Saturday, 28 December 2019

শ্রীমদ্ভাগবতমাহাত্ম্যম্-তৃতীয় অধ্যায় - Srimad Bhagavatam Mahatmyam Chapter 3

Bhagavatam,Srimad Bhagavatam, Bhagavata Purana, Srimad Bhagavatam in Bengali, Bhagavata Purana in Bengali, Bhagavata Mahapurana, Sanatana Dharma, Bhagavata Mahapurana, Srimad Bhagavatam Bangla, Gita, শ্রীমদ্ ভাগবতম, শ্রীমদ্ ভাগবত মহাপুরান, শ্রীমদ্ ভাগবত পুরান, Srimad Bhagavatam online, শ্রীমদ ভাগবত, ভক্তির কষ্টের উপশম , শ্রীমদ্ভাগবতমাহাত্ম্যম্-তৃতীয় অধ্যায় , Srimad Bhagavatam Mahatmyam Chapter 3

<--পূর্ববর্তী লেখনী                                                        পরবর্তী লেখনী-->

ভগবান শ্রীকৃষ্ণ
|| ওম নমঃ ভগবতে বাসুদেবায় ||


শ্রীমদ্ভাগবতমাহাত্ম্যম্-তৃতীয় অধ্যায়


ভক্তির কষ্টের উপশম



প্রিয় ভক্তবৃন্দ এবং সুধীগণ,

পূর্ববর্তী লেখনীতে আমরা শ্রীমদ্ভাগবতমাহাত্ম্যের ভক্তির দুঃখ দূর করার জন্য দেবর্ষি নারদের উদ্যোগ সম্পর্কে জেনেছিলাম । আজ আমরা শ্রীমদ্ভাগবতমাহাত্ম্যের  তৃতীয় অধ্যায়, ভক্তির কষ্টের উপশম সম্পর্কে জানবো । এটি শুরু হয় নিচে বর্ণিত দেবর্ষি নারদের সাথে সনকাদি  মুনিগণের কথোপকথনের মাধ্যমে ।

Srimad Bhagavatam Mahatmyam Chapter 3

শ্রীমদ্ভাগবতমাহাত্ম্যম্-তৃতীয় অধ্যায়

১) দেবর্ষি নারদ বললেন - ভক্তি , জ্ঞান এবং বৈরাগ্যের প্রতিষ্ঠার জন্য  এখন আমি শ্রী শুকদেব গোস্বামী বর্ণিত শ্রীমদ্ভাগবত শাস্ত্র কথামৃত দ্বারা পরম যত্ন সহকারে জ্ঞানযজ্ঞের উজ্বল কর্মানুষ্ঠান প্রারম্ভ করব ।   

২) দয়া করে আপনারা আমাকে এই যজ্ঞ করার উপযুক্ত স্থানের দিশানির্দেশ করুন । আপনারা বেদজ্ঞ এবং বেদের পারঙ্গত , সুতরাং এই শুকশাস্ত্রের মহিমা সম্পর্কে আমাকে অবগত করান ।

৩) শ্রীমদ্ভাগবতকথা কত দিনের মধ্যে শ্রবণ করতে ও করাতে হয় , এবং তার বিধিনিয়মাদিই বা কি, দয়া করে সেই সম্পর্কেও আমাকে অবগত করান ।

৪) সনকাদি মুনিগন বললেন - হে দেবর্ষি নারদ ! আপনি অতি বিনম্র এবং বিবেকী, সেই জন্য এই সবকিছুই আপনাকে বলছি, মন দিয়ে শুনুন । গঙ্গাদ্বার বা হরিদ্বারের নিকটে আনন্দঘাট নামে একটি  ঘাট আছে ।

৫) অনেক মুনি ঋষিরা সেখানে বসবাস করেন , দেবতা এবং সিদ্ধগণও সেখানে যাতায়াত করেন । নানারকম বৃক্ষ ও তরুলতায় স্থানটি বিশেষ নিবিড় এবং সেখানকার স্থলভূমি নুতন , কোমল ও মসৃন বালুর দ্বারা আচ্ছাদিত ।

৬) সেই ঘাটটি নিৰ্জন স্থানে অবস্থিত, সর্বদাই তা সুবর্ণকমলের আঘ্রাণে সুবাসিত এবং অতীব রমণীয় । সেখানে বসবাসকারী সিংহ হস্তি প্রভৃতি পরস্পরবিরোধী প্রাণীদের মধ্যেও কোনোপ্রকার বৈরীভাব পরিলক্ষিত হয় না ।

৭) বিশেষ কোনোরূপ প্রযত্ন ভিন্নই সেখানে গিয়ে আপনি এই শুকশাস্ত্রের জ্ঞানযজ্ঞ করুন ,সেই জায়গার স্থানমাহাত্মের ফলে ভাগবতকথায় অপূর্ব রসের সঞ্চার ঘটবে ।

৮) পরমা ভক্তিদেবীও তার চোখের সামনে জরাজীর্ণ ও নির্বল অবস্থায় শায়িত পুত্রদ্বয় জ্ঞান আর বৈরাগ্যকে নিয়ে সেখানে উপস্থিত হবেন ।

৯) কারণ শ্রীমদ্ভাগবতকথা যেখানেই হোক না কেন , ভক্তিদেবী আপনা আপনিই সেখানে উপস্থিত হন। আর এই  শ্রীমদ্ভাগবতের অমৃতকথা শ্রবণমাত্রেই জ্ঞান , বৈরাগ্য সমেত তিনজন তারুণ্যবস্থা প্রাপ্ত হবেন ।

Srimad Bhagavatam Mahatmyam Chapter 3

শ্রীমদ্ভাগবতমাহাত্ম্যম্-তৃতীয় অধ্যায়

১০) সুত বললেন - এই কথা বলে সনকাদিমুনিগনও সেখান থেকে দেবর্ষি নারদের সাথে সত্ত্বর গঙ্গারতটে সেই ঘাটে এসে উপস্থিত হলেন শ্রীমদ্ভাগবতকথামৃত পানের অভিলাষে ।

১১) যতক্ষণ তারা গঙ্গাতটে সেই ঘাটে এসে পৌঁছালেন , তারমধ্যেই ভূলোক , দেবলোক , ব্রম্ভলোক সর্বত্র এই সংবাদ সম্প্রচারিত হয়ে গিয়েছে ।

১২) শ্রীমদ্ভাগবতকথামৃত পান করবার জন্যে ভাগবৎবৎসল ও ভাগবতকথারসিক বিষ্ণুভক্তেরা যে যেখানে ছিলেন সত্ত্বর সেখানে জমায়েত হতে লাগলেন ।

১৩-১৪) ভৃগু, বশিষ্ঠ, চ্যবনগৌতম, মেধাতিথি, দেবল, দেবরাত, পরশুরাম, বিশ্বামিত্র, শাকল , মার্কন্ডেয়, দত্তাত্রেয়, পিপ্পলাদ, যোগেশ্বর ব্যাস এবং পরাশর, ছায়াশুক, জাজলি এবং জহ্নু প্রভৃতি সকল প্রধান প্রধান মুনিগণ আপন আপন পুত্র, শিষ্য এবং সহধর্মিনীদের সাথে করে প্রসন্ন চিত্তে সেখানে এসে উপস্থিত হলেন ।

১৫-১৬-১৭) এছাড়া বেদ, বেদান্ত, মন্ত্র, তন্ত্র, সপ্তদশ পুরাণ, ছয় শাস্ত্র মূর্তিধারণ করে সেখানে উপস্থিত হলেন । গঙ্গা আদি নদী, বিভিন্ন পুস্করাদি সরোবর,কুরুক্ষেত্র আদি বিভিন্ন ক্ষেত্রসমূহ, দিক সমূহ, দন্ডকাদি অরণ্য, হিমালয়াদি পর্বত, দেবতাগণ , গন্ধর্বগণ ও দানবাদি সকলেই সেই ভাগবত কথা শ্রবণের জন্যে এলেন । যারা যারা দর্পবশত নিজেদের শ্রেষ্ঠ মনে করে আসতে অনীহা প্রকাশ করলেন , মহর্ষি ভৃগু তাদের বুঝিয়ে সেখানে নিয়ে এলেন ।

১৮) শ্রীমদ ভাগবতকথা শোনাবার জন্যে দীক্ষিত হয়ে শ্রীকৃষ্ণপরায়ণ সনকাদি মুনিগন দেবর্ষি নারদ প্রদত্ত শ্রেষ্ঠ আসনে উপবিষ্ট হলেন । সেখানে উপস্থিত সমস্ত শ্রোতাগণ তাদের বন্দনা করলেন ।

Srimad Bhagavatam Mahatmyam Chapter 3

শ্রীমদ্ভাগবতমাহাত্ম্যম্-তৃতীয় অধ্যায়

১৯) শ্রোতাগণের মধ্যে সম্মুখে উপবিষ্ট হলেন বৈষ্ণব, সংসারবিরক্ত বা বৈরাগীগণ , সন্ন্যাসী এবং ব্রম্ভচারীগণ । দেবর্ষি নারদ এদেরও সামনে বসলেন ।

২০) শ্রীমদভাগবতকথা শ্রবনে একদিকে মুনিঋষিগণ , আর একদিকে দেবতাগণ , অপরদিকে বেদ , উপনিষদ আদি সমস্ত শাস্ত্র , অন্যদিকে তীর্থ,সরোবর,পুষ্করাদি আর একদিকে সমস্ত স্ত্রীলোকগণ উপবেশন করলেন ।

২১) চতুর্দিক থেকে কেবলি জয়জয়কার , নমস্কার আর শঙ্খধ্বনি হতে লাগল এবং আবীর, খৈ ও পুষ্পবৃষ্টি হতে লাগল ।

২২)  কোনো কোনো দেবনায়কগণ বিমানে উপবিষ্ট হয়ে শ্রীমদভাগবতকথা শ্রবনে উপস্থিত সকলের উপর কল্পবৃক্ষের পুষ্পবর্ষণ করতে লাগলেন ।

২৩) সুত বললেন - এইভাবে পূজন তথা উচিৎ সম্মান প্রদর্শনের পরিসমাপ্তি হলে সেখানে উপস্থিত সকলে যখন কথা শ্রবনে একাগ্রচিত্ত হলেন তখন সনকাদি মুনিগন মহাত্মা দেবর্ষি নারদকে শ্রীমদ্ভাগবতের মাহাত্ম্য বিশদভাবে বর্ণনা আরম্ভ করলেন ।

২৪) সনকাদি বালঋষিগণ বললেন - আমরা আপনাদের এখন শ্রীমদ্ভাগবত শাস্ত্রের মাহাত্ম্য শোনাবো । এই শ্রীমদ্ভাগবতমাহাত্ম্য শ্রবণমাত্রেই যেন মুক্তিদেবী আপনাদের কুক্ষিগতা হন ।

২৫) শ্রীমদ্ভাগবত কথার শ্রবণ, চিন্তন, মনন, সেবন, আস্বাদন সর্বদাই করা উচিত । এই অমৃতকথা শ্রবনমাত্রই পরমেশ্বর ভগবান শ্রীহরি স্বয়ং হৃদয়ে এসে উপবিষ্ট হন ।

২৬) এই গ্রন্থে আঠারো সহস্র (১৮০০০) শ্লোক বর্তমান , যা বারোটি স্কন্দে বর্ণিত । ইহা মহারাজ পরীক্ষিৎ এবং শ্রীশুকদেবের সংবাদে (কথোপকথনে) সমৃদ্ধ । আপনারা এই ভাগবতশাস্ত্র মনোযোগের সহিত শ্রবণ করুন ।

২৭) কেবল এক মুহূর্তের জন্যও এই শুকশাস্ত্রের কথা যতদিন না পর্যন্ত শ্রবণ হয় , মানুষ ততদিন অজ্ঞানবশত এই সংসারচক্রে কেবল পরিভ্রমণ করতেই থাকে ।

২৮) অনেক শাস্ত্র বা পুরাণ শ্রবনের পর তা ঠিক ভাবে আত্মস্থ না হলে ভ্রম উৎপাদনের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পেয়ে থেকে । তাই শ্রীমদ্ভাগবতশাস্ত্র জ্ঞানী,অজ্ঞানী,ধনী,দরিদ্র সকলের মুক্তিহেতু সকলকেই উচ্চস্বরে আহ্বান করে ।

Srimad Bhagavatam Mahatmyam Chapter 3

শ্রীমদ্ভাগবতমাহাত্ম্যম্-তৃতীয় অধ্যায়

২৯) নিত্য যে গৃহে শ্রীমদভাগবত পাঠ হয় সেই গৃহ তীর্থরূপী হয় এবং সেখানে বসবাসকারী সকলের পাপের বিনাশ হয় ।

৩০) সহস্র অশ্বমেধ যজ্ঞ কিংবা শত বাজপেয় যজ্ঞও এই শুকশাস্ত্রকথার ষোলোভাগের একভাগেরও সমকক্ষ নয় ।

৩১) হে তপোধনগণ ! যতক্ষন না এই শ্রীমদ্ভাগবতকথা সম্যকরূপে শ্রবণ করা হয় ততক্ষন মানবশরীরে পাপের অবস্থিতি বিদ্যমান ।

৩২) ফললাভের দৃষ্টি থেকেও এই শুকশাস্ত্র শ্রবণের ফলের সমান গঙ্গা,গয়া ,কাশী,পুষ্কর বা প্রয়াগাদি কোনো তীর্থপরিভ্রমণও হতে পারে না ।

৩৩) যদি আপনাদের পরম গতিপ্রাপ্তির অভিলাষ থাকে তাহলে আপনারা স্বমুখে উচ্চারণের মাধ্যমে নিত্য শ্রীমদ্ভাগবতের অর্ধ বা এক চতুর্থাংশ নিয়মিত পাঠ করুন ।

৩৪-৩৬) ওঁকার, বেদ, গায়ত্রী, পুরুষসূক্ত, শ্রীমদ্ভাগবত, দ্বাদশাক্ষর মন্ত্র ( ওঁ নমো ভগবতে বাসুদেবায় ), দ্বাদশাত্মা সূর্যদেব, প্রয়াগ তীর্থ , সংবৎসরস্বরূপ কাল, ব্রাহ্মণ, অগ্নিহোত্র, সুরভি, তিথি, তুলসী, বসন্ত ঋতু এবং ভগবান পুরুষোত্তম - পন্ডিতগণ এদের মধ্যে কোনপ্রকার পৃথকভাব করেন না ।

৩৭) যে মানব অর্থসহিত এই শ্রীমদ্ভাগবতশাস্ত্র অহর্নিশ পাঠ করে - নিঃসন্দেহে তার কোটি জন্মের পাপ নিমেষে ভস্মীভূত হয়ে যায় ।

৩৮) যে ব্যক্তি শ্রীমদ্ভাগবতের শ্লোকের অর্ধাংশ বা এক চতুর্থাংও নিত্য পাঠ করেন, তিনি রাজসূয় এবং অশ্বমেধ যজ্ঞের ফলপ্রাপ্ত হন ।

Srimad Bhagavatam Mahatmyam Chapter 3

শ্রীমদ্ভাগবতমাহাত্ম্যম্-তৃতীয় অধ্যায়

৩৯) নিত্য ভাগবত পাঠ, শ্রীহরির চিন্তা বা ধ্যান, তুলসীবৃক্ষে জল সিঞ্চন এবং গো-সেবা - এই চারটি কর্ম সমান ফলপ্রদায়ক।

৪০) জীবনের অন্তিম মুহূর্তে যে এই শুকশাস্ত্র শ্রীমদ্ভাগবতের শ্লোক শ্রবণ করে , তার উপর গোবিন্দ প্রসন্ন হয়ে প্রীতিপূর্বক বৈকুন্ঠ প্রদান করেন ।

৪১) যিনি স্বর্ণসংযুক্ত সিংহাসনে রেখে এই শ্রীমদ্ভাগবতগ্রন্থ কোনো বৈষ্ণবকে দান করেন তিনি নিঃসন্দেহে ভগবানের ধ্রুবসাযুজ্য লাভ করেন ।

৪২) যে শঠ ( দুষ্ট ব্যক্তি ) নিজের সারাজীবনে একাগ্রচিত্ত না হয়ে এই শ্রীমদ্ভাগবতরুপী অমৃতের সামান্যতম রসাস্বাদনও না করেছে , সে তার জন্ম কেবল চণ্ডাল আর গাধার মতোই ব্যর্থ ভাবে নষ্ট করেছে । সেই অধমের জন্ম কেবল তার মাতা কে প্রসবপীড়া প্রদান করবার জন্যই হয়েছে ।

৪৩) যে পাপাত্মা এই শুকশাস্ত্রের সামান্যকিছু অংশও শ্রবণ করেনি সে জীবিত থেকে মৃতের সমান । "বসুন্ধরা বা পৃথিবীর ভারস্বরূপ সে পশুতুল্য মানুষ কে ধিক্"- স্বর্গলোকে দেবরাজ ইন্দ্রাদি দেবতাগণ এই কথা আলোচনা করে থাকেন ।

৪৪) এই সংসারে শ্রীমদ্ভাগবতকথা শ্রবণের সুযোগপ্রাপ্তি অবশ্যই কঠিন । কোটি কোটি জন্মের পুণ্যের সঞ্চয়ের ফলে এই সুযোগ উপস্থিত হয় ।

৪৫) হে দেবর্ষি নারদ ! আপনি বুদ্ধিমান, যোগীরাজ এবং বিদ্যানিধি , আপনি মন দিয়ে এই ভাগবত কথা শ্রবণ করুন । এই কথা শ্রবণের জন্য বিশেষ কোনো দিনক্ষণের প্রয়োজন নেই , এই কথাশ্রবণ সর্বদাই মঙ্গলকারী ।

৪৬) সর্বদা সত্যভাষণ এবং ব্রহ্মচর্য ধারণপূর্বক এই কথাশ্রবণ শ্রেষ্ট বলে মনে করা হয় । কিন্তু এই ঘোর কলিযুগে এটা খুবই কষ্টসাধ্য । তাই শ্রীশুকদেব এর যে বিশেষ বিধি বর্ণনা করে গিয়েছেন, সেটি আমাদের সকলের জানা দরকার ।

৪৭) এই কালরূপী ভীষণ কলিযুগে নিজেকে কঠোর নিয়মে বেঁধে রেখে, অনেকদিন চিত্তসংযম করে কোনো শুভকর্মের জন্য দীক্ষিত হয়ে থাকা খুবই কঠিন । সেই জন্য শ্রীমদ্ভাগবতের সপ্তাহ শ্রবণের বিধি রয়েছে ।

৪৮) শ্রদ্ধাভরে নিত্য শ্রীমদ্ভভাগবত শ্রবণ অথবা মাঘ মাসে শ্রীমদ্ভভাগবত শ্রবনে যে ফল লাভ হয় , সপ্তাহ শ্রবণের ফলে সেই ফলেরই প্রাপ্তি হয় , মহর্ষি শ্রীশুকদেব এই সিদ্ধান্ত দিয়েছেন ।

Srimad Bhagavatam Mahatmyam Chapter 3

শ্রীমদ্ভাগবতমাহাত্ম্যম্-তৃতীয় অধ্যায়

৪৯) কলিযুগে মানুষের মনের অসংযমতা, নিদারুন রোগের প্রকোপ, পরমায়ুর স্বল্পতা এবং এই যুগের অনেক দোষের সম্ভাবনার ফলেই এই সপ্তাহ শ্রবণের বিধান করা হয়েছে ।

৫০) যজ্ঞ-তপস্যা, যোগসাধন এবং সমাধির দ্বারাও যে ফল লাভ করা সম্ভবপর হয় না , সপ্তাহব্যাপী শ্রীমদ্ভাগবত শ্রবণের ফলে তা সহজেই প্রাপ্ত করা যায় ।

৫১-৫২) এই সপ্তাহব্যাপী শ্রীমদ্ভাগবতকথা শ্রবণ যজ্ঞ, তপস্যা , ব্রতের থেকেও অধিক ফলদায়ী । তীর্থাদি পরিভ্রমনের থেকে ইহা সর্বদাই অধিক , যোগসাধনের থেকেও অধিক , এমনকি ধ্যান ও জ্ঞানের থেকেও অধিক ফলদায়ী । এর মাহাত্ম্যের গর্জনা তো আরো আরো বিশালরূপে করা যায় , ইহা সমস্তসাধনার থেকেও অধিক ফলদায়ক ।

৫৩) শৌনক প্রশ্ন করলেন - হে সুত ! এতো আপনি এক বড় বিচিত্র আর আশ্চর্য কথা বললেন । অবশ্যই এই শ্রীমদ্ভাগবতমহাপুরাণ অনাদি ও পরমপুরুষ শ্রীনারায়ণকে নিরুপন করে ; কিন্তু মোক্ষলাভের জন্য সম্পাদিত জ্ঞান তথা বিভিন্ন সাধনকে নগন্য প্রমান করে কিভাবে এই শ্রীমদ্ভাগবতকথা সব থেকে বড় হল ?

৫৪) সুত বললেন - হে শৌনক ! পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যখন এই মর্ত্যধাম ছেড়ে নিজের নিত্যধামে যাওয়ার সমীপে উপস্থিত হয়েছেন তখন তার শ্রীমুখ থেকে একাদশ স্কন্দের জ্ঞানোপদেশ শোনার পর উদ্ধবও এই প্রশ্নই তাঁকে করেছিলেন ।

৫৫) উদ্ধব বললেন - হে প্রাণগোবিন্দ ! আপনি আপনার ভক্তগণের কার্য সমাপন করে স্বয়ং নিজ পরমধামের উদ্দেশ্যে যাত্রা করছেন , কিন্তু আমার মনে এক ভীষণ এবং মহতী চিন্তা উদিত হচ্ছে , আপনি দয়া করে সেই সংশয়ের নিবৃত্তির মাধ্যমে আমাকে শান্ত করুন ।

৫৬-৫৭) অতি শীঘ্রই ঘোর কলিকালের প্রাদুর্ভাব ঘটবে , যার ফলে এই সংসারে অনেক খল এবং দুষ্ট লোকের সমাগম হবে । এইসব দুষ্ট ব্যক্তিদের সংস্পর্শে এসে অনেক সৎব্যক্তিও উগ্র স্বভাবের হয়ে উঠবে । এই বিষম পরিস্থিতে এইসবের ভারে নিপীড়িতা গো-রূপিণী কারই কে শরণাগতা হবে ! হে কমলনয়ন ! এই অবস্থায় আমি তো আপনি ভিন্ন আর দ্বিতীয় কাউকে এর রক্ষাকর্তা হিসেবে দেখতে পাচ্ছি না ।

৫৮) অতঃপর হে ভক্তবৎসল ! আপনি সৎ ও সাধুগণের প্রতি কৃপা করে এই লোক থেকে যাবেন না । হে
ভগবান ! আপনি প্রকৃতরূপে চিন্ময় এবং নিরাকার হয়েও শুধুমাত্র ভক্তদের জন্যেই তো আপনার এই সগুন সাকার রূপ প্রকট করেছেন ।

Srimad Bhagavatam Mahatmyam Chapter 3

শ্রীমদ্ভাগবতমাহাত্ম্যম্-তৃতীয় অধ্যায়

৫৯) সুতরাং আপনার বিয়োগে আপনার এই ভক্তগণ কিভাবে এই পৃথিবীতে বসবাস করবে ? নির্গুণ উপাসনা তো অতি কষ্টকর ।তাই আপনি দয়াবশত কিঞ্চিৎ অন্যকিছুর বিচার করুন ।

৬০) প্রভাসক্ষেত্রে উদ্ধবের অনুরোধ শুনে পরমেশ্বর ভগবান এই বিচার করতে লাগলেন যে ভক্তদের অবলম্বন তথা আশ্রয়ের জন্য আমার কি করণীয় ।

৬১) তখন ভগবান শ্রীহরি তার সমস্তকিছু এই শ্রীমদ্ভাগবতে মিলিয়ে দিলেন ও  তিনি এই ভাগবতসমুদ্রে অন্তৰ্নিহিত হলেন ।

৬২) সেই হেতু এই শ্রীমদ্ভাগবতশাস্ত্র সাক্ষাৎ শ্রীভগবানের বাঙ্ময়ী মূর্তি । এর পূজা, পাঠ , শ্রবণ , চিন্তন , মনন অথবা শুধুমাত্র দর্শনমাত্রই মানুষের সমস্ত পাপের নাশ হয় ।

৬৩) এইজন্য এই শ্রীমদ্ভাগবতশাস্ত্রের সপ্তাহশ্রবণ সর্বশ্রেষ্ট রূপে গণ্য হয় । এবং এই ভীষণ কলিযুগে অন্যান্য সমস্ত সাধনের থেকে এই সনাতন ভাগবত ধর্ম ও ধর্মাচারকেই শ্রেষ্ট বলা হয়েছে ।

৬৪) ঘোর কলিকালে এই শ্রীমদ্ভাগবতশাস্ত্রই দুঃখ , দুর্দশা , দারিদ্র আর পাপমোচন করে এবং কাম, ক্রোধ, লোভ , মোহ , মদ , এবং মাৎসর্য এই ষড়রিপুর উপর আধিপত্য প্রতিষ্ঠা স্থাপন করে ।

৬৫) অন্যথা শ্রীভগবানের এই মায়া থেকে পরিত্রান পাওয়া তো স্বয়ং দেবতাদেরও পক্ষে দুরুহ , সেখানে মানুষের পক্ষে তো এ অকল্পনীয় বলে অনুমান হয় ! সুতরাং সপ্তাহশ্রবণের এই বিধান মায়ামোহ থেকে মুক্তির জন্যও করা হয়েছে ।

৬৬) সুত বললেন - হে শৌনক ! সনকাদি বালমুনিগন যখন শ্রীমদ্ভাগবত সপ্তাহশ্রবণের মাহাত্ম্য বর্ণনা করছিলেন , তখন সভায় এক বড় আশ্চর্য ব্যাপার ঘটেছিল । সেই প্রসঙ্গ আমি তোমাকে বর্ণনা করছি , তা শ্রবণ কর ।

Srimad Bhagavatam Mahatmyam Chapter 3

শ্রীমদ্ভাগবতমাহাত্ম্যম্-তৃতীয় অধ্যায়

৬৭) বিশুদ্ধ প্রেমরূপিণী ভক্তিদেবী অকস্মাৎই  তরুণাবস্থাপ্রাপ্ত তার দুই পুত্র জ্ঞান আর বৈরাগ্যকে সাথে করে বারংবার ' শ্রীকৃষ্ণ ! গোবিন্দ ! হরে ! মুরারে ! হে নাথ ! নারায়ণ ! বাসুদেব ! ' প্রভৃতি ভগবানের নাম উচ্চারণ করতে করতে সেখানে উপস্থিত হলেন ।

৬৮) সেখানে উপস্থিত সকল সভাসদেরা দেখলেন যে পরমাসুন্দরী শ্রীমতি ভক্তিদেবী শ্রীমদ্ভাগবতের অর্থরূপ ভূষণ ধারণ করে সেখানে উপস্থিত হয়েছেন । তখন সবাই এই বিস্ময় প্রকাশ করে আলোচনা করতে লাগলেন যে প্রেমরূপিণী ভক্তিদেবী কিভাবে এখানে উপস্থিত হলেন ।

৬৯) তখন সনকাদি বালঋষিগণ বললেন - ' পরমাসুন্দরী ভক্তিদেবী এইমাত্র শ্রীমদ্ভাগবতকথামৃতের অর্থ থেকে প্রকাশিত হয়েছেন ' । তাদের এই কথা শুনে ভক্তিদেবী তার পুত্রদ্বয়ের সাথে অত্যন্ত বিনম্রভাবে সনৎকুমারদের এই কথা বললেন ।

৭০) ভক্তিদেবী বললেন - এই ঘোর কলিযুগে আমি প্রায় নিঃশেষ হয়ে গিয়েছিলাম , এখন আপনাদের শ্রীমদ্ভাগবতকথামৃতের মধুর সিঞ্চন আমাকে আবার পুষ্ট করেছে । এখন আপনারা দয়া করে বলুন আমি কোথায় থাকব ?

৭১) এই কথা শুনে সনকাদি বালমুনিগন বললেন - ' হে ভক্তিদেবী ! তুমি ভক্তদের কাছে স্বয়ং শ্রীভগবানের স্বরূপ প্রদানকারিনী , অনন্য প্রেম-প্রদায়িনী ও ভবরোগ নির্মুলকারিনী ; সুতরাং ধৈর্য ধারণপূর্বক আপনি নিত্যনিরন্তর বিষ্ণুভক্তদের হৃদয়ে বাস করুন ।

৭২) এই কলিযুগের দোষসকল সর্বত্র নিজপ্রভাব বিস্তার করলেও আপনার ওপর দৃষ্টি নিক্ষেপ পর্যন্ত করতে সক্ষম হবে না । ' এই ভাবে তাঁদের অনুমতি মাত্রই প্রেমরূপিণী ভক্তিদেবী অবিলম্বেই ভগবৎ ভক্তগণের হৃদয়ে স্থানগ্রহন করলেন ।

৭৩) যাঁর হৃদয়ে কেবলমাত্র ভগবান শ্রীহরির প্রতি অনন্য ভক্তি বিদ্যমান , এই ব্যক্তি এই ত্রিলোকের মধ্যে অত্যন্ত নির্ধন হলেও অশেষ ধন্য , কারণ পরমা ভক্তিসূত্রে গাঁথা পরে সাক্ষাৎ শ্রীভগবানও নিজের পরমধাম ত্যাগ করে তার হৃদয়ে অবস্থান করেন ।

৭৪) এই মর্ত্যধামে শ্রীমদ্ভাগবতশাস্ত্র সাক্ষাৎ পরব্রহ্মের প্রতিমূর্তি , এর মাহাত্ম্য কতটুকুই বা বর্ণনা করতে সক্ষম ! এই  শ্রীমদ্ভাগবতশাস্ত্রের পাঠ শ্রবণে পাঠক এবং শ্রোতাগণ উভয়ই শ্রীকৃষ্ণ সাযুজ্যপ্রাপ্ত হন ।



। ইতি শ্রীপদ্মপুরাণে উত্তরখণ্ডে শ্রীমদ্ভাগবতমাহাত্ম্যে ভক্তিকষ্টনিবর্তনং নাম তৃতীয়োহধ্যায়ঃ।

আসুন আমরা সবাই একসাথে শ্রীমদ্ভাগবতম / শ্রীমদ্ ভাগবত মহাপুরাণের স্বাধ্যায় করে আমাদের জীবন পুন্য করি | আজকের মতো এইটুকুই,আমরা শেষ করব মহামন্ত্র দিয়ে |

হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে  |

হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে  ||


যদি আপনার এই পোস্টটি পছন্দ হয়ে থাকে / ভালো লেগে থাকে নতুবা এখান থেকে কিছু নুতন জানতে পারেন তাহলে আমাদের সাবস্ক্রাইব অবশ্যই করবেন এবং আপন আত্মীয়পরিজন, বন্ধু-বান্ধবদের সাথে শেয়ার করবেন | আমার লেখা কেমন লাগলো তা অবশ্যই নিচে কমেন্ট বক্স এর মাধ্যমে কমেন্ট করে জানাবেন |

শ্রীমদ্ ভগবত গীতার উপর আমাদের টিউটোরিয়াল / শিক্ষামূলক সিরিজ পড়ার জন্য এই লিংকটি ক্লিক করে শ্রীমদ ভগবত গীতার অমৃতজ্ঞান পান করে জীবন পবিত্র ও পুন্য করুন |

শ্রীমদ্ ভগবত গীতা : https://bhagavadgitatutorial.blogspot.com

আপনারা আমার প্রণাম নেবেন | 

ইতি
দীন ভক্ত দাসানুদাস

<--পূর্ববর্তী লেখনী                                                        পরবর্তী লেখনী-->

Sunday, 22 December 2019

শ্রীমদ্ভাগবতমাহাত্ম্যম্-দ্বিতীয় অধ্যায় - Srimad Bhagavatam Mahatmyam Chapter 2

Bhagavatam,Srimad Bhagavatam, Bhagavata Purana, Srimad Bhagavatam in Bengali, Bhagavata Purana in Bengali, Bhagavata Mahapurana, Sanatana Dharma, Bhagavata Mahapurana, Srimad Bhagavatam Bangla, Gita, শ্রীমদ্ ভাগবতম, শ্রীমদ্ ভাগবত মহাপুরান, শ্রীমদ্ ভাগবত পুরান, Srimad Bhagavatam online, শ্রীমদ ভাগবত, শ্রীমদ্ভাগবতমাহাত্ম্যম্-দ্বিতীয় অধ্যায় ,ভক্তির দুঃখ দূর করার জন্য দেবর্ষি নারদের উদ্যোগ, Srimad Bhagavatam Mahatmyam Chapter 2


<--পূর্ববর্তী লেখনী                                                        পরবর্তী লেখনী-->

ভগবান শ্রীকৃষ্ণ
|| ওম নমঃ ভগবতে বাসুদেবায় ||

শ্রীমদ্ভাগবতমাহাত্ম্যম্-দ্বিতীয় অধ্যায়


ভক্তির দুঃখ দূর করার জন্য দেবর্ষি নারদের উদ্যোগ 



প্রিয় ভক্তবৃন্দ এবং সুধীগণ,

পূর্ববর্তী লেখনীতে আমরা শ্রীমদ্ভাগবতমাহাত্ম্যের প্রথম অধ্যায়-দেবর্ষি নারদের ভক্তির সঙ্গে সাক্ষাৎকার সম্পর্কে জেনেছিলাম । আজ আমরা শ্রীমদ্ভাগবতমাহাত্ম্যের দ্বিতীয় অধ্যায়,  ভক্তিদেবীর দুঃখ দূর করার জন্য দেবর্ষি নারদের উদ্যোগ সম্পর্কে জানবো । এটি শুরু হয় নিচে বর্ণিত দেবর্ষি নারদের সাথে ভক্তিদেবীর কথোপকথনের মাধ্যমে ।

Srimad Bhagavatam Mahatmyam Chapter 2
শ্রীমদ্ভাগবতমাহাত্ম্যম্-দ্বিতীয় অধ্যায়

১) নারদ বললেন - হে সাধ্বী !  তুমি কেনই বা বৃথা দুঃখ করছ ? আর বৃথা এতো চিন্তিতই বা কেন হচ্ছো ? সচ্চিদানন্দস্বরূপ পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণচন্দ্রের পাবন চরণকমলের ধ্যান করো , তার কৃপামাত্রই তোমার সকল দুঃখের পরিসমাপ্তি হবে ।

২)  যিনি দুরাচারী কৌরবগণের অত্যাচার থেকে দ্রৌপদীকে রক্ষা করেছিলেন, যিনি সাহচর্য দিয়ে গোপাঙ্গনাদের আশ্রয়প্রদান করেছিলেন, সেই করুনাময় ভগবান শ্রীকৃষ্ণচন্দ্র তো অন্য কোথাও চলে যাননি !

৩) আর তুমি তো স্বয়ং ভক্তিদেবী এবং সর্বদাই ভগবানের প্রানধিকা , তোমার আহ্বানমাত্রই তিনি নীচ থেকে নীচতর ঘরেও ছুটে আসেন ।

৪)  পূর্বের তিন যুগ সত্য, ত্রেতা, আর দ্বাপরে জ্ঞান আর বৈরাগ্য ছিল মুক্তির সাধন, কিন্তু এই কালরূপী কলিযুগে তো কেবল ভক্তিই ব্রহ্মসাযুজ্য বা মোক্ষ প্রদানকারী ।

৫) এই অভিলাষেই সচ্চিদানন্দ চিন্ময়মূর্তি পরমানন্দরূপ জ্ঞানস্বরূপ ভগবান শ্রী হরি তাঁর নিজ সৎস্বরূপে তোমাকে সৃষ্ট করেছেন । তুমি তো সাক্ষাৎ ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পরমাসুন্দরী প্রিয়া ।

৬) একবার যখন তুমি করজোড়ে ভগবানকে প্রশ্ন করেছিলে যে  " আমি কি করবো ?" তখন তোমাকে ভগবান এই নির্দেশই দিয়েছিলেন যে " আমার ভক্তদের পোষণ করো " ।

৭)  ভগবানের সেই আদেশ তুমি স্বীকার করেছিলে , তোমার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে ভগবান শ্রীহরি তোমাকে সেবা করবার জন্য মুক্তিকে তোমার দাসীরূপে  এবং জ্ঞান ও বৈরাগ্যকে তোমার পুত্র রূপে প্রদান করেন ।

৮) বৈকুন্ঠধামে তুমি তোমার সাক্ষাৎ স্বরূপে ভক্তদের পোষণ করো, এই মর্তলোকে তুমি ভক্তদের পোষণ হেতু কেবলমাত্র ছায়ারূপ ধারণ করে রয়েছো ।

৯) সেই থেকে তুমি জ্ঞান, বৈরাগ্য আর মুক্তিকে সাথে নিয়ে পৃথিবীতে এসেছো , এবং সত্য থেকে দ্বাপর পর্যন্ত তুমি খুবই আনন্দে ছিলে ।

১০) এই ঘোর  কলিযুগে তোমার দাসী মুক্তি ভণ্ডামিরূপ রোগে আক্রান্ত হয়ে শীর্ণ হতে লাগলো , তাই তোমারই আদেশে সে অতি শীঘ্রই বৈকুন্ঠলোকে চলে গিয়েছে ।

Srimad Bhagavatam Mahatmyam Chapter 2
শ্রীমদ্ভাগবতমাহাত্ম্যম্-দ্বিতীয় অধ্যায়

১১) এই লোকেও কেবলমাত্র তোমার স্মরণমাত্রেই সে উপস্থিত হয় এবং আবার বৈকুন্ঠধামে চলে যায় । কিন্তু জ্ঞান আর বৈরাগ্যকে তুমি তোমার পুত্রবোধের কারণে নিজের কাছেই রেখেছো ।

১২) তবে এই দুঃসহ কলিযুগে এদের উপেক্ষা হওয়ার কারণবশত তোমার এই দুটি ছেলে উৎসাহহীন এবং বৃদ্ধ হয়ে পড়েছে , কিন্তু তুমি চিন্তা কোরো না , আমি এদের নবজীবন লাভের উপায় চিন্তা করে দেখছি ।

১৩) হে সুমুখী ! কলির মতন কোনো যুগ নেই , এই যুগে আমি প্রতিটি ঘরে ঘরে প্রতিটি মানুষের মনে তোমাকে প্রতিষ্টা করে দেব ।

১৪) দেখো, অন্য সব ধর্মের নামে প্রচলিত অধর্মকে ( কারণ ধর্ম কেবল একটাই, আর সেটা হলো সনাতন বৈদিক ধৰ্ম , বাকি ধর্মের নামে আজকাল যা যা প্রচলিত আছে সেগুলি সবই অধর্ম, তাই " অন্য সব ধর্ম " শব্দটি এখানে অযৌক্তিক  ) দমন করে , ভক্তিবিষয়ক মহোৎসবের আদর বাড়িয়ে আমি যদি এই ভূমন্ডলে তোমার প্রচার না করি তো আমি ভগবান শ্রী হরির দাস নই ।

১৫) যে সকল জীব এই কলিযুগে তোমার সঙ্গে যুক্ত থাকবে , পাপী হলেও তারা নিঃসন্দেহে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের অভয় ধাম প্রাপ্ত হবে ।

১৬) প্রেমরূপিণী ভক্তি যার হৃদয়ে সততই বিরাজ করে সেই শুদ্ধ অন্তঃকরণ জীব স্বপ্নেও যমরাজকে দর্শন করে না।

১৭) যার হৃদয়ে পরমা ভক্তিদেবীর নিবাস, তাকে প্রেত, পিশাচ, রাক্ষস বা দৈত্যদানব স্পর্শও করতে পারে না ।

১৮) তপস্যা , বেদ অধ্যয়ণ , জ্ঞান ও বৈদিক কর্মাদি এইসকল কোনো সাধনেই ভগবান বশীভূত হন না , ইনি কেবল ভক্তির দ্বারাই বশীভূত হন, গোপাঙ্গনারা এর প্রকৃষ্ট প্রমাণ ।

১৯) সহস্র জন্মের পুণ্যফলের দ্বারা মানুষের ভক্তিতে অনুরাগ হয় । এই কলিযুগে কেবলি ভক্তি, ভক্তিই সার ,শুধুমাত্র ভক্তির টানে ভগবান শ্রীকৃষ্ণচন্দ্র সামনে এসে দাঁড়ান ।

২০) যে মূঢ় ব্যক্তি ভক্তির প্রতি অবজ্ঞা করে, শত্রুতা করে , এই তিনলোকে তার কেবলি দুঃখ আর দুঃখই প্রাপ্তি হয় । ভক্তকে তিরস্কার করবার জন্য পুরাকালে দুর্বাসা মুনিকে অনেক কষ্ট পেতে হয়েছিল ।

২১) ব্রত , তীর্থপর্যটন, যাগযজ্ঞ,  বা জ্ঞানচর্চা প্রভৃতি নানারকম সাধনেরও কোনো আবশ্যকতাই নেই , কেবল ভক্তিই মুক্তি প্রদানকারিনী ।

Srimad Bhagavatam Mahatmyam Chapter 2
শ্রীমদ্ভাগবতমাহাত্ম্যম্-দ্বিতীয় অধ্যায়

২২) সূত বললেন - এইভাবে নারদমুনির কাছে নিজের মাহাত্ম্য শ্রবণ করে ভক্তির সর্বাঙ্গই পুষ্টিলাভ করল এবং তিনি নারদমুনিকে বলতে লাগলেন ।

২৩) ভক্তি বললেন  - হে নারদমুনি ! আপনি ধন্য , আমার ওপরে আপনার নিশ্চলা প্রীতি রয়েছে । আমি সর্বদাই আপনার হৃদয়ে থাকবো , কখনই আপনাকে ছেড়ে যাবো না ।

২৪) হে সাধু ! আপনি অত্যন্ত কৃপালু । আপনি ক্ষণকালের মধ্যেই আমার সমস্ত দুঃখ দূর করে দিয়েছেন । কিন্তু আমার পুত্রদ্বয়ের অচেতনতা এখনও দূর হল না ; আপনি শীঘ্রই এদের চেতনা ফিরিয়ে দিয়ে এদের জাগিয়ে তুলুন ।

২৫) সূত বললেন - ভক্তির এই কথা শুনে নারদের বড়ই করুনা হল এবং তিনি হাত দিয়ে তাদের অঙ্গমর্দন করে জাগানোর চেষ্টা করলেন ।

২৬) তাদের কর্ণের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে অতি উচ্চস্বরে বললেন , আরে জ্ঞান ! তাড়াতাড়ি জেগে ওঠো ; ওহে বৈরাগ্য ! তাড়াতাড়ি জেগে ওঠো ।

২৭) আবার বেদধ্বনি, বেদান্তঘোষ, এবং বার বার গীতাপাঠ করে তাদের জাগালেন , এর ফলে তারা কোনোপ্রকারে নিজের যথাসাধ্য শক্তি প্রয়োগে উঠে দাড়ালো ।

২৮) কিন্তু আলস্যবশত তারা হাই তুলতে লাগল, চোখ খুলতে পারলো না । তাদের কেশ বকের পালকের মতন শুভ্র হয়ে গিয়েছিল এবং তাদের অঙ্গপ্রতঙ্গ শুকনো কাঠের মতন নিস্তেজ ও শক্ত হয়ে পড়েছিল ।

২৯) ক্ষুধাতৃষ্ণায় কাতর ও অত্যন্ত দুর্বল অবস্থায় আবার তাদের ঘুমাতে দেখে নারদমুনির বড়ই চিন্তা হল এবং মনে মনে চিন্তা করতে লাগলেন যে এখন আমি কি করি ?

৩০) এদের এই নিদ্রা এবং তার চাইতেও গুরুতর এদের এই বৃদ্ধাবস্থা কি করে দূর করি ? এইরকম চিন্তা করতে করতে তিনি পরমেশ্বর ভগবান গোবিন্দকে স্মরণ করতে লাগলেন ।

Srimad Bhagavatam Mahatmyam Chapter 2
শ্রীমদ্ভাগবতমাহাত্ম্যম্-দ্বিতীয় অধ্যায়

৩১) এমন সময়ে দৈববাণী হল যে " হে মুনি ! দুঃখ কোরো না , তোমার এই উদ্যোগ নিশ্চয়ই সফল হবে ।

৩২) হে দেবর্ষি ! এই মহৎকার্য সম্পাদনের জন্য আপনি এক সৎকর্মের অনুষ্ঠান করুন । সেই কর্মের কথা সন্তশিরোমনি সাধুগণ আপনাকে বর্ণনা করবেন ।

৩৩) সেই সৎকর্মের অনুষ্ঠান সম্পন্ন হলেই জ্ঞান আর বৈরাগ্যের নিদ্রা এবং বৃদ্ধাবস্থা তৎক্ষণাৎ দূরীভূত হবে এবং সর্বত্র ভক্তির প্রচার হবে ।

৩৪) সেস্থলে উপস্থিত সকলেই এই দৈববাণী শুনতে পেলেন । নারদমুনি এই সব শ্রবণে বড়ই অবাক হলেন এবং আশ্চর্যপ্রকাশ করে বললেন  - " এর তো কিছুই আমার সর্বতোভাবে বোধগম্য হল না । "

৩৫) নারদমুনি বললেন যে  "এই দৈববানীও অতি গুহ্য এবং গোপনভাবে ব্যক্ত হয়েছে । কি প্রকার সাধন এর দ্বারা এই কার্য সম্পাদন হবে ,এই দৈববাণীতে তা ব্যক্ত হয়নি ।

৩৬) কে জানে সেই সকল সন্তশিরোমনি সাধুগণ কোথায় পাওয়া যাবে আর কি প্রকারেই বা তারা সেই সাধন প্রদান করবেন ? এই দৈববাণী অনুসারে এখন আমারই বা কি করণীয় ?

৩৭) সূত বললেন -হে শৌনক ! তারপর নারদমুনি জ্ঞান আর বৈরাগ্যকে সেখানে রেখে দৈববাণী কর্তৃক উদ্ধৃত সাধনের খোঁজে প্রস্থান করলেন এবং তীর্থে তীর্থে গিয়ে কিংবা পথমধ্যে মুনীস্বরদের সাথে সাক্ষাৎ হলে তাদের সেই সাধনের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করতে লাগলেন ।

৩৮) যদিও তার সেই প্রশ্ন সকলেই শুনলেন কিন্তু কেউই কোনোপ্রকার সদুত্তর দিতে অসমর্থ হলেন । কেউ বললেন ' এ অসাধ্য ' ; কেউ বললেন ' এর সঠিক বিবরণ দুঃসাধ্য ।' কেউ কেউ শুনে চুপ করে রইলেন , আবার কেউ কেউ নিজের অজ্ঞতা প্রকাশ পাওয়ার ভয়ে ভীত হয়ে প্রশ্ন এড়িয়ে প্রস্থান করলেন ।

৩৯-৪০) সমস্ত ত্রিভুবনে এক আশ্চর্য হাহাকার পড়ে গেল । সকলে নিজেদের মধ্যে বলাবলি করতে লাগল - " বেদধ্বনি, বেদান্তঘোষ, বারবার গীতাপাঠের দ্বারাও যখন জ্ঞান আর বৈরাগ্যকে জাগানো গেল না তখন নিশ্চই আর কোনো অন্য উপায় নেই ।"

৪১) ' যা স্বয়ং যোগরাজ দেবর্ষি নারদও জানেন না , সাধারণ সংসারী মানুষ সে সাধনের ব্যাপারে কি ভাবে জানবে ? '

৪২) এই ভাবে যে যে মুনি ঋষির কাছে এই ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলো , তাঁরা সকলেই বিবেচনা করে উত্তর দিলেন "এই প্রশ্নের উত্তর বড়ই দুঃসাধ্য ।"

Srimad Bhagavatam Mahatmyam Chapter 2
শ্রীমদ্ভাগবতমাহাত্ম্যম্-দ্বিতীয় অধ্যায়
৪৩) দেবর্ষি নারদ তখন অত্যন্ত চিন্তামগ্ন হয়ে বদরিকা অরণ্যে এসে উপস্থিত হলেন । সেখানে বসে তিনি মনস্থির করলেন যে জ্ঞান আর বৈরাগ্যকে জাগানোর জন্য ' আমি তপস্যা করব । '

৪৪) সেই সময় তিনি সামনে শতকোটি সূর্যের সমান প্রভাময় সনকাদি মুনিস্বরদের দেখতে পেলেন । তাদের দর্শন করে দেবর্ষি নারদ এইরূপ বললেন ।

৪৫) নারদ বললেন  - হে মহাত্মাগণ ! আজ আমার বহু ভাগ্যের ফলস্বরূপ আপনাদের সাথে মিলন হল । আপনারা দয়া করে আমাকে সেই সাধন সম্পর্কে শীঘ্রই বলুন ।
 
৪৬) আপনারা সকলেই মহাযোগী , বুদ্ধিমান এবং বিদ্বান । আপনারা পাঁচ বৎসরের বালকের সমান বলে অনুভূত হলেও আসলে আপনারা কিন্তু পূর্বপুরুষদেরও পূর্বজ ।

৪৭) আপনারা সর্বদাই বৈকুণ্ঠধামে বাস করেন , নিরন্তর হরিগুণগানে মগ্ন থেকে শ্রীভগবৎলীলারস আস্বাদন করে সর্বদা তাতেই মত্ত রয়েছেন এবং একমাত্র ভগবৎকথাই আপনাদের জীবনের আধার ।

৪৮) " হরি শরণম্ " অর্থাৎ ভগবানই আমার রক্ষক , এই মন্ত্র সর্বদাই আপনাদের মুখে রয়েছে , যার প্রভাবে কালপ্রেরিত জরাও আপনাদের স্পর্শমাত্র করতে পারে না ।

৪৯) পূরাকল্পে আপনাদের ভ্রূকুটি মাত্রে ভগবান বিষ্ণুর দ্বারপাল জয় আর বিজয় মুহূর্তের মধ্যে মর্ত্যে পতিত হয় আবার আপনাদেরই কৃপায় তারা পুনরায় বৈকুণ্ঠধাম প্রাপ্ত হন ।

৫০) অহো ! ধন্য আমি , অসীম সৌভাগ্যের ফলেই আজ আপনাদের দর্শন হল । আমি অতীব দীন আর আপনারা স্বভাববতই দয়ালু , সুতরাং আমার উপর আপনাদের অবশ্যই কৃপা করা উচিত ।

৫১) দৈববাণী যা আদেশ করেছেন সেই সাধনটি কি ? কি প্রকারেই বা আমি সেই সাধন সম্পাদন করব ? আপনারা সবিস্তারে সেই ব্যাপারে আমাকে সম্যকরূপে বলুন ।

৫২) ভক্তি, জ্ঞান, এবং বৈরাগ্য - এদের কিভাবে সুখ প্রাপ্তি হবে ?  আর কিভাবেই বা সমস্ত বর্ণের মধ্যে প্রীতি এবং যত্ন সহকারে এদের প্রতিষ্ঠা করা যায় ।

Srimad Bhagavatam Mahatmyam Chapter 2
শ্রীমদ্ভাগবতমাহাত্ম্যম্-দ্বিতীয় অধ্যায়

৫৩) সনকাদি  মুনিগন বললেন - হে দেবর্ষি ! মনে হর্ষের সঞ্চার করুন , আপনি চিন্তা করবেন না , আপনি যাদের প্রসঙ্গ উদ্ধৃত করলেন, তাদের উদ্ধারহেতু এক অতি সহজ উপায় আগে থেকেই বিদ্যমান ।


৫৪) হে দেবর্ষি নারদ ! আপনি ধন্য ! আপনি বৈরাগীশ্রেষ্ট , পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণচন্দ্রের দাসগণের আপনি শ্বাশত  পথপ্রদর্শক এবং ভক্তিযোগের ভাস্কর ।

৫৫) পরমা মুক্তিপ্রদানকারী ভক্তির কষ্ট নিবারণের জন্য যে মহৎ উদ্যোগ আপনি করছেন , তা আপনার পক্ষে মোটেও আশ্চর্যজনক ব্যাপার নয়। ভক্তির সংস্থাপনাই তো ভাগবত ভক্তদের সর্বদা করা উচিত ।

৫৬) আর্য মুনি ঋষিগণ এই সংসারে আমাদের জন্য অনেকপ্রকার সাধনমার্গের দৃষ্টান্ত দিয়েছেন , কিন্তু সেই সবগুলিই নিদারুন কষ্টসাধ্য এবং প্রায়শই পরিণামস্বরূপ সেগুলি কেবলমাত্র স্বর্গপ্রাপ্তিরই সহায়ক হয় ।

৫৭) যে সাধনের দ্বারা স্বয়ং ভগবানকে পাওয়া যায় , তা আজ পর্যন্ত কেবল গুপ্তরূপেই থেকে গিয়েছে । কদাচিৎ অতি সৌভাগ্যের উদয় হলে সেই পরম সাধনের উপদেষ্টা পুরুষের প্রাপ্তি হয় ।

৫৮) যে সৎকর্মের ইঙ্গিত আপনি দৈববাণী দ্বারা প্রাপ্ত হয়েছেন , আমরা এখন আপনাকে তার ব্যাপারে বলছি । আপনি তা অতি প্রসন্নমনে একাগ্রচিত্ত হয়ে শ্রবণ করুন ।

৫৯) হে দেবর্ষি নারদ ! দ্রব্যযজ্ঞ, তপোযজ্ঞ, যোগযজ্ঞ, এবং স্বাধ্যায়স্বরূপ জ্ঞানযজ্ঞ - এগুলির সবই কেবলমাত্র স্বর্গাদিলাভ হেতু কৃতকর্মের ইঙ্গিত বহনকারী ।

৬০) পণ্ডিতগণ স্বাধ্যায়স্বরূপ জ্ঞানযজ্ঞকেই মুক্তিপ্রদানকারী সৎকর্মের সূচকরূপে ব্যক্ত করেছেন । সেই সৎকর্ম হল ভক্তিভরে শ্রীমদ্ভাগবতের পারায়ণ অর্থাৎ নিয়মিত শ্রীমদ্ভাগবতপাঠের মাধ্যমে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শ্রীমদ্ভাগবত গ্রন্থপাঠ-সমাপ্তি, যার সমাপন শুকদেবাদি মহানুভবগণ পূর্বে করে গিয়েছেন  ।

৬১) অমৃত থেকেও উৎকৃষ্ট এই শ্রীমদ্ভগবত এর কর্ণপাত হওয়ামাত্রই ভক্তি, জ্ঞান, এবং বৈরাগ্যের মহাশক্তি লাভ হবে । যার ফলে জ্ঞান আর বৈরাগ্যের ক্লেশের পরিসমাপ্তি হবে এবং ভক্তিও আনন্দিত হবেন ।

৬২) অরণ্যমধ্যে সিংহের গর্জন শ্রবণমাত্র যেমন নেকড়েরা পলায়ন করে , তেমনি শ্রীমদ্ভাগবতের সিংহনাদে এই ঘোর কলি যুগের সমস্ত দোষের প্রলয় ঘটবে ।

৬৩) তখন এই সংসারে প্রতিটি ঘরে প্রতিটি মানবের হৃদয়ে, প্রেমরসপ্রবাহিনী ভক্তি তার দুই পুত্র জ্ঞান আর বৈরাগ্য সহিত ক্রীড়া করবেন ।

Srimad Bhagavatam Mahatmyam Chapter 2
শ্রীমদ্ভাগবতমাহাত্ম্যম্-দ্বিতীয় অধ্যায়

৬৪) দেবর্ষি নারদ বললেন - বেদধ্বনি, বেদান্তঘোষ, এমনকি গীতাপাঠের মাধ্যমেও আমি জ্ঞান আর বৈরাগ্যকে অনেকপ্রকারে জাগাবার চেষ্টা করেছি । কিন্তু এইসব সাধনের পরও জ্ঞান আর বৈরাগ্যকে জাগানো সম্ভবপর হয়নি ।

৬৫) এমতাবস্থায় শ্রীমদ্ভাগবত শ্রবণের ফলে কিরূপে জেগে উঠবে ? কারণ শ্রীমদ্ভাগবতের প্রতিটি শ্লোক এবং প্রতিটি পদেই তো সেই বেদেরই সারাংশ বর্ণিত হয়েছে ।

৬৬) হে বালমুনিগন , আপনাদের দর্শন অতি দুষ্প্রাপ্য , যা কখনোই ব্যর্থ হয় না এবং আপনারা শরণাগতবৎসল । তাই আপনারা দয়া করে আমার মনের এই সংশয় দূরীভূত করুন ,দয়া করে বিলম্ব করবেন না ।

৬৭) সনকাদিমুনিগন বললেন - শ্রীমদ্ভাগবত বেদ আর উপনিষদেরই সারাংশ । তাই বেদ থেকে পৃথক এবং সাথে তার ফলস্বরূপ হওয়ার দরুন শ্রীমদ্ভাগবত পরম উত্তম বলে পরিগণিত হয় ।

৬৮) বৃক্ষের শিকড় থেকে শুরু করে শাখাপ্রশাখা রসে সিক্ত থাকে কিন্তু ওই অবস্থায় সেই রস আস্বাদন করা সম্ভবপর হয় না ; সেই রসই যখন বৃক্ষের ফলরূপে পরিণত হয় তখন তা সমগ্র সংসারের কাছে প্রিয় হয় ।
 
৬৯) ঘি তো থাকে দুধেরই মধ্যে, তথাপি দুধের মধ্যে ঘি এর পৃথক স্বাদ পাওয়া যায় না , কিন্তু দুধের থেকে সেই ঘি যখন পৃথক হয়ে যায় , তখন তা দেবতাদেরও স্বাদবর্ধনকারী হয় ।

৭০) শর্করা ইক্ষুর মধ্যে সর্বত্রই ব্যাপ্ত থাকে কিন্তু ইক্ষু থেকে প্রস্তুত শর্করা পৃথক এবং বিশেষরূপে আমাদের মিষ্টতা প্রদান করে থাকে । এই রকমই হল শ্রীমদ্ভাগবত কথা ।

৭১)  এই শ্রীমদ্ভাগবতমহাপুরাণ বেদেরই সমান । ভগবানের কলাবতার শ্রীকৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস ভক্তি, জ্ঞান, এবং বৈরাগ্যের প্রতিষ্ঠার জন্যই ইহা প্রকাশিত করেছেন ।

Srimad Bhagavatam Mahatmyam Chapter 2
শ্রীমদ্ভাগবতমাহাত্ম্যম্-দ্বিতীয় অধ্যায়

৭২-৭৩) পুরাকালে বেদবেদান্ত পারঙ্গম এবং গীতশাস্ত্রকার মহর্ষি বেদব্যাস যখন একসময় দুঃখিত হয়ে অজ্ঞানময় অন্ধকারময় সমুদ্রে নিমগ্ন ছিলেন , তখন আপনিই তাঁকে কেবলমাত্র চারটি শ্লোকে এই শ্রীমদ্ভাগবতের উপদেশ দিয়েছিলেন । আপনার সেই উপদেশ শ্রবণেই তার সমস্ত চিন্তা দূরীভূত হয়েছিল ।

৭৪) সুতরাং আপনি এতে অবাকই হচ্ছেন কেন আর সংশয়ই বা কেন প্রকাশ করছেন ? হে দেবর্ষি নারদ ! আপনাকে ভক্তি, জ্ঞান আর বৈরাগ্যকে এই শোক এবং দুঃখ বিনাশকারী শ্রীমদ্ভাগবত মহাপুরাণই শ্রবন করানো উচিত ।

৭৫) তখন দেবর্ষি নারদ বললেন - হে মহানুভবগণ ! আপনাদের দর্শনমাত্র জীবের সমস্ত পাপ দূর হয় এবং দুঃখরূপী সংসার দাবানলে তাপিত ব্যক্তির উপর শীঘ্রই শান্তি বর্ষিত হয় । অনন্তনাগের সহস্রমুখনিঃসৃত শ্রীমদ্ভাগবত কথামৃত আপনারা সর্বদাই পান করেন । প্রেমলক্ষণা ভক্তির প্রকাশের উদ্দেশ্যহেতু আমি আপনাদের শ্রীচরণকমল আশ্রয় করছি ।

৭৬) মানুষের বহুজন্মের অর্জিত পুণ্যের উদয় হলে যখন সৎসঙ্গ লাভ হয় , তখন তার অজ্ঞানজনিত মোহ ও দৰ্পরূপ ( মদ/গর্ব ) অন্ধকারের নাশ হয়ে শুভ বিবেক জাগ্রত হয় ।


। ইতি শ্রীপদ্মপুরাণে উত্তরখণ্ডে শ্রীমদ্ভগবতমাহাত্ম্যে কুমারনারদসংবাদো নাম দ্বিতীয়োহধ্যায়ঃ।

আসুন আমরা সবাই একসাথে শ্রীমদ্ভাগবতম / শ্রীমদ্ ভাগবত মহাপুরাণের স্বাধ্যায় করে আমাদের জীবন পুন্য করি | আজকের মতো এইটুকুই, আমরা শেষ করব মহামন্ত্র দিয়ে |


হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে  |

হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে  ||


যদি আপনার এই পোস্টটি পছন্দ হয়ে থাকে / ভালো লেগে থাকে নতুবা এখান থেকে কিছু নুতন জানতে পারেন তাহলে আমাদের সাবস্ক্রাইব অবশ্যই করবেন এবং আপন আত্মীয়পরিজন, বন্ধু-বান্ধবদের সাথে শেয়ার করবেন | আমার লেখা কেমন লাগলো তা অবশ্যই নিচে কমেন্ট বক্স এর মাধ্যমে কমেন্ট করে জানাবেন |

শ্রীমদ্ ভগবত গীতার উপর আমাদের টিউটোরিয়াল / শিক্ষামূলক সিরিজ পড়ার জন্য এই লিংকটি ক্লিক করে শ্রীমদ ভগবত গীতার অমৃতজ্ঞান পান করে জীবন পবিত্র ও পুন্য করুন |

শ্রীমদ্ ভগবত গীতা : https://bhagavadgitatutorial.blogspot.com

আপনারা আমার প্রণাম নেবেন | 

ইতি
দীন ভক্ত দাসানুদাস 

<--পূর্ববর্তী লেখনী                                                        পরবর্তী লেখনী-->

Tuesday, 5 November 2019

শ্রীমদ্ভাগবতমাহাত্ম্যম্ -প্রথম অধ্যায় - Srimad Bhagavatam Mahatmyam Chapter 1

Bhagavatam, Srimad Bhagavatam, Bhagavata Purana, Srimad Bhagavatam in Bengali, Bhagavata Purana in Bengali, Bhagavata Mahapurana, Sanatana Dharma, Bhagavata Mahapurana, Srimad Bhagavatam Bangla, Gita, শ্রীমদ্ ভাগবতম, শ্রীমদ্ ভাগবত মহাপুরান, শ্রীমদ্ ভাগবত পুরান, Srimad Bhagavatam online , শ্রীমদ্ভাগবতমাহাত্ম্যম্ -প্রথম অধ্যায় , দেবর্ষি নারদের ভক্তির সঙ্গে সাক্ষাৎকার, Srimad Bhagavatam Mahatmyam Chapter 1

<--পূর্ববর্তী লেখনী                                                        পরবর্তী লেখনী-->

ভগবান শ্রীহরি

|| ওম নমঃ ভগবতে বাসুদেবায় ||


শ্রীমদ্ভাগবতমাহাত্ম্যম্ -প্রথম অধ্যায়

দেবর্ষি নারদের ভক্তির সঙ্গে সাক্ষাৎকার


প্রিয় ভক্তবৃন্দ এবং সুধীগণ,

পূর্ববর্তী লেখনীতে আমরা স্বয়ং শ্রীভগবান কর্তৃক ব্রহ্মাকে বর্ণিত শ্রীমদ্ভাগবত মাহাত্ম্য সম্পর্কে জেনেছিলাম । আজ আমরা মূল শ্রীমদ্ভাগবত শুরু করব । এটি শুরু হয় শ্রীমদ্ভাগবতমাহাত্ম্যের প্রথম অধ্যায় , দেবর্ষি নারদের ভক্তির সঙ্গে সাক্ষাৎকারের প্রসঙ্গের সাথে ।

শ্রীমদ্ভাগবতমাহাত্ম্যম্ - প্রথম অধ্যায় - দেবর্ষি নারদের ভক্তির সঙ্গে সাক্ষাৎকার
শ্রীমদ্ভাগবতমাহাত্ম্যম্ - প্রথম অধ্যায়
১) যিনি এই সমগ্র জগতের উৎপত্তি, স্থিতি ও লয়ের হেতু তথা আধ্যাত্মিক , আধিভৌতিক , আধিদৈবিক - এই ত্রিতাপের বিনাশকারী , সেই সচ্চিদানন্দস্বরূপ , পরম ভগবান শ্রীকৃষ্ণচন্দ্রকে আমরা অনন্তকোটিবার প্রণাম করি ।

২) মহর্ষি ব্যাসদেব এর সুপুত্র, মহাজন শুকদেবের তখনও উপনয়ন সংস্কার হয়নি, অর্থাৎ তার লৌকিক বৈদিক সমস্ত কর্মানুষ্ঠান তখনও বাকি, এমতাবস্থায় তিনি সন্ন্যাস গ্রহণের সংকল্প নিয়ে একাকী গৃহত্যাগে উদ্যোগী হয়েছেন । তাই দেখে তাঁর পিতা মহর্ষি ব্যাসদেব পুত্রবিরহে, কাতরস্বরে বলে উঠলেন - হে পুত্র ! তুমি কোথায় চলেছ ? সেই সময় তন্ময় হওয়ার ফলে বৃক্ষরাজি শুকদেবের হয়ে উত্তর দিয়েছিল । এইরূপ সর্বভূত-হৃদয়স্বরূপ শুকদেবমুনিকে আমি প্রণাম করি ।

৩) একদা ভাগবতকথামৃত রসাস্বাদনকুশল মুনিবর শৌনক নৈমিষারণ্যক্ষেত্রে বিরাজমান মহামতি সুতকে নমস্কার করে জিজ্ঞেস করলেন ।

৪) শৌনক বললেন - হে সুত ! অজ্ঞান অন্ধকার দূরীকরণে আপনার জ্ঞান কোটি সূর্যদেবের ন্যায় প্রভাময় । আপনি আমাদের কর্ণের তৃপ্তিবিধানকারী এবং অমৃতস্বরূপ সারগর্ভ কথা বলুন ।

৫) ভক্তি, জ্ঞান, ও বৈরাগ্য দ্বারা লভ্য মহান বিবেকের বিকাশ কি রূপে হয় এবং বৈষ্ণবগণ কি প্রকারে জগতের এই সর্বপ্রকার মায়া-মোহ থেকে নিজেদের মুক্ত করেন ?

৬) এই ঘোর কলিকালে জীব প্রায়শই আসুরিক স্বভাবসম্পন্ন হয়েছে, নানাবিধ ক্লেশে ক্লিষ্ট এই জীবসমূহকে পরিশুদ্ধ করার সর্বশ্রেষ্ট উপায় কি ?

৭)  হে সুত ! আপনি এমন কোনো শাশ্বত সাধন-পথের সন্ধান দিন, যা সর্বাপেক্ষা কল্যাণকারী এবং পবিত্রকর, আর যার দ্বারা পরমপুরুষ পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে পাওয়া যায় ।

৮) চিন্তামণি কেবলমাত্র লৌকিক সুখই দিতে পারে আর কল্পবৃক্ষ বড়োজোর স্বর্গীয় সম্পদাদি দিতে পারে, কিন্তু গুরুদেব প্রসন্ন হলে শ্রীভগবানের যোগীদুর্লভ নিত্য শ্রী বৈকুণ্ঠধাম দিতে পারেন ।

শ্রীমদ্ভাগবতমাহাত্ম্যম্ - প্রথম অধ্যায় - দেবর্ষি নারদের ভক্তির সঙ্গে সাক্ষাৎকার
শ্রীমদ্ভাগবতমাহাত্ম্যম্ - প্রথম অধ্যায়
৯) সুত  বললেন  - হে শৌনক ! তোমার হৃদয়ে স্বাত্তিক ভগবৎপ্রেম রয়েছে ; তাই আমি বিচার করে তোমাকে সমস্ত সিদ্ধান্তের গভীর ও গুঢ় সারকথা শোনাচ্ছি, যা জন্মমৃত্যুর ভয় দূরীভূত করে ।

১০) আমি তোমাকে ভক্তিপ্রবাহ বৃদ্ধিকারী এবং সচ্চিদানন্দস্বরূপ ভগবান শ্রীকৃষ্ণের প্রসন্নতা অর্জনকারী সাধনের কথা বলবো ; মন দিয়ে শোনো ।

১১) মহর্ষি শুকদেব এই ঘোর কলিযুগে জীবকে কালরুপী সর্পের গ্রাসে পতিত হওয়ার মহাভয় থেকে রক্ষা করার জন্য শ্রীমদ্ভাগবত-শাস্ত্রের প্রবচন করেছেন।

১২) মানবের চিত্তশুদ্ধির জন্য এর থেকে মঙ্গলকারী আর কোনো সাধন নেই । কোটি কোটি জন্মজন্মান্তরের পুণ্যের উদয় হলে তবেই মানুষের এই ভাগবত শাস্ত্রের প্রাপ্তি হয় ।

১৩)  রাজা পরীক্ষিৎকে এই ভাগবতকথা শোনাবার জন্য মহর্ষি শুকদেব যখন সভায় সমাসীন ছিলেন, তখন অমৃতকুম্ভ হাতে নিয়ে দেবতারা তাঁর কাছে আসেন ।

১৪) নিজেদের কার্যসিদ্ধিতে অতীব কুশল দেবতারা মহর্ষি শুকদেবকে প্রণাম করে বললেন - আপনি এই অমৃতকুম্ভ গ্রহণ করে তার পরিবর্তে আপনার কথামৃত আমাদের প্রদান করুন ।

১৫) এই প্রকারে আমরা পরস্পরের মধ্যে কথামৃত এবং অমৃত বিনিময় করার মাধ্যমে , মহারাজ পরীক্ষিৎ অমৃত পান করতে থাকুন আর আমরা দেবতারা সকলে শ্রীমদ্ভাগবতরূপ অমৃত পান করি ।

১৬) এই সংসারে কাঁচ আর মহামূল্য মনি যেমন, ঠিক তেমনি কোথায় অমৃত আর কোথায় ভাগবতকথা  ! এই চিন্তা করে মহর্ষি  শুকদেব দেবতাদের কথা হেসে উড়িয়ে দিলেন ।

১৭) দেবতাদের কথা শ্রবনে অনধিকারী, ভক্তিহীন বুঝতে পেরে মহর্ষি শুকদেব তাদের এই ভাগবতকথামৃত দেননি, এই কারণে শ্রীমদ্ভাগবতকথা দেবতাদেরও দুর্লভ বলা হয় ।

১৮)  পুরাকালে শ্রীমদ্ভাগবত শ্রবনের ফলে মহারাজ পরীক্ষিৎকে মোক্ষলাভ করতে দেখে স্বয়ং ব্রহ্মাও বিস্মিত হয়েছিলেন । তিনি সত্যলোকে সকল প্রকার সাধনকে ওজনে বিচার করেছিলেন ।

১৯) ওজনে ভাগবতই নিজ মাহাত্ম্যে অপর সব সাধন অপেক্ষা ভারী হয় । তা দেখে মুনি-ঋষিরা সকলেই চমৎকৃত হন ।

২০) তারা এই সিদ্ধান্ত করলেন যে কলিযুগে ভগবতস্বরূপ এই ভাগবতশাস্ত্রেরই পাঠ এবং শ্রবণে তাৎক্ষণিক মোক্ষপ্রাপ্তি সম্ভব ।

২১) সপ্তাহ-বিধি অনুসারে শ্রবণে শ্রীমদ্ভাগবতশাস্ত্র নিশ্চিত ভক্তি প্রদান করে । পুরাকালে দয়ালু সনকাদি মুনিগণ দেবর্ষি নারদকে এই পুন্যশাস্ত্র শ্রবণ করিয়েছিলেন ।

২২) যদিও দেবর্ষি নারদ পূর্বেই ব্রহ্মার নিকট এই শাস্ত্র শ্রবণ করেন তবুও সপ্তাহ-শ্রবণের বিধি সনকাদি ঋষিগণই তাঁকে বলেছিলেন ।

শ্রীমদ্ভাগবতমাহাত্ম্যম্ - প্রথম অধ্যায় - দেবর্ষি নারদের ভক্তির সঙ্গে সাক্ষাৎকার
শ্রীমদ্ভাগবতমাহাত্ম্যম্ - প্রথম অধ্যায়
২৩) শৌনক প্রশ্ন করলেন   - বিষময় এই সাংসারিক প্রপঞ্চ থেকে মুক্ত পরিব্রাজক দেবর্ষি নারদের সাথে সনকাদি মুনিগণের কোথায় সাক্ষাৎ হয়েছিল এবং বিধিসম্মত সপ্তাহব্যাপী ভাগবত শ্রবণান্তে তিনি কি প্রকারে প্রীত হয়েছিলেন ?

২৪) সুত বললেন - আমি এখন তোমাকে সেই ভক্তিমূলক কথা শোনাচ্ছি , যে কথা মহর্ষি শুকদেব তার শিষ্যগণের মধ্যে, আমাকে যোগ্য বিবেচনা করে একান্তে শ্রবণ করিয়েছিলেন ।

২৫) একদা এই চারজন পবিত্র বাল-ঋষিগণ বিশাল নগরী তে এসেছিলেন সৎসঙ্গ করার উদ্দেশ্যে । সেখানে তারা দেবর্ষি নারদকে দেখতে পান ।

২৬) সনকাদি মুনিগন দেবর্ষি নারদকে প্রশ্ন করলেন  - হে ব্রহ্মন্ ! আপনাকে এত ব্যাকুল দেখাচ্ছে কেন ? এত কি চিন্তা করছেন ? এত দ্রুত চলেছেনই বা কোথায় ? এবং আপনি এলেনই বা কোথা থেকে ?

২৭) আপনাকে হৃতসর্বস্ব ব্যক্তির মতন ব্যকুল দেখাচ্ছে । আপনার মতন নিরাসক্ত পুরুষের পক্ষে এইরকম ব্যাকুলতা শোভা পায় না । এর কারণ কি বলুন ?

২৮-৩০) নারদ বললেন - এই ভুলোককে সর্বশ্রেষ্ঠ লোক মনে করে আমি এখানে এসেছি । এখানে আমি পুষ্কর, প্রয়াগ, কাশী, গোদাবরী, হরিদ্বার, কুরুক্ষেত্র, শ্রীরঙ্গ, সেতুবন্ধ রামেশ্বরাদি, প্রভৃতি তীর্থে তীর্থে ভ্রমণ করেছি; কিন্তু কোথাও মনের শান্তি পেলাম না । অধর্মের পরম সহায়ক কলিযুগ বর্তমানে এই পৃথিবীকে আষ্টেপিষ্টে ক্লিষ্ট করে রেখেছে ।

৩১-৩৩) এখন এখানে সত্য, তপস্যা, শৌচ ( পবিত্রতা ), দয়া, দান কিছুরই অবশিষ্ট নেই । হতভাগ্য জীবগণ কেবলমাত্র নিজ নিজ উদরপূর্তির চিন্তাতেই মগ্ন । তারা অসত্যভাষী, অলস, মন্দবুদ্ধি, ভাগ্যহীন ও উপদ্রবগ্রস্ত হয়ে পড়েছে । যাদের সাধু-সন্ত বলা হয় তারা সকলেই পাষন্ড আচারনিরত হয়ে গিয়েছে, বাহ্যিক দৃষ্টিতে তাদের বৈরাগী মনে হলেও স্ত্রীধনাদী তারা নির্বিকারেই গ্রহণ করে । বাড়িতে কেবলই স্ত্রীরাজত্ব, শ্যালকগণই প্রধান পরামর্শদাতা, লোকেরা লোভে বশীভূত হয়ে কন্যাবিক্রয় করে এবং স্ত্রী-পুরুষের মধ্যে নিত্য কলহ লেগেই আছে ।

শ্রীমদ্ভাগবতমাহাত্ম্যম্ - প্রথম অধ্যায় - দেবর্ষি নারদের ভক্তির সঙ্গে সাক্ষাৎকার
শ্রীমদ্ভাগবতমাহাত্ম্যম্ - প্রথম অধ্যায়
৩৪) মহাত্মাদের আশ্রম, তীর্থ ও পবিত্র নদীগুলি বিধর্মী ম্লেচ্ছ যবনরা ( মুসলিমরা ) দখল করে রেখেছে এবং ওই সব নরাধম দুর্বৃত্ত নীচ বিধর্মী ম্লেচ্ছ যবনরা ( মুসলিমরা ) বহু দেবালয় ধ্বংস করেছে ।

৩৫) বর্তমানে ভূতলে না আছে কোনো যোগী না কোনো সিদ্ধপুরুষ, না আছে কোনো জ্ঞানী পুরুষ, না আছে কোনো সৎকর্মপরায়ণ মানুষ । যা কিছু সাধন ছিল তা এই কলিরূপ দাবানলে ভস্মীভূত হয়ে গিয়েছে ।

৩৬) এই কলিযুগে প্রায় সকলেই অন্ন বিক্রয় করছে, ব্রাম্ভনেরা অর্থের বিনিময়ে বেদশিক্ষা দিচ্ছে আর স্ত্রীলোকেরা বেশ্যাবৃত্তির দ্বারা জীবীকা নির্বাহ করছে ।

৩৭) এইরূপ কলির দোষসকল দেখতে দেখতে পৃথিবী পরিভ্রমণকালে আমি যমুনা তীরে সচ্চিদানন্দস্বরূপ ভগবান শ্রীকৃষ্ণের লীলাভূমিতে উপস্থিত হই ।

৩৮) হে মুনিগন ! শুনুন, আমি সেখানে এক আশ্চর্য ব্যাপার দেখলাম । একজন যুবতী স্ত্রী বিষন্ন মনে বসেছিল ।

৩৯) তার পাশে দুইজন অচেতন বৃদ্ধ পুরুষ দীর্ঘশ্বাস ফেলছিল । সেই স্ত্রীলোকটি কখনও তাদের শুশ্রূষা করে জ্ঞান ফেরাবার চেষ্টা করছিল আবার কখনও তাদের সামনে ক্রন্দন করছিল ।

৪০) ওই অবস্থায় সে তার শরীরের রক্ষক পরমাত্মাকে দশদিকে দর্শন করছিল, শত শত নারী তাকে ঘিরে হাওয়া করছিল আর প্রবোধ দিচ্ছিল ।

৪১) দূর থেকে এই ঘটনা লক্ষ্য করে আমি কৌতূহলের বশে ওই যুবতীর কাছে গেলাম, আমাকে দেখে সে উঠে দাঁড়াল আর অত্যন্ত ব্যাকুল হয়ে বলতে লাগল।

৪২) যুবতীটি বলল - হে মহাত্মন ! কৃপাকরে এই স্থলে ক্ষণমাত্র অবস্থান করুন  এবং আমাকে দুর্ভাবনা থেকে মুক্ত করুন । আপনার দর্শনে মানুষের সকল পাপের নিবৃত্তি হয় ।

৪৩) আপনার উপদেশবাক্যে আমার দুঃখেরও শান্তি হবে, বহু ভাগ্যে আপনার দর্শন প্রাপ্তি হয় ।

শ্রীমদ্ভাগবতমাহাত্ম্যম্ - প্রথম অধ্যায় - দেবর্ষি নারদের ভক্তির সঙ্গে সাক্ষাৎকার
শ্রীমদ্ভাগবতমাহাত্ম্যম্ - প্রথম অধ্যায়
৪৪) নারদ বললেন - আমি তখন সেই নারী কে জিজ্ঞেস করলাম দেবী ! তুমি কে ! এই পুরুষ দুজন তোমার কে হয় ? আর তোমার চারপাশে এই যেসব কমললোচনা নারীরা রয়েছে, এরা করা ? তোমার দুঃখের কথা তুমি আমাকে সবিস্তারে বর্ণনা কর ।

৪৫) যুবতীটি বলল - আমার নাম ভক্তি, এই দুইজন পুরুষ আমার দুই ছেলে জ্ঞান ও বৈরাগ্য । কালের প্রকোপে এদের এমন জর্জরিত অবস্থা ।

৪৬) এইসব দেবীগণ গঙ্গা আদি নদীবৃন্দ, আমার সেবা করার জন্যই এরা এসেছে । এইরূপ সাক্ষাৎ দেবীগণের দ্বারা সেবিত হয়েও আমার মনে শান্তি নেই ।

৪৭) হে তপোধন ! দয়া করে ধৈর্যপূর্বক আমার কাহিনী শুনুন । আমার কাহিনী যদিও জগতে সুবিদিত, তবুও তা শুনে আপনি আমাকে শান্তিপ্রদান করুন ।

৪৮) আমি দ্রাবিড় দেশে উৎপন্ন হয়ে কর্নাটকে বড় হয়েছি , মহারাষ্ট্রে কোথাও কোথাও আমি সম্মানিত হলেও গুজরাটে এসে আমি অশক্ত হয়ে পড়েছি ।

 ৪৯) সেখানে ঘোর কলিকালের প্রভাবে পাষন্ডগন আমার সর্বাঙ্গ ভেঙে দিয়েছে ।বহুকাল এই অবস্থায় থাকাতে আমার ছেলেরাও দুর্বল ও নিস্তেজ হয়ে পড়েছে ।

৫০) এরপর বৃন্দাবনে পৌঁছে আমি পরম রূপবতী যুবতীতে পরিণত হয়েছি ।

৫১) কিন্তু এইখানে শায়িত আমার দুই ছেলে পরিশ্রমবসত অত্যন্ত অবসন্ন হয়ে পড়েছে  । আমি এখন এই স্থান পরিত্যাগ করে অন্যত্র যেতে চাই ।

৫২) এদের বৃদ্ধাবস্থা দেখে আমার বড় দুঃখ হচ্ছে । আমি নিজে তরুণী আর আমার দুই পুত্র বৃদ্ধ কেন ?

৫৩) আমরা তিনজন সর্বদা একসাথে থাকি, তাহলে এই বৈপরীত্য কেন ? বরং মা বৃদ্ধা হবে আর ছেলেরা তরুণ থাকবে এমনটাই তো হওয়া উচিত ।

৫৪) এই পরিপ্রেক্ষিতে আমি আশ্চর্যান্বিত হয়ে নিজের দুরাবস্থার জন্য শোক করছি । আপনি পরম বুদ্ধিমান এবং যোগ-নিধি । এর কারণ কি হতে পারে তা আমাকে বলুন ।

শ্রীমদ্ভাগবতমাহাত্ম্যম্ - প্রথম অধ্যায় - দেবর্ষি নারদের ভক্তির সঙ্গে সাক্ষাৎকার
শ্রীমদ্ভাগবতমাহাত্ম্যম্ - প্রথম অধ্যায়
৫৫) নারদ বললেন - সাধ্বী ! আমি অন্তরের জ্ঞানদৃষ্টিতে তোমার সব দুঃখের কারণ দেখতে পাচ্ছি, তোমার দুঃখ করা উচিত নয় । ভগবান শ্রীহরি তোমার মঙ্গল করবেন ।

৫৬) সুত বললেন - মুনিবর দেবর্ষি নারদ মুহূর্তের মধ্যে এর কারণ জানলেন এবং বললেন ।

৫৭) নারদ বললেন - দেবী ! মন দিয়ে শোনো ! এখন দারুন কলিযুগ । তারফলে সদাচার, যোগমার্গ, তপস্যাদি সব বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে ।

৫৮) এই যুগে জীব শঠতা ও দুস্কর্মে লিপ্ত হয়ে অঘাসুর হয়ে গিয়েছে । এই সংসারে যেইদিকে তাকাবে দেখবে সৎপুরুষেরা দুঃখে ম্লান হয়ে রয়েছে আর দুষ্টের দল সুখে থেকে উন্নতি করছে । এই সময়ে যে সকল বুদ্ধিমান মানুষের ধৈর্য অটুট রয়েছে তারা জ্ঞানী ও পণ্ডিত ।

৫৯) এই পৃথিবী ক্রমে ক্রমে অনন্তনাগের উপর ভার হয়ে পড়ছে । এই পৃথিবী পাপের ভারে স্পর্শযোগ্যা তো নয়ই, এমনকি দর্শনেরও উপযুক্ত নয় , আর এতে মঙ্গলজনকও কিছু দেখা যাচ্ছে না ।

৬০) এখন সপুত্র তোমার প্রতি কেউ দৃষ্টিপাত করে না, বিষয় অনুরাগে অন্ধ জীবের দ্বারা উপেক্ষিত হয়ে তুমি জর্জরিত হয়ে রয়েছ ।

৬১) বৃন্দাবনে এসে পড়ার ফলে তুমি আবার নবীনা যুবতী হয়ে গিয়েছ । ধন্য এই বৃন্দাবন ধাম যেখানে ভক্তি সর্বদাই নৃত্য করে ।

৬২) কিন্তু তোমার এই দুই পুত্রের এখানে কোনো গুনগ্রাহী নেই, সেইজন্য এদের বৃদ্ধাবস্থা দূর হচ্ছে না । এখানে কিছু আত্মসুখ বা ভগবৎস্পর্শজনিত আনন্দ প্রাপ্তির ফলে এদের নিদ্রাচ্ছন্ন বোধ হচ্ছে ।

৬৩) ভক্তিদেবী বললেন - মহারাজ পরীক্ষিত এই পাপী কলিযুগ কে কেন থাকতে দিয়েছেন ? এর আসার ফলেই তো সব কিছুর সার কোথায় যেন হারিয়ে গেল ।

৬৪) পরম করুনাময় ভগবান শ্রীহরিই বা এইসব অনাচার কি রূপে সহ্য করছেন ? হে মুনিবর ! আমার এই সংশয় আপনি নিরসন করুন । আপনার কথায় আমি বড়ই শান্তি পেয়েছি ।

শ্রীমদ্ভাগবতমাহাত্ম্যম্ - প্রথম অধ্যায় - দেবর্ষি নারদের ভক্তির সঙ্গে সাক্ষাৎকার
শ্রীমদ্ভাগবতমাহাত্ম্যম্ - প্রথম অধ্যায়

 ৬৫) নারদ বললেন - হে সাধ্বী ! যখন জিজ্ঞাসাই করলে তখন মন দিয়ে শোনো , আমি তোমাকে সবিস্তারে এর বর্ণনা করছি । তাতে তোমার সব দুঃখ দূর হয়ে যাবে ।

৬৬) ভগবান শ্রীকৃষ্ণচন্দ্র যেদিন এই মর্তলোক ছেড়ে নিজের পরমধামে চলে গেলেন, সেইদিন থেকে এই মর্তে সাধনভজনে সর্বতোভাবে বিঘ্ন সৃষ্টিকারী কলিযুগ প্রবেশ করেছে ।

৬৭)  দিগ্বিজয়ের সময়ে মহারাজ পরীক্ষিতের দৃষ্টিতে পড়লে কলিযুগ অতি দীনভাবে তার শরণ নিয়েছিল । মৌমাছির মতো সারগ্রাহী রাজা স্থির করলেন যে একে বধ করা আমার উচিত হবে না ।

৬৮) কারণ যোগসাধন, তপস্যা, বা সমাধি দ্বারা যে ফল লাভ করা যায় না, তা কলিযুগে কেবলমাত্র শ্রীহরির নামকীর্তনের মাধ্যমেই অতি উত্তমরূপে লাভ করা যায় ।

৬৯) এইরূপে সবদিক থেকে অসার হওয়া সত্ত্বেও শুধুমাত্র একটা দিকে সারযুক্ত হওয়াতে, কলিযুগে জন্মগ্রহণ করা জীবের মঙ্গলের উদেশ্যে পরীক্ষিত মহারাজ কলিকে আশ্রয় দিলেন।

৭০) এই যুগে কুকর্মে প্রবৃত্ত হওয়ার ফলে মানুষের সব কিছুরই সার নষ্ট হয়ে গিয়েছে এবং পৃথিবীর সমস্ত জিনিস বীজহীন তুষের মতো হয়ে পড়েছে ।

৭১) ব্রাহ্মনেরা কেবলমাত্র অন্নধনাদির লোভে ঘরে ঘরে গিয়ে জনে জনে ভাগবত কথা শোনাচ্ছে, তারফলে কথার সারবস্তুই আর থাকছে না ।

৭২) তীর্থসকলে নানারকম অত্যন্ত ঘোর কুকর্মকারী, নাস্তিক ও নারকী সব মানুষ বাস করছে, আর এর ফলে তীর্থসকলের মাহাত্ম্যও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ।

৭৩) যাদের চিত্ত নিরন্তর কাম, ক্রোধ, অতিশয় লোভ এবং বিষয় তৃষ্ণায় তাপিত হচ্ছে, তারাও তপস্যার ভান করছে, যার ফলে তপস্যারও সারভাগ নষ্ট হয়ে গিয়েছে ।

৭৪) নিজের মনকে বশীভূত না করে লোভ, দম্ভ ও পাষন্ডাচারের আশ্রয় নেওয়ায় এবং শাস্ত্রের অধ্যয়ন না করার ফলে ধ্যানযোগের ফল নিঃশেষ হয়ে গিয়েছে ।

শ্রীমদ্ভাগবতমাহাত্ম্যম্ - প্রথম অধ্যায় - দেবর্ষি নারদের ভক্তির সঙ্গে সাক্ষাৎকার
শ্রীমদ্ভাগবতমাহাত্ম্যম্ - প্রথম অধ্যায়
৭৫) পন্ডিত বিদ্বানদের আজ এমন দশা যে তারা নিজেদের স্ত্রীদের সাথে মহিষের মতন রতিক্রিয়া করছে । শুধুমাত্র সন্তান উৎপাদনেই তারা দক্ষ কিন্তু মুক্তির সাধনে তারা সর্বতোভাবে অযোগ্য হয়ে উঠেছে ।

৭৬) সম্প্রদায়গতভাবে প্রাপ্ত বৈষ্ণবের লক্ষণও কোথাও দেখা যায় না । এইভাবে সর্বত্রই সকল কিছুর সারভাগ লুপ্ত হয়ে গিয়েছে ।

৭৭) এ যুগের এটাই স্বভাব, এতে কারোর দোষ নেই,  সেইজন্য ভগবান পুণ্ডরীকাক্ষ অত্যন্ত কাছে থাকা সত্ত্বেও সব সহ্য করছেন ।

৭৮) সুত বললেন - হে শৌনক ! দেবর্ষি নারদের এইসব কথা শুনে ভক্তি বড়ই বিস্মিত হলেন, তারপর তিনি যা বলেছিলেন তা শোনো ।

৭৯) ভক্তি বলেন - হে দেবর্ষি ! আপনি ধন্য ! আমার অতীব সৌভাগ্য যে আপনি এখানে এসেছেন । সংসারে সাধুর দর্শনই সমস্ত সিদ্ধি-লাভের পরম কারণ ।

৮০) আপনার উপদেশ কেবল একবারমাত্র গ্রহণ করেই কয়াধু-কুমার প্রহ্লাদ মায়াকে জয় করেছিল । ধ্রুবও আপনারই কৃপায় ধ্রুবপদ লাভ করেছিল । আপনি সর্বমঙ্গলময় এবং সাক্ষাৎ ব্রহ্মার পুত্র, আমি আপনাকে প্রণাম করছি ।


ইতি শ্রীপদ্মপুরাণে উত্তরখণ্ডে শ্রীমদ্ভগবতমাহাত্ম্যে ভক্তিনারদসমাগমো নাম প্রথমোহধ্যায়ঃ


আসুন আমরা সবাই একসাথে শ্রীমদ্ভাগবতম / শ্রীমদ্ ভাগবত মহাপুরাণের স্বাধ্যায় করে আমাদের জীবন পুন্য করি | আজকের মতো এইটুকুই,আমরা শেষ করব মহামন্ত্র দিয়ে |

হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে  |

হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে  ||


যদি আপনার এই পোস্টটি পছন্দ হয়ে থাকে / ভালো লেগে থাকে নতুবা এখান থেকে কিছু নুতন জানতে পারেন তাহলে আমাদের সাবস্ক্রাইব অবশ্যই করবেন এবং আপন আত্মীয়পরিজন, বন্ধু-বান্ধবদের সাথে শেয়ার করবেন | আমার লেখা কেমন লাগল তা অবশ্যই নিচে কমেন্ট বক্স এর মাধ্যমে কমেন্ট করে জানাবেন |

শ্রীমদ্ ভগবত গীতার উপর আমাদের টিউটোরিয়াল / শিক্ষামূলক সিরিজ পড়ার জন্য এই লিংকটি ক্লিক করে শ্রীমদ ভগবত গীতার অমৃতজ্ঞান পান করে জীবন পবিত্র ও পুন্য করুন |

শ্রীমদ্ ভগবত গীতা : https://bhagavadgitatutorial.blogspot.com

আপনারা আমার প্রণাম নেবেন | 

ইতি
দীন ভক্ত দাসানুদাস

<--পূর্ববর্তী লেখনী                                                        পরবর্তী লেখনী-->

Saturday, 2 November 2019

চতুঃশ্লোকী ভাগবত এবং ভাগবত মাহাত্ম্য - Chatushloki Bhagavata and Grace of Srimad Bhagavatam

Srimad Bhagavatam in Bengali, srimad bhagavatam online, Srimad Bhagavatam PDF, Srimad Bhagavatam Vedabase, ভাগবত মহাপুরাণ, শ্রীমদ্ভাগবতম, Bhagavata Purana, Bhagavatam, Srimad Bhagavatam, Bhagavata Purana, Srimad Bhagavatam in Bengali, Bhagavata Purana in Bengali, Bhagavata Mahapurana, Sanatana Dharma, Bhagavata Mahapurana, Srimad Bhagavatam Bangla, Gita, শ্রীমদ্ ভাগবতম, শ্রীমদ্ ভাগবত মহাপুরান, শ্রীমদ্ ভাগবত পুরান, Srimad Bhagavatam online , চতুঃশ্লোকী ভাগবত এবং ভাগবত মাহাত্ম্য, Chatushloki Bhagavata and Grace of Srimad Bhagavatam

<--পূর্ববর্তী লেখনী                                                 পরবর্তী লেখনী-->


|| ওম নমঃ ভগবতে বাসুদেবায় ||


চতুঃশ্লোকী ভাগবত এবং ভাগবত মাহাত্ম্য 


প্রিয় ভক্তবৃন্দ এবং সুধীগণ,

আজ আমরা চতুঃশ্লোকী ভাগবত এবং শ্রীমদ্ভাগবত মাহাত্ম্য সম্পর্কে জানবো । তাহলে চলুন,শুরু করা যাক ।

আমরা জানি মহর্ষি বেদব্যাস ১৭ টি পুরাণ এবং মহাভারত লেখা সমাপ্ত করে ফেলেছেন, কিন্তু তখনও মনের মধ্যে শান্তি পাননি, শান্তির জন্য ব্যাকুল হয়ে রয়েছেন, তখন গুরুদেব দেবর্ষি নারদের পরামর্শে মহর্ষি বেদব্যাস এই পবিত্র ভাগবত শাস্ত্রটি রচনা করেন এবং আপন পুত্র মহর্ষি শুকদেবকে এই গ্রন্থের অধ্যয়ন করান |

চতুঃশ্লোকী ভাগবত :

দেবর্ষি নারদ শ্রীভগবানের এই তত্ত্ব , প্রথমে চারটি শ্লোকের মাধ্যমে মহর্ষি বেদব্যাসকে শ্রবণ করান । এটিই চতুঃশ্লোকী ভাগবত নামে পরিচিত । এই ৪ টি শ্লোক থেকেই পরবর্তী কালে মহর্ষি বেদব্যাস এই সুবিশাল শ্রীমদ্ভাগবত শাস্ত্রটি রচনা করেন । তাহলে চলুন আমরা সর্বপ্রথম এই দুর্লভ চতুঃশ্লোকী ভাগবত সম্পর্কে জেনে নেই ।

Chatushloki Bhagavata in bengali

                                   চতুঃশ্লোকী ভাগবত

এবার আমরা এই ৪ টি শ্লোকের অর্থ এক এক করে জেনে নেব ।

১) এই সমগ্র সৃষ্টির পূর্বে কেবল আমিই ছিলাম । সেই সময় আমি ভিন্ন স্থুল , সূক্ষ, এবং স্থুল-সূক্ষ্মের কারণ যে অজ্ঞান, তা কিছুই ছিল না । এই সৃষ্টি যেখানে নেই, সেখানে শুধু আমিই আছি এবং এই সৃষ্টিরূপে যা কিছু প্রতীত হচ্ছে তাও আমিই , আবার তার অতিরিক্ত অবশিষ্ট যা কিছু আছে তাও আমিই ।

২) বাস্তবে যেখানে যা নেই কিন্তু কিছু একটা পদার্থের জ্ঞান হচ্ছে , যেমন দুটি সূর্য,চন্দ্র না থাকা স্বত্তেও গগনে এবং জলে প্রতিবিম্ব রূপে দুটি সূর্য,চন্দ্র দেখা যায় ( যদিও সেটি মিথ্যা ); অথবা যা বিদ্যমান কিন্তু বোঝা যাচ্ছে না , যেমন আকাশে রাহু,কেতু নামে দুটি গ্রহ আছে (কিন্তু রাহু,কেতুর দর্শন হচ্ছে না ) - এই দুই অবস্থাই অভাবনীয় ব্যাপার, একে আমার মায়া বলে জানবে ।

৩) ক্ষিতি, অপ, তেজ ইত্যাদি মহাভুত যেমন ভৌতিক ঘটপটাদিতে থাকে বা মনুষ্যাদি জীবদেহে অনুপ্রবিষ্ট থাকে, আবার জীবদেহ ছাড়া অন্যত্রও আকাশাদি বর্তমান, সুতরাং তাতে অপ্রবিষ্টও বটে , সেইরকম  সেইসকল জীবদেহের দিক থেকে দেখলে আমি তাদের মধ্যে আত্মারূপে (চৈতন্য শক্তিরূপে ) প্রবেশ করে রয়েছি, আবার আত্মদৃষ্টিতে (তত্বদৃষ্টিতে) আমি ছাড়া অন্য কোথাও আর কিছু নেই বলে আমি এদের মধ্যে প্রবিষ্ট না হয়েও রয়েছি ।

৪) 'এটি ব্রহ্ম নয় , এটি ব্রহ্ম নয়' - এইরকম ব্যতিরেক পদ্ধতি এবং 'এটি ব্রহ্ম, এটি ব্রহ্ম' - এইরকম অন্বয় পদ্ধতির দ্বারা এই সিদ্ধান্তই উপনীত হয় যে সর্বতীত, সর্বব্যাপক,সর্বস্বরূপ ভগবানই সর্বএই সর্বদা অবস্থিত আছেন- তিনিই প্রকৃত তত্ত্ব । আত্মা বা পরমাত্মার সম্পর্কে উৎসাহীদের এই বিষয়টাই জানা প্রয়োজন ।


আসুন আমরা এখন স্বয়ং শ্রীভগবান কর্তৃক ব্রহ্মাকে বর্ণিত শ্রীমদ্ভাগবত মাহাত্ম্য সম্পর্কে  জেনে নেই। 

 ভাগবত মাহাত্ম্য : 

The Grace of Srimad Bhagavatam
শ্রীমদ্ভাগবত মাহাত্ম্য
১) লোকবিখ্যাত শ্রীমদ্ভাগবত পুরাণ প্রত্যহ শ্রদ্ধাযুক্ত চিত্তে শ্রবন করা উচিত । ইহা আমার পরম সন্তোষের কারণ হয় ।


২) যে ব্যক্তি প্রতিদিন ভাগবত মহাপুরাণ পাঠ করে, সে প্রতিটি অক্ষর উচ্চারণের সাথে সাথে কপিলা গোমাতা দানের পুন্য অর্জন করে ।


৩) যে ব্যক্তি প্রতিদিন অর্ধেক বা এক-চতুর্থাংশ ভাগবত পাঠ বা শ্লোক শ্রবন করে, তার এক সহস্র গোমাতা দানের ফল লাভ হয় ।


৪) হে পুত্র ! পবিত্রচিত্ত হয়ে যে প্রতিদিন ভাগবতের একটি শ্লোক পাঠ করে তার অষ্টাদশ পুরাণ পাঠের ফলপ্রাপ্তি হয় ।


৫) নিত্য যেখানে আমার কথা হয় সেখানে বিষ্ণুপার্ষদ প্রহ্লাদ প্রমুখ উপস্থিত থাকেন । আমার এই ভাগবত শাস্ত্রের যে প্রতিদিন পূজা করে সে কলির প্রভাব থেকে মুক্ত থাকে, তার উপর কলির কোনো অধিকার থাকে না ।


৬) যে মানুষ নিজ ঘরে বৈষ্ণবশাস্ত্রের পূজা করে সে সর্বপ্রকার পাপ থেকে মুক্ত হয়ে দেবতাদের দ্বারাও বন্দনীয় হয় ।


৭) কলিযুগে যারা প্রতিদিন নিজ ঘরে ভাগবত শাস্ত্রের পূজা করেন তারা আনন্দচিত্তে এই ভূমণ্ডলে বিচরণ করেন এবং কলির থেকে নির্ভয়ী হয়ে আস্ফালন করেন । তাদের উপর আমি সতত প্রসন্ন থাকি ।
৮)  হে পুত্র ! মানুষ যতদিন পর্যন্ত তার ঘরে ভাগবত শাস্ত্র রক্ষা করে, তার পিতৃপুরুষগন ততদিন পর্যন্ত দুধ, ঘি, মধু, ও সুস্বাদু পানীয় পান করেন ।


The Grace of Srimad Bhagavatam
শ্রীমদ্ভাগবত মাহাত্ম্য
 ৯)  বিষ্ণুভক্ত মানুষকে যে ভক্তিযুক্ত চিত্তে ভাগবত শাস্ত্র দান করে সে সহস্রকোটি কল্প পর্যন্ত আমার বৈকুণ্ঠধামে নিবাস করে ।
১০) নিজ গৃহে ভাগবত পুজনকারী ব্যক্তি এক কল্প পর্যন্ত সমস্ত দেবতাদের পরিতৃপ্ত করে ।
১১) নিজ গৃহে ভাগবতের অর্ধ বা একচতুর্থ শ্লোকও যদি থাকে তবে তার কাছে অন্যান্য শত সহস্র গ্রন্থের সংগ্রহও তুচ্ছ ।
১২) কলিযুগে যার গৃহে ভাগবত শাস্ত্র থাকে না, তার যমপাশ থেকে কখনো মুক্তি নেই ।
১৩) এই কলিযুগে যার গৃহে ভাগবত শাস্ত্র নেই, তাকে কি বৈষ্ণব বলা যায় ? সে তো চণ্ডালেরও অধম ।
১৪) হে লোকেশ ব্রহ্মা ! আমার নিত্য সন্তুষ্টির জন্য সর্বস্বের বিনিময়েও মানুষের এই বৈষ্ণবশাস্ত্র সংগ্রহ করা উচিৎ ।
১৫) এই কলিযুগে যেখানে যেখানে ভাগবতশাস্ত্র রক্ষিত থাকে, দেবতাদের সাথে নিয়ে আমি সর্বদাই সেখানে উপস্থিত থাকি ।
১৬) শুধু তাই নয়, সেখানে গঙ্গাদি নদী, ব্রহ্মপুত্রাদি নদ ও মানস সরোবরাদি সকল তীর্থ বাস করে । সম্পূর্ণ যজ্ঞ, মুক্তিদাত্রী অযোধ্যাদি সপ্তপুরী এবং পাবন পর্বতসমূহও সেখানে সতত নিবাস করে ।


The Grace of Srimad Bhagavatam
শ্রীমদ্ভাগবত মাহাত্ম্য
১৭) হে লোকেশ ! যশ, ধৰ্ম, বিজয়প্রাপ্তির জন্য এবং পাপক্ষয় ও মোক্ষপ্রাপ্তির জন্য ধার্মিক মানুষের সর্বদাই আমার ভাগবতশাস্ত্র শ্রবন করা উচিৎ ।
১৮) এই পাবন শ্রীমদ্ভাগবতপুরাণ আয়ু, আরোগ্য, ও পুষ্টিদাতা ; এই শাস্ত্র পাঠ অথবা শ্রবনে মানুষ সকলপ্রকার পাপ থেকে মুক্ত হয়ে যায় ।
১৯) হে লোকেশ !এই পরম উত্তম ভাগবত যে শ্রবন  না করে, আর শুনলেও যে আনন্দিত হয় না, যমরাজই তাদের প্রভু - তারা সর্বদাই যমরাজের বশে থাকে  - আমি এইকথা সত্য করে বলছি ।
২০) হে পুত্র ! যে মানুষ সর্বদাই - বিশেষতঃ একাদশী তিথিতে ভাগবত শুনতে না যায়, তার মতো পাপী আর কেউ নেই ।
২১) যার ঘরে ভাগবতের একটি শ্লোক অথবা শ্লোকের একটি পদ লেখা থাকে, তার ঘরে আমি নিবাস করি ।
২২) মনুষ্যলোকে সমস্ত পুন্য-আশ্রমে বা সম্পূর্ণ তীর্থসমূহে স্নানও তত পুন্যাকারক নয়, শুধুমাত্র এই শ্রীমদ্ভাগবত যতটা পুন্যাকারক ।
২৩) হে চতুর্মুখ ! যেখানে যেখানে ভাগবত কথা পাঠ হয়, বৎসপ্রিয়া গাভীর মতো আমি সেখানে সেখানে গমন করি ।
২৪) যে আমার এই ভাগবত কথা পাঠ করে, যে সদাই ভাগবত কথা শ্রবন করে আর আমার এই কথা শুনে যে হার্দিক প্রীতি লাভ করে তাকে আমি কখনো ত্যাগ করি না ।

The Grace of Srimad Bhagavatam
শ্রীমদ্ভাগবত মাহাত্ম্য
২৫) হে পুত্র ! যে ব্যক্তি এই পরম পুণ্যময় শ্রীমদ্ভাগবতশাস্ত্র দেখে সম্মান প্রদর্শনপূর্বক নিজের আসন থেকে উঠে না দাঁড়ায়, তার এক বছরের অর্জিত ধর্মকর্মের সমস্ত পুণ্যই নষ্ট হয়ে যায় ।
২৬) শ্রীমদ্ভাগবত গ্রন্থ দর্শনে যে প্রত্যূথান, প্রণাম ইত্যাদির দ্বারা তাকে সম্মান প্রদর্শন করে, তাকে দেখে আমি অনুপম আনন্দ লাভ করি ।
২৭) যে দূর থেকে শ্রীমদ্ভাগবত দর্শন করে তার সামনে যায়, সে প্রতি পদক্ষেপেই অশ্বমেধ যজ্ঞের পুন্য লাভ করে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই ।
২৮)  যে ব্যক্তি শ্রীমদ্ভাগবতকে দর্শন করে দাঁড়িয়ে তাকে প্রণাম করে, তাকে আমি ধন, স্ত্রী, পুত্র,আর আমার ভক্তি প্রদান করি ।
২৯) হে পুত্র ! মাহারাজোচিত সামগ্রীসমূহে যুক্ত হয়ে ভক্তিভরে যে শ্রীমদ্ভাগবতের কথা শ্রবণ করে, আমি তার বশীভূত হয়ে যাই ।
৩০-৩১) হে সুব্রত ! যে ব্যক্তি পার্বন সম্বন্ধীয় সমস্ত উৎসবাদিতে আমার প্রসন্নতার জন্য বস্ত্র, অলংকার, পুষ্প, ধুপ, ইত্যাদি অর্পণ করে পরম উত্তম শ্রীমদ্ভাগবতপুরাণ ভক্তিভরে শ্রবণ করে, পতিব্রতা রমণী যেমন সচ্চরিত্র স্বামীকে বশীভূত করে, ওই ব্যক্তি আমাকে সেইরকমই নিজের বশীভূত করে রাখে ।



------------------ শ্রীভগবান কর্তৃক ব্রহ্মাকে বর্ণিত শ্রীমদ্ভাগবত মাহাত্ম্য সমাপ্ত -----------------

 

বিঃ দ্রঃ  : স্কন্দপুরাণস্থিত বিষ্ণুখন্ডে মার্গশীর্ষমাহাত্ম্য অধ্যায় ১৬ এ বর্ণিত শ্রীমদ্ভাগবত মাহাত্ম্য
 
আজকের মতো এইটুকুই,আমরা শেষ করব মহামন্ত্র দিয়ে |

হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে  |

হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে  ||


যদি আপনার এই পোস্টটি পছন্দ হয়ে থাকে / ভালো লেগে থাকে নতুবা এখান থেকে কিছু নুতন জানতে পারেন তাহলে আমাদের সাবস্ক্রাইব অবশ্যই করবেন এবং আপন আত্মীয়পরিজন, বন্ধু-বান্ধবদের সাথে শেয়ার করবেন | আমার লেখা কেমন লাগলো তা অবশ্যই নিচে কমেন্ট বক্স এর মাধ্যমে কমেন্ট করে জানাবেন |

শ্রীমদ্ ভাগবত গীতার উপর আমাদের টিউটোরিয়াল / শিক্ষামূলক সিরিজ পড়ার জন্য এই লিংকটি ক্লিক করে শ্রীমদ ভাগবত গীতার অমৃতজ্ঞান পান করে জীবন পবিত্র ও পুন্য করুন |

শ্রীমদ্ ভাগবত গীতা : https://bhagavadgitatutorial.blogspot.com

আপনারা আমার প্রণাম নেবেন | 

ইতি
দীন ভক্ত দাসানুদাস


<--পূর্ববর্তী লেখনী                                                 পরবর্তী লেখনী-->