নি । আমার মতে যে দর্শন ( শাস্ত্র ) পরমেশ্বর শ্রীভগবানের সন্তুষ্টিবিধান না করে তা অনর্থক ।

৯) হে মহর্ষি ব্যাসদেব , আপনি ধর্মাচরণের চারটি তত্ত্ব পুরুষার্থচতুষ্টয় যেমন ভাবে বর্ণনা করেছেন , সেই ভাবে কিন্তু বাসুদেব ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মহিমা কীর্তন করেননি । 

১০) যে কথা - তা সে যতই ভাবরসে পরিপূর্ণ এবং অলংকারযুক্ত হোক না কেন - সেই বাক্য যদি জগৎপতি শ্রীকৃষ্ণের পবিত্র মহিমার বর্ণন না করে , তাকে উত্তম পুরুষরা কাকতীর্থের সমান বলে তুলনা করেছেন । সুসজ্জিত ভগবদ্ধামে আনন্দ আস্বাদনকারী পরমহংসগণ সেখানে কোনপ্রকার আনন্দের উপলব্ধি করেন না  ।

১১) অপরপক্ষে যে বাণীর প্রতিটি শ্লোকে পরমেশ্বর শ্রীভগবানের নামের মহিমা বর্ণন করা থাকে , যা শ্রীভগবানের রূপ , রস , যশ , লীলাকীর্তনে পূর্ণ - সেই সৃষ্টি পরম দিব্য এবং তা এই জড়জগতে কালরূপ কলির প্রভাবে পাপগ্রসিত জীবের জীবনে এক ধর্মবিপ্লবের সূচনা করে । তাই সেই সাহিত্য যদি সর্বতোভাবে সম্পূর্ণ নাও হয় , মহাপুরুষেরা কিন্তু সদাই তার শ্রবণ , মনন ও কীর্তন করেন ।

১২) নিষ্কাম কর্মযোগ ও নির্মল জ্ঞানযজ্ঞের মাধ্যমে প্রাপ্ত মোক্ষ বা আত্মোপলব্ধি যদি ভগবৎভক্তিশুন্য হয় এবং সেই অচ্যুত ( যিনি তাঁর স্বরূপাবস্থা থেকে কখনো চ্যুত হন না  ) পরমেশ্বর শ্রীভগবানের মহিমা কীর্তন রহিত হয় তাহলে তা কোনোপ্রকারেই শোভনীয় নয় । তেমনি সর্বদাই ক্লেশদায়ক যে কাম্য কর্ম বা সকাম কর্ম শ্রীভগবানের সেবার উদ্দেশে সাধিত না হয় তা নিতান্তই অপ্রয়োজনীয় ।

১৩) হে ব্যাসদেব মহাভাগ ! আপনি পূর্ণদ্রষ্টা  , পবিত্রকীর্তি , নিস্কলঙ্ক , সত্যব্রতপরায়ণ এবং দিব্যগুণাবলী যুক্ত । সুতরাং সমগ্র বিশ্বের মানুষকে মোহবন্ধন থেকে মুক্ত করার জন্য সমাধিস্থ হয়ে পরমেশ্বর ভগবানের অলৌকিক লীলাসকল দর্শনপূর্বক তার বর্ণনা করুন ।
 
১৪) কেউ যদি সেই পরমেশ্বর ভগবানের লীলাবিহার , যশ, মহিমা ইত্যাদি ব্যতীত অন্য কিছু বর্ণনা করতে ইচ্ছুক হয় তাহলে এর প্রতিক্রিয়ারূপে তারা চিত্তচাঞ্চল্যে পীড়িত ও উত্তেজিত হয়ে পড়ে । তাদের বুদ্ধি সমত্ববোধে না থেকে ভেদাভেদ জ্ঞানে আচ্ছন্ন হয় । ঠিক যেমন কোনো নৌকা ঝড়ের মুখে পড়ে গেলে কখনো স্থির থাকতে পারেনা ও বিক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে - তেমনি মন ও বুদ্ধির অবস্থাও সেই রকম হয় ।

শ্রীমদ্ভাগবতম-প্রথম স্কন্ধ-পঞ্চম অধ্যায়-Srimad Bhagavatam-First Canto-Chapter 5
শ্রীমদ্ভাগবতম - প্রথম স্কন্ধ - পঞ্চম অধ্যায়

১৫) কলির জীবসকল অজ্ঞানঅন্ধকার সংসারসাগরে নিমজ্জিত থেকে সদাই বিষয়ভোগে অনুরক্ত । তাদের উদ্দেশে কাম্য বা সকাম কর্মের পথ বিবেচনা করে আপনি নিন্দনীয় কর্ম করে ফেলেছেন কারণ অজ্ঞ মানুষেরা আপনার অনুশাসন গ্রহণ করে কাম্য বা সকাম কর্মকেই পুন্যকর্ম বলে বিবেচনা করবে এবং তার অনুষ্ঠানই ধর্মানুষ্ঠান বলে পালন করবে । স্বাভাবিকভাবেই কলির মানুষের প্রতি আপনার নির্দেশিত পথ কাম্যকর্মের নিষেধকে অগ্রাহ্য করে  ।

১৬) পরমেশ্বর ভগবান অনন্ত । যারা জড়-জাগতিক সুখভোগ , বাসনা , কামনা ইত্যাদি আসক্তি থেকে বিরক্ত , সেইপ্রকার বিবেকী ও বিচক্ষণ পুরুষই নিবৃত্তিমার্গ অবলম্বনের মাধ্যমে পারমার্থিক এই তত্ত্বজ্ঞান লাভ করার অধিকারী হন । আর যারা গুণত্রয় দ্বারা প্রভাবিত হয়ে বিষয়ভোগে আসক্ত , সেই সকল জীবের মঙ্গলার্থে আপনি তাদের সহজভাবে পরমেশ্বর শ্রীভগবানের অপ্রাকৃত লীলাসকল শ্রবণ করিয়ে পথপ্রদর্শন করান ।

১৭) জাগতিক সকাম কর্ম ও নিজ আচার পরিত্যাগপূর্বক যদি কোনো অধার্মিক ব্যক্তি ( যেমন কোনো ম্লেচ্ছ যবন তার আচার পরিত্যাগ করে  ) পরমেশ্বর শ্রীভগবানের প্রেমময়ী চরণ কমল সেবার দ্বারা সিদ্ধিলাভ করে তাহলে স্বয়ং ভগবানকেই প্রাপ্ত হন । আর যদিও বা কোনো কারণে তিনি চ্যুতও হন তাহলেও তার বিফল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না । আর যদি কোন অভক্ত ব্যক্তি  কেবলই স্বধর্মে যুক্ত হয়ে কর্ম করে কিন্তু শ্রীহরির ভজনা না করে তাহলে তা সর্বদাই বৃথা হয় ।

১৮) এই জগতে প্রত্যেক জীব নিজকর্মফলের কারণে কীটপতঙ্গ থেকে মানুষ , দেবতা প্রভৃতি বহু নীচ ও উচ্চ যোনি ভ্রমণ করে । আর বহু পুণ্যফলের উদয় হলেই এই দুর্লভ মনুষ্য যোনি প্রাপ্ত হয় । তাই বুদ্ধিমান মানুষের উচিত পারমার্থিক বিষয়ে উৎসাহী হয়ে সেই পরম ভাগবতপ্রাপ্তির প্রতি যত্নশীল হওয়া । ইন্দ্রিয় দ্বারা এই জড়জাগতিক বিষয়ভোগ কালের প্রভাবে আপনা থেকেই উদয় হয় , ঠিক যেমন দুঃখভোগও কালের আপন গতিতে পূর্বজন্মের কর্মফলের প্রভাবে আমরা ভোগ করি । 

১৯) হে মহর্ষি ব্যাসদেব ! পরমেশ্বর ভগবানের ভক্ত হয়ে কোন ব্যক্তি যদি দৈবাৎক্রমে পথভ্রষ্ট হন বা পতিতও হন তবুও তাকে জন্ম-মৃত্যুময় এই ঘোর সংসারচক্রে আবর্তীত হতে হয় না । কারণ যারা পরমেশ্বর শ্রীভগবানের শ্রীপাদপদ্ম স্মরণ ও আলিঙ্গন দ্বারা তাঁর রস-আস্বাদন করেছেন তারা সর্বদাই সেই অমৃতরসের রসিক হয়ে যান । তারা আর অন্য কিছুতে আকৃষ্ট হন না ।

২০) যাঁর থেকে এই বিশ্ব জগৎ সৃষ্ট , যিনি এই জগতের পালনকারী , প্রলয়কালে এই বিশ্ব যাঁর মধ্যে লীন হয়ে যায় তিনি হলেন পরমেশ্বর শ্রীভগবান । তিনি এই জগতের সর্বত্র বর্তমান তথাপি তিনি এই জগতের কোনো কিছুতেই সম্পর্কিত নন । আপনি এই সব কিছুই জানেন তাই আপনাকে আমি তা সংক্ষেপে স্মরণ করালাম মাত্র ।

শ্রীমদ্ভাগবতম-প্রথম স্কন্ধ-পঞ্চম অধ্যায়-Srimad Bhagavatam-First Canto-Chapter 5
শ্রীমদ্ভাগবতম - প্রথম স্কন্ধ - পঞ্চম অধ্যায়

২১) হে মহর্ষি  ! আপনি অমোঘ দৃষ্টিসম্পন্ন ( পূর্ণদ্রষ্টা  ) । আপনি আত্মায় স্থিত হয়ে পরমাত্মার দর্শন করেন । আপনি শ্রীভগবানের কলা-অবতার । যদিও আপনি জন্মরহিত তথাপি কেবল জীবের কল্যাণ সাধনের উদ্দেশে আপনি অবতীর্ণ হয়েছেন । তাই আপনি দয়া করে জীবের মঙ্গলসাধনের জন্য ভগবান শ্রীহরির অপ্রাকৃত লীলাসমূহ বিস্তারিত ভাবে কীর্তন করুন ।   

২২) যথার্থ তত্ত্বজ্ঞানী মহাপুরুষগণ সবকিছুর বিচার করে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে তপস্যা , বেদ অধ্যয়ন , যজ্ঞ , দান ইত্যাদি এই সব কিছুরই উদ্দেশ্য হল পরমেশ্বর শ্রীভগবানের মহিমা ও লীলাসকল কীর্তন করা ।
 
২৩) হে মুনিবর ! আমি পূর্বজন্মে বেদজ্ঞ ব্রাহ্মনের কোনো এক দাসীর গৃহে জন্মগ্রহণ করেছিলাম । যখন বেদজ্ঞ মুনি ঋষিগণ বর্ষাকালে চাতুর্মাস্য ব্রত পালনের জন্য চার মাস একত্রে বসবাস করছিলেন , তখন আমার বাল্যকালেই আমি তাঁদের সেবায় নিযুক্ত থাকতাম ।

২৪) যদিও আমি তখন বালক ছিলাম কিন্তু আমার মধ্যে বালকসুলভ চপলতার কোন আচরণ ছিল না । আর আমি কথাও খুবই কম বলতাম ও অন্যান্য শিশুদের বিপরীত আমি খেলাধুলার প্রতিও উদাসীন ছিলাম । আমি আজ্ঞাবহ হয়ে ওই সকল বিদ্বান মুনিগণের সেবা করতাম । আমার এই আচরণ দেখে তারা করুনাপূর্বক আমার উপর অনুগ্রহ করেছিলেন ।

২৫) কোন এক সময়ে ওই বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণদের অনুমতি লাভ করে তাঁদের উচ্ছিষ্ট / প্রসাদ গ্রহণ করেছিলাম । তার ফলে আমার সব রকমের পাপের মোচন হয়ে গিয়েছিল । সেই সকল বিদ্বান ব্রাহ্মনদের সেবার দ্বারা আমার চিত্ত ক্রমশ শুদ্ধ হয়ে গেল এবং তাঁদের পারমার্থিক কর্মে আমার রুচি জন্মাল ।

২৬) হে মহর্ষি ব্যাসদেব ! ওই ঋষিগণ সেখানে প্রতিদিন ভগবান শ্রীকৃষ্ণের অপ্রাকৃত লীলাবিলাসের কীর্তন করতেন এবং তাদের পরম অনুগ্রহে আমি তা মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করতাম । এইভাবে স্থিরচিত্তে ও শ্রদ্ধাসহকারে ঐসকল লীলাকীর্তন শ্রবণের ফলস্বরূপ আমার মনে পরমেশ্বর ভগবানের প্রতি প্রীতি জন্মাল ।

শ্রীমদ্ভাগবতম-প্রথম স্কন্ধ-পঞ্চম অধ্যায়-Srimad Bhagavatam-First Canto-Chapter 5
শ্রীমদ্ভাগবতম - প্রথম স্কন্ধ - পঞ্চম অধ্যায়

২৭) হে মহর্ষি ব্যাসদেব ! সেই সময়ে ভগবানের প্রতি প্রীতিলাভ হওয়াতে ক্রমে ক্রমে আমি স্থিরচিত্ত ও ভগবত-মতিসম্পন্ন হয়ে গিয়েছিলাম । এই নিশ্চলা বুদ্ধির প্রভাবে আমার অজ্ঞান দূরীভূত হতে থাকল এবং এই জগৎ যে পরব্রহ্মর মায়াশক্তি দ্বারা নির্মিত - তার অনুভব হল ।
 
২৮) এভাবে শরৎ ও বর্ষা - এই দুই ঋতুতে , আমি প্রতিদিন মনোযোগ সহকারে , নিরন্তর ওই মহান ঋষিগণের দ্বারা কীর্তিত পরমেশ্বর শ্রীভগবানের নির্মল মহিমা ,যশ , লীলাকীর্তন শ্রবণ করতে থাকলাম । একাগ্র চিত্তে শ্রবণ করার ফলে ক্রমশ আমার হৃদয়ে ভাগবৎভক্তির আবির্ভাব হতে থাকল ও এর ফলে রজ ও তমোগুনের প্রভাব হ্রাস পেতে থাকল ।   

২৯) আমি নিতান্তই বিনম্র , ইন্দ্রিয়সংযমী ছিলাম । আমি ওই ঋষিগণদের অতীব অনুরাগী ছিলাম এবং ভক্তি শ্রদ্ধা সহকারে তাদের আজ্ঞাবহ হয়ে সেবা করার ফলে আমার সব পাপসমূহ বিনষ্ট হয়ে গিয়েছিল ।
                              
৩০) সেই দীনবৎসল মহাত্মা ঋষিগণ সেই স্থান পরিত্যাগ করার পূর্বে অত্যন্ত করুনাবশত আমাকে সর্বোৎকৃষ্ট , গোপনীয় ও গুহ্যতম জ্ঞান উপদেশ করে যান ।

৩১) যার দ্বারা আমি পরমেশ্বর ভগবান বাসুদেবের শক্তির প্রভাব সম্পর্কে অবগত হয়েছিলাম এবং যাতে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পাদপদ্ম লাভ করা যায় সেই বিষয়ে যত্নশীল হয়েছিলাম ।

৩২) হে মহর্ষি ব্যাসদেব ! তুমি যাহা কিছু বিহিত কর্ম কর না কেন , তা কেবলমাত্র পরমেশ্বর ভগবানের শ্রীচরণে সমর্পন কর , তাহলেই ত্রিতাপ জ্বালা থেকে মুক্ত হবে ।

৩৩) যে বস্তু জীবসমূহের রোগ সৃষ্টি করে , সেই বস্তুই চিকিৎসকের পরামর্শ মতো প্রয়োগ করলে সেই রোগের কি নিরাময় হয় না ?

৩৪) এই ভাবে , যে কৃতকর্মের ফলস্বরূপ জন্মমৃত্যু চক্রে আবর্তিত হতে হয় - সেই কর্মই যদি পরমেশ্বর শ্রীভগবানে সমর্পিত করা হয় , তাহলে তা কর্মরুপী বৃক্ষকে সমূলে বিনাশ করতে সক্ষম হয় ।

৩৫) এই জীবনে পরমেশ্বর ভগবানের সন্তুষ্টির জন্য ,শাস্ত্রবিহিত যা কিছু অনুষ্ঠানের সম্পাদন করা হয় তা ভক্তিযোগ ও  জ্ঞানযোগ লাভের জন্য ।

শ্রীমদ্ভাগবতম-প্রথম স্কন্ধ-পঞ্চম অধ্যায়-Srimad Bhagavatam-First Canto-Chapter 5
শ্রীমদ্ভাগবতম - প্রথম স্কন্ধ - পঞ্চম অধ্যায়

৩৬) ভাগবতী কর্মমার্গে প্রবৃত্ত মানব যখন পরমেশ্বর ভগবানের উদ্দেশ্যে কর্ম সম্পাদন করেন তখন বারংবার ভগবান শ্রীকৃষ্ণের নামসমূহ , মহিমা কীর্তন এবং গুণাবলী নিরন্তর স্মরণ করেন ।

৩৭) হে বসুদেবনন্দন পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ, আপনি বাসুদেব , সঙ্কর্ষণ , অনিরুদ্ধ ও প্রদ্যুম্ন দ্বারা চতুর্ব্যূহে শোভিত ।  আমি আপনাকে সশ্রদ্ধ প্রণাম করে আপনার ধ্যান করি ।

৩৮) এই ভাবে যিনি চতুর্ব্যূহরূপী পরমেশ্বর ভগবানের নামাত্মক মন্ত্রের দ্বারা তাঁর চিন্ময় , অপ্রাকৃত রূপের আরাধনা করেন , তিনিই সম্পূর্ণ রূপে জ্ঞানবান পুরুষ ।

৩৯) হে মহর্ষি ব্যাসদেব ! এইভাবে শ্রীভগবান স্বয়ং আমাকে বেদের ভগবৎ সম্বন্ধীয় গুহ্যজ্ঞান , আত্মজ্ঞান , দিব্যজ্ঞান , এবং প্রেমভক্তির ঐশর্য প্রদান করেন ।

৪০) হে মহর্ষি ব্যাসদেব ! তুমি বিশাল বৈদিক শাস্ত্র থেকে প্রাপ্ত শ্রীভগবানের লীলাকীর্তন বর্ণনা করতে সক্ষম । যার দ্বারা বিদ্বান ব্যক্তিরও সকল অজ্ঞান ও জিজ্ঞাসা দূরীভূত হয়ে যায় । কালরূপী কলির প্রভাবে দুঃখ-দুর্দশাগ্রস্ত মানুষদের দুঃখ দূর করা - এর দ্বারাই সম্ভব । এ ছাড়া আর অন্য্ কোন উপায় নেই ।


। ইতি শ্রীমদ্ভাগবতে শ্রীমহাপুরাণে পারমহংস্যাং সংহিতায়াং প্রথমস্কন্ধে ব্যাসনারদসংবাদে পঞ্চমোহধ্যায়ঃ।

আসুন আমরা সবাই একসাথে শ্রীমদ্ভাগবতম / শ্রীমদ্ ভাগবত মহাপুরাণের স্বাধ্যায় করে আমাদের জীবন পুন্য করি | আজকের মতো এইটুকুই,আমরা শেষ করব মহামন্ত্র দিয়ে |

হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে  |

হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে  ||


যদি আপনার এই পোস্টটি পছন্দ হয়ে থাকে / ভালো লেগে থাকে নতুবা এখান থেকে কিছু নুতন জানতে পারেন তাহলে আমাদের সাবস্ক্রাইব অবশ্যই করবেন এবং আপন আত্মীয়পরিজন, বন্ধু-বান্ধবদের সাথে শেয়ার করবেন | আমার লেখা কেমন লাগলো তা অবশ্যই নিচে কমেন্ট বক্স এর মাধ্যমে কমেন্ট করে জানাবেন |

শ্রীমদ্ ভগবত গীতার উপর আমাদের টিউটোরিয়াল / শিক্ষামূলক সিরিজ পড়ার জন্য এই লিংকটি ক্লিক করে শ্রীমদ ভগবত গীতার অমৃতজ্ঞান পান করে জীবন পবিত্র ও পুন্য করুন |

শ্রীমদ্ ভগবত গীতা : https://bhagavadgitatutorial.blogspot.com

আপনারা আমার প্রণাম নেবেন |

ইতি
দীন ভক্ত দাসানুদাস

<--পূর্ববর্তী লেখনী                                                        পরবর্তী লেখনী-->

Thursday, 16 April 2020

শ্রীমদ্ভাগবতম - প্রথম স্কন্ধ - চতুর্থ অধ্যায় - Srimad Bhagavatam - First Canto - Chapter 4

শ্রীমদ্ভাগবতম - প্রথম স্কন্ধ - চতুর্থ  অধ্যায় , Srimad Bhagavatam - First Canto - fourth Chapter , Bhagavatam,Srimad Bhagavatam, Bhagavata Purana, Srimad Bhagavatam in Bengali, Bhagavata Purana in Bengali, Bhagavata Mahapurana, Sanatana Dharma, Bhagavata Mahapurana, Srimad Bhagavatam Bangla, Gita, শ্রীমদ্ ভাগবতম, শ্রীমদ্ ভাগবত মহাপুরাণ , শ্রীমদ্ ভাগবত পুরা, Srimad Bhagavatam online, শ্রীমদ ভাগবত,ভাগবত মহাপুরাণ, মহর্ষি ব্যাসের অপ্রসন্নতা এবং দেবর্ষি নারদের আবির্ভাব

<--পূর্ববর্তী লেখনী                                                        পরবর্তী লেখনী-->

Srimad Bhagavatam Lord  Krishna
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ

  || ওম নমঃ ভগবতে বাসুদেবায় ||


শ্রীমদ্ভাগবতম - প্রথম স্কন্ধ - চতুর্থ অধ্যায়

  মহর্ষি ব্যাসের অপ্রসন্নতা এবং দেবর্ষি নারদের আবির্ভাব 


প্রিয় ভক্তবৃন্দ এবং সুধীগণ,

পূর্ববর্তী লেখনীতে আমরা শ্রীমদ্ভাগবতমের প্রথম স্কন্ধের তৃতীয় অধ্যায় , ভগবানের অবতারগণের বর্ণনা সম্পর্কে জেনেছিলাম । আজ আমরা শ্রীমদ্ভাগবতমের প্রথম স্কন্ধের চতুর্থ অধ্যায় , মহর্ষি ব্যাসের অপ্রসন্নতা এবং দেবর্ষি নারদের আবির্ভাব সম্পর্কে জানব । এটি শুরু হয় সূত গোস্বামী দ্বারা শৌনকাদি মুনিদের প্রশ্নের উত্তর প্রদানের মাধ্যমে ।

Srimad Bhagavatam - First Canto - Chapter 4 - শ্রীমদ্ভাগবতম - প্রথম স্কন্ধ - চতুর্থ অধ্যায়
শ্রীমদ্ভাগবতম - প্রথম স্কন্ধ - চতুর্থ অধ্যায়

১) সূত গোস্বামীর এইপ্রকার উত্তর শুনে সেই দীর্ঘকালব্যাপী যজ্ঞে উপস্থিত সমস্ত মুনি ঋষিদের মধ্যে প্রবীণ ও বিদ্বান শৌনক মুনি উঠে দাঁড়িয়ে তাঁকে অভিনন্দন জানিয়ে বললেন - ।  

২) শৌনক মুনি বললেন - হে সূত গোস্বামী ! আপনি এই অপরুপ ভাগবতকথা বর্ণনাকারীদের মধ্যে যোগ্যতম । মহর্ষি শুকদেবের সেই পবিত্র বাণী আপনি কৃপা করে আমাদের শ্রবণ করান যা  তিনি পূর্বে পরীক্ষিত মহারাজকে শ্রবণ করিয়েছিলেন ।

৩) এই শ্রীমদ্ভাগবত শাস্ত্র কোন যুগে , কোন স্থানে এবং কোন কারণের দ্বারা গৃহীত হয়েছিল ? মহামুনি শ্রীকৃষ্ণদ্বৈপায়ন ব্যাসদেব কি প্রকারেই বা অনুপ্রাণিত হয়ে এই বৈদিক শাস্ত্রের সংকলন করেছিলেন ?

৪) মহামুনি শ্রীকৃষ্ণদ্বৈপায়ন ব্যাসদেবের পুত্র শ্রীশুকদেব গোস্বামী ছিলেন মহাযোগী , অদ্বিতীয় তত্বজ্ঞানী , সর্বদাই পারমার্থিক সাধনে একাগ্র  এবং তাঁর মতো সমদ্রষ্টা কেউই ছিলেন না । তিঁনি সংসারবিচ্ছিন্ন , ভেদজ্ঞানশূন্য এবং সমস্ত প্রকার জড়-জাগতিক কার্যকলাপের উর্ধে ছিলেন কিন্তু আপাতদৃষ্টিতে তিনি একজন মুঢ় ব্যক্তির ন্যায় প্রতিভাত হতেন । 

৫) মহামুনি ব্যাসদেবের পুত্র শ্রীশুকদেব যখন সন্ন্যাস গ্রহণের জন্য অরণ্য মধ্যে গমন করছিলেন এবং মহর্ষি ব্যাসদেব পুত্রকে অনুসরণ করছিলেন , তখন নগ্ন অবস্থায় স্নানরতা সুন্দরী রমণীগণ জলকেলি করার সময় পথে শ্রীশুকদেবকে দেখে বস্ত্র পরিধান করেননি , কিন্তু ব্যাসদেবকে আসতে দেখে রমণীগণ বস্ত্র পরিধান করেছিলেন । ব্যাসদেব এই দেখে আশ্চর্যবৎ ও বিস্মিত হয়ে যখন তাদের প্রশ্ন করেছিলেন ,তখন সুন্দরী রমণীগণ তাঁর উত্তরে বলেছিলেন , আপনার পুত্রের দৃষ্টিতে নারী ও পুরুষের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ নেই , কিন্তু মহামুনি ব্যাসদেব আপনার দৃষ্টিতে সেই ভেদাভেদ রয়েছে ।

৬) কুরু-জাঙ্গল দেশে শ্রীশুকদেব উন্মাদ , মূক ও জড়ের মতো বিচরণ করে যখন হস্তিনাপুরে এসে উপস্থিত হন তখন তাঁকে দেখে পুরবাসীগণ কিভাবে চিনতে পেরেছিলেন ?

৭) কিভাবেই বা মহারাজ পরীক্ষিতের সাথে শ্রীল শুকদেবের সাক্ষাৎ হয়েছিল যার ফলস্বরূপ সমগ্র বেদের এই অপ্রাকৃত নির্যাস শ্রীমদ্ভাগবত সংহিতার প্রচলন হয়েছিল ?

৮) মহর্ষি শুকদেব তো কেবলমাত্র গোদোহনকাল পর্যন্ত গৃহকর্তার দ্বারে অবস্থান করতেন এবং তা কেবলমাত্র তাদের গৃহ পবিত্র করবার জন্য করতেন ।

Srimad Bhagavatam - First Canto - Chapter 4 - শ্রীমদ্ভাগবতম - প্রথম স্কন্ধ - চতুর্থ অধ্যায়
শ্রীমদ্ভাগবতম - প্রথম স্কন্ধ - চতুর্থ অধ্যায়

৯) হে সূত গোস্বামী ! আমরা জানি পান্ডব বংশজাত অভিমন্যুর পুত্র রাজা পরীক্ষিৎ পরমেশ্বর ভগবানের উত্তম ভক্ত ছিলেন । তাঁর অত্যন্ত আশ্চর্য কার্যকলাপ এবং জন্মবৃত্তান্ত কৃপা করে আমাদের বর্ণনা করুন ।

১০) তিনি তো পান্ডববংশের শোভা বর্ধনকারী সম্রাট ছিলেন । এই সুবিশাল ঐশর্য হেলায় ফেলে রেখে রাজা পরীক্ষিৎ গঙ্গার তটে গিয়ে আমৃত্যু অনশন করেছিলেন কেন ?
 
১১) তিনি এমনই এক মহান বীর যোদ্ধা ছিলেন , যে শত্রুরা তার পায়ে নতজানু হয়ে হার স্বীকার করে তাদের ধনসম্পদ রাজাকে উপহার হিসেবে সমর্পণ করতেন । তিনি ওই সুবিশাল বৈভব এমনকি নিজপ্রাণ পর্যন্ত ত্যাগ করার সংকল্প কেন নিয়েছিলেন ?

১২) যিনি পরমেশ্বর ভগবানের পরম ভক্ত,  তিনি কেবল জগৎ সংসারের মঙ্গল ও অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য জীবন ধারণ করেন । তিনি নিজের ব্যাক্তিসাধনের জন্য কোনো কিছু করেন না । কিন্তু কি কারণে তিনি নশ্বর দেহ ছেড়ে, জড় জগৎ থেকে যেতে চাইছেন ?

১৩) আপনি বেদের কিয়ৎ অংশ ব্যতীত সমস্ত শাস্ত্রের জ্ঞাতা ও জ্ঞানের ভান্ডার । তাই আমরা মনে করি আপনি আমাদের এই মনের জিজ্ঞাসাগুলির উত্তরপ্রদানে সম্পূর্ণরূপে সক্ষম । তাই হে মহামতি সূত ! আপনি আমাদের উপর কৃপা করে এইসকল প্রশ্নগুলির সমাধান করুন ।

১৪) সূত গোস্বামী বললেন - এই চতুর্যুগের তৃতীয় অর্থাৎ দ্বাপর যুগে মহর্ষি পরাশরের ঔরসে মাতা সত্যবতীর ( মৎস্যগন্ধা  ) গর্ভে পরমেশ্বর ভগবানের কলাবতার রূপে মহর্ষি ব্যাসদেব আবির্ভূত হন ।

১৫) একদিন মহর্ষি ব্যাসদেব সূর্যোদয় কালে পবিত্র সরস্বতী নদীর জলে স্নানাদি সমাপন করে নদীর তটে একাগ্র চিত্তে বসেছিলেন ।

১৬) অতীত ও ভবিষ্যৎ সম্পর্কে মহর্ষি ব্যাসদেব অবগত ছিলেন । তিনি দিব্যদৃষ্টিতে দেখলেন যে অপ্রকাশিত মহাশক্তির প্রভাবে যুগোচিত ধর্ম কালের করাল গ্রাসে পৃথিবী থেকে ক্রমশ হ্রাস পেতে থাকছে ।

Srimad Bhagavatam - First Canto - Chapter 4 - শ্রীমদ্ভাগবতম - প্রথম স্কন্ধ - চতুর্থ অধ্যায়
শ্রীমদ্ভাগবতম - প্রথম স্কন্ধ - চতুর্থ অধ্যায়

১৭) মহর্ষি ব্যাসদেব দিব্যদৃষ্টিতে দেখতে পেলেন যে সত্ত্বগুণের অভাবে মানুষের স্বাভাবিক শক্তি ও আয়ু হ্রাস পাচ্ছে । দুর্বুদ্ধিসম্পন্ন হওয়ায় তারা তাদের কর্তব্য কর্ম সঠিক ভাবে নির্ণয় করতে পারছেনা ।

১৮) মহর্ষি ব্যাসদেব কলির সমস্ত বর্ণের জীবসকল ও আশ্রমের এই দুর্দশা দেখে চিন্তাগ্রস্ত হচ্ছিলেন এবং সমস্ত বর্ণ ও আশ্রমের পক্ষে যা মঙ্গলজনক তার উপায় নিরুপনের প্রচেষ্টা করছিলেন ।

১৯) তিনি অনেক চিন্তা করে , বৈদিক নির্দেশ অনুসারে , প্রজাগণের পবিত্র কর্মানুষ্ঠান যজ্ঞকে বিস্তার করার জন্য বেদকে চারভাগে বিভক্ত করেন ।
 
২০) মহর্ষি ব্যাস বেদকে ঋক ,যজু ,সাম এবং অথর্ব এই চারটি ভাগে বিভক্ত করেন । ইতিহাস এবং পুরাণকেও পঞ্চম বেদ বলা হয়েছে ।

২১) তার শিষ্যগণের মধ্যে ঋষি পৈল ঋকবেদ , ঋষি জৈমিনি সামবেদ , ঋষি বৈশম্পায়ন যজুর্বেদের উপর বিশেষ ভাবে পারদর্শী ছিলেন ।

২২) দারূননন্দন সুমন্ত মুনি ছিলেন অথর্ববেদ শাস্ত্রী এবং আমার পিতা ঋষি রোমহর্ষণ ইতিহাস ও পুরাণ বিষয়ের উপর বিশেষ ভাবে পারদর্শী ছিলেন ।

২৩) তত্ত্বজ্ঞানী ঋষিগণ নিজ নিজ বিষয়ের এই সকল বেদকে শিষ্য , প্রশিষ্য এবং প্রশিষ্যর শিষ্যদের মধ্যে দান করেন । আর এই ভাবেই সেই সমস্ত বেদের অনুগামীদের থেকে বেদের বিভিন্ন শাখা হয়ে যায় ।

২৪) কলিযুগে অল্পবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষেরা যাতে সহজেই বেদকে হৃদয়ঙ্গম করতে পারে , সেই জন্য মহর্ষি ব্যাসদেব তাদের উপর কৃপা করে বেদকে চারটি খন্ডে বিভক্ত করেছেন ।

২৫) স্ত্রী , শুদ্র এবং দ্বিজবন্ধু ( দ্বিজোচিত গুণাবলীবিহীন দ্বিজকুলোদ্ভূত মনুষ্যরা ) অজ্ঞান অন্ধকারে নিমজ্জিত থাকার কারণবশত বেদের তাৎপর্য সঠিক ভাবে বোধগম্য করতে সক্ষম হন না । এমতাবস্থায় তাদের উপর কৃপা করে মহর্ষি বেদব্যাস মহাভারত নামক পবিত্র ইতিহাস রচনা করেছিলেন , যাতে তাদের জীবনের কল্যাণসাধন হয় ।

Srimad Bhagavatam - First Canto - Chapter 4 - শ্রীমদ্ভাগবতম - প্রথম স্কন্ধ - চতুর্থ অধ্যায়
শ্রীমদ্ভাগবতম - প্রথম স্কন্ধ - চতুর্থ অধ্যায়

২৬) হে দ্বিজশ্রেষ্ঠ শৌনকাদি মুনিগন ! এইভাবে যদিও মহর্ষি ব্যাসদেব সর্বদা জীবের সর্বাঙ্গীন কল্যাণসাধনে তৎপর ছিলেন কিন্তু তবুও তার চিত্ত শান্ত ছিল না ।  

২৭) অপ্রসন্ন হৃদয়ে সরস্বতী নদীর তটে উপবিষ্ট ধর্মতত্ত্ববেত্তা মহর্ষি ব্যাসদেব তৎক্ষণাৎ গভীর বিচারে মগ্ন হলেন এবং ওই নির্জন স্থানে তিনি মনে মনে ভাবতে লাগলেন -।

২৮) কঠোর ব্রতপালন ও নিষ্কপটভাবে ব্রহ্মচর্যাদি আচরণের মাধ্যমে আমি বেদ, গুরুবর্গ এবং অগ্নির পূজা করেছি ও তাদের নির্দেশ আমি যথাযত ভাবে পালন করেছি ।

২৯) গুরুপরম্পরায় লব্ধ জ্ঞান ও বেদের মর্মার্থ আমি অতি সরল ভাবে মহাভারতের মাধ্যমে বিশ্লেষণ করেছি যাতে স্ত্রী , শুদ্র , ব্রহ্মবন্ধু ইত্যাদি সবাই নিজ ধর্ম কর্ম পালনের মাধ্যমে ধর্মপথাবলম্বী হন । 

৩০) যদিও আমি ব্রহ্মতেজসম্পন্ন , বৈদিক দর্শনে জ্ঞাত ও সমর্থ তবুও আমি হৃদয়ে কেমন যেন অপূর্ণতা অনুভব করছি  ।

৩১) আমার এই অসন্তোষের কারণ হয়তো এই যে আমি আজ পর্যন্ত ভাগবতপ্রাপ্তির কান্ডারী ভগবদ্ভক্তির বিশেষভাবে বর্ণনা করিনি যা পরমহংসদের এবং পরমেশ্বর ভগবানের অত্যন্ত প্রিয় ।

৩২) মহর্ষি শ্রীকৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস যখন নিজের অপূর্ণতা বিবেচনা করে দুঃখিত হৃদয়ে সরস্বতী নদীর তীরে অনুশোচনা করছিলেন তখন দেবর্ষি নারদ সেখানে এসে উপস্থিত হলেন ।

৩৩) সমগ্র দেবতাদের দ্বারা পূজিত দেবর্ষি নারদকে দেখে মহর্ষি ব্যাস তৎক্ষণাৎ উঠে দাঁড়ালেন এবং শ্রদ্ধা সহকারে তার পূজা , অভ্যর্থনা করলেন ।  

। ইতি শ্রীমদ্ভাগবতে শ্রীমহাপুরাণে পারমহংস্যাং সংহিতায়াং প্রথমস্কন্ধে নৈমিষীয়োপাখ্যানে চতুর্থোহধ্যায়ঃ।

আসুন আমরা সবাই একসাথে শ্রীমদ্ভাগবতম / শ্রীমদ্ ভাগবত মহাপুরাণের স্বাধ্যায় করে আমাদের জীবন পুন্য করি | আজকের মতো এইটুকুই,আমরা শেষ করব মহামন্ত্র দিয়ে |

হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে  |

হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে  ||


যদি আপনার এই পোস্টটি পছন্দ হয়ে থাকে / ভালো লেগে থাকে নতুবা এখান থেকে কিছু নুতন জানতে পারেন তাহলে আমাদের সাবস্ক্রাইব অবশ্যই করবেন এবং আপন আত্মীয়পরিজন, বন্ধু-বান্ধবদের সাথে শেয়ার করবেন | আমার লেখা কেমন লাগলো তা অবশ্যই নিচে কমেন্ট বক্স এর মাধ্যমে কমেন্ট করে জানাবেন |

শ্রীমদ্ ভগবত গীতার উপর আমাদের টিউটোরিয়াল / শিক্ষামূলক সিরিজ পড়ার জন্য এই লিংকটি ক্লিক করে শ্রীমদ ভগবত গীতার অমৃতজ্ঞান পান করে জীবন পবিত্র ও পুন্য করুন |

শ্রীমদ্ ভগবত গীতা : https://bhagavadgitatutorial.blogspot.com

আপনারা আমার প্রণাম নেবেন |

ইতি
দীন ভক্ত দাসানুদাস

<--পূর্ববর্তী লেখনী                                                        পরবর্তী লেখনী-->

Tuesday, 14 April 2020

শ্রীমদ্ভাগবতম - প্রথম স্কন্ধ - তৃতীয় অধ্যায় - Srimad Bhagavatam - First Canto - Chapter 3

শ্রীমদ্ভাগবতম - প্রথম স্কন্ধ - তৃতীয় অধ্যায় , Srimad Bhagavatam - First Canto - Third Chapter , Bhagavatam,Srimad Bhagavatam, Bhagavata Purana, Srimad Bhagavatam in Bengali, Bhagavata Purana in Bengali, Bhagavata Mahapurana, Sanatana Dharma, Bhagavata Mahapurana, Srimad Bhagavatam Bangla, Gita, শ্রীমদ্ ভাগবতম, শ্রীমদ্ ভাগবত মহাপুরাণ , শ্রীমদ্ ভাগবত পুরা, Srimad Bhagavatam online, শ্রীমদ ভাগবত,ভাগবত মহাপুরাণ, ভগবানের অবতারগণের বর্ণনা

<--পূর্ববর্তী লেখনী                                                        পরবর্তী লেখনী-->

Srimad Bhagavatam Lord Sri Hari

ভগবান শ্রীহরি

|| ওম নমঃ ভগবতে বাসুদেবায় ||


শ্রীমদ্ভাগবতম - প্রথম স্কন্ধ - তৃতীয় অধ্যায়

  ভগবানের অবতারগণের বর্ণনা 


প্রিয় ভক্তবৃন্দ এবং সুধীগণ,

পূর্ববর্তী লেখনীতে আমরা শ্রীমদ্ভাগবতমের প্রথম স্কন্ধের দ্বিতীয় অধ্যায় , ভগবৎকথা ও ভগবদ্ভক্তির মাহাত্ম্য সম্পর্কে জেনেছিলাম । আজ আমরা শ্রীমদ্ভাগবতমের প্রথম স্কন্ধের তৃতীয় অধ্যায় , ভগবানের অবতারগণের বর্ণনা সম্পর্কে জানব । এটি শুরু হয় সূত গোস্বামী দ্বারা শৌনকাদি মুনিদের প্রশ্নের উত্তর প্রদানের মাধ্যমে ।

শ্রীমদ্ভাগবতম - প্রথম স্কন্ধ - তৃতীয় অধ্যায় - Srimad Bhagavatam - First Canto - Chapter 3
শ্রীমদ্ভাগবতম - প্রথম স্কন্ধ - তৃতীয় অধ্যায়
১) শৌনকাদি  ঋষিগণ বললেন - সকল সৃষ্টির আদিতে শ্রীভগবান লোকসমূহ ( ব্রহ্মান্ড ) সৃষ্টি করার ইচ্ছা করলেন । এর জন্য পরমেশ্বর ভগবান নিজেকে বিরাট পুরুষ অবতার রূপে প্রকাশ করে জড়জগৎ সৃষ্টির উপাদানগুলির সৃজন করেন । এর মধ্যে দশটি ইন্দ্রিয় ( পাঁচটি কর্মেন্দ্রিয় এবং পাঁচটি জ্ঞানেন্দ্রিয় ) , পঞ্চভূত আর মন - এই ষোলোটি কলা ছিল ।
               
২)  ভগবান পুরুষোত্তম জলে শায়িত অবস্থায় যোগনিদ্রা বিস্তার করে তাঁর নাভি সরোবরে একটি কমলের ( পদ্ম ) উৎপত্তির মাধ্যমে , তার মধ্যে সমস্ত জীবের পিতামহ ব্রহ্মার সৃষ্টি করেন ।  

৩) পরমেশ্বর ভগবানের সেই বিশুদ্ধ , বিরাট পুরুষাবতার রূপের মধ্যে সমস্ত লোকসকল / ব্রহ্মান্ডসমূহ বিদ্যমান । তাঁর সেই পরম উত্তম রূপ সত্ব রূপের সাথে প্রকৃতির জড় উপাদানগুলির কোনোপ্রকার সম্বন্ধ নেই । তাঁর সেই পরম সত্বরূপ পরা-প্রকৃতিতে স্থিত ।

৪) ভক্তগণ , যোগীগণ এবং পরম জ্ঞানীগণ দিব্যচক্ষুর দ্বারা ভগবানের সেই আশ্চর্যময় বিশ্বরূপ দর্শন করেন । সহস্র পদ ,জঙ্ঘা , হস্ত , মুখসমন্বিত শ্রীভগবানের সেই রূপ পরম দিব্য । সেই রূপে অসংখ্য মস্তক , কর্ণ , চক্ষু ও নাসিকা বিদ্যমান যা অসংখ্য মুকুট ,বস্ত্র ও কুণ্ডলাদি অলংকারে সুশোভিত ছিল । 

৫) পরমেশ্বর ভগবানের এই দিব্য রূপ যা ক্ষীরোদসাগরে শায়িত শ্রীনারায়ণ নামে পরিচিত , তা ব্রহ্মান্ডে প্রকাশিত বিবিধ অবতারদের উৎস এবং অক্ষয় বীজস্বরূপ । এই রূপের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অংশ বা কলা দ্বারা দেবতা ,পশুপক্ষী  ও মনুষ্যাদি জীবের সৃষ্টি হয় ।

৬) জগৎ সৃষ্টি করার আদিতে শ্রীভগবান , সনকাদি বাল ঋষিগন ( সনক , সনন্দন , সনাতন , সনৎকুমার ) রূপে অবতার গ্রহণ করেন এবং পরম সত্যের উপলব্ধি করার জন্য তাঁরা অত্যন্ত দুঃসাধ্য অখন্ড ব্রহ্মচর্য ব্রত পালন করেন ।

৭) তারপর এই পৃথিবী যখন রসাতলে ( ব্রহ্মান্ডের নিম্নতম প্রদেশ ) পতিত হয়েছিল তখন এই বিশ্বের মঙ্গলসাধনায় ইচ্ছুক যোগেশ্বর পরমেশ্বর ভগবান পৃথিবী উদ্ধারের জন্য বরাহ অবতার ধারণ করেন । বরাহ অবতার হলেন  শ্রীভগবানের দ্বিতীয় অবতার ।

৮) ঋষিকল্পে  শ্রীভগবান তাঁর তৃতীয় অবতার  দেবর্ষি নারদরূপে আবির্ভূত হন । তিনি বেদের সাত্বত তন্ত্র ( বিশেষরূপে ভগবানের প্রেমময়ী সেবার ক্রম ) প্রচার করেছিলেন ; সেই তন্ত্রে , ফলবাসনারহিত / নিষ্কাম কর্মের দ্বারা কী করে সংসার চক্র থেকে মুক্ত হওয়া যায় তার উল্লেখ আছে ।

৯) চতুর্থ বার ধর্মরাজের পত্নী মূর্তির গর্ভে তিনি নর-নারায়ণ রূপে আবির্ভূত হন । এই অবতারে মন ও ইন্দ্রিয় সংযমের আদর্শ স্থাপন করার জন্য তাঁরা অত্যন্ত দুঃসাধ্য ও কঠোর তপস্যা করেছিলেন ।

শ্রীমদ্ভাগবতম - প্রথম স্কন্ধ - তৃতীয় অধ্যায় - Srimad Bhagavatam - First Canto - Chapter 3
শ্রীমদ্ভাগবতম - প্রথম স্কন্ধ - তৃতীয় অধ্যায়
১০) পঞ্চম অবতারে তিনি সিদ্ধেশ কপিল মুনি  রূপে অবতারিত হন । তিনি আসুরি নামক এক ব্রাহ্মনকে এই ব্রহ্মান্ডের জড়সৃষ্টির মৌলিক উপাদানগুলির সম্পর্কে তত্বজ্ঞান প্রদান করেন । কালক্রমে এই জ্ঞান সেইসময় বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল । এই তত্ত্বকেই আমরা কপিল-সাংখ্য নামে জানি ।

১১) শ্রীভগবান ষষ্ঠ অবতার রূপে সপ্তঋষিগণের প্রমুখ অত্রির পত্নী সতী অনুসূয়ার গর্ভে আবির্ভূত হন । তাঁর এই অবতার কে আমরা শ্রীদত্তাত্রেয় ভগবান বলে জানি । শ্রীদত্তাত্রেয় অবতারে তিনি অলর্ক , প্রহ্লাদ প্রমুখকে পারমার্থিক ব্রহ্মতত্ত্ব জ্ঞান প্রদান করেছিলেন ।  

১২) সপ্তম অবতারে যিনি প্রজাপতি রুচির ধর্মপত্নী আকৃতির গর্ভে যজ্ঞরূপে আবির্ভূত হন । তিনি তার পুত্র যাম প্রমুখ দেবগনের সাথে স্বায়ম্ভূব মনুতে ব্রহ্মান্ডের প্রতিপালন করেছিলেন ।

১৩) মহারাজ নাভি এবং তার পত্নী মেরুদেবীর গর্ভে শ্রীভগবান তাঁর অষ্টম অবতার মহারাজ ঋষভদেবরূপে আবির্ভূত হয়েছিলেন । এই অবতার তিনি পূর্ণ সিদ্ধিলাভের পথ প্রদর্শন করেছিলেন যা সর্বতোভাবে জিতেন্দ্রিয় এবং সব আশ্রমের শ্রেষ্ঠ পরমহংসেরা তার অবলম্বন করেন ।

১৪) হে শৌনকাদি মুনিগন ! ঋষিগণের প্রার্থনায় সাড়া দিয়ে শ্রীভগবান তাঁর নবম অবতারে রাজা পৃথুরুপে অবতারিত হয়েছিলেন । এই অবতারে তিনি পৃথিবীর ঔষধিসমূহের দোহন করেছিলেন । এর ফলে বসুন্ধরাও পরম কামনীয় রূপ ধারণ করেছিল ।

১৫) চাক্ষুষ মন্বন্তরে যখন সমগ্র বিশ্ব সমুদ্রপ্লাবিত হয়েছিল তখন শ্রীভগবান মৎসাবতাররূপে আবির্ভূত হন । মৎসবতার  শ্রীভগবানের দশম অবতার । এই অবতারে তিনি মৎসরূপ ধারণ করে পরবর্তী মন্বন্তরের অধিপতি বৈবস্বত মনুকে একটি বৈতরণীর ( নৌকার ) উপর রেখে তার রক্ষা করেছিলেন ।

১৬)  তাঁর একাদশ অবতারে শ্রীভগবান কুর্মাবতার রূপে আবির্ভূত হয়েছিলেন । এই সময় তিনি তাঁর পিঠে মন্দরাচলপর্বত কে ধারণ করেছিলেন, যা সমুদ্রমন্থনের সময় দেবতা ও দৈত্যরা মন্থন-দণ্ডরূপে ব্যবহার করেছিলেন ।

১৭) তাঁর দ্বাদশ অবতারে শ্রীভগবান ধন্বন্তরিরূপে আবির্ভূত হয়ে নিজ হাতে অমৃতকুন্ড নিয়ে সমুদ্র থেকে উঠে এসেছিলেন এবং ত্রয়োদশ অবতারে তিনি মোহিনীরূপ ধারণ করে দানবদের সম্মোহিত করে দেবতাদের অমৃতপান করিয়েছিলেন ।

১৮) চতুর্দশ অবতারে শ্রীভগবান ভক্তরাজ প্রহ্লাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে নৃসিংহরূপে আবির্ভূত হয়ে দৈত্যরাজ হিরণ্যকশিপুর বক্ষ বিদীর্ণ করেছিলেন , ঠিক যেমন একজন সূত্রধর বা কটকার ( মাদুর বননকারী  ) তার নখ দিয়ে এরকা তৃণ বিদীর্ণ করে ।

১৯) পঞ্চদশ অবতারে শ্রীভগবান বামন অবতার ধারণপূর্বক দৈত্যরাজ বলির ( প্রহ্লাদ পৌত্র ) যজ্ঞস্থলে গমন করেছিলেন । দেবতাদের স্বর্গ ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য তিনি দৈত্যরাজ বলির কাছে কেবলমাত্র ত্রিপাদ ভূমি ভিক্ষা করেছিলেন ও দৈত্যরাজ বলিকে উদ্ধার করেছিলেন ।

শ্রীমদ্ভাগবতম - প্রথম স্কন্ধ - তৃতীয় অধ্যায় - Srimad Bhagavatam - First Canto - Chapter 3
শ্রীমদ্ভাগবতম - প্রথম স্কন্ধ - তৃতীয় অধ্যায়
২০) ষোড়শ অবতারে তিনি জমদগ্নি পুত্র পরশুরাম রূপে আবির্ভূত হয়েছিলেন । তৎকালীন দুরাচারী , ধৰ্মপরান্মুখ, ব্রহ্মবিদ্বেষী ও ব্রাহ্মণহন্তা নৃপতিদের দেখে তিনি ক্রোধান্বিত হয়ে বসুন্ধরাকে একুশবার ক্ষত্রিয়শুন্য করেছিলেন ।

২১) এরপর সপ্তদশ অবতারে তিনি মহর্ষি পরাশরের ঔরসে মাতা সত্যবতীর গর্ভে শ্রী কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস রূপে আবির্ভূত হয়েছিলেন । ওই সময় অজ্ঞান অন্ধকারে নিমজ্জিত স্বল্পবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের দুর্দশা দেখে তিনি তাদের মঙ্গলার্থে বৈদিক কল্পবৃক্ষের শাখাবিভাজন করেছিলেন ।

২২) অষ্টাদশ অবতারে শ্রীভগবান রাজা দশরথের পুত্র শ্রীরামচন্দ্র রূপে ধরাতলে অবতীর্ণ হন । দেবকার্য সম্পাদনের জন্য তিনি সেতুবন্ধ , রাবণ বধ আদি নানাবিধ অলৌকিক কার্য সম্পাদন করে তাঁর অসাধারণ বীরত্বের প্রদর্শন করেছিলেন ।

২৩) ঊনবিংশ এবং বিংশ অবতারে তিনি বৃশ্নি / যদুবংশে শ্রীবলরাম এবং শ্রীকৃষ্ণরূপে ( বসুদেবের পুত্র ) আবির্ভূত হয়ে এই বসুন্ধরার ভার হরণ করেছিলেন ।

২৪) তারপর কলিযুগের প্রারম্ভে ভগবতবিদ্বেষী নাস্তিকদের সম্মোহিত করার উদ্দেশে শ্রীভগবান মগধদেশে ( গয়াপ্রদেশে  ) অঞ্জনার পুত্ররূপে বুদ্ধাবতার হবেন  ।

২৫) এরপরে কলির যুগসন্ধিক্ষণে যখন এই ধরিত্রীর সকল নৃপতিগণ দস্যুস্বভাবসম্পন্ন হয়ে উঠবে তখন জগৎপতি শ্রীভগবান বিষ্ণুযশা নামক এক ব্রাহ্মণের গৃহে কল্কি অবতার রূপে আবির্ভূত হবেন ।   

২৬) হে শৌনকাদি বিপ্রগণ ! বিশাল সরোবর থেকে যেমন অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নদী / জলপ্রবাহ প্রবাহিত হয় , ঠিক তেমনি সত্ত্বনিধি ভগবান শ্রীহরির থেকেই বিভিন্ন অবতার প্রকাশিত হন ।  

২৭) মহাওজস্বী সমস্ত ঋষিগণ , মনুগণ , দেবতাগণ এবং মনুর সমগ্র বংশধরেরাও শ্রীভগবানের অংশ ও কলাবতার । প্রজাপতিগণও ভগবানের অংশ ও কলারই অন্তর্গত ।

২৮) পূর্বে উল্লিখিত সমস্ত অবতারগণ হচ্ছেন শ্রীভগবানের অংশাবতার বা কলাবতার । কিন্তু ভগবান শ্রীকৃষ্ণ হচ্ছেন এই সমস্ত অবতারগণের অবতারি । তিনিই প্রকৃত পরমেশ্বর। দুরাচারী পাপাত্মাদের অত্যাচারে পীড়িত পুণ্যাত্মা , বসুন্ধরার উদ্ধারের জন্য শ্রীভগবান যুগে যুগে এই ধরাধামে আবির্ভূত হন ।

২৯) শ্রীভগবানের দিব্য এই অবতারসমূহের আবির্ভাব অত্যন্ত গুহ্য এবং রহস্যময় । যে মানুষ এই গুহ্য এবং রহস্যময় কথা একাগ্রচিত্তে সকালে ও সন্ধ্যায় নিয়মিত ভক্তিপূর্বক পাঠ করেন  তিনি জড়জাগতিক সমস্ত দুঃখ , দুর্দশার থেকে পরিত্রান পান ।

শ্রীমদ্ভাগবতম - প্রথম স্কন্ধ - তৃতীয় অধ্যায় - Srimad Bhagavatam - First Canto - Chapter 3
শ্রীমদ্ভাগবতম - প্রথম স্কন্ধ - তৃতীয় অধ্যায়
৩০) অপ্রাকৃত, চিন্ময়মূর্তি শ্রীভগবানের এই জড়জগতে যে বিশালাকার স্থুলরূপের আঙ্কলন করা হয় তা ভগবানের মায়াকর্তৃক সৃষ্ট প্রকৃতির গুনের দ্বারা করা হয় । তা কেবলই স্বল্পবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের এবং ভক্তিপথে নবাগতদের ভগবানের রূপ সম্পর্কে ধারণা প্রদানের জন্য ।

৩১) যেমনি মেঘ ও ধূলিকণা বায়ুর আশ্রয়ে থেকে বায়ুর দ্বারাই বাহিত হয় কিন্তু স্বল্পবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষসকল বলেন মেঘ আকাশে থাকে এবং ধূলিকণা বায়ুতে থাকে । তেমনভাবেই অজ্ঞব্যক্তিগণ সমস্তকিছুর সাক্ষী  আত্মার উপর জড় জগতের স্থুলদৃষ্টি আরোপ করে ।

৩২) এই স্থুলদেহ থেকে উৎকৃষ্ট আর এক সূক্ষ্ম রূপ / দেহ রয়েছে যা অব্যক্ত , অব্যূঢ় , জড়গুনরহিত , অপ্রকাশিত , অদর্শনীয় এবং অশ্রুত । এই সূক্ষ্মশরীরে আত্মা  আরোপিত বা অনুপ্রবিষ্ট হলেই তাকে জীব বলা হয় এবং এভাবেই জীবের পুনর্জন্ম হয় ।

৩৩) আত্মার স্বরূপ উপলব্ধির দ্বারা যখন কেউ এটা বুঝতে পারে যে অবিদ্যা ও অজ্ঞানের দ্বারাই আত্মা এইসকল শরীরে আরোপিত হয় এবং আত্মার সাথে এই স্থুল এবং সূক্ষ্ম শরীরের কোনো সম্পর্কই নেই , তখন তার ব্রহ্ম দর্শন হয় ।

৩৪) ভগবত কৃপাতে যখন শ্রীভগবানের এই মায়াশক্তির প্রভাব প্রশমিত হয় সেই সময় জীব পরমানন্দে পরিপূর্ণ হয়ে যান । তিনি পূর্ণ জ্ঞানপ্রাপ্ত হন , তার আর কোনো অজ্ঞান থাকে না । তিনি তখন আত্মজ্ঞানী হয়ে স্বমহিমাতে প্রতিষ্ঠিত হন ।

৩৫) তত্ত্বজ্ঞানী পন্ডিতগণ এভাবেই সেই জন্মরহিত শ্রীভগবানের অপ্রাকৃত কর্মের বর্ণনা করে থাকেন ; কারণ হৃদয়েশ্বর শ্রীভগবানের জন্ম এবং কর্ম - উভয়ই বেদের এক অতি গুহ্য রহস্য ।

৩৬) সেই পরমেশ্বর ভগবানের লীলা ও চরিত্র সর্বদাই নির্মল ও নিস্কলুষ । তিনি এই লীলাবিহারের দ্বারাই এই জগতের সৃষ্টি , পালন ও  বিনাশ করে থাকেন ।  তিনি ষড়ইন্দ্রিয় ও ষড়ঐশ্বর্যের অধীশ্বর । তিনি প্রতিটি জীবের হৃদয়ে গুপ্তরূপে জ্ঞানেন্দ্রিয় ও মনের নিয়ন্তারূপে বিরাজ করেন । তিনি স্বতন্ত্র ও স্বাধীন , জড়জাগতিক কোনো কিছুতেই তিনি সংলিপ্ত হন না ।

৩৭) যেমন কোনো মূর্খ ব্যক্তি অভিনয়রত নটের অভিনয় সংকেত বুঝতে না পেরে ওই নটের চরিত্রের কিছুই অনুধাবন করতে পারে না ; তেমনি স্বল্পবুদ্ধিসম্পন্ন অবিবেকী মানুষেরা নটবৎ অভিনয়পরায়ণ শ্রীভগবানের পরম নাম , রূপ, লীলাবিহার কিছুই বুঝতে পারে না । তারা তাদের জল্পনা কল্পনার দ্বারা এর ধারণাও করতে পারে না ।

শ্রীমদ্ভাগবতম - প্রথম স্কন্ধ - তৃতীয় অধ্যায় - Srimad Bhagavatam - First Canto - Chapter 3
শ্রীমদ্ভাগবতম - প্রথম স্কন্ধ - তৃতীয় অধ্যায়
৩৮) সেই পরম শক্তিমান ও অসীম পরাক্রমী শ্রীভগবানের অনুধাবন করা কারোর পক্ষেই সম্ভবপর নয় । যাঁরা শ্রীকৃষ্ণচন্দ্রের পাদপদ্মের নিত্যনিরন্তর ভক্তিভরে একাগ্রচিত্ত হয়ে চিন্তন সেবন করেন, কেবলমাত্র তাঁরাই কৃষ্ণতত্ত্ব , কৃষ্ণলীলা  ও কৃষ্ণস্বরূপ সম্পর্কে অবগত হতে পারেন ।

৩৯) হে শৌনকাদি মুনিগন !  আপনারা ধন্য । কারণ আপনারা এই বাধাবিঘ্নসংকুল সংসারে ,সমগ্র বিশ্বব্রহ্মান্ডের অধীশ্বর পরমেশ্বর ভগবান বাসুদেবের প্রতি আপনারা পূর্ণমাত্রায় অনির্বচনীয় নিরবিচ্ছিন্ন অনুরাগ পোষণ করেন । এর ফলে আপনাদের আর এই জন্ম মৃত্যুর ভয়ানক চক্রে আবর্তিত হতে হবে না ।

৪০) পরমেশ্বর শ্রীভগবানের অবতার বেদব্যাস এই ধরাতলে সমগ্র মানবের পরম মঙ্গল সাধনের উদ্দেশ্যে এই শ্রীমদ্ভাগবত মহাপুরাণের সংকলন করেছেন ।  শ্রীভগবানের অবতারগণ , তাঁদের লীলা , ও ভক্তচরিত্র বর্ণনা করার ফলে ইহা শ্রীভগবানের বাঙ্ময় বিগ্রহ । এটি সর্বতোভাবে সার্থক , আনন্দময় ও পরিপূর্ণ ।

৪১-৪২-৪৩) মহর্ষি ব্যাসদেব সমগ্র বৈদিক শাস্ত্রের ও ইতিহাসের সারতত্ত্ব আরোহন করার পর তার সংকলন এই শ্রীমদ্ভাগবত মহাপুরাণে করেছেন এবং আত্মতত্ত্বজ্ঞানীগণের শিরোমণি আপন পুত্র মহর্ষি শ্রীশুকদেবকে এই শাস্ত্রের অধ্যয়ন করান । শ্রীশুকদেব গোস্বামী গঙ্গার তটে প্রায়োপবেশনে ( আমরণ অনশনে ) উপবিষ্ট ও মহান মুনিঋষিগণে পরিবেষ্টিত মহারাজ পরীক্ষিৎকে এই শ্রীমদ্ভাগবত কথা শ্রবণ করিয়েছিলেন ।

৪৪) পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যখন তাঁর লীলাবিহার সমাপ্ত করে ধৰ্ম ও জ্ঞানসহ নিজের পরমধামে যাত্রা করলেন , তখন এই ঘোর কলিযুগের জ্ঞানচক্ষুরহিত অজ্ঞানীদের অজ্ঞানান্ধকার দূরীকরণের জন্য সূর্যের মতন এই উজ্বল ভাগবতপুরাণের উদয় হয়েছে । 

৪৫) হে শৌনকাদি মুনিগন ! মহর্ষি শুকদেব যখন মহারাজ পরীক্ষিতের সম্মুখে এই পরম পবিত্র ভাগবত শাস্ত্রের কীর্তন করছিলেন সেইসময় আমিও সেই সভায় উপস্থিত ছিলাম এবং একাগ্রচিত্তে ওই পাঠ শ্রবণ করছিলাম । সেই মহান তেজস্বী শ্রীশুকদেবের অনুগ্রহে আমি শ্রীমদ্ভাগবত হৃদয়ঙ্গম করেছিলাম । এখন আমি তাঁর থেকে যা শ্রবণ করেছিলাম , আমার উপলব্ধি অনুযায়ী তা আপনাদের শোনাব ।


। ইতি শ্রীমদ্ভাগবতে শ্রীমহাপুরাণে পারমহংস্যাং সংহিতায়াং প্রথমস্কন্ধে নৈমিষীয়োপাখ্যানে তৃতীয়োহধ্যায়ঃ।

আসুন আমরা সবাই একসাথে শ্রীমদ্ভাগবতম / শ্রীমদ্ ভাগবত মহাপুরাণের স্বাধ্যায় করে আমাদের জীবন পুন্য করি | আজকের মতো এইটুকুই,আমরা শেষ করব মহামন্ত্র দিয়ে |

হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে  |

হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে  ||


যদি আপনার এই পোস্টটি পছন্দ হয়ে থাকে / ভালো লেগে থাকে নতুবা এখান থেকে কিছু নুতন জানতে পারেন তাহলে আমাদের সাবস্ক্রাইব অবশ্যই করবেন এবং আপন আত্মীয়পরিজন, বন্ধু-বান্ধবদের সাথে শেয়ার করবেন | আমার লেখা কেমন লাগলো তা অবশ্যই নিচে কমেন্ট বক্স এর মাধ্যমে কমেন্ট করে জানাবেন |

শ্রীমদ্ ভগবত গীতার উপর আমাদের টিউটোরিয়াল / শিক্ষামূলক সিরিজ পড়ার জন্য এই লিংকটি ক্লিক করে শ্রীমদ ভগবত গীতার অমৃতজ্ঞান পান করে জীবন পবিত্র ও পুন্য করুন |

শ্রীমদ্ ভগবত গীতা : https://bhagavadgitatutorial.blogspot.com

আপনারা আমার প্রণাম নেবেন | 

ইতি
দীন ভক্ত দাসানুদাস

<--পূর্ববর্তী লেখনী                                                        পরবর্তী লেখনী-->

Sunday, 12 April 2020

শ্রীমদ্ভাগবতম - প্রথম স্কন্ধ - দ্বিতীয় অধ্যায় - Srimad Bhagavatam - First Canto - Chapter 2

শ্রীমদ্ভাগবতম - প্রথম স্কন্ধ - দ্বিতীয় অধ্যায় , Srimad Bhagavatam - First Canto - Second Chapter , Bhagavatam,Srimad Bhagavatam, Bhagavata Purana, Srimad Bhagavatam in Bengali, Bhagavata Purana in Bengali, Bhagavata Mahapurana, Sanatana Dharma, Bhagavata Mahapurana, Srimad Bhagavatam Bangla, Gita, শ্রীমদ্ ভাগবতম, শ্রীমদ্ ভাগবত মহাপুরাণ , শ্রীমদ্ ভাগবত পুরাণ, Srimad Bhagavatam online, শ্রীমদ ভাগবত,ভাগবত মহাপুরাণ, ভগবৎকথা ও ভগবদ্ভক্তির মাহাত্ম্য

<--পূর্ববর্তী লেখনী                                                        পরবর্তী লেখনী-->

Srimad Bhagavatam Lord Vishnu

ভগবান শ্রীহরি

|| ওম নমঃ ভগবতে বাসুদেবায় ||


শ্রীমদ্ভাগবতম - প্রথম স্কন্ধ - দ্বিতীয় অধ্যায়

ভগবৎকথা ও ভগবদ্ভক্তির মাহাত্ম্য


প্রিয় ভক্তবৃন্দ এবং সুধীগণ,

পূর্ববর্তী লেখনীতে আমরা শ্রীমদ্ভাগবতমের প্রথম স্কন্ধ - প্রথম অধ্যায় , সূতের কাছে শৌনকাদি মুনিগণের প্রশ্ন সম্পর্কে জেনেছিলাম । আজ আমরা শ্রীমদ্ভাগবতমের প্রথম স্কন্ধের দ্বিতীয় অধ্যায় , ভগবৎকথা ও ভগবদ্ভক্তির মাহাত্ম্য সম্পর্কে জানব । এটি শুরু হয় সূত গোস্বামী দ্বারা শৌনকাদি মুনিদের প্রশ্নের উত্তর প্রদানের মাধ্যমে ।

শ্রীমদ্ভাগবতম - প্রথম স্কন্ধ - দ্বিতীয় অধ্যায় - Srimad Bhagavatam - First Canto - Chapter 2
শ্রীমদ্ভাগবতম - প্রথম স্কন্ধ - দ্বিতীয় অধ্যায়
১) নৈমিষারণ্য ক্ষেত্রে শৌনকাদি মুনিগনদের প্রশ্ন শুনে রোমহর্ষণ পুত্র উগ্রশ্রবা ( সূত গোস্বামী ) বড়ই আনন্দিত হলেন । তিনি তাদের ওইসকল প্রশ্নের প্রশংসা করলেন এবং সেগুলির উত্তর দিতে শুরু করলেন ।

২) মহামতি সূত বললেন - আমি সর্বভূতহৃদয় মহর্ষি শ্রীশুকদেব গোস্বামীকে প্রণাম করছি । তখনও শ্রীল শুকদেবের যজ্ঞোপবিধ ( উপনয়ন ) সংস্কার হয়নি , অর্থাৎ তাঁর লৌকিক বা বৈদিক কর্মানুষ্ঠানের সুযোগ নেই । এমতাবস্থায় তিনি একাকীই সন্ন্যাস গ্রহণের উদ্দেশ্যে গৃহত্যাগ করে যাচ্ছিলেন । সেই সময় যখন তাঁর পিতা মহর্ষি বেদব্যাস পুত্রবিরহে কাতর হয়ে ' হে পুত্র !  হে পুত্র !' বলে আহ্বান করছিলেন , সেই সময় শ্রীশুকদেবের ভাবনায় তন্ময় বৃক্ষরাজিও বিরহকাতর পিতার ব্যাথায় ব্যথিত হয়ে উত্তর দিয়েছিল ।

৩) গভীর অজ্ঞানঅন্ধকারে নিমজ্জিত এই সংসার , এই ভবসাগর অতিক্রম করতে ইচ্ছুক বিষয়াসক্ত মানুষের জন্য এই ভাগবত মহাপুরাণ , আধ্যাত্মিক ও আত্মতত্ব প্রকাশক অনুপম দীপ সদৃশ । ইহা সমস্ত বেদের সারস্বরূপ , অত্যন্ত গুহ্য এবং ভগবতস্বরূপের দর্শনদানকারী । মহান মুনিঋষিগণও শ্রীল শুকদেবের চরণ আশ্রয় করে এই শুকশাস্ত্রের বর্ণনা করেছেন । আমি তাঁকে সশ্রদ্ধ প্রণাম নিবেদন করে তাঁর শরণাশ্রয় গ্রহণ করছি ।

৪) ভবসাগর বিজয়ী শ্রীমদ্ভাগবত মহাপুরাণ পাঠ করার পূর্বে ভগবান শ্রীনারায়ণ , ভগবত অবতার মানুষ্যশ্রেষ্ঠ নর-নারায়ণ ঋষিকে , বাণীদেবী সরস্বতী এবং মহর্ষি ব্যাসদেবকে প্রণাম করা উচিত ।

৫) হে ঋষিগণ ! আপনারা আমার সম্মুখে  অতি সুন্দর এবং উত্তম সব প্রশ্ন উপস্থাপন করেছেন । কারণ এই সকল প্রশ্নগুলি ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বিষয়ক ও জগতের পক্ষে মঙ্গলকারী । এই প্রকার প্রশ্নে আত্মা পূর্ণরূপে সুপ্রসন্ন হয় ।

৬) মানুষের পক্ষে পরম ধৰ্ম হল সেই ধর্ম যার দ্বারা ভৌতিক বা ইন্দ্রিয়লভ্য জ্ঞানের অতীত শ্রীকৃষ্ণের নিষ্কাম ( ফলভোগের বাসনা রহিত )  ও নিরবিচ্ছিন্ন ভগবদ্ভক্তি লাভ করা যায় । এই ভক্তিবলে আত্মা সচ্চিদানন্দ পরমাত্মার উপলব্ধি করার মাধ্যমে যথার্থ প্রসন্নতা লাভ করে ।

৭) অনন্যা ভক্তি সহকারে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সেবার মাধ্যমে অচিরেই মনদর্পনে নিষ্কাম জ্ঞান ও বৈরাগ্যের আবির্ভাব হয় , যা এই জড়জাগতিক বিষয়ের প্রতি মনকে অনাসক্ত করে ।

৮) স্বকীয় বৃত্তি এবং স্বধর্ম পালনের পরও যদি মানুষ্যহৃদয়ে শ্রীভগবানের লীলাপ্রসঙ্গ অথবা মহিমা শ্রবণে প্রবৃত্তি না আসে তাহলে সেই সকল ধর্মকর্ম অনর্থক পরিশ্রম মাত্র ।

শ্রীমদ্ভাগবতম - প্রথম স্কন্ধ - দ্বিতীয় অধ্যায় - Srimad Bhagavatam - First Canto - Chapter 2
শ্রীমদ্ভাগবতম - প্রথম স্কন্ধ - দ্বিতীয় অধ্যায়
৯) ধর্মপালন বা ধর্ম আচরণের উদ্দেশ্য হলো কেবল পরম মুক্তি লাভ করা । কখনই তা অর্থ উপার্জনের নিমিত্তে করা উচিত নয় । অর্থ কেবল ধর্মাচরণ বা ধর্মানুষ্ঠান সম্পাদন করার মাধ্যম হওয়া উচিত । যারা ধর্মাচরণকারী , তাদের  তত্ত্বদর্শী মহর্ষিগণ , ইন্দ্রিয় সুখভোগাদি ও জড়জাগতিক বিষয়ভোগে প্রত্যাশী না হওয়ার উপদেশ করেছেন ।

১০) ইন্দ্রিয় বিষয়ভোগকে কখনই জীবনের উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য বলে বিবেচনা করা উচিত নয় । কেবলমাত্র জীবনধারণ বা জীবিকা নির্বাহের জন্যই বিষয়ের সাথে মানুষের নূন্যতম সংলিপ্ততা আবশ্যক । কারণ মানব জীবনের সর্বোপরি লক্ষ্য হল সেই পরমতত্বের অনুসন্ধান ।

১১) তত্ত্ববিদগণ সেই জ্ঞানকে , যা এক ও অদ্বিতীয় সচ্চিদানন্দস্বরূপ , পরমতত্ত্ব বা পারমার্থিক জ্ঞান বলে থাকেন । সেই তত্ত্বই আবার কখনো পরমব্রহ্ম , পরমাত্মা কখনো বা ভগবান , এই সকল বিভিন্ন নামে অভিহিত হন ।

১২) শ্রদ্ধালু ও দৃড় ভগবৎভক্ত মুনি-ঋষিগণ ঐকান্তিকভাবে শ্রীমদ্ভাগবত শ্রবণে প্রাপ্ত জ্ঞান -বৈরাগ্যসংযুক্ত ভক্তিকে নিজ হৃদয়ের মধ্যে ধারণ করে সেই পরমাত্মার অনুভব করেন ।

১৩) হে বিপ্রশ্রেষ্ঠ শৌনকাদি ঋষিগণ ! নিজ নিজ প্রবৃত্তি ও বর্ণাশ্রম ধৰ্ম পালনের মাধ্যমে ভগবান শ্রীহরির প্রীতি সম্পাদনই হল পরম সিদ্ধি ।

১৪) সুতরাং একাগ্রচিত্ত হয়ে নিত্যই ভক্তবৎসল পরমেশ্বর শ্রীভগবানের মহিমা শ্রবণ , কীর্তন , স্মরণ ও আরাধনা করা আবশ্যক ।

১৫) যথার্থ জ্ঞানী ও বিচারবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ শ্রীমদ্ভাগবত স্মরণরূপ অসির ( তরবারীর ) দ্বারা জাগতিক মোহ -মায়া ও কর্মবন্ধনের ছেদন করেন । সুতরাং সেই শ্রীভগবানের লীলাকথা শ্রবণে কার না অনুরাগ জন্মে !

১৬) হে ব্রাহ্মনশ্রেষ্ঠ শৌনকাদি ঋষিগণ ! শ্রীভগবানের শুদ্ধ ও একনিষ্ঠ ভক্তের সেবার দ্বারা পুণ্যফলের উদয় হয় এবং ভাগবত কথা শ্রবণের অভিলাষ জন্মে , অতঃপর ভাগবত কথাতে শ্রদ্ধার উদয় হয় এবং ক্রমে ক্রমে মনযোগ সহকারে ( স্থিরচিত্ত  হয়ে ) শ্রীমদ্ভাগবত কথাশ্রবণে আসক্তি আসে ।

১৭) পরম পুণ্যকারী পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পবিত্র লীলা , মহিমার শ্রবণ কীর্তন করলে , নিত্য হিতকারী শ্রীভগবান ওই সাধুগণদের হৃদয়াভ্যন্তরে প্রকাশিত হয়ে সমস্ত অশুভ জড়জাগতিক বিষয় ভোগের কামনাবাসনাকে অবশ্যই বিনাশ করেন কারণ তিনি সাধুগণের সুহৃদ। 

১৮) নিত্য নিরন্তর ভগবৎভক্তদের সেবা করলে এবং স্থিরচিত্ত হয়ে শ্রীমদ্ভাগবতের শ্রবণ করলে হৃদয়ে ভক্তির প্রতিবন্ধকরূপ সমস্ত কলুষতা দূরীভূত হয় এবং উত্তম শ্লোকের দ্বারা শ্রীভগবানের বন্দনা করলে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের চরণে প্রেমময়ী নিশ্চলা ভক্তিসুধা প্রগাড় হয় ।

1শ্রীমদ্ভাগবতম - প্রথম স্কন্ধ - দ্বিতীয় অধ্যায় - Srimad Bhagavatam - First Canto - Chapter 2
শ্রীমদ্ভাগবতম - প্রথম স্কন্ধ - দ্বিতীয় অধ্যায়
১৯) যখন মনুষ্যহৃদয়ে পরমা ভক্তির সঞ্চার হয় তখন তার প্রভাবে রজ ও তমোগুণজাত কাম , ক্রোধ , লোভাদি ষড়রিপুর প্রভাব হ্রাস হয় ও হৃদয়ে সত্ত্ব  গুনের প্রসার হয় । যার প্রভাবে মন নির্মল ও প্রসন্ন হয় ।

২০) হৃদয়ে পরমা ভক্তির প্রকাশের ফলে প্রসন্নচিত্তে শ্রীভগবানের সেবা করলে হৃদয় পরম আনন্দে পূর্ণ হয় এবং জীব সর্বপ্রকার বন্ধনমুক্ত হয়ে ভগবত-বিজ্ঞান বা ভগবততত্ব উপলব্ধ করেন ।

২১) আত্মাতে পরমাত্মার স্বরূপ দর্শনের মাধ্যমে জীবের হৃদয় গ্রন্থি ছিন্ন হয় । তখন তাঁর সর্বপ্রকার সন্দেহ দূরীভূত হয় এবং তাঁর সকাম কর্মজ্ঞানের বিনাশ হয় ।

২২) সেই জন্য পরমার্থলাভে আগ্রহী পন্ডিতগণ চিরকালই নিত্য নিরন্তর পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণচন্দ্রের ভক্তিভরে সেবা করে আসছেন , যার প্রভাবে আত্মপ্রসাদ লাভ হয় ।

২৩) প্রকৃতির গুণত্রয় যথা সত্ত্ব, রজ ও তমঃ কে আশ্রয় করে এবং এগুলির মধ্যে অধিষ্ঠান করে পরমেশ্বর ভগবান এই জড় জগতের সৃষ্টি , স্থিতি / পালন ও প্রলয়ের জন্য ব্রহ্মা , বিষ্ণু এবং মহেশ্বর - এই তিন রূপে প্রতিভাত হন । এই তিনটি গুনের মধ্যে সত্ত্বগুনজাত শ্রীহরির থেকে মানুষের পরম মঙ্গল হয়ে থাকে ।

২৪) যেমন পৃথিবীর (ভূমি বা মাটির ) বিকার হল কাষ্ঠ ( কাঠ ) , এর থেকে ধোঁয়া শ্রেয় ( কারণ ধোঁয়া গতিমান ) । অগ্নি তার থেকেও শ্রেয় কারণ অগ্নিতে আহুতি দিয়ে বৈদিক কর্মানুষ্ঠান সমাপনের মাধ্যমে সদগতি লাভ হয়ে থাকে, জ্ঞানলাভ হয়ে থাকে । তেমনই তমোগুন অপেক্ষা রজোগুণ শ্রেষ্ট এবং রজোগুন অপেক্ষা সত্ত্বগুন শ্রেষ্ঠ কারণ সত্ত্বগুনের দ্বারা পরমতত্ব বা ভগবতদর্শন সম্ভবপর হয় ।

২৫) ভগবতপ্রাপ্তির জন্য পুরাকালে মহাত্মাগণ, জড় জগতের মোহ মায়াদি বন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে কেবল ত্রিগুণাতীত পরমেশ্বর ভগবানেরই আরাধনা করতেন । যারা সেই সকল মহাত্মাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করেন তারাও এই ভবসাগর অতিক্রম করবার যোগ্যতা অর্জন করেন ।

শ্রীমদ্ভাগবতম - প্রথম স্কন্ধ - দ্বিতীয় অধ্যায় - Srimad Bhagavatam - First Canto - Chapter 2
শ্রীমদ্ভাগবতম - প্রথম স্কন্ধ - দ্বিতীয় অধ্যায়
২৬) যারা মুক্তি লাভের জন্য যত্নশীল তারা অবশ্যই সকলের প্রতি শ্রদ্ধাপরায়ন এবং বিনম্র । তথাপি তাঁরা ভয়ঙ্কর আকৃতি বিশিষ্ট দেব , দেবী , প্রজাপতি ইত্যাদির পূজা না করে কেবলমাত্র পরমেশ্বর ভগবান শ্রীনারায়ণের এবং তাঁর অংশাবতারগণেরই আরাধনা করেন ।

২৭) যারা রজোগুন্ এবং তমোগুণের অধীন , তারা স্বীয় প্রবৃত্তি অনুসারে পিতৃপুরুষ , ভুত, প্রজাপতি, বিভিন্ন দেব দেবীর পূজা করে কারণ তারা এই জড় জগতের বিভিন্ন ভোগ বাসনা , যেমন ঐশ্বর্য , ধনসম্পদ , শক্তি , স্ত্রী , সন্তান সন্ততি ইত্যাদির দ্বারা প্রভাবিত ।

২৮-২৯) বৈদিক জ্ঞানের পরম উদ্দেশ্য হলেন পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ । যাগ-যজ্ঞ সম্পাদনও তাঁরই প্রীতির জন্য করা হয় এবং যোগ সম্পাদনের উদ্দেশ্যও হল তাকে জানা । সমস্ত কর্মের পরিসমাপ্তিও শ্রীকৃষ্ণই স্বয়ং কারণ তিনি সকল সকাম কর্মের ফলপ্রদান করেন । ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্য সমস্ত ধর্মকর্মাদির অনুষ্ঠান হয় এবং জীবের বিভিন্ন গতির কারণও হলেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ । তিনিই হলেন জীবনের পরম উদ্দেশ্য ।

৩০) ভগবান শ্রীকৃষ্ণচন্দ্র হলেন ত্রিগুণাত্মিকা - অর্থাৎ সত্ত্ব, রজ ও তমঃ ,এই তিন গুনেরও অতীত । তবুও তিনি সর্বাগ্রে নিজের অমোঘ মায়াশক্তির প্রভাবে এই কার্য-কারণাত্মিকা , ত্রিগুণময়ী এই বিশ্ব-জগতের সৃষ্টি করেছিলেন ।

৩১) এই জড়জগৎ সৃষ্টির পর তিনি এর মধ্যে প্রবেশ করেন । তাই তিনি এই জড়-গুনসমূহের  মধ্যে প্রবিষ্ট আর প্রপঞ্চদৃষ্টিতে মনে হয় যে এই জড়জগতেই তার সৃষ্টি হয়েছে কিন্তু তিনি অনাদিরও আদি এবং চিন্ময় জ্ঞানের দ্বারা পূর্ণ জ্ঞানময় ।

৩২) অগ্নি তো কাষ্ঠের মধ্যেই নিহিত থাকে কিন্তু ব্যবহারের তারতম্য অনুসারে বিভিন্নরূপে প্রকাশিত হয় । ঠিক তেমনি পরমাত্মা অর্থাৎ পরমেশ্বর ভগবান সকল কিছুর মধ্যেই পরিব্যাপ্ত । তিনি এক এবং অদ্বিতীয়ম কিন্তু তিনি নিজ মায়াশক্তির প্রভাবে বিভিন্নরূপে  প্রতীয়মান হন ।

৩৩) পরমেশ্বর শ্রীভগবান তার মায়াশক্তির প্রভাবে নানাপ্রকার স্থূলশরীরের ( ভূত , ইন্দ্রিয়াদি , অন্তঃকরণ ইত্যাদির গুণ পরিবর্তনের মাধ্যমে ) নির্মাণ করেন এবং প্রকৃতিজাত গুনত্রয় আশ্রয় করে ভিন্ন ভিন্ন জীবদেহের রূপে প্রবিষ্ট হন । সূক্ষ্ম মন দ্বারা ঐসকল জীবগণকে তিনি গুণত্রয়ের প্রতিক্রিয়া ভোগ করান ।

৩৪) তিনি সম্পূর্ণ বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টিকর্তা ও স্বামী । তিনি মনুষ্য , দেবতা , পশু-পক্ষী ইত্যাদি সমস্তকিছুর প্রতিপালন করেন । এইসব বিভিন্ন স্থূলশরীরে তিনি বিভিন্ন অবতার গ্রহণপূর্বক সত্ত্বগুনের দ্বারা জীবের প্রতিপালন করে থাকেন ।

। ইতি শ্রীমদ্ভাগবতে শ্রীমহাপুরাণে পারমহংস্যাং সংহিতায়াং প্রথমস্কন্ধে নৈমিষীয়োপাখ্যানে দ্বিতীয়োহধ্যায়ঃ।

আসুন আমরা সবাই একসাথে শ্রীমদ্ভাগবতম / শ্রীমদ্ ভাগবত মহাপুরাণের স্বাধ্যায় করে আমাদের জীবন পুন্য করি | আজকের মতো এইটুকুই,আমরা শেষ করব মহামন্ত্র দিয়ে |

হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে  |

হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে  ||

 

যদি আপনার এই পোস্টটি পছন্দ হয়ে থাকে / ভালো লেগে থাকে নতুবা এখান থেকে কিছু নুতন জানতে পারেন তাহলে আমাদের সাবস্ক্রাইব অবশ্যই করবেন এবং আপন আত্মীয়পরিজন, বন্ধু-বান্ধবদের সাথে শেয়ার করবেন | আমার লেখা কেমন লাগলো তা অবশ্যই নিচে কমেন্ট বক্স এর মাধ্যমে কমেন্ট করে জানাবেন |

শ্রীমদ্ ভগবত গীতার উপর আমাদের টিউটোরিয়াল / শিক্ষামূলক সিরিজ পড়ার জন্য এই লিংকটি ক্লিক করে শ্রীমদ ভগবত গীতার অমৃতজ্ঞান পান করে জীবন পবিত্র ও পুন্য করুন |

শ্রীমদ্ ভগবত গীতা : https://bhagavadgitatutorial.blogspot.com

আপনারা আমার প্রণাম নেবেন | 

ইতি
দীন ভক্ত দাসানুদাস

<--পূর্ববর্তী লেখনী                                                        পরবর্তী লেখনী-->

Thursday, 2 April 2020

শ্রীমদ্ভাগবতম - প্রথম স্কন্ধ - প্রথম অধ্যায় - Srimad Bhagavatam - First Canto - Chapter 1

শ্রীমদ্ভাগবতম-প্রথম স্কন্ধ-প্রথম অধ্যায়, Bhagavatam-First Canto-First Chapter , Bhagavatam,Srimad Bhagavatam, Bhagavata Purana, Srimad Bhagavatam in Bengali, Bhagavata Purana in Bengali, Bhagavata Mahapurana, Sanatana Dharma, Bhagavata Mahapurana, Srimad Bhagavatam Bangla, Gita, শ্রীমদ্ ভাগবতম, শ্রীমদ্ ভাগবত মহাপুরান, শ্রীমদ্ ভাগবত পুরান, Srimad Bhagavatam online, শ্রীমদ ভাগবত,ভাগবত মহাপুরা, সূতের কাছে শৌনকাদি মুনিগণের প্রশ্ন

<--পূর্ববর্তী লেখনী                                                        পরবর্তী লেখনী-->

Srimad Bhagavatam ord Vishnu

ভগবান শ্রীহরি

|| ওম নমঃ ভগবতে বাসুদেবায় ||


শ্রীমদ্ভাগবতম - প্রথম স্কন্ধ - প্রথম অধ্যায়

  সূতের কাছে শৌনকাদি মুনিগণের প্রশ্ন 


প্রিয় ভক্তবৃন্দ এবং সুধীগণ,

পূর্ববর্তী লেখনীতে আমরা শ্রীমদ্ভাগবতমাহাত্ম্যের ষষ্ট অধ্যায়, সপ্তাহযজ্ঞের নিয়ম সম্পর্কে জেনেছিলাম । আজ আমরা শ্রীমদ্ভাগবতমের প্রথম স্কন্ধের প্রথম অধ্যায় , সূতের কাছে শৌনকাদি মুনিগণের প্রশ্ন সম্পর্কে জানব । এটি শুরু হয় মঙ্গলাচরণ এবং মহামতি সূতের কাছে শৌনকাদি মুনিগণের প্রশ্নের মাধ্যমে ।


Srimad Bhagavatam - First Canto - Chapter 1
শ্রীমদ্ভাগবতম - প্রথম স্কন্ধ - প্রথম অধ্যায়
১) যিনি সমস্ত ব্রহ্মান্ডের কর্তা , যিনি সৃষ্টি , স্থিতি ও প্রলয়ের কারণ , যিনি সমস্ত পদার্থে সদ্রূপে বিদ্যমান এবং অসৎ থেকে পৃথক ; যিনি সর্বতোভাবে স্বাধীন , পরতন্ত্র নহেন এবং সর্বাতীত - আমি সেই পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণচন্দ্রের ধ্যান করি । যিনি সৃষ্টির আদিকালে প্রজাপতি ব্রহ্মার নিকট সেই পরম গুহ্য বেদজ্ঞানের প্রকাশ করেছিলেন ;  যাঁর তত্ত্বনিরুপন করতে গিয়ে জ্ঞানীগুণী পন্ডিতগণ , মহান ঋষিগণ  এমন কি স্বর্গের দেবতারাও পর্যন্ত মোহাচ্ছন্ন হয়ে পড়েন । যেমন সূর্যের তেজোময় রশ্মিতে স্থলের মধ্যে জলভ্রম হয় ( মরীচিকা ) , আবার জলেতেও স্থলভ্রম হয় তেমনি তাঁর মধ্যে সতঃ , রজ ও তম এই ত্রিগুণাত্মক জাগ্রত - নিদ্রাময় ও সুষুপ্তিরূপ এই জড় জগৎ সম্পূর্ণরূপে অলীক হলেও তাঁরই প্রভাবে সত্যবৎ   প্রতিভাত হয় । সেই স্বয়ংপ্রকাশময় ত্রিগুণাতীত মায়া-মোহ থেকে সম্পর্ণরূপে মুক্ত পরমসত্যরূপ পরমাত্মার ধ্যান করি ।

২) মহর্ষি ব্যাসদেব তাঁর বিরচিত এই শ্রীমদ্ভাগবত মহাপুরাণে পরমা মুক্তির ধর্ম নিরুপন করেছেন যা সর্বপ্রকার জড়জাগতিক মায়া-মোহ , মোক্ষফল কামনামুক্ত । এই শ্রীমদ্ভাগবত শাস্ত্র যথার্থরূপেই সেই পরম আত্মতত্বের নিরুপন করে যা নির্মৎসর ( শুদ্ধ অন্তঃকরণযুক্ত সৎপুরুষ ) ভক্তগণের জ্ঞাতব্য বিষয় । ইহা সর্বতোভাবেই তাপত্রয় উন্মূলক এবং পরম মঙ্গলময় । যখন ভগবততত্বজ্ঞান পান করার জন্য শ্রীমদ্ভাগবত শাস্ত্রই পর্যাপ্ত তখন অন্যান্য শাস্ত্রের আর সেইরূপ কি প্রয়োজন ? যখন কোনো সুকৃতীসম্পন্ন পুরুষ শ্রদ্ধাবনত হয়ে স্থিরচিত্তে এই শ্রীমদ্ভাগবত কথা শ্রবণ করেন ,  তৎক্ষণাৎ  শ্রীভগবান তার হৃদয়ে অধিষ্ঠান করেন ।

৩) হে সকল ভক্তগণ ! বেদ শাস্ত্র হল কল্পবৃক্ষ আর এর সুপক্ক ফল হল এই শ্রীমদ্ভাগবত শাস্ত্র । মহর্ষি শুকদেবের মুখনিঃসৃত হওয়ার কারণে এই বাণী পরম আনন্দপ্রদানকারী অমৃতে পরিপূর্ণ । শ্রীমদ্ভাগবতের সবকিছুই গ্রাহ্য , অগ্রাহ্য বলে কিছুই নেই । তাই হে রসিক ভক্তবৃন্দ - এই রসামৃত আপনারা নিরন্তর পান করুন । এটি হল রসভান্ড যা কেবল মর্ত্যলোকেই পাওয়া সম্ভব ।

৪) পুরাকালে ভগবান এবং দেবতাদের প্রিয় ও পুণ্যময় নৈমিষারণ্য ক্ষেত্রে শৌনকাদি মুনি-ঋষিগণ, পরমেশ্বর ভগবানপ্রাপ্তি ও ভক্তগণের প্রীতিসাধনের নিমিত্ত একদা এক সহস্র বৎসর ব্যাপী যজ্ঞের অনুষ্ঠান করেছিলেন।

৫) একদিন প্রাতঃকালে , ওই ঋষি-মুনিগন নিত্য-নৈমিত্তিক হুতাগ্নিতে আহুতি করবার পর মহামতি সূতকে সাদরে আপ্যায়ন করে এক উচ্চাসনে বসালেন । তারপর তাঁরা বিনীত চিত্তে অত্যন্ত আদরপূর্বক, সূতের সামনে এই প্রশ্নগুলির উপস্থাপন করেছিলেন ।
Srimad Bhagavatam - First Canto - Chapter 1
শ্রীমদ্ভাগবতম - প্রথম স্কন্ধ - প্রথম অধ্যায়
৬) ওই ঋষিগণ বললেন  - হে সূত ! আপনি পূর্ণরূপেই নিষ্পাপ । আর আপনি এই ইতিহাস ( মহাভারত ) , অষ্টাদশ মহাপুরাণ ও সকল ধর্মশাস্ত্র অধ্যয়ণ করেছেন এবং এদের উপর সুচারুরূপে ব্যাখ্যা করেছেন ।

৭) হে বেদ-বেদান্তবিদ মহামতি সূত ! আপনি শ্রীভগবানের অবতার মহর্ষি বেদব্যাসের থেকে জ্ঞানপ্রাপ্ত হয়েছেন , যিনি বেদবেত্তাগণের মধ্যে শ্রেষ্ঠ , এবং ভগবানের সগুন -নির্গুণ ব্রহ্মতত্ত্বের জ্ঞানসম্পন্ন ঋষিদের মতন আপনিও সেইজ্ঞান প্রাপ্ত হয়েছেন ।

৮) আপনি অতীব সরল , নির্মল , শ্রদ্ধাশীল এবং বিনীত , তাই আপনি আপনার গুরবর্গের বিশেষ অনুগ্রহ লাভ করেছেন । কারণ গুরুদেব তাঁর স্নিগ্ধ স্বভাবসম্পন্ন স্নেহের পাত্র শিষ্যকেই নিগুঢ় থেকে নিগুঢ়তর তত্ত্বপোদেশ দান করে থাকেন । 

৯) হে আয়ুষ্মান ! এই ঘোর কলিযুগে জীবের পরম কল্যাণময় সাধনপথের ব্যাপারে আপনি আমাদের সহজবোধ্য উপায়ে উপদেশ করুন ।

১০) হে বিদ্যাভূষণ ! এই কলিযুগে মানুষ প্রায়শই স্বল্পায়ু প্রাপ্ত হয়েছে । তারা কলহপ্রিয় ও সাধন ভজনে তাদের রুচি নেই । তারা অতিমাত্রায় অলস , মন্দবুদ্ধিসম্পন্ন , ভাগ্যহীন , নানাপ্রকার রোগে জীর্ণ এবং বিভিন্ন বাধাবিঘ্নে উপদ্রুত ।

১১) বহুবিধ শাস্ত্রের বিদ্যমানতা এবং তার প্রতিটিতে বহুবিধ কর্তব্য-কর্মের নির্দেশ রয়েছে । তাছাড়া এইসব শাস্ত্রাদি অতি বিস্তারিত । যার অংশমাত্রের অধ্যয়ন , আত্মস্থকরনও দুরূহ । হে মহর্ষি ! আপনি দয়ানিধি এবং পরোপকারী , তাই জীবসমূহের উদ্দেশে , কৃপা করে আপনি এই সকল শাস্ত্রের সারমর্ম আমাদের বলুন যাতে আমাদের অন্তঃকরণ সুনির্মল এবং সুপ্রসন্ন হয়ে ওঠে ।

১২) হে মহামতি সূত ! আপনার সর্বতোরূপে মঙ্গল হোক । ভক্তবৎসল পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কেনই বা বৃশ্নিবংশী যাদবকুলাধিপতি বসুদেবের ধর্মপত্নী দেবকী মাতার গর্ভে অবতারিত হয়েছিলেন সেই সম্পর্কে  তো আপনি অবগত আছেন ।

১৩) আমরা সেই বৃত্তান্ত শ্রবণে আগ্রহী । শ্রীভগবান জীবগণের মঙ্গলসাধন এবং ভাগবৎপ্রেম বৃদ্ধি করার উদ্দেশ্যে এই ধরাতলে আবির্ভূত হন । আপনি গুরু-পরম্পরায় প্রাপ্ত সেই জ্ঞান আমাদের অনুগ্রহ করে দান করুন কারণ ইহার শ্রবণ ও কীর্তন উভয়ই কল্যাণকারী ।

১৪) প্রকৃতির গুণত্রয়ে ( সতঃ , রজ , তম ) বশীভূত হয়ে জীবকুল ভয়ঙ্কর এই জন্মমৃত্যুর চক্রে কেবলই আবর্তিত হয়ে চলেছে । এই অবস্থায় যদি কেউ শ্রীভগবানের পরম কল্যাণকারী নাম উচ্চারণও করে তাহলে সে অচিরেই এই দুর্বিসহ সংসারচক্র থেকে মুক্তি লাভ করে । কারণ স্বয়ং মহাকালও শ্রীভগবানের নামে ভীত হন ।

১৫) হে সূত গোস্বামী ! সর্বদা ভগবৎ ভক্তিতে মগ্ন , নিরাসক্ত মহর্ষি মুনিগন শ্রীভগবানের পাদপদ্ম আশ্রয় করে অবস্থান করেন , তাই কেবলমাত্র তাঁদের সৎসঙ্গে বা দর্শনেই জীবকুল পবিত্র হয় । পক্ষান্তরে মাতা গঙ্গার সেবা অর্থাৎ জলস্পর্শ স্নানাদি করার পরই তা মানুষকে পবিত্র করে ।

Srimad Bhagavatam - First Canto - Chapter 1
শ্রীমদ্ভাগবতম - প্রথম স্কন্ধ - প্রথম অধ্যায়
১৬) কালরূপী সর্পের ন্যায় এই কলিযুগে , ভক্তগণ এই পঙ্কিল ভবসাগর উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য যাঁর অসীম ও অপ্রাকৃত লীলাসমূহের চিন্তন ও কীর্তন করেন  , সেই পরমেশ্বর ভগবানের মহিমা কেই বা শ্রবণ করতে অনিচ্ছুক ?

১৭) তাঁর পরম অপ্রাকৃত কর্মসমূহ অতি মহৎ এবং উদারতায় পরিপূর্ণ  এবং তা দেবর্ষি নারদাদি মহান ঋষিগণের দ্বারা সর্বদাই সংকীর্তিত হয় । আমরা এই পরম কল্যাণকারী মহৎ লীলাশ্রবণে উৎসুক । আপনি দয়া করে আমাদের সেই লীলাকাহিনী বর্ণনা করুন ।

১৮) হে ধীমান ! পরমেশ্বর শ্রীভগবান নিজ মায়াশক্তির প্রভাবে স্বইচ্ছায় জীবগণের উদ্ধারের জন্য বিভিন্ন লীলাবিহার করেন । আপনি সেই পরম মঙ্গলকারী ভগবান শ্রীহরির বিভিন্ন অবতার এবং লীলাবিলাসের কথা আমাদের শ্রবণ করান ।

১৯) উত্তম শ্লোকে ব্যক্ত লীলাপুরুষোত্তম শ্রীভগবানের লীলা বর্ণনা আমরা যতই শ্রবণ করে তৃপ্ত হতে থাকি না কেন - এই তৃপ্তি কখনই সমাপ্ত হওয়ার নয় । কারণ যারা নিরন্তর তাঁর অপ্রাকৃত লীলালহরীর সেবন করেন তারাও শ্রীভগবানের লীলার মধ্যে নব নব রসের স্বাদ আস্বাদন করেন ।

২০) ভগবান শ্রীকৃষ্ণ মনুষ্যরূপে মর্ত্যধামে আগমন করে ভ্রাতা বলদেবের সাথে অনেক অলৌকিক লীলা করেছেন যা সাধারণ মানুষের পক্ষে কল্পনাতিত , আবার স্বইচ্ছায় নিজের স্বরূপকে লোকচক্ষুর আড়াল করে এমন লীলাবিহারও করেছেন যাতে ব্রজবাসী ও গোপীরা তাঁকে নিজেদের মতোই একজন গণ্য করে স্নেহ, বন্ধুত্ব ও প্রেমে আবদ্ধ করেছেন ।

২১) কলিযুগের আগমন সংবাদ সম্পর্কে অবগত হয়ে আমরা এই বৈষ্ণবক্ষেত্র নৈমিষারণ্যে  এক দীর্ঘকাল ব্যাপী মহাযজ্ঞের সংকল্পে উপস্থিত হয়েছি । আপনার সাক্ষাতে আমরা এখন ভগবান শ্রীহরির কথা শ্রবণের অবসরপ্রাপ্ত হয়েছি ।

২২) এই কালরূপী কলি মানুষের পবিত্রতা ও সদগুণের বিনাশক । সমুদ্র পার করার জন্য যেমন কর্ণধার প্রয়োজন , তেমনিই এই কলিরূপ দুর্লঙ্ঘ ভবসমুদ্র অতিক্রম করবার জন্য কর্ণধার সদৃশ বিধাতাই আমাদের আপনার দর্শনলাভ করিয়েছেন ।

২৩) ধর্মরক্ষক , পরমব্রহ্ম , ব্রাহ্মন হিতকারী যোগেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ সম্প্রতি নিজ নিত্যধামে অন্তর্হিত হয়ে তাঁর লীলাসমাপ্তি করার পর ধৰ্ম এখন কাকে আশ্রয় করে রয়েছেন - তা দয়া করে আমাদের বর্ণনা করুন ।

। ইতি শ্রীমদ্ভাগবতে শ্রীমহাপুরাণে পারমহংস্যাং সংহিতায়াং প্রথমস্কন্ধে নৈমিষীয়োপাখ্যানে প্রথমোহধ্যায়ঃ।

আসুন আমরা সবাই একসাথে শ্রীমদ্ভাগবতম / শ্রীমদ্ ভাগবত মহাপুরাণের স্বাধ্যায় করে আমাদের জীবন পুন্য করি | আজকের মতো এইটুকুই,আমরা শেষ করব মহামন্ত্র দিয়ে |

হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে  |

হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে  ||


যদি আপনার এই পোস্টটি পছন্দ হয়ে থাকে / ভালো লেগে থাকে নতুবা এখান থেকে কিছু নুতন জানতে পারেন তাহলে আমাদের সাবস্ক্রাইব অবশ্যই করবেন এবং আপন আত্মীয়পরিজন, বন্ধু-বান্ধবদের সাথে শেয়ার করবেন | আমার লেখা কেমন লাগলো তা অবশ্যই নিচে কমেন্ট বক্স এর মাধ্যমে কমেন্ট করে জানাবেন |

শ্রীমদ্ ভগবত গীতার উপর আমাদের টিউটোরিয়াল / শিক্ষামূলক সিরিজ পড়ার জন্য এই লিংকটি ক্লিক করে শ্রীমদ ভগবত গীতার অমৃতজ্ঞান পান করে জীবন পবিত্র ও পুন্য করুন |

শ্রীমদ্ ভগবত গীতা : https://bhagavadgitatutorial.blogspot.com

আপনারা আমার প্রণাম নেবেন | 

ইতি
দীন ভক্ত দাসানুদাস

<--পূর্ববর্তী লেখনী                                                        পরবর্তী লেখনী-->