Monday, 30 March 2020

শ্রীমদ্ভাগবতমাহাত্ম্যম্ - ষষ্ঠ অধ্যায় - Srimad Bhagavatam Mahatmyam Chapter 6

Bhagavatam,Srimad Bhagavatam, Bhagavata Purana, Srimad Bhagavatam in Bengali, Bhagavata Purana in Bengali, Bhagavata Mahapurana, Sanatana Dharma, Bhagavata Mahapurana, Srimad Bhagavatam Bangla, Gita, শ্রীমদ্ ভাগবতম, শ্রীমদ্ ভাগবত মহাপুরান, শ্রীমদ্ ভাগবত পুরান, Srimad Bhagavatam online, শ্রীমদ ভাগবত,ভাগবত মহাপুরান , শ্রীমদ্ভাগবতমাহাত্ম্যম্ - ষষ্ঠ অধ্যায় , Srimad Bhagavatam Mahatmyam Chapter 6 , সপ্তাহযজ্ঞের নিয়ম

<--পূর্ববর্তী লেখনী                                                        পরবর্তী লেখনী-->

Srimad Bhagavatam Lord Krishna
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ

|| ওম নমঃ ভগবতে বাসুদেবায় ||


শ্রীমদ্ভাগবতমাহাত্ম্যম্- ষষ্ঠ অধ্যায়

 সপ্তাহযজ্ঞের নিয়ম 


প্রিয় ভক্তবৃন্দ এবং সুধীগণ,


পূর্ববর্তী লেখনীতে আমরা শ্রীমদ্ভাগবতমাহাত্ম্যের পঞ্চম অধ্যায়, ধুন্ধুকারীর প্রেতযোনি প্রাপ্তি এবং তা থেকে মুক্তি সম্পর্কে জেনেছিলাম । আজ আমরা শ্রীমদ্ভাগবতমাহাত্ম্যের ষষ্ঠ অধ্যায়, সপ্তাহযজ্ঞের নিয়ম সম্পর্কে জানব । এটি শুরু হয় সূত দ্বারা বর্ণিত দেবর্ষি নারদের সাথে সনকাদি মুনিগণের কথোপকথনের মাধ্যমে ।

Srimad Bhagavatam Mahatmyam Chapter 6
শ্রীমদ্ভাগবতমাহাত্ম্যম্- ষষ্ঠ অধ্যায়

১) সনকাদি বালমুনিগন বললেন - হে দেবর্ষি  নারদ ! আমরা  এখন আপনাকে এই সপ্তাহযজ্ঞের নিয়মাবলী সম্পর্কে বলছি । এই বিধিসমূহ সাধারণ মানুষের সহযোগ এবং অর্থের দ্বারা সাধ্য ।

২) এর জন্য সর্বপ্রথম দৈবজ্ঞ পণ্ডিতগণের সাথে পরামর্শ করে এই সপ্তাহযজ্ঞের মুহূর্ত নির্ধারণ বা দিনস্থির করা উচিত । বিবাহের্ অনুষ্ঠান সম্পাদনের জন্য যেমন অর্থের সংকুলানের ব্যাপারটি ভেবে দেখা হয় তেমনই এখানেও অর্থ সংস্থানের ব্যাপারটিতে ধ্যান দেওয়া প্রয়োজন ।

৩) সপ্তাহব্যাপী ভাগবতকথা প্রারম্ভের জন্য আষাঢ় , শ্রাবণ , ভাদ্র , আশ্বিন , কার্তিকঅগ্রহায়ণ এই ছয় মাসই শ্রোতাদের পক্ষে মোক্ষপ্রদ । "

৪)  হে দেবর্ষি ! এই ছয় মাসের মধ্যে আবার কিছু বিচার করতে হয় । যেমন ভদ্রা - ব্যাতিপাত ইত্যাদি দোষযুক্ত যোগগুলি সর্বদাই বর্জন করা উচিত । এরপর এই কাজে সহায়তার জন্য যারা আগ্রহী ও উৎসাহী তাদের এই কার্যের বিভিন্ন বিষয়ের দায়িত্ব দেওয়া উচিত ।

৫) এরপর দেশে দেশে অতি সযত্নে এই বার্তা প্রচার করা দরকার যে ভাগবত সপ্তাহযজ্ঞের্ অনুষ্ঠান হবে । এই অনুষ্ঠানে সকলের সপরিবারে অংশগ্রহণ প্রার্থনীয় হওয়া উচিত । 

৬) নারী এবং শূদ্রাদিগণ শ্রীহরিসংকীর্তন এবং ভাগবতকথা থেকে দূরে সরে রয়েছে । তাদের সবার্ কাছেও যাতে এই সংবাদ পৌঁছায় এমন ব্যবস্থা করতে হবে ।

৭) দেশে দেশে যেসকল বিরক্ত বৈষ্ণবগণ ও হরিসংকীর্তন উৎসুক ভক্তগণ রয়েছেন তাদের অবশ্যই নিমন্ত্রণপত্র পাঠানো আবশ্যক । এই নিমন্ত্রণপত্র লেখারও বিধি উল্লেখ করা হয়েছে ।

৮) ' হে মহানুভবগণ ! এখানে সুদুর্লভ অপূর্ব রসরূপী শ্রীমদ্ভাগবতের সপ্তাহপারায়ণ যজ্ঞের অনুষ্ঠান এবং তদোপলক্ষে   সৎপুরুষের সম্মেলন হবে ।

৯) আপনারা ভাগবতরসিক , সুতরাং শ্রীমদ্ভাগবতকথা পীযুষ ( অমৃত ) পান করার উদ্দেশ্যে আপনারা সত্বর প্রেমপূর্বক আগমন করুন ।

১০) যদি আপনি বিশেষ কোনো কারণবশত সপ্তাহব্যাপী যজ্ঞে উপস্থিত থাকার অবকাশ না পান , তাহলে অন্তত একদিনের জন্য হলেও অবশ্যই কৃপা করে আসবেন । কারণ এই অনুষ্ঠানের ক্ষণমুহূর্তও অতিদুর্লভ ।

Srimad Bhagavatam Mahatmyam Chapter 6
শ্রীমদ্ভাগবতমাহাত্ম্যম্- ষষ্ঠ অধ্যায়
১১) এইরকম অত্যন্ত বিনীতভাবে তাঁদের নিমন্ত্রন করতে হবে এবং এই অনুষ্ঠানে আগতদের জন্য উপযুক্ত বাসস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে । 

১২) এই কথাশ্রবণের আয়োজন কোনো তীর্থস্থানে কিংবা অরণ্যে অথবা নিজগৃহেও করার বিধান রয়েছে । এসবের মধ্যে যেখানে বড় উন্মুক্ত স্থান রয়েছে এবং একসাথে অনেকজন বসতে পারেন সেইখানেই কথাস্থল হওয়া উচিত ।

১৩) কথাস্থলে ভূমির শোধন , মার্জন , লেপন করে বিভিন্ন রঙের ধাতু দিয়ে মণ্ডপ তৈরী করবেন । গৃহের সমস্ত আসবাবপত্র ও দ্রব্যাদি গৃহের এক কোণে জড়ো করে রাখবেন ।

১৪) কথাপ্রারম্ভের পঞ্চদিবস পূর্ব থেকেই সযত্নে পাতবার কাপড় প্রভৃতি দ্রব্যাদি জোগাড় করে রাখবেন এবং কলাগাছে  ( কলা গাছের খন্ডে ) সুশোভিত এক উঁচু মঞ্চ বানাবেন ।

১৫) তার চারিদিক ফল, পুষ্প , চাঁদোয়া প্রভৃতি সব জিনিস দিয়ে সুসজ্জিত করবেন । চারিদিকে ধ্বজা এবং নানারকম সামগ্রী দিয়ে সাজাবেন ।

১৬) সেই মণ্ডপের খানিকটা জায়গা উঁচু করে সেখানে সাতটি লোকের কল্পনা করে সংসার বিরক্ত / নিরাসক্ত ব্রাহ্মণদের ডেকে সেখানে উপবেশন করাবেন ।

১৭) সম্মুখে তাদের জন্য যথাযুক্ত আসনের ব্যাবস্থা করবেন । তার পশ্চাতে পাঠক বা বক্তার জন্য এক দিব্য আসনের ( সিংহাসনের ) ব্যবস্থা করবেন ।

১৮) পাঠক যদি উত্তর দিকে মুখ করে পাঠ করেন তাহলে শ্রোতারা পূর্বদিকে মুখ করে বসবেন । আর পাঠক যদি পূর্বদিকে মুখ করে পাঠে বসেন তাহলে শ্রোতাদের উত্তর দিকে মুখ করে পাঠ শ্রবণ করা প্রয়োজন ।

১৯) অথবা পাঠক এবং শ্রোতাগণ উভয়েই পূর্বদিকে মুখ করে পাঠে বসবেন । দেশকালাদি বিষয়ে অভিজ্ঞ বিদ্বজন শ্রোতাদের জন্য এইরকম পাঠশ্রবণেরই বিধান দিয়েছেন ।

২০) বেদশাস্ত্রের বিশুদ্ধ ও সরল ব্যাখ্যাতে সমর্থ , বিভিন্ন আনুষঙ্গিক দৃষ্টান্তের মাধ্যমে বিষয়বস্তু বোঝাতে কুশল , অতীব নিস্পৃহ , ধীর বক্তা , এইরূপ সংসার বিরক্ত বিষ্ণুভক্ত বিপ্রকে পাঠকর্তা করা উচিত ।

Srimad Bhagavatam Mahatmyam Chapter 6
শ্রীমদ্ভাগবতমাহাত্ম্যম্- ষষ্ঠ অধ্যায়
২১) শুকশাস্ত্র শ্রীমদ্ভাগবতকথামৃত প্রবচনের দায়িত্বভার সেই সকল মানুষকে দেওয়া উচিত নয় যারা পন্ডিত হওয়া সত্বেও ধর্মের নানারকম মতবাদে বিভ্রান্ত , স্ত্রৈণ , কামুক এবং পাখন্ড ।

২২)  পাঠে সহায়তা করবার জন্য পাঠকের সাথে তার মতই আরো একজন বিদ্বান থাকবেন । ওই পন্ডিতও যেন শাস্ত্রের বিভিন্ন রকম সংশয় নিরসনে সমর্থ হন এবং শ্রোতাদের বোঝানোর ব্যাপারে তৎপর হন ।

২৩) পাঠে ব্রতগ্রহণ করবার জন্য পাঠপ্রারম্ভের পূর্বদিবসেই পাঠক ক্ষৌরকর্ম করে রাখবেন এবং অরুণোদয়কালে শৌচাদি সমাপন করে স্নান করবেন ।

২৪) এরপর সন্ধ্যাদি নিত্যকর্ম সংক্ষেপে সমাপন করে শ্রীমদ্ভাগবতকথার বিঘ্ননাশের উদ্দেশ্যে শ্রীগণেশের পূজা করবেন ।

২৫) এরপর পিতৃগণের উদ্দেশ্যে তর্পন করে নিজ পূর্বকৃত পাপের শুদ্ধির জন্য প্রায়শ্চিত্ত করবেন । এরপর একটি মন্ডল তৈরী করে তাতে শ্রীহরিকে স্থাপন করবেন ।

২৬) তারপর পরম ভগবান শ্রীকৃষ্ণের উদ্দেশ্যে মন্ত্র উচ্চারণ করে তাঁর ষোড়শ উপচারে পুজো করবেন এবং পূজান্তে তাঁকে প্রদক্ষিণ ও নমস্কারাদির পরে এই বলে স্তুতি করবেন ।

২৭) ' হে করুণানিধি ! আমি এই সংসারসাগরে নিমজ্জিত এক অতি দীন । কর্মমোহে আমি গ্রস্ত । এর থেকে আপনি আমাকে উদ্ধার করুন । '

২৮) এরপর শ্রীমদ্ভাগবতকেও পরমপ্রীতি ও যত্নসহকারে , ধুপ , দ্বীপাদি দ্বারা যথাযত বিধিপূর্বক পূজা করবেন ।

২৯) তারপর শ্রীমদ্ভাগবতের সামনে শ্রীফল নারিকেল রেখে নমস্কারপূর্বক প্রসন্নচিত্তে স্তুতি করা কর্তব্য ।

৩০) ' শ্রীমদ্ভাগবতরূপে আপনি স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণচন্দ্রই এখানে বিরাজমান । হে নাথ ! এই ভবসাগর পার হওয়ার জন্য আমি আপনার শরণাগত হলাম ।

Srimad Bhagavatam Mahatmyam Chapter 6
শ্রীমদ্ভাগবতমাহাত্ম্যম্- ষষ্ঠ অধ্যায়
৩১) আমার এই মনোরথ আপনি নির্বিঘ্নে সফল করুন । হে কেশব ! আমি আপনার দাস । '

৩২) এইপ্রকার দীনভাবে প্রার্থনা করে মূল পাঠকের পূজা করা কর্তব্য । তাঁকে সুন্দর বস্ত্র আভূষণাদিতে শোভিত করে পূজান্তে এইরূপে স্তূতি করবেন - ।

৩৩) ' হে শুকরুপী ভগবান ! আপনি প্রবোধজ্ঞ এবং সর্বশাস্ত্রবিশারদ । আপনি কৃপাপূর্বক এই ভাগবতকথা প্রকাশের মাধ্যমে আমার অজ্ঞান দূরীভূত করুন । '

৩৪) এরপর নিজ মঙ্গলের জন্য তাঁর সামনে নিয়ম ধারণ করবেন এবং যথাশক্তি সেই সব নিয়ম সাতদিন পালন করবেন ।

৩৫) কথাভঙ্গ নিবৃত্তির নিমিত্ত পাঁচজন ব্রাহ্মণকে বরণ করবেন । তাঁরা দ্বাদশাক্ষর মন্ত্র ( ॐ নমো ভগবতে বাসুদেবায় ) দ্বারা শ্রীভগবানের নাম জপ করবেন ।

৩৬) পরে ব্রাহ্মণ , সকল বৈষ্ণব ও কীর্তনীয়াদের প্রণাম এবং পূজা করে তাঁদের অনুমতি নিয়ে নিজ আসনে উপবেশন করবেন ।

৩৭) যে ব্যক্তি বিত্ত, ধনসম্পত্তি, গৃহ, পুত্র , সন্তানাদির চিন্তা পরিত্যাগ করে শুদ্ধচিত্তে , স্থিরমতি হয়ে কেবলমাত্র পাঠেই মনস্থাপন করেন , এই পাঠ শ্রবনে তিনি উত্তম ফলপ্রাপ্ত হন ।

৩৮) সুধী পাঠক সকালে সূর্যোদয় থেকে শুরু করে সাড়ে তিন প্রহর পর্যন্ত ধীরকণ্ঠে উত্তমরূপে ভাগবতকথা পাঠ করবেন ।

৩৯) মধ্যাহ্নে দুই ঘটিকার ( ঘন্টা ) জন্য ভাগবতকথার বিরাম দেওয়া কর্তব্য । সেই সময় কথাপ্রসঙ্গ অনুযায়ী বৈষ্ণবগণ শ্রীভগবানের গুনগান করবেন।

৪০) কথাপাঠের সময় মলমূত্র ত্যাগের বেগ সংবরণের জন্য লঘু আহার বা স্বল্পাহার সুখাবহ হয় । এইজন্য শ্রোতাদের দিনে কেবলমাত্র একবার হৰিষ্যান্ন গ্রহণ করা কর্তব্য ।

Srimad Bhagavatam Mahatmyam Chapter 6
শ্রীমদ্ভাগবতমাহাত্ম্যম্- ষষ্ঠ অধ্যায়
৪১) সামর্থ্য থাকলে সাতদিন উপবাস করে অথবা কেবলমাত্র ঘি বা দুগ্ধ পান করে কথাশ্রবণ করবেন ।

৪২) অথবা ফলাহার বা একাহারই করবেন । যার যেরকম নিয়ম পালনের মাধ্যমে কথাশ্রবণ সুখকর হয় , সেই প্রকার নিয়মই পালন করবেন ।

৪৩) আমি তো উপবাস অপেক্ষা ভোজন করাই শ্রেয়কর বলে মনে করি , যদি তা কথা শ্রবণের অনুকূল হয় । উপবাসের ফলে যদি কথা শ্রবণে কষ্ট উপলব্ধি হয় তাহলে সেই নিয়ম কোনো কাজের নয় ।

৪৪) হে নারদ ! নিয়মপালনের মাধ্যমে যারা সপ্তাহব্যাপী পাঠ শ্রবণ করেন তাঁদের সেই নিয়মাবলী শ্রবণ করুন । যারা বিষ্ণুমন্ত্রে দীক্ষিত নন তারা এই কথা শ্রবনের অনধিকারী ।

৪৫) নিয়মপালনের মাধ্যমে যিনি কথা শ্রবণ করবেন , তিনি ব্রহ্মচর্য পালন করবেন , ভূমিতে শয্যাগ্রহণ করবেন , এবং প্রত্যহ কথাশ্রবণের পর পাতায় ভোজন পরিবেশন করে আহার করবেন ।

৪৬) দ্বিদল ( যথা ডাল, বাদাম, মটর, ছোলা প্রভৃতি ) , মধু , তেল , গরিষ্ট অন্ন , ভাব দূষিত পদার্থ , এবং বাসী অন্ন এইসব কথাশ্রবণকারীর নিত্য ত্যাজ্য । 

৪৭) কাম , ক্রোধ , মদ , অভিমান , মাৎসর্য , লোভ , দম্ভ , মোহ , এবং দ্বেষ থেকে সর্বদা দূরে থাকবেন ।

৪৮) বেদ , বৈষ্ণব , ব্রাহ্মণ , গুরু , গো-সেবক , স্ত্রী , রাজা ও মহাপুরুষদের নিন্দা করবেন না ।

৪৯) নিয়মপূর্বক কথা শ্রবণকারী রজঃস্বলা নারী , অন্ত্যজ , ম্লেচ্ছ ( যবন , অধর্মী প্রভৃতি ), পতিত , গায়ত্রীহীন বিপ্র , ব্রাহ্মণদ্বেষী এবং বেদ - নিন্দুকের সাথে কথা বলিবেন না ।

৫০)  সর্বদা সত্য , শৌচ , দয়া , মৌনতা , বিনয়তা , উদারতা - এই সব গুনাবলীকে আশ্রয় করে থাকবেন ।

Srimad Bhagavatam Mahatmyam Chapter 6
শ্রীমদ্ভাগবতমাহাত্ম্যম্- ষষ্ঠ অধ্যায়
৫১) নির্ধন , দরিদ্র , ক্ষয়রোগী , রোগগ্রস্ত , নির্ভাগ্য , পাপী,  সন্তানহীন ও মুমুক্ষ ব্যক্তিরাও এই কথা শ্রবণ করবেন ।

৫২) অপুস্পা ( যে নারীর ঋতু হয় না ) নারীগণ , কাকবন্ধ্যা ( একটিমাত্র সন্তানের পর যার সন্তান সম্ভাবনা নষ্ট হয়ে যায় ) নারীগণ , বন্ধ্যা , মৃতার্ভকা ( যার সন্তান হয়ে বাঁচে না ) অথবা যার গর্ভপাত হয়ে যায় , তারা অত্যন্ত শ্রদ্ধাপূর্বক এই শ্রীমদ্ভাগবতকথা শ্রবণ করবেন ।

৫৩) বিধিপূর্বক এই কথাশ্রবণের ফলে এরা অক্ষয় ফল লাভ করবেন ।এই অতি উত্তম দিব্য কথা কোটি জন্মের সমান ফলপ্রদান করে ।

৫৪) এইপ্রকারে এই ব্রতপালন করবেন । যে ব্যক্তির এই ব্রত থেকে বিশেষ ফললাভের বাসনা থাকে তারা জন্মাষ্টমী ব্রতের মতোই এই কথাব্রত পালন করবেন ।

৫৫) কিন্তু যিনি শ্রীভগবানের অকিঞ্চন ভক্ত , তার এই ব্রত উদযাপনের কোনো প্রয়োজন নেই । তিনি কেবলমাত্র এই কথাশ্রবণেই পবিত্র হয়ে যান । কারণ তিনি তো নিষ্কাম ভগবৎভক্ত ।

৫৬) এরপর সপ্তাহব্যাপী ভাগবতকথার পরিসমাপ্তি হলে , শ্রোতাদের অত্যন্ত ভক্তিভরে এই শ্রীমদ্ভাগবত গ্রন্থের এবং পাঠকের পূজা করা আবশ্যক ।

৫৭) এরপর পাঠক শ্রোতাদের প্রসাদ , তুলসী ও প্রসাদী মালা প্রদান করবেন । তারপর সকলে মিলে মৃদঙ্গ করতাল নিয়ে কীর্তন করা উচিত ।

৫৮) এরপর সকলের জয়ধ্বনি , শঙ্খধ্বনি , নমস্কার করা উচিত । ব্রাহ্মন ও প্রার্থীদের ধন এবং অন্নদান করা উচিত ।

৫৯) শ্রোতা যদি সংসারবিরক্ত / নিরাসক্ত হন তাহলে কর্মশান্তির উদ্দেশ্যে সপ্তাহযজ্ঞের দ্বিতীয় দিনে গীতাপাঠ করবেন আর শ্রোতা গৃহস্থ হলে হোম করবেন ।

৬০) সেই হোমে ভাগবতের দশম স্কন্ধের প্রতিটি শ্লোক পাঠের মাধ্যমে বিধিপূর্বক পায়স , মধু , ঘৃত , তিল ও অন্নাদি সামগ্রীসমূহ আহুতি দেবেন ।

Srimad Bhagavatam Mahatmyam Chapter 6
শ্রীমদ্ভাগবতমাহাত্ম্যম্- ষষ্ঠ অধ্যায়
৬১) অথবা সুসমাহিত হয়ে / একাগ্রচিত্তে গায়ত্রী মন্ত্র দ্বারা হবন / হোম করবেন ; কারণ তত্বদৃষ্টিতে এই মহাপুরান গায়ত্রীরই স্বরূপ ।

৬২-৬৩) হবন করবার সামর্থ না থাকলে হবনের ফলপ্রাপ্তির জন্য ব্রাহ্মনদের হবনসামগ্রী দান করবেন এবং বিধিপালনের মধ্যে বিভিন্ন ত্রুটি বিচ্যুতির অপরাধস্খলনের জন্য স্থির চিত্তে ভগবান বিষ্ণুর সহস্রনাম পাঠ করা উচিত । বিষ্ণুসহস্রনামের পাঠে সকল কর্মই সফল হয় কারণ এর চেয়ে বড় কর্ম আর নাই । 

৬৪) তারপর বারো জন বিপ্রবরকে পায়স , মধু ইত্যাদি সুস্বাদু ভোজন করাবেন এবং ব্রতপূর্তির জন্য সুবর্ণ ও ধেনু দান করবেন ।

৬৫-৬৮) সামর্থবান ব্যক্তিরা তিন ভরি সুবর্ণ দিয়ে স্বর্ণসিংহাসন তৈরী করিয়ে তার উপর ললিত অক্ষরে লেখা শ্রীমদ্ভাগবত স্থাপন করে আবাহনাদি বিভিন্ন পূজা করবেন । পরে ওই সুধী আচার্যকে বস্ত্র , আভূষণ , গন্ধাদি দ্বারা সযত্নে পূজা করে তাঁকে ওই স্বর্ণসিংহাসন সমেত শ্রীমদ্ভাগবতগ্রন্থ দক্ষিণাপূর্বক সমর্পন করবেন । এর ফলে ওই বুদ্ধিমান দাতা জন্ম মৃত্যুর চক্র থেকে মুক্ত হবেন । এই সপ্তাহ শ্রবণবিধি সর্বপাপনিবারণকারী । এই সপ্তাহপারায়ণ ঠিক করে পালন করলে শ্রীমঙ্গলময় এই ভাগবত পুরাণ অভীষ্ট ফল প্রদান করে । নিঃসন্দেহে ইহা অর্থ , ধর্ম , কাম ও মোক্ষ - এই চতুর্বর্গের ফল লাভের সাধন নিস্পন্ন করে ।

৬৯) সনকাদি বালমুনিগন বললেন - হে দেবর্ষি নারদ ! এইভাবে আমরা তোমাকে সম্পূর্ণরূপে শ্রীমদ্ভাগবত সপ্তাহশ্রবণের বিধি বললাম , এখন আর কি শুনতে ইচ্ছা প্রকাশ কর ? এই শ্রীমদ্ভাগবত থেকে ভুক্তি এবং মুক্তি দুই হস্তগত হয় ।

Srimad Bhagavatam Mahatmyam Chapter 6
শ্রীমদ্ভাগবতমাহাত্ম্যম্- ষষ্ঠ অধ্যায়
৭০-৭১) সুত বললেন - হে শৌনক ! এই বলে মহাত্ম্যা সনৎকুমারগণ সপ্তাহব্যাপী এই সর্বপাপ হরণকারী , পুণ্যময় এবং ভুক্তি ও মুক্তি প্রদানকারী ভাগবতকথার প্রবচন করেছিলেন । সমস্ত প্রাণী নিয়মমত সেই প্রবচন শ্রবণ করে । তারপর তারা বিধিপূর্বক ভগবান পুরুষোত্তমের স্তুতি করেছিলেন ।

৭২) এই ভাগবত কথা সমাপ্ত হলে জ্ঞান , বৈরাগ্য ও ভক্তিদেবীর সাতিশয় পুষ্টি হয়েছিল । তারা তিনজনই তারুণ্য অবস্থাপ্রাপ্ত হয়ে সবার মনমোহন করতে লাগলেন ।

৭৩) নিজের মনোরথ পূর্ণ হওয়াতে দেবর্ষি নারদও আনন্দিত হয়েছিলেন । তার সর্বাঙ্গ শরীর পুলকিত হচ্ছিল এবং তিনি পরমানন্দে পূর্ণ হয়ে গিয়েছিলেন ।

৭৪) এইভাবে কথাশ্রবণের পর ভগবতপ্রিয় নারদ মুনি কৃতাঞ্জলি পূর্বক প্রেমগদগদ চিত্তে সনকাদি মুনিদের বললেন ।

৭৫) দেবর্ষি নারদ বললেন - ' আমি ধন্য হলাম , আপনারা করুনাপূর্বক আমাকে অনুগৃহীত করেছেন । আজ আমি সর্বপাপহারী ভগবান শ্রীহরিকে লাভ করলাম ।

৭৬)  হে তপোধনগন ! সকল ধর্মের মধ্যে আমি এই শ্রীমদ্ভাগবত শ্রবণই শ্রেষ্ঠ বলে মনে করি ; কারণ এর শ্রবণের দ্বারা বৈকুন্ঠপতি শ্রীকৃষ্ণকে লাভ করা যায় । '

৭৭) সুত বললেন - হে শৌনক ! বৈষ্ণবোত্তম দেবর্ষি নারদ এইকথা বলছেন এমন সময় ভ্রমণ করতে করতে যোগেশ্বর শুকদেব সেখানে এসে উপস্থিত হলেন ।

৭৮) কথা সমাপ্ত হওয়া মাত্রই ব্যাসনন্দন শুকদেব ঐস্থানে এলেন । ষোড়শ বর্ষীয় শুকদেব ছিলেন আত্মানন্দে পূর্ণ , জ্ঞানরূপী মহাসাগরকে সংবর্ধন করার জন্য তিনি চন্দ্রের মতন ছিলেন । তিনি নিম্নস্বরে প্রেমভরে শ্রীমদ্ভগবতের পাঠ করছিলেন ।

৭৯) পরম তেজস্বী শুকদেব মুনিকে দেখে সভায় উপস্থিত সকলে বিদ্যুৎগতিতে উঠে দাঁড়ালেন এবং তাঁকে একটি উচ্চাসনে বসালেন ।  তারপর দেবর্ষি নারদ তাঁকে শ্রদ্ধাপূর্বক পূজা করলেন । তিনি সুখাসনে বসে বললেন - 'আপনারা আমার নির্মল বাণী শ্রবণ করুন ।'

Srimad Bhagavatam Mahatmyam Chapter 6
শ্রীমদ্ভাগবতমাহাত্ম্যম্- ষষ্ঠ অধ্যায়
৮০) শুকদেব বললেন হে রসিক এবং ভাবুক সভাসদগণ ! এই শ্রীমদ্ভাগবত বেদরূপ কল্পবৃক্ষের পরিপক্ক ফল । শ্রীশুকদেবের শুক-মুখের সংযোগ হওয়ার দরুন ইহা অমৃতরসে পরিপূর্ণ । এ কেবলই রস , এতে না  আছে কোনো খোসা আর না আছে কোনো বীজ । দেহে যতক্ষণ অবধি প্রাণ থাকে , ততক্ষন আপনারা বারংবার এই রস পান করুন ।

৮১) মহর্ষি ব্যাসদেব এই শ্রীমদ্ভাগবত শাস্ত্রের রচনা করেছেন । এর মধ্যে নিষ্কাম ধর্মের নিষ্কপট নিরুপন করা রয়েছে । এতে শুদ্ধ অন্তঃকরণযুক্ত সৎপুরুষের জানার উপযুক্ত কল্যাণকারী প্রকৃত তত্বের বর্ণনা রয়েছে , যার ফলে ত্রিতাপ জ্বালা শান্ত হয়ে যায় । শ্রীমদ্ভাগবতের শরণাপন্ন হলে অন্য কোনো শাস্ত্র বা সাধনের আবশ্যকতা থাকে না । যখন কোনো পুণ্যবান ব্যক্তি শ্রীমদ্ভাগবত শ্রবণের ইচ্ছা করেন , তখনই পরমেশ্বর ভগবান তাঁর হৃদয়ে অবরুদ্ধ হয়ে যান ।

৮২) এই শ্রীমদ্ভাগবত সকল পুরাণসমূহের তিলক এবং বৈষ্ণবদের পরম ধন । এতে পরমহংসদিগের প্রাপ্ত বিশুদ্ধ জ্ঞানেরই বর্ণনা আছে এবং জ্ঞান , ভক্তি আর বৈরাগ্যের সাথে নিবৃত্তিমার্গকে প্রকাশিত করা হয়েছে । যে ব্যক্তি এই শ্রীমদ্ভাগবতের শ্রবণ করে পঠনে ও মননে তৎপর থাকেন তিনি মুক্তি লাভ করেন ।

৮৩) এই রস স্বর্গলোক, সত্যলোক, কৈলাশ, এমনকি বৈকুন্ঠেও নেই । তাই হে ভাগ্যবান শ্রোতাবৃন্দ ! আপনারা এই রস খুব করে পান করুন , একে কখনো ছাড়বেন না ।

৮৪) সুত বললেন - শুকদেব যখন এইসব কথা বলছিলেন তখন ওই সভার মধ্যে প্রহ্লাদ , বলি , উদ্ধব এবং অর্জুনাদি পার্ষদগণদের নিয়ে স্বয়ং ভগবান শ্রীহরি এসে আবির্ভূত হলেন । দেবর্ষি নারদ তখন শ্রীভগবান এবং তাঁর ভক্তদের যথোচিত পূজা করলেন ।

৮৫) শ্রীভগবানকে প্রসন্ন দেখে দেবর্ষি নারদ তাঁকে এক মহদাসনে বসালেন এবং সকলে মিলে তার সামনে সংকীর্তন করতে লাগলেন । সেই কীর্তন দেখবার জন্য মাতা পার্বতীকে নিয়ে দেবাদিদেব মহাদেব শঙ্কর এবং প্রজাপতি ব্রহ্মাও সেখানে উপস্থিত হলেন ।

Srimad Bhagavatam Mahatmyam Chapter 6
শ্রীমদ্ভাগবতমাহাত্ম্যম্- ষষ্ঠ অধ্যায়
৮৬) সকলে সমবেত ভাবে কীর্তন করছিলেন । তার মধ্যে প্রল্হাদ তরলগতি ( চঞ্চলগতি ) সম্পন্ন হওয়াতে করতাল বাজাতে লাগলেন , উদ্ধব কাঁসী বাজাতে লাগলেন, দেবর্ষি নারদ বীনা বাজাতে লাগলেন ,স্বরকুশল ( সংগীতবিদ্যায় কুশল ) অর্জুন রাগ আলাপ করতে লাগলেন , দেবরাজ ইন্দ্র মৃদঙ্গ বাজাতে লাগলেন , সনকাদি কুমারগণ ভগবানের জয়ধ্বনি করতে লাগলেন এবং এঁদের সকলের অগ্রভাগে ব্যাসপুত্র শুকদেব মাঝে মাঝে সরস অঙ্গ ভঙ্গি করে ভাবপ্রকাশ করতে থাকলেন । 

৮৭) এঁদের সকলের মধ্যে ভক্তি , জ্ঞান ও বৈরাগ্য নর্তকের মত নৃত্য করতে লাগলেন ।  এইরকম অলৌকিক কীর্তন দেখে ভগবান অত্যন্ত প্রসন্ন হলেন এবং বললেন - ।

৮৮) ' তোমাদের এই কথাপাঠ ও কীর্তন আমাকে অতীব প্রসন্ন করেছে , তোমাদের এই ভক্তিভাব আমাকে বশীভূত করে ফেলেছে । অতএব তোমরা আমার কাছে বর প্রার্থনা কর ।' ভগবানের এই কথা শুনে সকলেই অতি আনন্দিত হলেন এবং প্রেমার্দ্রচিত্তে শ্রীভগবানকে বললেন ।

৮৯) ' হে ভগবান ! আমাদের সকলেরই এই অভিলাষ যে , ভবিষ্যতেও যেখানে যেখানে এই শ্রীমদ্ভাগবতের সপ্তাহপারায়ণের অনুষ্ঠান হবে , সেখানে আপনি আপনার পার্ষদগণদের নিয়ে অবশ্যই উপস্থিত থাকবেন । আপনি আমাদের এই মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করুন ।' তখন শ্রীভগবান তাদের 'তথাস্তু ' বলে বরপ্রদান করে সেখান থেকে অদৃশ্য হয়ে গেলেন ।

৯০) তারপর দেবর্ষি নারদ শ্রীভগবান এবং তাঁর পর্ষদগণের চরণে প্রণাম করলেন এবং পুনরায় শুকদেব প্রমুখ তপস্বীদেরও প্রণাম করলেন । ভাগবতকথামৃত পান করে সকলেই অতি আনন্দিত হলেন , তাদের সকলেরই মোহ সম্পূর্ণরূপে নষ্ট হল এবং সকলে নিজ নিজ স্থানে প্রস্থান করলেন ।

৯১) সেই সময় মহর্ষি শুকদেব ভক্তিদেবীকে তাঁর পুত্রদ্বয়ের সাথে শ্রীমদ্ভাগবতের মধ্যে স্থাপিত করে দিলেন । সেই জন্যে ভাগবত সেবন করলে ভগবান শ্রীহরি বৈষ্ণবদের হৃদয়ে স্থান গ্রহণ করেন ।

Srimad Bhagavatam Mahatmyam Chapter 6
শ্রীমদ্ভাগবতমাহাত্ম্যম্- ষষ্ঠ অধ্যায়
৯২) যেসব মানুষ দারিদ্র্য দুঃখের জ্বালায় দগ্ধ হচ্ছে , যারা মায়ারূপিণী পিশাচী দ্বারা নিষ্পেষিত হচ্ছে এবং যারা ভব সমুদ্রে হাবুডুবু খাচ্ছে তাদের মঙ্গলার্থে  শ্রীমদ্ভাগবত শ্রবণ অতীব ফলপ্রসূ ।

৯৩) শৌনক প্রশ্ন করলেন - হে মহামতি সুত ! মহর্ষি শুকদেব রাজা পরীক্ষিতকে , গোকর্ণ ধুন্ধুকারীকে এবং সনকাদি বালমুনিগন দেবর্ষি নারদকে কোন কোন সময়ে শ্রীমদ্ভাগবতকথা শ্রবণ করিয়েছিলেন - আমার এই সংশয় আপনি দূর করুন ।

৯৪) সুত বললেন - ভগবান শ্রীকৃষ্ণের স্বধাম গমনের পর কলিযুগের ত্রিশ বৎসরের একটু বেশি সময় অতিক্রন্ত হলে ভাদ্র মাসের শুক্লা নবমী তিথিতে মহর্ষি শুকদেব এই শ্রীমদ্ভাগবত কথা প্রারম্ভ করেছিলেন ।

৯৫) মহারাজ পরীক্ষিতের কথা শোনার পর কলিযুগের দুইশত বৎসর অতিক্রান্ত হয়ে গেলে আষাঢ় মাসের শুক্লা নবমীতে গোকর্ন এই কথা শুনিয়েছিলেন ।

৯৫) এরপর কলিযুগের ত্রিশ বৎসর অতিক্রান্ত হলে কার্তিক শুক্লা নবমী তিথি থেকে সনকাদি মুনিগন এই কথা শুরু করেন ।

৯৭) হে নিষ্পাপ শৌনক ! আপনি যা কিছু প্রশ্ন করেছিলেন তার সব উত্তর আমি দিয়ে দিয়েছি । এই কলিযুগে শ্রীমদ্ভাগবতকথা ভবরোগ নাশের মোক্ষম ঔষধি ।

৯৮) হে সাধুগণ ! আপনারা অত্যন্ত আনন্দের সাথে এই শ্রীমদ্ভাগবতকথামৃত পান করুন । এই কথা ভগবান শ্রীকৃষ্ণের অত্যন্ত প্রিয় , সর্বপাপহরণকারী , মোক্ষের একমাত্র কারণ আর ভক্তিবৃদ্ধির পথ । সুতরাং এই পৃথিবীতে অন্যান্য কল্যাণকারী সাধনপথের চিন্তা করে এবং তীর্থভ্রমণে কি হবে ?

Srimad Bhagavatam Mahatmyam Chapter 6
শ্রীমদ্ভাগবতমাহাত্ম্যম্- ষষ্ঠ অধ্যায়
৯৯) ধর্মরাজ যম পাশ অস্ত্রধারী যমদূতকে ডেকে বললেন - ' দেখো , ভাগবতকথায় যারা মত্ত হয়ে রয়েছে , তাদের নিকটে যেও না , সর্বদা তাদের থেকে দূরে থাকবে । আমি অন্যান্য সকলকে দণ্ডদানে সমর্থ কিন্তু বৈষ্ণবদের নয় ।'

১০০) এই অসার সংসারে বিষয়রুপী বিষের আসক্তিতে ব্যাকুল মানুষেরা ! নিজের মঙ্গলের জন্য কেবল ক্ষণমাত্রের জন্য হলেও এই শুকশাস্ত্রের অনুপম সুধা পান করো । এসো সকলে ! নিন্দিত কথাসম্বলিত কুপথে কেনই বা বৃথা ঘুরে চলেছো ? এই শ্রীমদ্ভাগবত কথা কানে প্রবেশ করা মাত্র মানুষের মুক্তি হয়ে যায় । মহারাজ পরীক্ষিত এর প্রত্যক্ষ প্রমান ।

১০১) মহর্ষি শুকদেব প্রেমরস প্রবাহে স্থিত থেকে এই কথা বলেছিলেন । যার এই কথা কণ্ঠলগ্ন হয়ে গিয়েছে তিনি বৈকুন্ঠপতি হয়ে যান ।

১০২) হে শৌনক ! আমি অনেক শাস্ত্র দেখার পর আপনাকে এই পরম গোপনীয় রহস্য শোনালাম । এই কথা সকল শাস্ত্রেরই সারতত্ব । এই পৃথিবীতে শুকশাস্ত্রের থেকে পবিত্র আর কোনো অন্য গ্রন্থ নেই । সুতরাং পরমানন্দ প্রাপ্তির জন্য এই দ্বাদশ স্কন্ধের শ্রীমদ্ভাগবতের অমৃতসার পান করুন ।

১০৩) যিনি ভক্তিভরে নিয়মপালনপূর্বক এই কথা শ্রবণ করেন আর যে ব্যক্তি শুদ্ধচিত্তে বৈষ্ণবদের সামনে এই কথার কীর্তন করেন , তারা উভয়েই সঠিক নিয়ম পালন করার মাধ্যমে এর যথার্থ ফলভোগী হন - তাঁদের জন্য এই ত্রিলোকে আর কোনো কিছুই অসাধ্য থাকে না ।

। ইতি শ্রীপদ্মপুরাণে উত্তরখণ্ডে শ্রীমদ্ভগবতমাহাত্ম্যে শ্রবণবিধিকথনং নাম ষষ্ঠোহধ্যায়ঃ।

আসুন আমরা সবাই একসাথে শ্রীমদ্ভাগবতম / শ্রীমদ্ ভাগবত মহাপপুরাণের স্বাধ্যায় করে আমাদের জীবন পুন্য করি | আজকের মতো এইটুকুই,আমরা শেষ করব মহামন্ত্র দিয়ে |

হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে  |

হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে  ||


যদি আপনার এই পোস্টটি পছন্দ হয়ে থাকে / ভালো লেগে থাকে নতুবা এখান থেকে কিছু নুতন জানতে পারেন তাহলে আমাদের সাবস্ক্রাইব অবশ্যই করবেন এবং আপন আত্মীয়পরিজন, বন্ধু-বান্ধবদের সাথে শেয়ার করবেন | আমার লেখা কেমন লাগলো তা অবশ্যই নিচে কমেন্ট বক্স এর মাধ্যমে কমেন্ট করে জানাবেন |

শ্রীমদ্ ভগবত গীতার উপর আমাদের টিউটোরিয়াল / শিক্ষামূলক সিরিজ পড়ার জন্য এই লিংকটি ক্লিক করে শ্রীমদ ভগবত গীতার অমৃতজ্ঞান পান করে জীবন পবিত্র ও পুন্য করুন |

শ্রীমদ্ ভগবত গীতা : https://bhagavadgitatutorial.blogspot.com

আপনারা আমার প্রণাম নেবেন | 

ইতি
দীন ভক্ত দাসানুদাস

<--পূর্ববর্তী লেখনী                                                        পরবর্তী লেখনী-->

শ্রীমদ্ভাগবতমাহাত্ম্যম্-পঞ্চম অধ্যায় - Srimad Bhagavatam Mahatmyam Chapter 5

Bhagavatam,Srimad Bhagavatam, Bhagavata Purana, Srimad Bhagavatam in Bengali, Bhagavata Purana in Bengali, Bhagavata Mahapurana, Sanatana Dharma, Bhagavata Mahapurana, Srimad Bhagavatam Bangla, Gita, শ্রীমদ্ ভাগবতম, শ্রীমদ্ ভাগবত মহাপুরান, শ্রীমদ্ ভাগবত পুরান, Srimad Bhagavatam online, শ্রীমদ ভাগবত,ভাগবত মহাপুরান , ধুন্ধুকারীর প্রেতযোনি প্রাপ্তি এবং তা থেকে মুক্তি , শ্রীমদ্ভাগবতমাহাত্ম্যম্- পঞ্চম অধ্যায় , Srimad Bhagavatam Mahatmyam Chapter 5

<--পূর্ববর্তী লেখনী                                                        পরবর্তী লেখনী-->

Srimad Bhagavatam Lord Krishna
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ

|| ওম নমঃ ভগবতে বাসুদেবায় ||


শ্রীমদ্ভাগবতমাহাত্ম্যম্- পঞ্চম অধ্যায়


ধুন্ধুকারীর প্রেতযোনি প্রাপ্তি এবং তা থেকে মুক্তি 


প্রিয় ভক্তবৃন্দ এবং সুধীগণ,

পূর্ববর্তী লেখনীতে আমরা শ্রীমদ্ভাগবতমাহাত্ম্যের চতুর্থ অধ্যায়, গোকর্ণ উপাখ্যান সম্পর্কে জেনেছিলাম । আজ আমরা শ্রীমদ্ভাগবতমাহাত্ম্যের পঞ্চম অধ্যায়, ধুন্ধুকারীর প্রেতযোনি প্রাপ্তি এবং তা থেকে মুক্তি সম্পর্কে জানবো । এটি শুরু হয় সুত দ্বারা বর্ণিত দেবর্ষি নারদের সাথে সনকাদি মুনিগণের কথোপকথন এর মাধ্যমে ।


১) সুত বললেন - হে মুনিবর শৌনক ! ধুন্ধুকারীর পিতা আত্মদেব যখন অরণ্যবাসী হলেন তখন ধুন্ধুকারী তার জননীকে প্রচন্ড প্রহারপূর্বক বলল - সঞ্চিত অর্থ সকল কোথায় রেখেছ বল , নচেৎ এখনই জ্বলন্ত মশাল দিয়ে পুড়িয়ে ফেলব ।

২) ধুন্ধুলী এই ধমকানিতে ভয় পেয়ে এবং ছেলে ধুন্ধুকারীর অত্যাচারে সন্ত্রস্ত হয়ে সেই রাত্রে কূপে ঝাঁপ দিয়ে প্রাণত্যাগ করল ।

৩) যোগারূঢ় গোকর্ণ তীর্থভ্রমণের উদ্দেশ্যে যাত্রা করলেন । এই ঘটনাতে তার মনের মধ্যে কোনপ্রকার সুখ বা দুঃখ অনুভূত হল না ; কারণ তাঁর কোনো শত্রু বা মিত্র কিছুই ছিল না ।

৪) পাঁচটি কুলটা মেয়ে ( বেশ্যা ) নিয়ে ধুন্ধুকারী বাড়িতে বসবাস করতে থাকল । সেই কুলটা মেয়েদের জন্য ভোগ্যবস্তু জোগাড়ের চিন্তাতে তার বুদ্ধিভ্রম হল এবং সে নানানরকম অত্যুগ্র ( ক্রুর , খারাপ ) কর্ম করতে লাগল ।

৫) সেই কুলটা মেয়েরা একদিন তার কাছ থেকে অনেক গহনা চেয়ে বসল । ধুন্ধুকারী তো কামনার বশে উন্মত্ত হয়েই ছিল, এমনকি মৃত্যুর চিন্তাও কখনও হত না তার । সেই গহনা জোগাড় করতে সে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ল ।   

৬) ধুন্ধুকারী বিভিন্ন জায়গায় চৌর্যবৃত্তির মাধ্যমে অনেক অর্থ বাড়ি নিয়ে এলো । তারপর কিছু সুন্দর আভূষণ ( গহনা ) এবং সুন্দর সুন্দর বস্ত্র এনে ওই পাঁচ জন কে দিল ।

৭)  চুরি করা প্রচুর ধনসম্পদ দেখে এক রাত্রে সেই পাঁচ বেশ্যারা যুক্তি করলো যে ' এই ধুন্ধুকারী তো প্রত্যহই চুরি করে , ফলে একদিন না একদিন হোক রাজার লোকেরা নিশ্চয়ই একে ধরে নিয়ে যাবে ।

৮) তখন রাজা এই সব ধনসম্পত্তি কেড়ে নিয়ে একে নিশ্চয়ই প্রাণদন্ড দেবে । সুতরাং একে যখন একদিন সেই মরতেই হবে তাহলে আমরাই একে গোপনে হত্যা করি না কেন এই ধনসম্পত্তির জন্য ।

৯-১০) একে হত্যা করে এর এই সব সম্পদ নিয়ে আমরা অন্য কোথাও চলে যাব ।'  এই চিন্তা করে তারা ধুন্ধুকারীকে ঘুমন্ত অবস্থায় রশ্মি ( দড়ি ) দিয়ে বেঁধে তার গলায় ফাঁস দিয়ে তাকে হত্যা করার চেষ্টা করল । এরপরেও যখন ধুন্ধুকারী মরল না , সেটা দেখে তারা  চিন্তাতুরা হয়ে পড়ল ।

Srimad Bhagavatam Mahatmyam Chapter 5
শ্রীমদ্ভাগবতমাহাত্ম্যম্- পঞ্চম অধ্যায়
১১) তখন তারা ধুন্ধুকারীর গলার মধ্যে জ্বলন্ত অঙ্গার ঢুকিয়ে দিল এবং ওই আগুনের জ্বালায় ছটপট করতে করতে ধুন্ধুকারীর মৃত্যু হল । 

১২) ওই বেশ্যারা ধুন্ধুকারীর দেহটা একটা গর্তের মধ্যে পুরে মাটি চাপা দিয়ে দিল । আসলে অসৎ নারীরা এইরকমই দুঃসাহসী হয় । তাদের এই দুষ্কর্মের সংবাদ কেউই জানল না ।

১৩) লোকেরা তাদের ধুন্ধুকারীর ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তারা বলল - আমাদের প্রিয়তম এবার অর্থের সন্ধানে বহু দূরদেশে গিয়েছেন । এক বছরের মধ্যেই তিনি ফিরে আসবেন ।

১৪) বুদ্ধিমান মনুষ্যদের কখনও এইপ্রকার দুষ্টা নারীদের বিশ্বাস করা উচিত নয় । যে সকল মূঢ় ব্যক্তিরা এদের কথা বিশ্বাস করে তাদের অশেষ দুঃখ ভোগ করতে হয় ।

১৫) এদের রসময়ী কথা কামুকদের হৃদয়ে অমৃতরসের সঞ্চার করে কিন্তু এদের হৃদয় শানিত ক্ষুরের ন্যায় তীক্ষ্ণ হয় । সুতরাং এই সকল নারীরা কাদের প্রতিই বা আসক্ত হবে ?

১৬) সেইসকল বেশ্যারা ধুন্ধুকারীর সমস্ত সম্পত্তি হাতিয়ে নিয়ে সেই স্থান ত্যাগ করল; তাদের এইরূপ স্বামী আরও কত ছিল । এদিকে ধুন্ধুকারী নিজের অতীব কুকর্মের পরিনামবশত ভয়ঙ্করপ্রেতযোনি প্রাপ্ত হল ।

১৭-১৮) সে ভীষণ ঝড়ের রূপ ধরে নিত্যই দশদিক উত্যক্ত করে বেড়াত । শীত-গ্রীষ্মে জর্জরিত হয়ে ও ক্ষুধা-তৃষ্ণায় কাতর হয়ে নিজের পরিণতির উপর সর্বদাই হা-হুতাশ করত । কিছুকাল পরে গোকর্ণও লোকমুখে ধুন্ধুকারীর মৃত্যুসংবাদ পেলেন ।

১৯) তখন ধুন্ধুকারীকে অনাথ বিবেচনা করে গোকর্ণ গয়াতীর্থে গিয়ে তার শ্রাদ্ধনুষ্ঠান সমাপন করলেন এবং অন্যান্য যে সকল তীর্থে তিনি যেতেন সেই সকল তীর্থেও আবশ্যকীয় শ্রাদ্ধ-ক্রিয়াদি করলেন ।

২০) এইভাবে ভ্রমণ করতে করতে একদিন গোকর্ণ নিজের গৃহে এলেন এবং সবার অলক্ষ্যে বাড়ির আঙিনায় রাত্রিবাস করতে নিশ্চয় করলেন ।

Srimad Bhagavatam Mahatmyam Chapter 5
শ্রীমদ্ভাগবতমাহাত্ম্যম্- পঞ্চম অধ্যায়
২১) সেই স্থলে নিজের ভ্রাতাকে রাত্রে নিদ্রারত অবস্থায় দেখে ধুন্ধুকারী তাকে নিজের মহাভয়ঙ্কর রূপ দেখাল ।

২২) কখনও ভেড়া , কখনও হস্তী , কখনও মহিষ , কখনও ইন্দ্র , কখনও বা অগ্নির রূপ ধারণ করল । শেষকালে সে আবার মনুষ্যরূপে দেখা দিল ।

২৩) এইসকল বৈপরীত্যপূর্ণ অসাধারণ সব ব্যাপার দেখে গোকর্ণ স্থির করলেন যে এ নিশ্চয়ই কোনও দুর্গতিপ্রাপ্ত । তখন তিনি ধৈর্যপূর্বক তাকে জিজ্ঞেস করলেন ।

২৪) গোকর্ণ জিজ্ঞেস করলেন যে - তুমি কে ? রাত্রিবেলায় আমাকে এইসব ভয়ানক রূপ দেখাচ্ছ কেন ? তুমি এই দশাপ্রাপ্তই বা হলে কিভাবে ? আমাকে  ঠিক করে বল - তুমি প্রেত , পিশাচ না রাক্ষস ?

২৫) সুত বললেন - গোকর্ণর এইরকম প্রশ্ন করাতে সে পুনঃ পুনঃ উচ্চৈঃস্বরে ক্রন্দন করতে লাগল । তার কথা বলার সামর্থ ছিল না । তাই সে ইশারা করে বোঝানোর চেষ্টা করতে লাগল ।

২৬) গোকর্ণ তখন গণ্ডূষে জল নিয়ে মন্ত্রোচ্চারণ করে সেই মন্ত্রপূত জল তার গায়ে ছিটিয়ে দিলেন ।  এতে তার কিছু পাপ  বিনষ্ট হল , আর তারফলে সে  বলতে লাগল ।

২৭) প্রেত বলল - ' আমি তোমার ভ্রাতা । আমার নাম ধুন্ধুকারী । নিজের কৃতকর্মের দোষেই আমি নিজের ব্রাহ্মণত্বের নাশ করেছি ।

২৮) আমার কুকর্মের কোনো সীমা পরিসীমা নেই । আমি ভীষণ অজ্ঞানান্ধকারে কেবলই ঘুরপাক খাচ্ছিলাম ।  আমি অনেক হিংসাবৃত্তি করেছি এবং তা অনেক মানুষের হানি করেছে । অবশেষে স্ত্রীবেশী ওই কুলটা নারীগুলো আমাকে হত্যা করেছে ।

২৯) এর ফলস্বরূপ আমি প্রেতযোনিতে পতিত হয়ে এই দুর্দশা ভোগ করছি । বর্তমানে দৈববশে কর্মফলের উদয় হওয়ার জন্য আমি কেবল বায়ুপান করে জীবনধারণ করছি ।

৩০) ভ্রাতা গোকর্ণ ! তুমি তো কৃপাসিন্ধু , আমার অশ্রুমোচন করে তুমি শীঘ্রই আমাকে এই প্রেতযোনি থেকে মুক্ত করো । ' গোকর্ণ ধুন্ধুকারীর সব কথা শুনলেন এবং এই কথা বললেন ।

Srimad Bhagavatam Mahatmyam Chapter 5
শ্রীমদ্ভাগবতমাহাত্ম্যম্- পঞ্চম অধ্যায়
৩১) গোকর্ণ বিস্ময়ের সাথে বললেন - হে ভ্রাতা ! এই বিষয়টা বড়ই বিচিত্রকর - আমি গয়াতে শাস্ত্রমতে তোমার পিন্ড অর্পণ করেছি , তবুও তুমি প্রেতযোনি থেকে উদ্ধার পাওনি !

৩২) গয়াশ্রাদ্ধতেও যদি তোমার মুক্তি না হয়ে থাকে তাহলে তো আমি আর কোনো উপায়ই দেখছি না । তুমি আমাকে সব কথা বিস্তারপূর্বক বল - এখন আমার কি করা বিধেয় (কর্তব্য) ?

৩৩) প্রেত বলল - শত গয়াশ্রাদ্ধতেও আমার মুক্তিলাভ হবে না । তুমি আমার মুক্তিলাভের অন্য কোনো উপায়ের বিচার করো ।

৩৪)  প্রেতের এই কথা শুনে গোকর্ণ বড়ই আশ্চর্য্যান্বিত হলেন । তিনি বললেন ' শত গয়াশ্রাদ্ধতেও যদি তোমার এই প্রেতযোনি থেকে মুক্তি না হয় তবে তো তোমার উদ্ধারের পথ অসম্ভব বলে প্রতিত হচ্ছে ।

৩৫) আচ্ছা তুমি এখন নির্ভয়ে স্বস্থানে থাক , আমি বিচার বিবেচনা করে তোমার উদ্ধারের কোনো উপায় করবো ।'

৩৬) গোকর্ণের নির্দেশমতো ধুন্ধুকারী সেই স্থান থেকে নিজের জায়গায় চলে গেল । এদিকে গোকর্ণ সমস্ত রাত্রি এই ব্যাপারে চিন্তা ভাবনা করলেন কিন্তু কোনো উপায়ই তিনি খুঁজে পেলেন না ।

৩৭) প্রাতঃকালে ওইস্থলে গোকর্ণকে দেখে সকলেই খুশি হয়ে তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করতে এলেন । গোকর্ণ তখন সেখানে সমবেত সকলকেই পূর্বরাত্রের  ঘটনা সম্পর্কে অবগত করালেন ।

৩৮) তাদের মধ্যে যারা বিদ্বান, যোগনিষ্ঠ , জ্ঞানী ও বেদজ্ঞ ছিলেন তারাও সকলেই অনেক শাস্ত্রবিচার করলেন , তথাপি ধুন্ধুকারীর মুক্তির উপায়ের কোনো পথ পাওয়া গেল না ।

৩৯) এমতাবস্থায় সেখানে উপস্থিত সকলেই এই সিদ্ধান্ত করলেন যে , এই বিষয়ে সূর্যদেব যা বিধান দেবেন তাই কর্তব্য । গোকর্ণ তখন আপন তপোবলের প্রভাবে সূর্যবেদবের গতি স্তব্ধ করে দিলেন ।

Srimad Bhagavatam Mahatmyam Chapter 5
শ্রীমদ্ভাগবতমাহাত্ম্যম্- পঞ্চম অধ্যায়
৪০-৪১) তারপর তিনি সূর্যদেবের যথাযত স্তুতিকরে বললেন - ' হে ভগবান ! আপনি সমগ্র জগতের সাক্ষী , আপনি আমার প্রণাম গ্রহণ করুন । আপনি অনুগ্রহপূর্বক ধুন্ধুকারীর উদ্ধারের উপায় সম্পর্কে আমাদের অবগত করান । ' গোকর্ণের এই প্রার্থনা শুনে সূর্যদেব স্পষ্ট করে বললেন - ' শ্রীমদ্ভাগবতে মুক্তি হতে পারে । তাই তুমি ধুন্ধুকারীর মুক্তির উদেশ্যে শ্রীমদ্ভাগবতের সপ্তাহপারায়ণ করো ।' ভগবান সূর্যদেবের এই ধর্মবাক্য সকলেই শুনতে পেলেন ।

৪২) তখন সকলেই বললেন ' নিষ্ঠাপূর্বক এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করো , আর এর অনুষ্ঠানও অতি সরল । ' তখন গোকর্ণও সেই অনুযায়ী মনস্থির করে শ্রীমদ্ভাগবত সপ্তাহ পারায়ণের প্রস্তুতি নিলেন ।

৪৩) সেই ভাগবত কথা শ্রবণের জন্য নানাদেশ , গ্রামগঞ্জ থেকে অনেকে উপস্থিত হলেন । অনেক পঙ্গু , অন্ধ , বৃদ্ধ , মন্দবুদ্ধি মানুষও নিজেদের পাপক্ষয়ের উদেশ্যে সেখানে উপস্থিত হলেন ।

৪৪-৪৫) এর ফলে সেখানে এমনই লোক সমাগম হল যে স্বয়ং দেবতারা পর্যন্ত তা দেখে আশ্চর্য হয়ে গেলেন । গোকর্ণ যখন ব্যাসাসনে উপবিষ্ট হয়ে পাঠ করতে শুরু করলেন তখন প্রেতযোনিপ্রাপ্ত ধুন্ধুকারীও সেখানে এসে উপস্থিত হল এবং নিজের জন্য স্থান অন্বেষণ করতে লাগল । এরপর উলম্ব অবস্থায় প্রোথিত একটি সাত গাঁঠ যুক্ত বাঁশের উপর তার দৃষ্টি পড়লো ।

৪৬) সেই বাঁশের নিচের একটি ছিদ্রের মাধ্যমে সে বাঁশের ভিতরে প্রবেশ করলো এবং পাঠ শুনতে থাকলো । বায়ুরূপী হওয়ার কারণে সে বাইরে কোথাও বসে স্থিত হয়ে পাঠ শ্রবনে অসমর্থ ছিল । তাই সে বাঁশের মধ্যে প্রবেশ করল ।

৪৭) একজন বৈষ্ণব ব্রাহ্মণকে গোকর্ণ মুখ্য শ্রোতারূপে নিশ্চিত করলেন এবং প্রথম স্কন্ধ থেকে সুস্পষ্টস্বরে ভাগবত পাঠ আরম্ভ করলেন ।

৪৮) দিনান্তে যখন পাঠের বিশ্রাম দেওয়া হল তখন এক বড়ই বিচিত্র ঘটনা ঘটল । সভাস্থ সকলের সম্মুখেই সেই সাত গাঁট বিশিষ্ট বাঁশটির একটি গাঁট সশব্দে ফেটে গেল ।

৪৯) একই ভাবে দ্বিতীয় দিন সন্ধ্যায় দ্বিতীয় গাঁটটি ফেটে গেল এবং তৃতীয় দিনে একই সময়ে তৃতীয় গাঁটটিও ফেটে গেল ।

Srimad Bhagavatam Mahatmyam Chapter 5
শ্রীমদ্ভাগবতমাহাত্ম্যম্- পঞ্চম অধ্যায়
৫০-৫১) এইভাবে সপ্তাহব্যাপী ভাগবতের দ্বাদশ স্কন্ধ শ্রবণের মাধ্যমে পবিত্র হয়ে এবং ওই বাঁশের সাতটি গাঁট ভেদ করে ধুন্ধুকারী প্রেতযোনি থেকে পরিত্রান পেল । তারপর সে দিব্যরূপ ধারণ করে সকলের সামনে দেখা দিল । তার মনোমোহক ঘনশ্যাম তনু পীতাম্বর আর তুলসী মালায় সুশোভিত , মস্তকে অপরূপ মুকুট এবং কর্ণদ্বয়ে সুন্দর কুন্ডল শোভা পাচ্ছিল ।

৫২) নিজ ভ্রাতা গোকর্ণকে সে সত্বর প্রণাম করল এবং বলল - ' হে ভ্রাতা ! তুমি কৃপা করে আমাকে এই ভয়াবহ প্রেতযোনি থেকে মুক্তি দিয়েছ ।

৫৩) প্রেতপীড়া বিনাশকারী এই শ্রীমদ্ভাগবত কথা ধন্য । আর স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পরমধাম প্রদানকারী শ্রীমদ্ভাগবতের এই সপ্তাহ পারায়ণও ধন্য ।

৫৪) যখন এই সপ্তাহব্যাপী শ্রীমদ্ভাগবতের শ্রবণের অনুষ্ঠান হয় তখন সকল পাপরাশি ভয়ে কাঁপতে শুরু করে কারণ তারা অবগত হয় যে এই ভাগবতীকথা তাদের প্রলয়ের কারণ হবে ।

৫৫) অগ্নি যেমন আর্দ্র - শুষ্ক , ছোট  - বড় সকল  কাষ্ঠকেই ভস্মীভূত করে , তেমনই এই শ্রীমদ্ভাগবতের সপ্তাহব্যাপী শ্রবণের ফলে বাক্য , মন ও কর্মকৃত ছোট - বড় , নুতন - পুরাতন সকল প্রকারের পাপই ভস্মীভূত হয়ে যায় ।

৫৬) পন্ডিতগণ দেবতাদের সভায় বলেছিলেন , যে ব্যক্তি ভারতবর্ষে শ্রীমদ্ভাগবত কথা না শ্রবণ করে তার জন্মই বৃথা ।

৫৭) এটা সত্যিই যে , মোহপাশে আবদ্ধ হয়ে এই অনিত্য শরীর কে হৃষ্টপুষ্ট আর বলবান করে যদি এই শুকশাস্ত্র ( শ্রীমদ্ভাগবত ) না শ্রবণ হয় তাহলে সেই শরীরেরই বা কি প্রয়োজন ?

৫৮)  অনিত্য এই শরীরের স্তম্ভ ( কাঠামো  ) হল অস্থি , স্নায়ুরূপ দড়ি দিয়ে এটি বাঁধা , মাংস আর শোনিত ( রুধির বা রক্ত  ) দ্বারা এটা লেপিত , আর উপরে চর্মদ্বারা আবৃত । এর প্রতিটি অঙ্গই দুর্গন্ধযুক্ত কারণ প্রকৃতপক্ষে এটা মূত্র এবং পুরীষের ( মল বা বিষ্ঠা ) একটি পাত্র বৈ কিছু নয় ।

৫৯) এই শরীর জরাবস্থা ( বৃদ্ধাবস্থা ) এবং নানাবিধ শোক দুঃখের জন্য কেবলই দুঃখপরিণামী । এই শরীর সর্বদাই অতৃপ্ত থাকে কারণ নিরন্তর কোনো না কোনো কামনায় এটি দগ্ধ হতেই থাকে । এই শরীর বিভিন্ন রোগের আঁতুড়ঘর এবং একে ধারণ করে থাকাটাও ভারস্বরূপ । এ নানাদোষে পরিপূর্ণ এবং ক্ষণভঙ্গুর ( মুহূর্তের মধ্যেই শেষ হয়ে যায় ) ।

৬০) মরণোত্তর সমাধি দিলে এই শরীর কৃমিতে পরিণত হয় , কোনো জীবের ভোজন হলে এ বিষ্ঠায় পরিণত হয় আর অগ্নিতে দগ্ধ হলে ভষ্মে ( ছাই ) পরিণত হয় । শরীরের এই তিন পরিণতিই গণ্য করা হয় । তাহলে এইরূপ নশ্বর শরীর দিয়ে মানব অবিনশ্বর ফলপ্রদায়ী কর্ম কেন করে না ?

Srimad Bhagavatam Mahatmyam Chapter 5
শ্রীমদ্ভাগবতমাহাত্ম্যম্- পঞ্চম অধ্যায়
৬১) প্রাতঃকালে যে অন্ন পরিপাক করা হয় তা সায়ংকালেই বিনষ্ট হয় । সেই অন্নরসে পুষ্ট এই শরীর কি করে নিত্য হবে ?

৬২) এই ধরাতলে শ্রীমদ্ভাগবতের সপ্তাহব্যাপী শ্রবণের ফলে মানুষের ভগবৎপ্রাপ্তি নিকটতর হয় । সুতরাং সকল প্রকার দোষ নিবৃত্তির জন্য এই সাধন শ্রেয় ।

৬৩) যে সকল ব্যক্তির জীবন এই শ্রীমদ্ভাগবতকথা বর্জিত , তাদের অবস্থা জলের উপর বুদবুদের ন্যায় অথবা জীবেদের মধ্যে মশকের ( মশা ) ন্যায় - যেটা কেবল মরণের জন্য জন্মায় ।

৬৪) যার অমোঘ প্রভাবে জড় ও শুষ্ক বাঁশের গাঁট ফাটতে পারে সেই শ্রীমদ্ভাগবতের সপ্তাহব্যাপী শ্রবণে অন্তঃকরণের গ্রন্থিভেদই বা কি বড় কথা ?

৬৫) শ্রীমদ্ভাগবতের সপ্তাহব্যাপী শ্রবণে মানুষের হৃদয়গ্রন্থির ছেদন হয়ে যায় । মনের সর্বপ্রকার সংশয় দূরীভূত হয় এবং সমস্ত কর্ম ক্ষীণ হয়ে যায় ।

৬৬) এই শ্রীমদ্ভাগবত কথাতীর্থ সংসারের কাদা ও ক্লেশ প্রক্ষালন ( ধুয়ে দিতে ) করতে অতীব পটীয়সী । বুদ্ধিমানগণ বলেন , এই কথা চিত্তে স্থিত হলে সেই মানবের মুক্তি অবশ্যম্ভাবি ।'

৬৭) ধুন্ধুকারী যখন এইসব কথা বলছিল তখন বৈকুন্ঠবাসী পার্ষদগণ সংযুক্ত এক বিমান সেখানে এসে উপস্থিত হল । সেই দিব্য বিমান থেকে সর্বত্র মণ্ডলাকার দীপ্তি প্রস্ফুরিত হচ্ছিল ।  

৬৮) সকলেই দেখলেন যে ধুন্ধুলীসুত ( ধুন্ধুকারী  ) সেই বিমানে উঠে বসল । সেই বিমানে উপবিষ্ট পার্ষদদের দেখে গোকর্ণ এই কথা বললেন ।

৬৯-৭০) গোকর্ণ প্রশ্ন করলেন - হে ভগবানের প্রিয় পার্ষদবৃন্দ ! এখানে তো অনেক নির্মল এবং শুদ্ধ অন্তঃকরণযুক্ত শ্রোতারা আছেন , এদের সকলের জন্য আপনারা বিমান আনেননি কেন ? আমার দৃষ্টিতে এরা সকলেই সমানভাবে পাঠ শ্রবণ করেছে , কিন্তু এদের মধ্যে ফলভেদ কেন জন্মাল, সেকথা আমাকে দয়া করে বলুন ।

Srimad Bhagavatam Mahatmyam Chapter 5
শ্রীমদ্ভাগবতমাহাত্ম্যম্- পঞ্চম অধ্যায়

৭১) শ্রীভগবানের পার্ষদগণ বললেন - হে মান্যবর ! এদের এই ফলভেদের কারণ হল এদের শ্রবণের পাৰ্থক্য । একথা যদিও সত্য যে পাঠ শ্রবণ সবাই সমানভাবে করেছে কিন্তু ধুন্ধুকারীর মতন কেউই মনোযোগ সহকারে এবং স্থিরচিত্তে শ্রবণ করেনি । সেজন্যই সবাই একসাথে শ্রবণ করলেও এদের শ্রবণের ফলপার্থক্য এসেছে ।

৭২) এই প্রেত সাতদিন যাবৎ উপোষ করে শ্রীমদ্ভাগবত কথা শ্রবণ করেছে এবং শ্ৰুত বিষয়বস্তুগুলি স্থিরচিত্তে উত্তমরূপে মনন ও পুরঃশ্চরন করেছে ।

৭৩) অদৃঢ় জ্ঞান ব্যর্থ হয়ে যায় । তেমনি অমনোযোগী অবস্থায় শ্রবণ , সন্দেহ থাকলে মন্ত্রের , ব্যগ্রচিত্ত বা চিত্তচঞ্চল  অবস্থায় জপেরও কোনো ফল হয় না ।

৭৪) বৈষ্ণবহীন দেশ , অপাত্র-কৃত শ্রাদ্ধান্নভোজন , অশ্রোত্রয়ীকে দেওয়া দান এবং আচারহীন কুল - এই সবই বিনষ্ট হয় ।

৭৫-৭৬) গুরুবাক্যে নিশ্চিত বিশ্বাস , নিজ দীনভাব , মনের সমস্ত দোষের উপর জয়লাভ এবং একাগ্র চিত্তে পাঠ শ্রবণ - এইসব নিয়ম যদি পালন করে পাঠ শ্রবণ করা হয় তাহলে শ্রবণের যথার্থ ফললাভ হয় । যদি এই সব শ্রোতারা সকল নিয়মপালনপূর্বক পুনরায় শ্রীমদ্ভাগবত পাঠ শ্রবণ করেন তাহলে নিশ্চিতরূপেই এরা বৈকুণ্ঠবাসি হবেন । 

৭৭) হে গোকর্ণ ! পরমেশ্বর ভগবান শ্রীহরি স্বয়ং এসে আপনাকে গোলোকধামে নিয়ে যাবেন । পার্ষদগণ এই কথা বলে হরি কীর্তন করতে করতে বৈকুণ্ঠধামের উদ্দেশ্যে প্ৰস্থান করলেন ।

৭৮)  শ্রাবণ মাসে গোকর্ণ পুনরায় শ্রীমদ্ভাগবতের সপ্তাহব্যাপী পারায়ণ করলেন এবং ঐসকল শ্রোতারা পুনরায় স্থিরচিত্ত হয়ে পাঠ শ্রবণ করলেন ।

৭৯) হে দেবর্ষি নারদ এই সপ্তাহব্যাপী পাঠের শেষে কি হয়েছিল সে সম্পর্কে অবগত হউন ।

৮০) ভক্তবৃন্দ পরিপূর্ণ বিমানে স্বয়ং পরমেশ্বর ভগবান শ্রীহরি  সেখানে এসে উপস্থিত হলেন । চারিদিক থেকে খুব জয়-জয়কার এবং নমস্কারসূচক ধ্বনি মুখরিত হতে থাকল ।

Srimad Bhagavatam Mahatmyam Chapter 5
শ্রীমদ্ভাগবতমাহাত্ম্যম্- পঞ্চম অধ্যায়
৮১) স্বয়ং ভগবান সহর্ষে পাঞ্চজন্য শঙ্খধ্বনি করতে লাগলেন এবং আলিঙ্গনপূর্বক তিনি গোকর্ণকে নিজের সদৃশ করে দিলেন ।

৮২) ক্ষণকালের মধ্যেই তিনি অন্যান্য সকল শ্রোতাদেরও ঘনশ্যাম পীতাম্বরধারী এবং কিরীট ও কুণ্ডলাদি শোভিত করে দিলেন ।

৮৩-৮৪) ওই গ্রামে সারমেয় ( কুকুর ) ও চণ্ডাল পর্যন্ত যত জীব ছিল তারাও সকলে গোকর্ণের কৃপায় বিমানে স্থান পেল । যে ভাগবৎধামে যোগীরা গমন করেন তাদেরও সেখানে পাঠিয়ে দেওয়া হল । এইভাবে গোপীবল্লভ ভগবান শ্রীকৃষ্ণ , ভাগবত পাঠ শ্রবনে  পরিতুষ্ট হয়ে গোকর্ণকে নিয়ে নিজের পরমধাম গোলোকে চলে গেলেন ।

৮৫) ত্রেতাযুগে যেমন মর্যাদা পুরুষোত্তম শ্রীরামভদ্র অযোধ্যাবাসীকে নিজের সাথে নিয়ে সাকেতধামে গমন করেছিলেন , তেমনি ভগবান শ্রীকৃষ্ণও তাদের নিয়ে যোগীদুর্লভ গোলোকধামে গেলেন ।

৮৬) যে লোকে সূর্য , চন্দ্র বা সিদ্ধগণেরও গতি হয় না শ্রীমদ্ভাগবতের শ্রোতারা সেই লোকে গমন করলেন ।

৮৭) হে দেবর্ষি নারদ ! এই সপ্তাহযজ্ঞের পাঠশ্রবণে যে কি রকম উজ্বল ফললাভ হয় সে বিষয়ে আপনাকে আর কিই বা ব্যক্ত করব ? অহো ! নিজ কর্ণে যারা গোকর্ণের ওই পাঠের কেবলমাত্র এক অক্ষরও শ্রবণ করেছে , তাদের আর দ্বিতীয়বার জন্মগ্রহণ করতে হয়নি ।

৮৮) কেবলমাত্র বায়ুপান কিংবা শুধুমাত্র জল এবং গাছের পাতা ভক্ষণের মাধ্যমে শরীরকে শীর্ণ করে , বহুকাল কঠোর তপস্যা করে অথবা কঠিন যোগমার্গ অবলম্বন করেও যে গতি লাভ করা যায় না , শুধুমাত্র শ্রীমদ্ভাগবতের সপ্তাহশ্রবণের মাধ্যমেই তা সহজলভ্য হয় ।

Srimad Bhagavatam Mahatmyam Chapter 5
শ্রীমদ্ভাগবতমাহাত্ম্যম্- পঞ্চম অধ্যায়
৮৯) এই পরম পবিত্র এবং পুণ্যময় ইতিহাস চিত্রকূটস্থ মুনীশ্বর  শান্ডিল্যও ব্রহ্মানন্দে স্থিত হয়ে পরমানন্দে পাঠ করতে থাকেন ।

৯০) এই আখ্যান অতি পবিত্র । এর কেবলমাত্র একবার শ্রবণেই সমস্ত পাপরাশি ভস্মীভূত হয়ে যায় । শ্রাদ্ধকালে এর পাঠ হলে পিতৃগণ তৃপ্ত হন এবং নিত্য পাঠ করলে মোক্ষপ্রাপ্তি হয় ।


। ইতি শ্রীপদ্মপুরাণে উত্তরখণ্ডে শ্রীমদ্ভাগবতমাহাত্ম্যে গোকর্ণমোক্ষবর্ণনং নাম পঞ্চমোহধ্যায়ঃ।

আসুন আমরা সবাই একসাথে শ্রীমদ্ভাগবতম / শ্রীমদ্ ভাগবত মহাপুরাণের স্বাধ্যায় করে আমাদের জীবন পুন্য করি | আজকের মতো এইটুকুই, আমরা শেষ করব মহামন্ত্র দিয়ে |

হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে  |

হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে  ||


যদি আপনার এই পোস্টটি পছন্দ হয়ে থাকে / ভালো লেগে থাকে নতুবা এখান থেকে কিছু নুতন জানতে পারেন তাহলে আমাদের সাবস্ক্রাইব অবশ্যই করবেন এবং আপন আত্মীয়পরিজন, বন্ধু-বান্ধবদের সাথে শেয়ার করবেন | আমার লেখা কেমন লাগলো তা অবশ্যই নিচে কমেন্ট বক্স এর মাধ্যমে কমেন্ট করে জানাবেন |

শ্রীমদ্ ভগবত গীতার উপর আমাদের টিউটোরিয়াল / শিক্ষামূলক সিরিজ পড়ার জন্য এই লিংকটি ক্লিক করে শ্রীমদ ভগবত গীতার অমৃতজ্ঞান পান করে জীবন পবিত্র ও পুন্য করুন |

শ্রীমদ্ ভগবত গীতা : https://bhagavadgitatutorial.blogspot.com

আপনারা আমার প্রণাম নেবেন | 

ইতি
দীন ভক্ত দাসানুদাস


<--পূর্ববর্তী লেখনী                                                     পরবর্তী লেখনী-->